Ajker Patrika

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি

সম্পাদকীয়
গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি

এক বছর আগে ৫ আগস্ট বাংলাদেশে অবিশ্বাস্য, অথচ বাস্তব এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল, যা নিশ্চয়ই ইতিহাস হয়ে থাকবে। কোনো বড় রাজনৈতিক দল বা সংগঠিত কোনো রাজনৈতিক শক্তির ডাকে নয়, মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র-তরুণদের কোটা নিয়ে ক্ষোভের পরিণতিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে একটি দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক সরকারের পতন ঘটার বিষয়টি অভাবিতই বটে। কেউ ভাবেনি, কোনো ভবিষ্যদ্বক্তাও ধারণা করেননি যে ক্ষমতার এত গভীরে প্রোথিত একটি শাসনব্যবস্থা এমন আকস্মিকভাবে টলে যাবে। কিন্তু ইতিহাস তো এমনই—ইতিহাস তৈরির জন্য একটি মুহূর্তই যথেষ্ট।

৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার সরকার পতনের সঙ্গে অতীতের কোনো গণ-অভ্যুত্থানের মিলের চেয়ে অমিল বেশি। যে সরকার দীর্ঘদিন দেশ চালিয়েছে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল গণতন্ত্রহীনতা, দমননীতি, দুর্নীতি আর দলীয়করণ—সেই সরকারের পতন ঘটানো কোনো বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে সম্ভব হয়নি, সম্ভব হয়েছে কিছু ছাত্র-তরুণের নেতৃত্বে। যে তরুণদের চাওয়া ছিল মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার, ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও সব মানুষের বাসযোগ্য নিরাপদ একটি দেশ। তারা সংগঠিত হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে, ছোট ছোট চক্রে। মাত্র এক মাস কয়েক দিনের মধ্যে ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন যে মহাবিস্ফোরণের দিকে এগিয়ে যাবে, তা অভাবিত ছিল।

এ কথাও সত্য, সরকার পতনের আশা করা হয়েছিল, যেভাবে দেশ চলছিল, সেভাবে আর চলবে না। বৈষম্য থাকবে না কোনো ক্ষেত্রে। ইনসাফ হবে সবকিছুর চালিকাশক্তি। তরুণদের আবেগ, সাহস ও নৈতিকতাকে পরিণত রাজনৈতিক রূপ দেওয়া হবে। দায়িত্বশীল একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হবে, যাদের প্রধান কাজ হবে জনগণের আস্থা ফেরানো এবং একটি সর্বজনীন নির্বাচনের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক সরকার গড়ে তোলা। পুরোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি না করা, প্রতিহিংসার রাজনীতি না চালানো এবং উদারতা ও গঠনমূলক রাজনীতির চর্চা শুরু করাই হবে যে সরকারের প্রধান দায়িত্ব।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন পাওয়া সরকারগুলোর একটি। তবে ড. ইউনূস আমেরিকায় গিয়ে যখন বললেন, এই অভ্যুত্থান একটি মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ, তখন কারা এই পরিকল্পনা করল, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন জেগেছে। দেখা যাচ্ছে, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি একদল মানুষ সরকার উচ্ছেদের জন্য নানা রকম প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় দাঁড়িয়ে মানুষ কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করছে? সে প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই জনগণ ইতিমধ্যেই নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ‘ছায়া’ দেখছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার সেই একই রকম স্বৈরতন্ত্র, জনগণের ওপর একই রকম বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন, একই রকম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পথেই হাঁটছে। এই সরকারের সময়ে মব সন্ত্রাস করে মানুষের বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী অনিরাপদ বোধ করছে। সরকারের মধ্যে কেউ কেউ মব সন্ত্রাসকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাহলে আমরা কি এক বছরে না এগিয়ে পিছনমুখী হলাম?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত