মামুনুর রশীদ
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের বাইরে খুব কাছের একটা দেশে এসেছি। পৃথিবীর কত দূরদূরান্তের দেশে গিয়েছি, কিন্তু কখনো নেপালে আসিনি। যদিও অনেকবার সুযোগ হয়েছে, তবু আসা হয়নি। যেখানেই গিয়েছি, শুধু বেড়াবার জন্য যাইনি। গিয়েছি কাজে এবং নাটকের কাজে। হয় কোথাও অভিনয় করতে গিয়েছি, আবার কোথাও নাটকের কর্মশালার কাজে অথবা সেমিনারে।
থিয়েটারের লোকদের মধ্যে খুব দ্রুতই বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তেমনি একটা ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সিউল শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে এক পাহাড়ি এলাকায়। শুধু পাহাড় নয়, সেখানে ছিল একটা বরফ গলা নদী। নদী নানা কারণেই ভয়ংকর। যেমন আমাদের পদ্মা, যমুনা দুই পাড় থেকে কত মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়! এই নদীটিতেও কেউ গোসল করতে গেলে বা মাছ ধরতে গেলে বছরে দু-চারজনের সলিল সমাধি হয়। আবার তখন দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে আন্দোলন চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে শহরে ঢুকতেই ট্যাক্সি আর যাবে না। কারণ, সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে। আমরা স্যুটকেস নিয়ে নেমে পড়লাম এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। পথ ফুরায় না। হাঁটছি এবং হাঁটা শেষ হয়ে গেলে উঠতে হলো পাঁচতলা একটা বাড়ির ওপরতলায়। ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সেখান থেকে আবার নিচে নামতে হবে খাওয়ার জন্য। বাধ্য হয়ে নামলেও রাতে আমরা আর খেলাম না।
পরদিন সকালবেলায় চললাম কর্মশালার জায়গায়। খুবই সাধারণ খাবারদাবার, কিন্তু পরিশ্রম বেশি। তিন বেলায়ই ভাত, সবজি; সপ্তাহে এক দিন হয়তো মুরগির মাংস জোটে। তবে রাতে ঘুম হয় প্রচুর। কোনো খাট-পালঙ্কের ব্যবস্থা নেই। শুতে হয় কাঠের ফ্লোরে। একটু শীতও ছিল। তবে কর্মশালা খুবই প্রাণবন্ত। মনে পড়ে সেখানে সাক্ষাৎ হওয়া একজনের কথা। ফিলিপাইনের পিপল এডুকেশন থিয়েটারের প্রশিক্ষক আর্নি ক্লোমা। বয়স তখন ষাটোর্ধ্ব হবে, কী প্রাণপ্রাচুর্য তাঁর! সবাইকে সন্তানের মতো স্নেহ করেন। ধমক দেন, গাল দেন, আবার আদরও করেন।
এশিয়ার বেশ কটি দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা এসেছেন। দু-চারজন ছাড়া সবাই থিয়েটারের লোক। এই কজনের মধ্যে একজন স্কুলশিক্ষক আর একজন সাংবাদিক। স্কুলশিক্ষক হংকংয়ের মক চিউ ইউ আর সাংবাদিক তাইওয়ানের চুং চাও। তাঁরা ভাবেননি যে কখনো থিয়েটার করবেন। কিন্তু ১৫ দিনের অনুশীলনের ফলে বিপুলভাবে আলোড়িত হলেন এবং জনগণের থিয়েটারের চিন্তাটাকে সারা এশিয়ায় কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন। হংকং, বাংলাদেশ, জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ভারত, নেপাল—সর্বত্রই নানা ধরনের উৎসব, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা শুরু হয়ে গেল। সবাই মিলে দুটি বড় ধরনের যৌথ নাটক প্রযোজিত হলো ও সারা এশিয়ায় অভিনয়ের ব্যবস্থাও হলো। একটি ‘বিগ উইন্ড’, অন্যটি ‘ক্রাই অব এশিয়া’। উদ্যোক্তার নাম এশিয়ান পিপলস থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল সোসাইটি।
সেই কোরিয়ার কর্মশালা থেকে যার সূচনা হলো, তারই ধারাবাহিকতায় এবার নেপালে হচ্ছে আন্তর্জাতিক উৎসব। আরণ্যককে আমন্ত্রণ জানানো হলো। আমাকে একটি একক অভিনয় করতে হবে। সেই সঙ্গে শামীমা শওকত লাভলীকে একটি কর্মশালা করাতে হবে। আমি একক অভিনয় তৈরি করলাম, নাম ‘তুম্বা ও প্রতিবেশী’। পরশুর আগের রাতে এশিয়ার নেপালের দর্শকদের সামনে নাটকটির অভিনয় করলাম এবং পরশু সকালেই নাটকটি নিয়ে আলোচনা হলো। সবার চোখেমুখে সূক্ষ্মতাও লক্ষ করলাম। অন্যান্য দেশের অভিনেতা-পরিচালকেরাও ছিলেন।
উৎসবের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে কাঠমান্ডুর একটি থিয়েটার। থিয়েটারের নাম ‘সর্বনাম থিয়েটার’। ‘সর্বনাম’ শব্দটি বাংলার এবং নেপালেরও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেপালি ও বাংলার বেশ মিল আছে। এখানে অবশ্য এত ভাষার ছড়াছড়ি—হংকং, জাপান, চীন, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভারতের বাংলা এবং উড়িয়া, সিঙ্গাপুর—সবাই নিজ ভাষাতেই অভিনয় করেন। তবে বাংলাদেশের মাধ্যমটা ইংরেজি।
সর্বনাম থিয়েটার শুধু থিয়েটারেরই ব্যবস্থা করে না, থিয়েটার শিক্ষকদেরও একটা ব্যবস্থা আছে এখানে। একটা পাহাড় কেটে তিনতলায় অভিনয়, প্রশিক্ষণ এবং একটা গ্যালারির ব্যবস্থাও রয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানা নয়, একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগ। প্রধান উদ্যোক্তা আশীষ এখানকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। কাঠমান্ডুতে সাতটি থিয়েটারের দল আছে, যাদের প্রত্যেকের ছোট থিয়েটারও আছে। প্রতিদিনই নাটক হয় এবং দর্শকে পূর্ণ থাকে।
নেপালে দীর্ঘ সময়জুড়ে আন্দোলন চলছে। রাজতন্ত্রের উচ্ছেদের জন্য তাদের আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন। একসময় নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র ছিল। এখন তা নেই, সম্পূর্ণভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। আশি ভাগ হিন্দু অধ্যুষিত দেশ হলেও সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করেছিলাম, তা-ও কালক্রমে কতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে এখন ধর্মরাষ্ট্র নির্মাণের মহড়া চলছে। তবে আমরা আশাবাদী, হয়তো তা সম্ভব হবে না।
একেবারেই নিজস্ব উদ্যোগে যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি থিয়েটার মঞ্চ করা সম্ভব, তা নেপাল থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। সেটি ছাড়া হয়তো কোনো উপায়ও নেই। শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কোনো কাজ করা যে সম্ভব নয়, তা বহুভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মহাপরিচালক হিসেবে যিনিই আসেন তিনিই তাঁর ইচ্ছেমতো প্রকল্প করতে থাকেন। এই প্রকল্পে তাঁর পছন্দমাফিক লোকদেরই বেছে নেন। তাই থিয়েটারের জন্য অবশ্যই উচিত নিজস্ব উদ্যোগে অভিনয়ের স্পেস তৈরি করা। সরকারের পরিবর্তনে নতুন শাসকগোষ্ঠী সব সময়ই শিল্প-সাহিত্যকে, বিশেষ করে বিরোধী চিন্তাকে শুধু জায়গাই দেবে না, বরং আক্রমণ করে বসবে।
বাংলাদেশে খোলা প্রাঙ্গণে অভিনয় করার জন্য অনেক নাটকের, সংগীতের, নৃত্যের মাধ্যম আছে। সেসব মাধ্যম অনেক জনপ্রিয়ও। কিন্তু সেখানেও প্রবল অসহিষ্ণু কিছু কিছু ধর্মীয় গুরু বিরূপ ভূমিকা গ্রহণ করে শিল্পীদের লাঞ্ছিত করে। কিন্তু কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কিছু কিছু মানুষের অশ্লীল বক্তৃতা জনসাধারণকে যে শিক্ষিত করে না, তা তারা পরোয়া করে না। বাউলদের ওপর হামলা, মাজার ভেঙে দেওয়া—এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে থাকে ব্যাপক অশিক্ষা। সেই শিক্ষা বা সংস্কৃতিচর্চা করাটা কেন সমাজের কাছে অগ্রহণযোগ্য হতে পারে, তা কল্পনার অতীত। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশে তা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থা ধসের দ্বারপ্রান্তেই শুধু আসেনি, ধর্মীয় শিক্ষকতা এসবকে ব্যাপকতা দিয়েছে, যা বাঙালির সংস্কৃতিধারণকে ব্যাপকভাবে শক্তিহীন করে দিয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে অপশাসন এবং ধর্মকে বর্ম করে অপশাসনের প্রক্রিয়া সমাজে এখনো চলমান। সংস্কৃতিচর্চা, বিশেষ করে থিয়েটারের চর্চা একটা নতুন বার্তা নিয়ে আসত সমাজে। সেসব সম্ভাবনার দিকে কারও তাকানোর উপায় নেই।
দুর্নীতি মানুষের নৈতিক মেরুদণ্ডটা ভেঙে দেয়। সেই ভেঙে দেওয়া মেরুদণ্ড যেকোনো অপরাধ করতে পারে। সেখান থেকে সমাজকে ফিরিয়ে আনার উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো সংস্কৃতির চর্চা এবং তা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা। আমরা কি এ দেশে তার জন্য প্রস্তুত হব না?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের বাইরে খুব কাছের একটা দেশে এসেছি। পৃথিবীর কত দূরদূরান্তের দেশে গিয়েছি, কিন্তু কখনো নেপালে আসিনি। যদিও অনেকবার সুযোগ হয়েছে, তবু আসা হয়নি। যেখানেই গিয়েছি, শুধু বেড়াবার জন্য যাইনি। গিয়েছি কাজে এবং নাটকের কাজে। হয় কোথাও অভিনয় করতে গিয়েছি, আবার কোথাও নাটকের কর্মশালার কাজে অথবা সেমিনারে।
থিয়েটারের লোকদের মধ্যে খুব দ্রুতই বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তেমনি একটা ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সিউল শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে এক পাহাড়ি এলাকায়। শুধু পাহাড় নয়, সেখানে ছিল একটা বরফ গলা নদী। নদী নানা কারণেই ভয়ংকর। যেমন আমাদের পদ্মা, যমুনা দুই পাড় থেকে কত মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়! এই নদীটিতেও কেউ গোসল করতে গেলে বা মাছ ধরতে গেলে বছরে দু-চারজনের সলিল সমাধি হয়। আবার তখন দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে আন্দোলন চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে শহরে ঢুকতেই ট্যাক্সি আর যাবে না। কারণ, সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে। আমরা স্যুটকেস নিয়ে নেমে পড়লাম এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। পথ ফুরায় না। হাঁটছি এবং হাঁটা শেষ হয়ে গেলে উঠতে হলো পাঁচতলা একটা বাড়ির ওপরতলায়। ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সেখান থেকে আবার নিচে নামতে হবে খাওয়ার জন্য। বাধ্য হয়ে নামলেও রাতে আমরা আর খেলাম না।
পরদিন সকালবেলায় চললাম কর্মশালার জায়গায়। খুবই সাধারণ খাবারদাবার, কিন্তু পরিশ্রম বেশি। তিন বেলায়ই ভাত, সবজি; সপ্তাহে এক দিন হয়তো মুরগির মাংস জোটে। তবে রাতে ঘুম হয় প্রচুর। কোনো খাট-পালঙ্কের ব্যবস্থা নেই। শুতে হয় কাঠের ফ্লোরে। একটু শীতও ছিল। তবে কর্মশালা খুবই প্রাণবন্ত। মনে পড়ে সেখানে সাক্ষাৎ হওয়া একজনের কথা। ফিলিপাইনের পিপল এডুকেশন থিয়েটারের প্রশিক্ষক আর্নি ক্লোমা। বয়স তখন ষাটোর্ধ্ব হবে, কী প্রাণপ্রাচুর্য তাঁর! সবাইকে সন্তানের মতো স্নেহ করেন। ধমক দেন, গাল দেন, আবার আদরও করেন।
এশিয়ার বেশ কটি দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা এসেছেন। দু-চারজন ছাড়া সবাই থিয়েটারের লোক। এই কজনের মধ্যে একজন স্কুলশিক্ষক আর একজন সাংবাদিক। স্কুলশিক্ষক হংকংয়ের মক চিউ ইউ আর সাংবাদিক তাইওয়ানের চুং চাও। তাঁরা ভাবেননি যে কখনো থিয়েটার করবেন। কিন্তু ১৫ দিনের অনুশীলনের ফলে বিপুলভাবে আলোড়িত হলেন এবং জনগণের থিয়েটারের চিন্তাটাকে সারা এশিয়ায় কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন। হংকং, বাংলাদেশ, জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ভারত, নেপাল—সর্বত্রই নানা ধরনের উৎসব, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা শুরু হয়ে গেল। সবাই মিলে দুটি বড় ধরনের যৌথ নাটক প্রযোজিত হলো ও সারা এশিয়ায় অভিনয়ের ব্যবস্থাও হলো। একটি ‘বিগ উইন্ড’, অন্যটি ‘ক্রাই অব এশিয়া’। উদ্যোক্তার নাম এশিয়ান পিপলস থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল সোসাইটি।
সেই কোরিয়ার কর্মশালা থেকে যার সূচনা হলো, তারই ধারাবাহিকতায় এবার নেপালে হচ্ছে আন্তর্জাতিক উৎসব। আরণ্যককে আমন্ত্রণ জানানো হলো। আমাকে একটি একক অভিনয় করতে হবে। সেই সঙ্গে শামীমা শওকত লাভলীকে একটি কর্মশালা করাতে হবে। আমি একক অভিনয় তৈরি করলাম, নাম ‘তুম্বা ও প্রতিবেশী’। পরশুর আগের রাতে এশিয়ার নেপালের দর্শকদের সামনে নাটকটির অভিনয় করলাম এবং পরশু সকালেই নাটকটি নিয়ে আলোচনা হলো। সবার চোখেমুখে সূক্ষ্মতাও লক্ষ করলাম। অন্যান্য দেশের অভিনেতা-পরিচালকেরাও ছিলেন।
উৎসবের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে কাঠমান্ডুর একটি থিয়েটার। থিয়েটারের নাম ‘সর্বনাম থিয়েটার’। ‘সর্বনাম’ শব্দটি বাংলার এবং নেপালেরও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেপালি ও বাংলার বেশ মিল আছে। এখানে অবশ্য এত ভাষার ছড়াছড়ি—হংকং, জাপান, চীন, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভারতের বাংলা এবং উড়িয়া, সিঙ্গাপুর—সবাই নিজ ভাষাতেই অভিনয় করেন। তবে বাংলাদেশের মাধ্যমটা ইংরেজি।
সর্বনাম থিয়েটার শুধু থিয়েটারেরই ব্যবস্থা করে না, থিয়েটার শিক্ষকদেরও একটা ব্যবস্থা আছে এখানে। একটা পাহাড় কেটে তিনতলায় অভিনয়, প্রশিক্ষণ এবং একটা গ্যালারির ব্যবস্থাও রয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানা নয়, একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগ। প্রধান উদ্যোক্তা আশীষ এখানকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। কাঠমান্ডুতে সাতটি থিয়েটারের দল আছে, যাদের প্রত্যেকের ছোট থিয়েটারও আছে। প্রতিদিনই নাটক হয় এবং দর্শকে পূর্ণ থাকে।
নেপালে দীর্ঘ সময়জুড়ে আন্দোলন চলছে। রাজতন্ত্রের উচ্ছেদের জন্য তাদের আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন। একসময় নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র ছিল। এখন তা নেই, সম্পূর্ণভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। আশি ভাগ হিন্দু অধ্যুষিত দেশ হলেও সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করেছিলাম, তা-ও কালক্রমে কতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে এখন ধর্মরাষ্ট্র নির্মাণের মহড়া চলছে। তবে আমরা আশাবাদী, হয়তো তা সম্ভব হবে না।
একেবারেই নিজস্ব উদ্যোগে যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি থিয়েটার মঞ্চ করা সম্ভব, তা নেপাল থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। সেটি ছাড়া হয়তো কোনো উপায়ও নেই। শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কোনো কাজ করা যে সম্ভব নয়, তা বহুভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মহাপরিচালক হিসেবে যিনিই আসেন তিনিই তাঁর ইচ্ছেমতো প্রকল্প করতে থাকেন। এই প্রকল্পে তাঁর পছন্দমাফিক লোকদেরই বেছে নেন। তাই থিয়েটারের জন্য অবশ্যই উচিত নিজস্ব উদ্যোগে অভিনয়ের স্পেস তৈরি করা। সরকারের পরিবর্তনে নতুন শাসকগোষ্ঠী সব সময়ই শিল্প-সাহিত্যকে, বিশেষ করে বিরোধী চিন্তাকে শুধু জায়গাই দেবে না, বরং আক্রমণ করে বসবে।
