মো. শামীম মিয়া
আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি, যেখানে মানুষের মূল্য আর তার চিন্তার গভীরতা, সততা বা মেধার ওপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে সে কতটা ‘ভাইরাল’ হতে পারে তার ওপর। ‘ভাইরাল’ এখন শুধু একটি শব্দ নয়, এটি এক প্রজন্মের মানদণ্ড, এক সমাজের সফলতার পরিমাপক। একসময়ের আদর্শনিষ্ঠ সমাজ আজ ক্লিক, ভিউ, লাইক আর ফলোয়ারের সংখ্যায় বিচার করছে মানুষকে। এই নতুন সংস্কৃতিতে মেধা, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ যেন হারিয়ে যাচ্ছে একদম নিঃশব্দে—যেভাবে গোধূলির আলো হারিয়ে যায় রাতের অন্ধকারে।
একসময় মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করত জ্ঞান, পরিশ্রম, সততা এবং নৈতিকতার মাধ্যমে। একজন শিক্ষক, গবেষক বা চিন্তাবিদ সমাজে শ্রদ্ধার আসনে বসতেন। এখন সে জায়গা দখল করে নিয়েছে এক মিনিটের ভিডিও নির্মাতা, নাটকীয় মুখভঙ্গির ইনফ্লুয়েন্সার কিংবা বিতর্ক সৃষ্টিকারী মুখোশধারী ব্যক্তিত্ব। সমাজে এখন আর প্রশ্ন হয় না—‘সে মানুষটা কেমন?’ বরং প্রশ্ন হয়—‘তার কত ফলোয়ার?’ আর এই প্রশ্নই আসলে আমাদের পতনের সবচেয়ে বড় সূচক।
আজকে একজন তরুণ তাঁর দিনরাতের পরিশ্রম দিয়ে যদি একটি গবেষণা প্রবন্ধ লেখেন, কেউ তা দেখে না। কিন্তু কেউ যদি কোনো চমকপ্রদ ভিডিও বানিয়ে কিছু নাটকীয় সংলাপ বলে, মুহূর্তেই সে ‘স্টার’। আমরা এখন এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে প্রচারণা সত্যের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে গেছে, আর জনপ্রিয়তা মেধার স্থান দখল করেছে।
এই ভাইরাল সংস্কৃতি আসলে কেবল একটি বিনোদন নয়, এটি সমাজের চিন্তা, নীতি ও নৈতিকতার মূলভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন মানুষ জ্ঞান বা মূল্যবোধ নয়, বরং ‘দেখানোর’ প্রতিযোগিতায় নামছে। আমরা তথ্যের চেয়ে ‘ইমপ্রেশন’ খুঁজি, চিন্তার চেয়ে ‘রিঅ্যাকশন’ চাই, যুক্তির চেয়ে ‘ভিউ’ দেখি। এই পরিবর্তন এত দ্রুত ঘটেছে যে আমরা বুঝতেই পারিনি একটা গোটা প্রজন্ম ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে চিন্তা করার ক্ষমতা।
মানুষ এখন আর জ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট নয়, বরং বিনোদনের প্রতি আসক্ত। সমাজে যে জায়গায় একসময় গুরুজনদের বক্তব্য, পণ্ডিতদের চিন্তা বা লেখকদের কলাম আলোচনার বিষয় হতো, এখন সেখানে স্থান পেয়েছে মেকি হাসি, সাজানো ঝগড়া আর মনগড়া কাহিনি। একজন মেধাবী মানুষ হয়তো সারা জীবন পরিশ্রম করে সমাজে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর কণ্ঠ চাপা পড়ে যায় জনপ্রিয়তার কোলাহলে।
এই ভাইরাল সংস্কৃতির পেছনে তিনটি বড় শক্তি কাজ করছে—প্রযুক্তির অ্যালগরিদম, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতা এবং সমাজে গভীর চিন্তার অভাব। সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম এমনভাবে কাজ করে যে যেসব বিষয় মানুষকে আবেগপ্রবণ করে, তা-ই বেশি প্রচার পায়। যত বেশি উত্তেজনাপূর্ণ, বিতর্কিত বা নাটকীয় কোনো কনটেন্ট, তত বেশি ‘রিচ’। ফলে মানুষ এখন বিষয়বস্তুর সত্যতা নয়, বরং তার ‘প্রভাব’ দেখেই প্রতিক্রিয়া দেয়।
অন্যদিকে, দর্শক এখন চিন্তা করতে চায় না, তারা চায় সহজ বিনোদন। একটা মজার ভিডিও দেখা বা কারও চরিত্র নিয়ে আলোচনা করা তাদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়, কারণ এতে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রম লাগে না। এই সহজ আনন্দের চাহিদাই ‘ভাইরাল অর্থনীতি’ তৈরি করেছে, যেখানে মিথ্যা, অতিরঞ্জন ও নাটকই আসল পণ্য। এই পরিবেশে সৎ ও মেধাবী মানুষেরা হয়ে পড়ছেন একেবারে নিঃসঙ্গ। তাঁদের কথা কেউ শুনতে চায় না, তাঁদের লেখা কেউ পড়ে না, কারণ তাঁরা ট্রেন্ডে নেই। সমাজে এখন নীরব হয়ে যাচ্ছে সেইসব মানুষ, যাঁদের সততা একসময় ছিল সমাজের নৈতিক শক্তি। তাঁরা আজ কোণঠাসা, কেউ কেউ হয়তো হতাশ। তাঁরা জানে, সত্য কথায় কেউ করতালি দেয় না; বরং তুচ্ছ, হাস্যকর কিংবা অশালীন কিছু বললে মুহূর্তেই হাজারো শেয়ার হয়।
ফলাফল হিসেবে জন্ম নিচ্ছে একধরনের সাংস্কৃতিক শূন্যতা। সততার জায়গায় এসেছে মুখোশ, মেধার জায়গায় এসেছে কৌশল এবং সত্যের জায়গায় এসেছে প্রচারণা। সমাজ এখন যেন এক বড় মঞ্চ, যেখানে সবাই অভিনয় করছে, কিন্তু কেউ নিজের চরিত্রে নেই। সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো, এই ভাইরাল সংস্কৃতি এখন আমাদের তরুণ প্রজন্মের চেতনায় প্রভাব ফেলছে। আজকের যুবক-যুবতীরা মনে করছে জীবনে সফলতা মানে জনপ্রিয়তা, আর জনপ্রিয়তা মানে ভাইরাল হওয়া। তাই তারা নিজেদের গড়ার চেয়ে, নিজেদের ‘দেখানোর’ প্রতিযোগিতায় নামছে। কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী আলো নিভে গেলে তারা যে শূন্যতা অনুভব করবে, তার জন্য কেউ প্রস্তুত নয়। ভাইরাল সংস্কৃতি কেবল বিনোদনের জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই, এটি ছুঁয়ে ফেলেছে আমাদের রাজনীতি, ধর্ম, শিক্ষা, এমনকি মানবিক সম্পর্ককেও। এখন ভালো কাজ করলেও সেটি পোস্ট না দিলে যেন তার কোনো মূল্য নেই। আমরা মানুষকে সাহায্য করি ক্যামেরার সামনে, কান্না করি লাইভে, আর প্রার্থনা করি দর্শকের লাইক পাওয়ার আশায়। মানবিকতা এখন যেন একপ্রকার অভিনয়ের অংশ, আর নৈতিকতা কেবল কনটেন্টের উপকরণ।
আমাদের রাজনীতিতেও দেখা যাচ্ছে এই সংস্কৃতির ছায়া। যোগ্যতা, চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ‘চমক’। একজন রাজনীতিকের বক্তব্য ভাইরাল হলেই তিনি আলোচনায় আসেন, নীতিনিষ্ঠ বক্তব্য দিলে নয়। ফলে রাজনীতি থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে যুক্তি ও সততার জায়গা।
এই ভাইরাল মানসিকতা একপ্রকার বিষক্রিয়া, যা ধীরে ধীরে আমাদের চিন্তা ও বিবেককে অবশ করে ফেলছে। আমরা এখন এমন এক সমাজে রূপ নিচ্ছি, যেখানে মানুষকে বিচার করা হয় তার ‘লাইক’ সংখ্যায়, তার কাজের প্রভাবে নয়। এই বিচারের মানদণ্ড যত বাড়ছে, ততই মেধাবীরা পিছিয়ে পড়ছে। কারণ তারা জানে, তাদের কাছে প্রচার নয়, সত্যটাই বড়। আর সেই সত্যই আজ সবচেয়ে কম বিক্রীত জিনিস।
তবে সব অন্ধকারের মাঝেও একটুখানি আলো এখনো আছে। কারণ ইতিহাস সাক্ষী, প্রচারণা কখনো চিরস্থায়ী হয়নি। সত্যই টিকে থেকেছে। সময়ের আবর্তে মিথ্যা ও অতিরঞ্জনের জোয়ার একদিন নিজেই থেমে যাবে, কিন্তু সত্য, মেধা ও সততা তখনো থাকবে। শুধু দরকার সমাজের মানুষকে নতুন করে ভাবানো—আমরা কাকে মূল্য দিচ্ছি, কাকে অনুসরণ করছি, কাকে রোল মডেল বানাচ্ছি।
আজ প্রয়োজন এক নতুন সামাজিক আন্দোলনের, যেখানে ভাইরাল হওয়া নয়, মূল্যবোধই হবে নেতৃত্বের মাপকাঠি। আমাদের সন্তানদের শেখাতে হবে—সাফল্য মানে কেবল খ্যাতি নয়, বরং দায়িত্ববোধ, জ্ঞান ও নৈতিক সাহস। তাদের বোঝাতে হবে, জীবনের আসল জয় ভিউ দিয়ে হয় না, হয় সম্মান দিয়ে; প্রচারণা দিয়ে নয়, হয় চরিত্র দিয়ে। যদি আমরা এই পরিবর্তন আনতে পারি, তবে হয়তো সমাজ আবার ফিরে পাবে সেই হারানো ভারসাম্য, যেখানে মানুষকে মাপা হবে তার সততা ও মেধায়—জনপ্রিয়তায় নয়। আজ মেধাবীরা হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারা মরে যায়নি। সততার আলো হয়তো ক্ষীণ, কিন্তু নিভে যায়নি। সেই আলো একদিন আবার ছড়িয়ে পড়বে, যদি কেউ একজন সাহস করে সেটি জ্বালিয়ে রাখে। আমাদের দায়িত্ব সেই সাহস দেখানো। কারণ, ভাইরাল নয়, মূল্যবোধই একদিন হবে মানুষের সত্যিকারের পরিচয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফুলছড়ি সরকারি কলেজ, গাইবান্ধা
আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি, যেখানে মানুষের মূল্য আর তার চিন্তার গভীরতা, সততা বা মেধার ওপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে সে কতটা ‘ভাইরাল’ হতে পারে তার ওপর। ‘ভাইরাল’ এখন শুধু একটি শব্দ নয়, এটি এক প্রজন্মের মানদণ্ড, এক সমাজের সফলতার পরিমাপক। একসময়ের আদর্শনিষ্ঠ সমাজ আজ ক্লিক, ভিউ, লাইক আর ফলোয়ারের সংখ্যায় বিচার করছে মানুষকে। এই নতুন সংস্কৃতিতে মেধা, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ যেন হারিয়ে যাচ্ছে একদম নিঃশব্দে—যেভাবে গোধূলির আলো হারিয়ে যায় রাতের অন্ধকারে।
একসময় মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করত জ্ঞান, পরিশ্রম, সততা এবং নৈতিকতার মাধ্যমে। একজন শিক্ষক, গবেষক বা চিন্তাবিদ সমাজে শ্রদ্ধার আসনে বসতেন। এখন সে জায়গা দখল করে নিয়েছে এক মিনিটের ভিডিও নির্মাতা, নাটকীয় মুখভঙ্গির ইনফ্লুয়েন্সার কিংবা বিতর্ক সৃষ্টিকারী মুখোশধারী ব্যক্তিত্ব। সমাজে এখন আর প্রশ্ন হয় না—‘সে মানুষটা কেমন?’ বরং প্রশ্ন হয়—‘তার কত ফলোয়ার?’ আর এই প্রশ্নই আসলে আমাদের পতনের সবচেয়ে বড় সূচক।
আজকে একজন তরুণ তাঁর দিনরাতের পরিশ্রম দিয়ে যদি একটি গবেষণা প্রবন্ধ লেখেন, কেউ তা দেখে না। কিন্তু কেউ যদি কোনো চমকপ্রদ ভিডিও বানিয়ে কিছু নাটকীয় সংলাপ বলে, মুহূর্তেই সে ‘স্টার’। আমরা এখন এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে প্রচারণা সত্যের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে গেছে, আর জনপ্রিয়তা মেধার স্থান দখল করেছে।
এই ভাইরাল সংস্কৃতি আসলে কেবল একটি বিনোদন নয়, এটি সমাজের চিন্তা, নীতি ও নৈতিকতার মূলভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন মানুষ জ্ঞান বা মূল্যবোধ নয়, বরং ‘দেখানোর’ প্রতিযোগিতায় নামছে। আমরা তথ্যের চেয়ে ‘ইমপ্রেশন’ খুঁজি, চিন্তার চেয়ে ‘রিঅ্যাকশন’ চাই, যুক্তির চেয়ে ‘ভিউ’ দেখি। এই পরিবর্তন এত দ্রুত ঘটেছে যে আমরা বুঝতেই পারিনি একটা গোটা প্রজন্ম ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে চিন্তা করার ক্ষমতা।
মানুষ এখন আর জ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট নয়, বরং বিনোদনের প্রতি আসক্ত। সমাজে যে জায়গায় একসময় গুরুজনদের বক্তব্য, পণ্ডিতদের চিন্তা বা লেখকদের কলাম আলোচনার বিষয় হতো, এখন সেখানে স্থান পেয়েছে মেকি হাসি, সাজানো ঝগড়া আর মনগড়া কাহিনি। একজন মেধাবী মানুষ হয়তো সারা জীবন পরিশ্রম করে সমাজে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর কণ্ঠ চাপা পড়ে যায় জনপ্রিয়তার কোলাহলে।
এই ভাইরাল সংস্কৃতির পেছনে তিনটি বড় শক্তি কাজ করছে—প্রযুক্তির অ্যালগরিদম, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতা এবং সমাজে গভীর চিন্তার অভাব। সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম এমনভাবে কাজ করে যে যেসব বিষয় মানুষকে আবেগপ্রবণ করে, তা-ই বেশি প্রচার পায়। যত বেশি উত্তেজনাপূর্ণ, বিতর্কিত বা নাটকীয় কোনো কনটেন্ট, তত বেশি ‘রিচ’। ফলে মানুষ এখন বিষয়বস্তুর সত্যতা নয়, বরং তার ‘প্রভাব’ দেখেই প্রতিক্রিয়া দেয়।
অন্যদিকে, দর্শক এখন চিন্তা করতে চায় না, তারা চায় সহজ বিনোদন। একটা মজার ভিডিও দেখা বা কারও চরিত্র নিয়ে আলোচনা করা তাদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়, কারণ এতে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রম লাগে না। এই সহজ আনন্দের চাহিদাই ‘ভাইরাল অর্থনীতি’ তৈরি করেছে, যেখানে মিথ্যা, অতিরঞ্জন ও নাটকই আসল পণ্য। এই পরিবেশে সৎ ও মেধাবী মানুষেরা হয়ে পড়ছেন একেবারে নিঃসঙ্গ। তাঁদের কথা কেউ শুনতে চায় না, তাঁদের লেখা কেউ পড়ে না, কারণ তাঁরা ট্রেন্ডে নেই। সমাজে এখন নীরব হয়ে যাচ্ছে সেইসব মানুষ, যাঁদের সততা একসময় ছিল সমাজের নৈতিক শক্তি। তাঁরা আজ কোণঠাসা, কেউ কেউ হয়তো হতাশ। তাঁরা জানে, সত্য কথায় কেউ করতালি দেয় না; বরং তুচ্ছ, হাস্যকর কিংবা অশালীন কিছু বললে মুহূর্তেই হাজারো শেয়ার হয়।
ফলাফল হিসেবে জন্ম নিচ্ছে একধরনের সাংস্কৃতিক শূন্যতা। সততার জায়গায় এসেছে মুখোশ, মেধার জায়গায় এসেছে কৌশল এবং সত্যের জায়গায় এসেছে প্রচারণা। সমাজ এখন যেন এক বড় মঞ্চ, যেখানে সবাই অভিনয় করছে, কিন্তু কেউ নিজের চরিত্রে নেই। সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো, এই ভাইরাল সংস্কৃতি এখন আমাদের তরুণ প্রজন্মের চেতনায় প্রভাব ফেলছে। আজকের যুবক-যুবতীরা মনে করছে জীবনে সফলতা মানে জনপ্রিয়তা, আর জনপ্রিয়তা মানে ভাইরাল হওয়া। তাই তারা নিজেদের গড়ার চেয়ে, নিজেদের ‘দেখানোর’ প্রতিযোগিতায় নামছে। কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী আলো নিভে গেলে তারা যে শূন্যতা অনুভব করবে, তার জন্য কেউ প্রস্তুত নয়। ভাইরাল সংস্কৃতি কেবল বিনোদনের জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই, এটি ছুঁয়ে ফেলেছে আমাদের রাজনীতি, ধর্ম, শিক্ষা, এমনকি মানবিক সম্পর্ককেও। এখন ভালো কাজ করলেও সেটি পোস্ট না দিলে যেন তার কোনো মূল্য নেই। আমরা মানুষকে সাহায্য করি ক্যামেরার সামনে, কান্না করি লাইভে, আর প্রার্থনা করি দর্শকের লাইক পাওয়ার আশায়। মানবিকতা এখন যেন একপ্রকার অভিনয়ের অংশ, আর নৈতিকতা কেবল কনটেন্টের উপকরণ।
আমাদের রাজনীতিতেও দেখা যাচ্ছে এই সংস্কৃতির ছায়া। যোগ্যতা, চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ‘চমক’। একজন রাজনীতিকের বক্তব্য ভাইরাল হলেই তিনি আলোচনায় আসেন, নীতিনিষ্ঠ বক্তব্য দিলে নয়। ফলে রাজনীতি থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে যুক্তি ও সততার জায়গা।
এই ভাইরাল মানসিকতা একপ্রকার বিষক্রিয়া, যা ধীরে ধীরে আমাদের চিন্তা ও বিবেককে অবশ করে ফেলছে। আমরা এখন এমন এক সমাজে রূপ নিচ্ছি, যেখানে মানুষকে বিচার করা হয় তার ‘লাইক’ সংখ্যায়, তার কাজের প্রভাবে নয়। এই বিচারের মানদণ্ড যত বাড়ছে, ততই মেধাবীরা পিছিয়ে পড়ছে। কারণ তারা জানে, তাদের কাছে প্রচার নয়, সত্যটাই বড়। আর সেই সত্যই আজ সবচেয়ে কম বিক্রীত জিনিস।
তবে সব অন্ধকারের মাঝেও একটুখানি আলো এখনো আছে। কারণ ইতিহাস সাক্ষী, প্রচারণা কখনো চিরস্থায়ী হয়নি। সত্যই টিকে থেকেছে। সময়ের আবর্তে মিথ্যা ও অতিরঞ্জনের জোয়ার একদিন নিজেই থেমে যাবে, কিন্তু সত্য, মেধা ও সততা তখনো থাকবে। শুধু দরকার সমাজের মানুষকে নতুন করে ভাবানো—আমরা কাকে মূল্য দিচ্ছি, কাকে অনুসরণ করছি, কাকে রোল মডেল বানাচ্ছি।
আজ প্রয়োজন এক নতুন সামাজিক আন্দোলনের, যেখানে ভাইরাল হওয়া নয়, মূল্যবোধই হবে নেতৃত্বের মাপকাঠি। আমাদের সন্তানদের শেখাতে হবে—সাফল্য মানে কেবল খ্যাতি নয়, বরং দায়িত্ববোধ, জ্ঞান ও নৈতিক সাহস। তাদের বোঝাতে হবে, জীবনের আসল জয় ভিউ দিয়ে হয় না, হয় সম্মান দিয়ে; প্রচারণা দিয়ে নয়, হয় চরিত্র দিয়ে। যদি আমরা এই পরিবর্তন আনতে পারি, তবে হয়তো সমাজ আবার ফিরে পাবে সেই হারানো ভারসাম্য, যেখানে মানুষকে মাপা হবে তার সততা ও মেধায়—জনপ্রিয়তায় নয়। আজ মেধাবীরা হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারা মরে যায়নি। সততার আলো হয়তো ক্ষীণ, কিন্তু নিভে যায়নি। সেই আলো একদিন আবার ছড়িয়ে পড়বে, যদি কেউ একজন সাহস করে সেটি জ্বালিয়ে রাখে। আমাদের দায়িত্ব সেই সাহস দেখানো। কারণ, ভাইরাল নয়, মূল্যবোধই একদিন হবে মানুষের সত্যিকারের পরিচয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফুলছড়ি সরকারি কলেজ, গাইবান্ধা
জুলাই সনদ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি, নারীনীতি, নির্বাচনী প্রতীক ইস্যু থেকে শুরু করে ফান্ডিং ও ‘মেধা বনাম কোটার’ বিতর্ক—এসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা..
৪ ঘণ্টা আগেহাসনাত কাইয়ুম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি। হাওরের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে কারাভোগ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
৬ ঘণ্টা আগেবিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতার একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়ার পর তা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। যদিও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি এডিট করা, তবু যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে এই নেতাকে...
৬ ঘণ্টা আগেআমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমান বিরোধ প্রসঙ্গে গালাগালিকে গলাগলিতে রূপান্তরিত করতে বলেছিলেন একদা। তাঁর এই পরামর্শ কতটা কাজে লেগেছে, তা নিয়ে আর মন্তব্য না করাই ভালো। ন্যূনতম সহনশীলতারও মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিয়েও ভাবছে মানুষ। রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি...
১ দিন আগে