Ajker Patrika

নারী নয়, মানুষ

সম্পাদকীয়
নারী নয়, মানুষ

খুন করাটা যেন কোনো ব্যাপারই নয়! ইট হাতে একের পর এক আঘাতে স্ত্রীকে খুন করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেই হলো! এ যেন দারুণ এক রোমাঞ্চকর ব্যাপার!
রাজিয়া নামের যে মেয়েটি স্বামী আরিফ মুন্সির ইটের আঘাতে মারা গেলেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তাঁর স্বামী ঠান্ডা মাথায় স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন। মাদকাসক্ত আরিফ যৌতুকসহ নানা কারণে মারধর করতেন রাজিয়াকে।

আমরা যাঁরা ‘আজকের পত্রিকায়’ বৃহস্পতিবার এই সংবাদটি পড়েছি, তাঁদের কাছে ঘটনাটি নতুন নয়। শরীয়তপুরের বাঘিয়া গ্রামে না ঘটে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারত বাংলাদেশের যেকোনো জেলার যেকোনো শহরে বা গ্রামে। যেকোনো পেশার, যেকোনো বয়সের, যেকোনো সামাজিক স্তরের স্বামী তাঁর স্ত্রীকে এ রকম অবলীলায় হত্যা করতে পারতেন! সামাজিক অভিজ্ঞতায় যৌতুক নিয়ে কিংবা নারী নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদের দেখা পাওয়া যায় বটে; কিন্তু প্রতিটি পরিবারে ঢুঁ মারলেই দেখা যাবে, পুরুষতন্ত্র কীভাবে জেঁক বসেছে সবখানে।

নারী অধিকার নিয়ে কত সেমিনার আর সম্মেলন হয়ে গেল, কত নারী-পুরুষ নারী অধিকার সংরক্ষণের জন্য শপথ নিলেন; কিন্তু বাস্তব অবস্থা পাল্টাল কতটা? এখনো দেশের যেকোনো জায়গায় নারীকে অপমান সয়ে যেতে হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হচ্ছে। একই দিন একই পত্রিকায় রয়েছে আরেকটি খবর। বুয়েটের কয়েকজন ছাত্র তাঁদেরই এক সহপাঠী মেয়েকে যৌন হয়রানি করেছে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কোনো প্রতিকার হবে কি না, সেটা দেখা যাবে পরে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী পুরুষ শিক্ষার্থীদের মন ও মননে নারীবিষয়ক চিন্তাধারা কোন স্রোতে বহমান–সেটাও কিন্তু এ ধরনের ঘটনায় পরিষ্কার হয়। ফেসবুকের মন্তব্য বা মেসেঞ্জারের কথাবার্তা যে কত ভয়ংকর হতে পারে, সেটা এখন আর কোনো গোপন খবর নয়। মেয়েদের ইনবক্সে পুরুষেরা (কাছের বন্ধুও থাকতে পারে এদের মধ্যে) কী ধরনের বার্তা পাঠায়, সেটা নাকি কহতব্য নয়।

বাইরে থেকে যেসব পুরুষকে মনে হয় স্মার্ট, সহানুভূতিশীল, মানবিক–ইনবক্সে তাদেরই পাওয়া যায় ভিন্নরূপে। মানুষকে মানুষ না ভেবে নারী-পুরুষে বিভক্ত করলে, পুরুষতন্ত্রকে জীবন দর্শন হিসেবে মেনে নিলে, সমাজের কোনো স্তরেই নারী নিরাপদ থাকে না। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, রাষ্ট্রের বিভিন্ন বড় পদে নারীরা জায়গা করে নিলেও নারীর ক্ষমতায়ন আসলে এখনো সোনার পাথরবাটি হয়েই থেকে গেছে। পুরুষতান্ত্রিক মস্তিষ্ক প্রক্ষালক যন্ত্রটি যত দিন চলমান থাকবে, তত দিন নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটতে থাকবে এবং নির্বিকারভাবে তা মেনে নেওয়ার প্রবণতা থেকে কেউ বের হতে পারবে না। তাই নির্দিষ্ট দুর্ঘটনার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে সামগ্রিকভাবে কীভাবে এই দুর্দশা থেকে উঠে আসা যায়, সে সিদ্ধান্ত নেওয়াই জরুরি। সেদিকে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার গতি এতটাই শ্লথ যে, সত্যিই তাতে নারীর নিরাপত্তা হালে পানি পায় না। অথচ সেটাই সবার আগে নির্ধারণ করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয়বার বিধ্বস্ত হলো বিমানবাহিনীর এফ-৭, এই চীনা যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কী

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: পাইলটসহ নিহত ২০, আহত দেড় শতাধিক, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক

৯ লাখ টন চাল কিনবে বাংলাদেশ, আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত

পাইলটের মা-বাবাকে বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে নেওয়া হলো ঢাকায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত