Ajker Patrika

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষকদের পদোন্নতির তোড়জোড়

  • অন্তত ২৩ জনকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু
  • এর মধ্যে সাতজন গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছিলেন
  • নিয়োগ বন্ধে ভিসিকে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের চিঠি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) অন্তত ২৩ শিক্ষককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে সাতজন জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতাকারী রয়েছেন। পদোন্নতির এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. তৌফিক আলম। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়া এসব শিক্ষকের পদোন্নতি ঠেকাতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ইতিমধ্যে উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে আজ রোববার থেকে বসছে সিলেকশন বোর্ড।

চিঠিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ‘আমরা ববির ফ্যাসিস্টবিরোধী শিক্ষার্থীরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম সিন্ডিকেটে জুলাই আন্দোলনে বিরোধিতাকারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শিক্ষকদের পুনর্বাসনের জন্য পদোন্নতি বোর্ড বসানো হচ্ছে। অথচ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে এসব ফ্যাসিস্টের বিচার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। সাবেক উপাচার্য শুচিতা শরমিন ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে আঁতাত করায় আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।’

অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের পাঁচ মাসেও উপাচার্য আগের বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ডের সদস্য পরিবর্তন করেননি। ৫০-এর কাছাকাছি পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও প্রভাষকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ না দিয়ে অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনে পদোন্নতি দিচ্ছেন। তড়িঘড়ি করে এক দিনে দুই বিভাগের বোর্ড বসিয়েছেন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবাঞ্ছিত শিক্ষক দিয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের ছাত্র আন্দোলন ও পরিকল্পনা সম্পাদক মোকাব্বেল শেখ বলেন, ‘ইউজিসির অনাপত্তি ছাড়াই রোববার থেকে ২৩ জনকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে বোর্ড বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন উপাচার্য। এদের মধ্যে অনেকেই জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন। বিচারের আগে তাঁদের পদোন্নতি চান না শিক্ষার্থীরা।’

শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরিফ বলেন, ‘এই ভিসি আসার পর দাবি ছিল, যাঁরা শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের বিচার করতে হবে। কিন্তু উনি কিছু করেননি। অথচ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচার হয়েছে।’

জুলাই আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই সময়ে তাঁদের বিরোধিতা করা অন্তত ৭ শিক্ষককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন উপাচার্য। এর মধ্যে ইতিহাস, মার্কেটিং, লোকপ্রশাসন, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রয়েছেন। অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে এক জোট হয়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন শিক্ষকেরা। এর মধ্যে মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. জামাল উদ্দিন পদোন্নতি না দিলে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মুহসিন উদ্দীন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভিসিকে চিঠি দিয়েছেন বলে শুনেছি। এবারের সিন্ডিকেটে জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতাকারী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যকে ক্ষমতা অর্পণ করেছে সিন্ডিকেট। উপাচার্য কমিটি করে কিংবা যেকোনো উপায়ে কারা ফ্যাসিস্ট তা চিহ্নিত করবেন। এর আগে এ বিষয়ে কমিটি করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। উপাচার্য এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না তা জানা নেই।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমরা অপরাধীর বিচার চাই, নিরপরাধীর নয়।’

মুহসিন উদ্দীন স্বীকার করেন, রোববার থেকে ২৩ জনের বেশি অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য বোর্ড বসছে। তবে অধ্যাপক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির অনাপত্তি দরকার আছে কি না, তা জানা নেই।

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য তৌফিক আলমকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলেও সাড়া দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক ফয়সাল মাহমুদ রুমি বলেন, ‘ভিসি স্যার এই মুহূর্তে কোথায় আছেন তা জানি না। তবে ভিসি স্যারকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত