কাজী আশফিক রাসেল
জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে রবার্ট গাব্রিয়েল মুগাবে ছিলেন একসময়ের মহানায়ক। তবে স্বাধীনতার পর ক্ষমতার মোহ ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে তিনি নিজ জাতির মানুষের কাছে ঘৃণিত এক শাসকে পরিণত হন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এ রকম কথা বলা যায়। ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত যিনি ছিলেন গণমানুষের আশার আলো, সংগ্রামের প্রতীক। তিনি জীবনের অনেকটা সময় ধরে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের মানুষের কাছে অবিসংবাদিত নেতার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে তাঁর শাসনকাল সে রকম উজ্জ্বল ছিল না।
এই রক্তাক্ত অতীত থেকে শিক্ষা না নেওয়ার ফলেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বৃত্ত আজও ভাঙছে না। স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রতিটি সংগ্রাম যেন কেবল শাসকের মুখ বদলের নামান্তর হয়ে থাকছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অনন্য পালাবদল। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ, ছাত্র, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শক্তিগুলো ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে এই পরিবর্তনের পথ সুগম করে। মানুষের মনে আশা জাগে, এবার সত্যিকার অর্থেই কিছু বদলাবে। কিন্তু সেই আশা আজ ধীরে ধীরে বিষাদে রূপ নিচ্ছে। কারণ, এই আন্দোলনের ধারক ও বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ থেকে যে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হয়েছে, তাদের তরুণ নেতারা ইতিমধ্যেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। জনগণের রক্ত, ঘাম ও চোখের জলে অর্জিত একটি স্বপ্নকে এখন তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার তৈরির সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন, যেমনটি করেছিল বিগত সরকার।
আমার এক শিক্ষক প্রায়ই বলতেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে একটি ডাইনিং টেবিল। এখানে যারাই চেয়ারে বসে, তারাই খেতে চায়।’ আজ সেই কথা যেন বারবার সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ তার আরাধ্য ভূমিকা শেষ করে স্বতঃসিদ্ধভাবে বিলুপ্ত হবে, ইতিহাসে জায়গা করে নেবে, বিতর্ক এড়িয়ে চলবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিপরীতে এ প্ল্যাটফর্মটি রূপ নিচ্ছে চেতনা-ব্যবসার নতুন দোকানে।
আওয়ামী লীগ যেভাবে মুক্তিযুদ্ধকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে গোটা জাতিকে জিম্মি করেছিল, সেই একই পথে হাঁটছে এই নতুন শক্তি। শুধু মুখোশ পাল্টেছে, চরিত্র নয়। আর ইতিহাস আমাদের বলে, এই রকম চেতনা-ব্যবসায়ীদের পতন অনিবার্য। শেখ মুজিবের ‘বাকশাল’ যেমন রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শ্বাসরোধ করেছিল, তেমনি যদি এনসিপি নিজেদের বিপ্লবী পরিচয়কে পুঁজি করে স্বেচ্ছাচারিতা চালায়, তাহলে তাদের পরিণতিও ইতিহাসের ধুলোয় হারিয়ে যাওয়া এক ‘ট্র্যাজেডি’ হবে।
আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম একুশে পদক গ্রহণের সময় একটি কথা পাঞ্জাবির পেছনে লিখেছিলেন: ‘এই বিপ্লবও কারও বাপের না’। এটি কোনো কাব্যিক উক্তি নয়, বরং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক অনমনীয় সতর্কবার্তা। কারণ এই গণ-আন্দোলন ছিল না কোনো সংগঠনের একক অর্জন, কোনো দলের মালিকানাভুক্ত প্রজেক্ট নয়, এটি ছিল জনগণের দীর্ঘ বঞ্চনার বিস্ফোরণ।
গণ-অভ্যুত্থান তখনই টিকে থাকে, যখন তা নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও গণমুখীনতাকে লালন করে। ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীবাজি যদি এর ওপর ভর করে, তাহলে সেই গণ-অভ্যুত্থান নিজেই নিজের মৃত্যু ঘটায়। আজকের তরুণ নেতৃত্ব যদি এই ইতিহাস ভুলে যান, তবে তাঁদের ভাগ্য হবে পতিত স্বৈরাচারদের মতোই।
তাই, এখনই সময় আত্মসমালোচনার। এখনই সময় নিজেদের প্রশ্ন করার, ‘কেন এই গণ-আন্দোলন’?, ‘কার জন্য এই সংগ্রাম’? যে গণ-অভ্যুত্থান বহু রক্ত ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত, তাকে কোনো দল, গোষ্ঠী বা নেতা একক মালিকানা দাবি করতে পারেন না। ‘জুলাই আন্দোলন’ এই দেশের প্রতিটি প্রান্তিক মানুষের, প্রতিটি শহীদের, প্রতিটি প্রতিবাদীর। তাই এই অভ্যুত্থানকে ধ্বংস হতে না দিতে চাইলে আজকের তরুণ নেতৃত্বকে হতে হবে আত্মজিজ্ঞাসাপূর্ণ, নৈতিকতায় অটল এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক। নইলে ইতিহাস আরেকটি চক্রে ঘুরে আসবে, আমরা আবার প্রতারিত হব, আর বিপ্লব হারাবে আত্মা।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে রবার্ট গাব্রিয়েল মুগাবে ছিলেন একসময়ের মহানায়ক। তবে স্বাধীনতার পর ক্ষমতার মোহ ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে তিনি নিজ জাতির মানুষের কাছে ঘৃণিত এক শাসকে পরিণত হন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এ রকম কথা বলা যায়। ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত যিনি ছিলেন গণমানুষের আশার আলো, সংগ্রামের প্রতীক। তিনি জীবনের অনেকটা সময় ধরে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের মানুষের কাছে অবিসংবাদিত নেতার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে তাঁর শাসনকাল সে রকম উজ্জ্বল ছিল না।
এই রক্তাক্ত অতীত থেকে শিক্ষা না নেওয়ার ফলেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বৃত্ত আজও ভাঙছে না। স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রতিটি সংগ্রাম যেন কেবল শাসকের মুখ বদলের নামান্তর হয়ে থাকছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অনন্য পালাবদল। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ, ছাত্র, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শক্তিগুলো ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে এই পরিবর্তনের পথ সুগম করে। মানুষের মনে আশা জাগে, এবার সত্যিকার অর্থেই কিছু বদলাবে। কিন্তু সেই আশা আজ ধীরে ধীরে বিষাদে রূপ নিচ্ছে। কারণ, এই আন্দোলনের ধারক ও বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ থেকে যে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হয়েছে, তাদের তরুণ নেতারা ইতিমধ্যেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। জনগণের রক্ত, ঘাম ও চোখের জলে অর্জিত একটি স্বপ্নকে এখন তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার তৈরির সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন, যেমনটি করেছিল বিগত সরকার।
আমার এক শিক্ষক প্রায়ই বলতেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে একটি ডাইনিং টেবিল। এখানে যারাই চেয়ারে বসে, তারাই খেতে চায়।’ আজ সেই কথা যেন বারবার সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ তার আরাধ্য ভূমিকা শেষ করে স্বতঃসিদ্ধভাবে বিলুপ্ত হবে, ইতিহাসে জায়গা করে নেবে, বিতর্ক এড়িয়ে চলবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিপরীতে এ প্ল্যাটফর্মটি রূপ নিচ্ছে চেতনা-ব্যবসার নতুন দোকানে।
আওয়ামী লীগ যেভাবে মুক্তিযুদ্ধকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে গোটা জাতিকে জিম্মি করেছিল, সেই একই পথে হাঁটছে এই নতুন শক্তি। শুধু মুখোশ পাল্টেছে, চরিত্র নয়। আর ইতিহাস আমাদের বলে, এই রকম চেতনা-ব্যবসায়ীদের পতন অনিবার্য। শেখ মুজিবের ‘বাকশাল’ যেমন রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শ্বাসরোধ করেছিল, তেমনি যদি এনসিপি নিজেদের বিপ্লবী পরিচয়কে পুঁজি করে স্বেচ্ছাচারিতা চালায়, তাহলে তাদের পরিণতিও ইতিহাসের ধুলোয় হারিয়ে যাওয়া এক ‘ট্র্যাজেডি’ হবে।
আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম একুশে পদক গ্রহণের সময় একটি কথা পাঞ্জাবির পেছনে লিখেছিলেন: ‘এই বিপ্লবও কারও বাপের না’। এটি কোনো কাব্যিক উক্তি নয়, বরং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক অনমনীয় সতর্কবার্তা। কারণ এই গণ-আন্দোলন ছিল না কোনো সংগঠনের একক অর্জন, কোনো দলের মালিকানাভুক্ত প্রজেক্ট নয়, এটি ছিল জনগণের দীর্ঘ বঞ্চনার বিস্ফোরণ।
গণ-অভ্যুত্থান তখনই টিকে থাকে, যখন তা নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও গণমুখীনতাকে লালন করে। ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীবাজি যদি এর ওপর ভর করে, তাহলে সেই গণ-অভ্যুত্থান নিজেই নিজের মৃত্যু ঘটায়। আজকের তরুণ নেতৃত্ব যদি এই ইতিহাস ভুলে যান, তবে তাঁদের ভাগ্য হবে পতিত স্বৈরাচারদের মতোই।
তাই, এখনই সময় আত্মসমালোচনার। এখনই সময় নিজেদের প্রশ্ন করার, ‘কেন এই গণ-আন্দোলন’?, ‘কার জন্য এই সংগ্রাম’? যে গণ-অভ্যুত্থান বহু রক্ত ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত, তাকে কোনো দল, গোষ্ঠী বা নেতা একক মালিকানা দাবি করতে পারেন না। ‘জুলাই আন্দোলন’ এই দেশের প্রতিটি প্রান্তিক মানুষের, প্রতিটি শহীদের, প্রতিটি প্রতিবাদীর। তাই এই অভ্যুত্থানকে ধ্বংস হতে না দিতে চাইলে আজকের তরুণ নেতৃত্বকে হতে হবে আত্মজিজ্ঞাসাপূর্ণ, নৈতিকতায় অটল এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক। নইলে ইতিহাস আরেকটি চক্রে ঘুরে আসবে, আমরা আবার প্রতারিত হব, আর বিপ্লব হারাবে আত্মা।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আজকাল সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের ছোট ছোট ভিডিও থাকে। কিছু থাকে নিছক হাসির, কিছু থাকে সামাজিক বক্তব্যনির্ভর। ছেলে-বুড়ো অনেককেই দেখি সেইসব রিলস বা শর্টসে বুঁদ হয়ে থাকতে।
২ ঘণ্টা আগেএক বছর আগে ৫ আগস্ট বাংলাদেশে অবিশ্বাস্য, অথচ বাস্তব এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল, যা নিশ্চয়ই ইতিহাস হয়ে থাকবে। কোনো বড় রাজনৈতিক দল বা সংগঠিত কোনো রাজনৈতিক শক্তির ডাকে নয়, মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র-তরুণদের কোটা নিয়ে ক্ষোভের পরিণতিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে একটি দীর্ঘকালীন...
২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
১ দিন আগেবর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
১ দিন আগে