বাংলাদেশে খোলা প্রাঙ্গণে অভিনয় করার জন্য অনেক নাটকের, সংগীতের, নৃত্যের মাধ্যম আছে। সেসব মাধ্যম অনেক জনপ্রিয়ও। কিন্তু সেখানেও প্রবল অসহিষ্ণু কিছু কিছু ধর্মীয় গুরু বিরূপ ভূমিকা গ্রহণ করে শিল্পীদের লাঞ্ছিত করে। কিন্তু কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কিছু কিছু মানুষের অশ্লীল বক্তৃতা জনসাধারণকে যে শিক্ষিত করে না, তা তারা পরোয়া করে না। বাউলদের ওপর হামলা, মাজার ভেঙে দেওয়া—এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে থাকে ব্যাপক অশিক্ষা। সেই শিক্ষা বা সংস্কৃতিচর্চা করাটা কেন সমাজের কাছে অগ্রহণযোগ্য হতে পারে, তা কল্পনার অতীত। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশে তা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থা ধসের দ্বারপ্রান্তেই শুধু আসেনি, ধর্মীয় শিক্ষকতা এসবকে ব্যাপকতা দিয়েছে, যা বাঙালির সংস্কৃতিধারণকে ব্যাপকভাবে শক্তিহীন করে দিয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে অপশাসন এবং ধর্মকে বর্ম করে অপশাসনের প্রক্রিয়া সমাজে এখনো চলমান। সংস্কৃতিচর্চা, বিশেষ করে থিয়েটারের চর্চা একটা নতুন বার্তা নিয়ে আসত সমাজে। সেসব সম্ভাবনার দিকে কারও তাকানোর উপায় নেই।
দুর্নীতি মানুষের নৈতিক মেরুদণ্ডটা ভেঙে দেয়। সেই ভেঙে দেওয়া মেরুদণ্ড যেকোনো অপরাধ করতে পারে। সেখান থেকে সমাজকে ফিরিয়ে আনার উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো সংস্কৃতির চর্চা এবং তা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা। আমরা কি এ দেশে তার জন্য প্রস্তুত হব না?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
মস্তিষ্ক বিকাশের কারণে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে বুদ্ধিমত্তা মানে চারপাশ থেকে সরাসরি শুধু তথ্য ধারণ করা নয়, সেই সঙ্গে বিচারবুদ্ধিও। যার মাধ্যমে তথ্যগুলোকে সমন্বয় সাধন ও ব্যবহার করা যায়, ভবিষ্যতের কোনো বিপদ সম্পর্কে আগে আভাস পাওয়া সম্ভব হয়, যা জিনের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো প্রয়ো
৮ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো জটিল। আমাদের যাপিত জীবনের অনেক কিছুতেই আমরা জটিলতার তারতম্য অনুভব করি। অঙ্ক জটিল, সমস্যা জটিল, সমাধান জটিল, মানবজীবন জটিল, জগৎসংসার জটিল—এমন বহুসংখ্যক জটিলতার মধ্যে আমাদের নিত্যবসবাস। এতসব জটিলতার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় কীভাবে এল জটিল শব্দটি আমরা কি তা জানি? আবার স
৮ ঘণ্টা আগেরাজধানীর গুলশানে মঙ্গলবার মধ্যরাতে আবার মব ভায়োলেন্স ঘটতে দেখা গেল। কোত্থেকে অভিযোগ এসেছে সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা না ভেবেই একদল মানুষ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে সাবেক এমপি তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে একটি বাড়িতে ভাঙচুর
৮ ঘণ্টা আগেবিএনপির একসময়ের ডাকসাইটে নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর একটি বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। তারেক রহমানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে খালেদা জিয়া নীরব থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সা কা চৌ বলেছিলেন, আগে কুকুর লেজ নাড়ত, এখন লেজ...
১ দিন আগে