Ajker Patrika

সঞ্চয়পত্রের সুদহার

সম্পাদকীয়
সঞ্চয়পত্রের সুদহার

দেশের অনেক মানুষ সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে সংসারে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আনতে চায়। এ কারণে সরকার পরিচালিত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে থাকে। যেখানে সরকারের দায়িত্ব নাগরিকের ভালো-মন্দ দেখভালের, সেখানে সরকারই সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার এত দিন সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে সরকার মূলত ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সস্তায় ঋণ গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে। যেহেতু এসব বিল-বন্ডের গড় সুদহার বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশ কম, সেহেতু সরকার আবারও সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সরকারের ঋণের ব্যয় সাশ্রয় হবে। কিন্তু বিপদে পড়বেন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। যাঁরা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, তাঁরা বড় ধরনের আর্থিক চাপের মুখে পড়বেন।

সরকার মূলত ঋণের ব্যয়ভার কমানো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পালনের তাগিদে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা কার্যকরী হবে আগামী জানুয়ারি থেকে। বর্তমান সুদহার আরও দেড় শতাংশ কমানো হবে। এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০২১ সাল থেকে কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির চাপ যখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে, তখন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানো এই শ্রেণিটিকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিতে দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ক্রমেই নেতিবাচক ধারার দিকে যাচ্ছে। গত জুলাই মাসে নিট বিক্রি কমেছে ৪১ শতাংশের বেশি। মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য বিকল্প খুঁজছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও চাইছে, মানুষের আগ্রহ সঞ্চয়পত্র থেকে ট্রেজারি বিল বা বন্ডের মতো বিকল্প বিনিয়োগের উৎসের দিকে যাক।

সরকারের এই কৌশলগত সিদ্ধান্তকে প্রশংসনীয় বলা যেত, যদি এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য বিকল্প, নিরাপদ ও উচ্চ মুনাফার বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চ, সেখানে কেবল সুদের হার কমানো একটি অবিবেচনাপ্রসূত ব্যাপার বলতে হবে। সরকার সস্তায় ঋণ নিতে গিয়ে নাগরিকের একটি বৃহৎ অংশকে আর্থিক নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও আর্থিক প্রভাব পুরো অর্থনৈতিক খাতে পড়বে। এতে সাধারণ মানুষ এবং সঞ্চয়পত্রের টাকার ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনে আর্থিক দুর্গতি সৃষ্টি হবে।

এখন সরকারের উচিত হবে ঋণের ব্যয় কমানোর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথবা অন্যান্য নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলা। শুধু ট্রেজারি বিল-বন্ডে আগ্রহ না দেখিয়ে বা সেগুলোর ওপর জোর না দিয়ে, সাধারণ নাগরিকের সঞ্চয়ের প্রতি আস্থা বজায় রাখার বিষয়টি সরকারের গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা দরকার। এতে সাধারণ নাগরিকেরই উপকার হবে। সাধারণ জনগণকে আর্থিক সমস্যার মধ্যে ফেলে দেওয়া সরকারের জন্য কোনোভাবেই যথার্থ বিবেচনা হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত