Ajker Patrika

পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করলেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা

পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ২১: ০৮
পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে একদল ক্ষুদ্ধ গ্রাহক। আজ রোববার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে একদল ক্ষুদ্ধ গ্রাহক। আজ রোববার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে আজ রোববার সকালে খাগড়াছড়ির সীমান্ত শহর পানছড়ির বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা ছাড়া ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ-সংযোগ দেন না। মিটার রিডিংয়ের তুলনায় বেশি বিল করেন তাঁরা।

হিসাবমতে, পানছড়ি বিউবোর আওতায় সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রশিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক বাড়িঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। পানছড়ি সদরসহ দুধক ছড়া, লোগাং, জগত মোহনপাড়া, তারাবন, চেঙ্গী, দমদম অক্ষয়পাড়া, লতিবান, পাইয়্যংপাড়া, মরাটিলা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার যামিনীপাড়া, তাইন্দং, তানৈক্যপাড়া, নোয়াপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এসব এলাকার গ্রাহকেরা মিটার না দেখে রিডিংয়ের অতিরিক্ত বিল, নতুন সংযোগে অতিরিক্ত টাকা, অবৈধ সংযোগ, বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মীর চঞ্চল আলীর নিজস্ব বাহিনীর হুমকিসহ বিভিন্ন ভোগান্তির কথা জানান।

অস্থায়ী শ্রমিক মিটার রিডার উজ্জয়ন চাকমাসহ কয়েকজন বলেন, ‘আমরা সঠিক মিটার রিডিং অফিসে জমা দিলেও অফিস থেকে রিডিং বাড়িয়ে দেয়। তাতে আমাদের করার কিছু থাকে না।’

গ্রাহকদের অভিযোগের বিভিন্ন কাগজপত্র দেখালে অতিরিক্ত বিল করার বিষয়টি স্বীকার করেন পানছড়ির বিদুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মীর চঞ্চল আলী। তিনি জানান, সিস্টেম লস কমানোর জন্য এমনটি হয়েছে। সরকারি এমন কোনো নিয়ম রয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এমন কোনো নিয়ম নেই।’

উল্টাছড়ি ইউনিয়নের মরাটিলা এলাকার প্রদীপ ত্রিপুরা আজকের পত্রিকাকে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়মের সুরাহা হয়নি। অতিরিক্ত বিল আসায় কিছু দিন আগেও মরাটিলায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মীর চঞ্চল আলীসহ চারজনকে মারধর করেন।

তানৈক্যপাড়ায় নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ নেওয়া কবির আহাম্মদ, ছায়েদ আলী, এমরানসহ ছয় থেকে সাতজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, বৈদ্যুতিক তারসহ আনুষঙ্গিক মালামাল কিনে দেন তাঁরা। কাজের শ্রমিক খরচ ছাড়াও শুধু সরকারি প্রিপেইড কার্ড মিটার, সংযোগ আবেদন, এস্টিমেট জমা বাবদ নেওয়া হয়েছে ১২ হাজার টাকা। সিঙ্গেল ২৫-৫০ কেভি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বসিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। আর এসব কাজে সহকারী প্রকৌশলী চঞ্চল মীর আলীর মনোনীত ব্যক্তি আইনুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, আবুল হোসেন, আব্বাস উদ্দিন বালুসহ বেশ কয়েকজন সহযোগিতা করেন বলে তাঁরা অভিযোগ তুলেন।

বৈদ্যুতিক নতুন সিঙ্গেল ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে নোয়াপাড়া, মরাটিলা, পাইয়্যংপাড়া, লোগাং, চেঙ্গী এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার কয়েকজন গ্রাহক বলেন, নিজ এলাকা দিয়ে ১১ হাজার ভোল্টের লাইন থাকলেও ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিল না। বারবার আবাসিক ও নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেও ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ-সংযোগ পাননি তাঁরা। পরে এ কাজের জন্য ২ লাখ টাকা চান বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। দর-কষাকষিতে লাখ টাকায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দেন তাঁরা।

আজ সকালে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাওকারী বিক্ষুব্ধ গ্রাহক সন্তোষ চাকমা, আব্দুল আলী, আব্দুল খালেক, জহর লাল চাকমা, চিজি মনি ত্রিপুরাসহ অনেকে বলেন, বিদ্যুৎ বিলের অনিয়মের সমাধান না হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি দেবেন। তাঁরা দাবি করেন, উপজেলা পরিষদের আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার সমস্যাটি তুলে ধরা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। পরে পানছড়ি থানার এসআই রাকিব হোসেন ও তাঁর ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাওকারীদের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে গ্রাহকদের ফেরত পাঠানো হয়।

পানছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ কর্মস্থলে ছিলেন না। গ্রাহকদের অভিযোগের ব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তিনি ট্রেনিংয়ে আছেন। কর্মস্থলে এসে একটা ব্যবস্থা করবেন। এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলেম আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সব কথা শুনে মিটিংয়ে আছি বলে মোবাইল ফোনের কলটি কেটে দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত