Ajker Patrika

গালাগাল

সম্পাদকীয়
গালাগাল

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমান বিরোধ প্রসঙ্গে গালাগালিকে গলাগলিতে রূপান্তরিত করতে বলেছিলেন একদা। তাঁর এই পরামর্শ কতটা কাজে লেগেছে, তা নিয়ে আর মন্তব্য না করাই ভালো। ন্যূনতম সহনশীলতারও মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিয়েও ভাবছে মানুষ। রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেওয়া হচ্ছে এবং গালি দেওয়াই উচিত বলে বয়ান তৈরি করা হচ্ছে। উত্তেজিত হলে নাকি ইচ্ছেমতো গাল দেওয়া যায়।

আজকের পত্রিকার ফিচার বিভাগ থেকে একটি বিচিত্র লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম ‘অনলাইন গালির সংস্কৃতি: ইংরেজিতে কীভাবে গালি দেন আপনি’। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে ইন্টারনেটের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হচ্ছে ইংরেজি। পৃথিবীজুড়ে এই ভাষায় কে কাকে কতটা গালাগাল করে, তা নিয়েই ফিচারটি। যাঁরা সভ্য-ভব্য ইংরেজির চর্চা করে এসেছেন সারা জীবন, শেক্‌সপিয়ার, চার্লস ডিকেন্সের ভাষাকে আয়ত্ত করেছেন, তাঁরা কিন্তু এই ভার্চুয়াল ইংরেজির কাছে এসে বিপাকে পড়বেন। কারণ, এই ইংরেজিটা বইয়ের ইংরেজি থেকে অনেক দূরের ইংরেজি। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ ইংরেজিতে ভার্চুয়াল জগতে যা লেখেন, তাতে গালাগালের প্রবণতা বাড়ছে।

এ ব্যাপারে ফিচারটিতে বেঞ্জামিন বার্গেনের একটি উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। লেখক বলছেন, ‘আগে আপনি যে মিডিয়া দেখতেন, তা ছিল অত্যন্ত সম্পাদিত। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে হঠাৎ আমরা মানুষের ঘরোয়া ভাষা সরাসরি দেখতে পাচ্ছি। যখন আমরা মানুষের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ দেখি এবং তাতে গালিগালাজ বেশি থাকে। এর মানে হলো, আমরা সেগুলোর সঙ্গে আরও বেশি পরিচিত হচ্ছি, যা এটিকে স্বাভাবিক করে তুলেছে। ফলে মানুষজন এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়, যে রুচির আবহ তৈরি হয় আনুষ্ঠানিক ভাষায়, তা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই বক্তা, তাই যে যার রুচির প্রকাশ ঘটাতে পারছে সেখানে। তাই ভাষার শালীনতা রক্ষা করার চেষ্টাও কেউ করে না।

বাস্তবজীবনে ক্ষমতাবান ও দুর্বলদের মধ্যে যে দূরত্ব থাকে, তাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় ভার্চুয়াল জগতে। তখন আক্রমণাত্মক ভাষাকে মোক্ষম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই গালাগালই তাকে ‘ক্ষমতার স্বাদ’ দেয়। ভার্চুয়াল জগতে মন্তব্য, লাইক, শেয়ার ইত্যাদি ‘মব মেন্টালিটি’ তৈরি করে। একদল মানুষ গালাগাল শুরু করলে অন্যরাও তা দলগতভাবে সমর্থন দিতে থাকে। ফলে এই দলবদ্ধ আবেগ তাদের ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধিকেও আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর অ্যালগরিদমের উসকানি তো আছেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যালগরিদম এমন পোস্টকে সামনে নিয়ে আসে, যেগুলোতে বিতর্ক, উত্তেজনা বা রাগের প্রকাশ রয়েছে। ‘মনোযোগ’ আকর্ষণই পুঁজিবাজারের পণ্য হয়ে উঠেছে।

পুরোনো মূল্যবোধগুলো আক্রমণের শিকার হচ্ছে এখন। পাল্টে যাওয়া বিশ্ব পরিস্থিতিতে স্ল্যাং বা গালাগাল ‘স্বাভাবিক প্রকাশভঙ্গি’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যাবে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। আনুষ্ঠানিক ভাষার প্রয়োজনীয়তা থাকবে কি না, সেটাও সময়ই বলে দেবে। সুতরাং বলতেই হয়, দেখার অনেক বাকি আছে। দেখা যাক পানি কোন দিকে গড়ায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪৫ বছর ছদ্মবেশে বিলাসী জীবন, অবশেষে বিচারের মুখে গুম-খুনের হোতা গোয়েন্দাপ্রধান

শাহজালাল বিমানবন্দরে ভয়াবহ আগুন, ফ্লাইট ওঠানামা স্থগিত

আজকের রাশিফল: প্রেমের সম্পর্কে গভীরতা বাড়বে, পকেটে আসবে টাকা

মা-বাবাকে খুন করে জেলে রাজু, অনিশ্চিত স্ত্রী ও ৯ মাসের শিশুকন্যার ভবিষ্যৎ

চট্টগ্রাম বন্দরে এন্ট্রি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ট্রাক-ট্রেইলার প্রবেশ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত