
মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনমন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাসহ বিচারব্যবস্থা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

সাম্প্রতিক সময়ে খুন, ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
আমার প্রশ্ন হলো, বৃদ্ধি হবে না কেন? খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আছে। আইনের উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে সাজা দেওয়া, যাতে অপরাধীরা অপরাধগুলো না করতে পারে। আইনের প্রয়োগ হলে অপকর্মগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, আইন প্রয়োগের যে পরিস্থিতি এবং সার্বিকভাবে সরকারের যে দুর্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে অপরাধীরা তো ফিল করছে না যে কেউ অপরাধ করলে তাদের সাজা হবে। তাদের মনে কোনো ভয়ভীতি নেই। ১১ মাস ধরে তারা দেখছে, সংবিধান ও আইনকে বাইরে রেখে কাজ হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম, শিল্পকারখানা জোর করে দখল করা হচ্ছে। এভাবে সবকিছু হচ্ছে বলে একটা সামাজিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে যে, কোনো অপরাধ করলে তেমন কিছু হবে না। সে কারণে এই অপরাধগুলো বাড়ছে।
এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আসলে এখন আর নেই। যদি তাদের সক্ষমতা থাকত, তাহলে তারা শক্তি প্রয়োগটা অব্যাহত রাখত। কিন্তু গত সরকারের সময় এই বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এই বাহিনীর একটা বড় অংশ, বিশেষ করে ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তারা সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি, ভালো জায়গায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। এরপর যখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তখন সেই সুবিধাপ্রাপ্ত শত শত পুলিশ কর্মকর্তা এই সরকারের টার্গেটে পড়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় কিছু পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং দেশের অধিকাংশ থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই ট্রমা থেকে তারা বের হতে পারেনি।
৫ আগস্টের আগে একধরনের ঘটনা ঘটেছে, আবার এর পরে আরেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এই সরকার সেই বিচার করেনি। ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছে। সেই ইনডেমনিটির কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। আমরা যে আজকে দাঁড়িয়ে কাজ করব, আমরা কাদের বিরুদ্ধে যাব? জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা যদি আবার আমাদের মারে বা আওয়ামী লীগের দোসর বলে। তাহলে আমাদের কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? সে কারণে তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা থাকার দরকার ছিল, সেটার দুর্বলতার কারণে সরকার বারবার বললেও সেইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর দাঁড়াতে পারেনি।
সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
সরকারের পলিসির কারণে ব্যর্থ হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর কতগুলো ঘটনা ঘটেছিল। যেমন যাত্রাবাড়ীর একটা কলেজে আগের দিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কাজী নজরুল কলেজের ছাত্ররা হামলা, ভাঙচুর, আগুন দিয়ে লুটপাট করেছিল। পুলিশ কিন্তু সেখানে যায়নি। সরকার সে সময় ব্যাখ্যা দিয়েছিল—পুলিশ গেলে আরও বেশি সমস্যা হতো। সেই ঘটনা ধরে বলা যায়, যাদের গায়ে শক্তি আছে, তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এর পরে আরও অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
লালবাগ থানায় তখন একটা মামলা হয়েছিল। সে সময় ওসি বলেছিলেন, ৪০০ জনকে আসামি করেছেন। আমি তদন্ত করে দেখি, ব্যাপার কী? তখন সেই সময়কার ছাত্রদের নেতা এবং এখনকার এনসিপির নেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কয়েক হাজার লোকের সমাগম করে থানা ঘেরাও করে ওই থানার ওসিকে চাপ দিয়ে মামলা নিতে বাধ্য করেছিল। সেই ঘটনায় বোঝা গেছে, আমাদের কোনো কাজ করতে বাধা নেই। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা হলো, সেখানেও তো পুলিশ বাহিনী যায়নি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জুতার মালা পরানো হলো।
সব কটি ঘটনায় তো প্রমাণিত হয়েছে, যারা এসব অপকর্ম করেছে, তাদের বুকে অনেক সাহস। এসব ঘটনায় সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ থেকে বলা যায়, পুলিশের সক্ষমতার চেয়ে সরকারের সক্ষমতায় বড় ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা দেখেছি, সরকার অনেক ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, বিগত সরকারের পুলিশ পিটুনি খাবে এবং নির্যাতিত হবে, সরকার সেটা চেয়েছে। সরকার অনেক ঘটনায় চুপ ছিল।
কিন্তু আইনের কথা হলো, অপরাধী যে দলেরই হোক, তাকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সাজা পেতে হবে। কিন্তু অনেক ঘটনায় সরকার তার দায়িত্ব পালন করেনি। এটা তো কোনো আইনগত প্রক্রিয়া হতে পারে না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সরকার অনেক দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল এবং অনেক থানা থেকে অস্ত্র লুটের পর সেভাবে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যাপার কি পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটার জন্য দায়ী?
প্রতিটি ঘটনার একটা ইনিশিয়াল ব্যাপার থাকে। আপনি যখন মাটির হাঁড়ি তৈরি করবেন, তখন আপনাকে প্রথমে হাতে মাটি নিতে হবে। তারপর মেকানিজম করে করে হাঁড়িটা তৈরি করতে হবে। একই কথা বিল্ডিং নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও। ৫ আগস্টের পরে যত ঘটনা ঘটেছে, সে সময় শক্তভাবে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরবর্তী সময়ে সেটা কমে যেত। সে সময় অভ্যুত্থানকারী নেতারাই নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছিল। সরকারপ্রধান তো বলেছেন, অভ্যুত্থানকারীরাই তাঁকে নিয়োগ করেছে। যারা নিয়োগ দেয়, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তো করার কিছু থাকে না। সেই সময় থেকে দুর্বলতা শুরু হয়েছে। অনেক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বলাবলি হলেও কাজ হবে না। কারণ, ট্রেন অলরেডি লাইনের বাইরে চলে গেছে। কাজেই লাইনে ট্রেন ওঠানোর জন্য বিকল্প কোনো ভাবনা আমার জানা নেই। একমাত্র সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে যদি সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়। আর একটা হলো, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে নতুন আশার সৃষ্টি হতে পারে।
সেনাবাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না?
একদিকে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলো, অন্যদিকে সেনাপ্রধানের অপসারণের প্রসঙ্গ তোলা হলো, ভারতে পাঠানোরও থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। এ রকমভাবে সেনাপ্রধানকে থ্রেট দিলে কি তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
সেনাবাহিনীর ট্রেনিং তো একটাই দেওয়া হয়—যদি কন্ট্রোল করতে না পারো, তাহলে সরাসরি গুলি করো। গুলি করলে তো মানুষ মারা যাবে। ওই ধরনের রিস্ক তারা নিতে চাইছে না। তবে তারা ১৬ জুলাইয়ে গোপালগঞ্জের ঘটনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে বলে আমার মনে হয়।
এখন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সেভাবে তৎপর দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
আসলে মানবাধিকারের শিকড়ে যেতে হবে। মানবাধিকার ধারণাটা এসেছে সমাজতন্ত্রকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য। আমেরিকা সেই ফর্মুলাটা আবিষ্কার করেছিল। কারণ, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানবাধিকার নেই। সেখানে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করা যায় না। আমরা বিশ্ববাসীর মানবাধিকার নিশ্চিত করব। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ধ্বংসের পর সেটার আর কার্যকারিতা নেই। ১০ বছর আগেও সেটার কার্যকারিতা ছিল।
কিন্তু আমেরিকা যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চালায়, সেখানে তো মানবাধিকার রক্ষিত হয় না। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। সেখানে কি কোনো মানবাধিকার রক্ষার সুযোগ আছে? মানবাধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী সেই আলোচনাটা আর নেই।
আমাদের দেশে আশির দশকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনজিওগুলো। এনজিওগুলোর ফান্ড দেশের বাইরে থেকে আসে। এনজিওগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলে সত্যিকারভাবে গুম-খুন, রাজনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারা বলার কারণে কিছুটা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই সময়কার অনেক এনজিও-প্রধান এখন ক্ষমতার পার্ট হয়ে গেছেন। শুধু পার্ট না, কয়েকজন তো সরাসরি উপদেষ্টা হয়েছেন। এখন যাঁরা ক্ষমতা পরিবর্তন করে এনাদের ক্ষমতায় বসালেন, এখন যদি তাঁরাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন, সেটা তো লজ্জার বিষয় হবে তাঁদের জন্যও।
এখন তাঁরা বলছেন না, কিন্তু একসময় তো কথা বলতেই হবে। তাঁদের বিবেকের কাছে তো জবাবদিহি করতে হবে। তবে একদম যে কেউ বলছেন না, তা কিন্তু নয়। সারা হোসেন, শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না বলছেন। একটা অংশ বলছেন, কিন্তু বড় অংশটা তো এই পরিবর্তনের ফলভোগী। আর ফান্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর কি বিচারব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
৫ আগস্টের পরেই আমরা বলা শুরু করেছিলাম, বিচার বিভাগে; বিশেষ করে যেসব জায়গায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল, সেগুলো দূর করা দরকার। একটা উদাহরণ দিই—আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন মামলায় জামিন পান নিম্ন আদালত থেকে, তখন জামিনের কপি পেতে আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হতো, যাতে তারা আড়াই মাস পরে আপিল করতে পারে। নিয়ম হলো দুই দিনের মধ্যে সেটা পাওয়া। এসব মেকানিজম করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার খর্ব করার জন্য। আমরা কিন্তু চেয়েছিলাম সেই বিচার বিভাগের পরিবর্তন।
কিন্তু আমরা এখন অন্য আলোকে কিছু বিষয় দেখতে পাচ্ছি। শুধু বোতলটা পরিবর্তিত হয়েছে। আগের বোতল নেই। এখনকার বাস্তবতা হলো, বহু আইনজীবী কোর্টে যেতে পারেন না। ৬০-৭০ জন আইনজীবী ঢাকা বারের একটা চেম্বার ভাঙচুর করেছেন একটা মামলার জন্য। সেই মামলার সত্যতা কতটুকু আছে, সেটা আমি জানি না। সেটা থাকলেও চেম্বার ভাঙচুরের জন্য আইনজীবীদের জেলে যাওয়ার কথা নয়। ৬০ জন আইনজীবী আপিল বিভাগের নির্দেশে জেলে ছিলেন।
এরপর শত শত আইনজীবীকে কোর্টে গেলে মারধর করা হচ্ছে। বিচারকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের পরে জোর করে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে। একটা মামলায় বাদীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আসামিকে আপনি চেনেন? নাম কী? বলতে পারেননি। কারণ, ৪০০ আসামিকে কীভাবে চিনবে? তখন বিচারক অর্ডার দিতে রাজি হননি। সঙ্গে সঙ্গে বিচারককে ঘেরাও করা হয়েছিল। যখন দেশে রুল অব ল থাকে না, তখন তো ন্যায়বিচারও থাকে না। জজকে নিরাপত্তা কে দেবে? এখন জজ তো নিরাপত্তার জন্য যা চাইবেন, তা-ই করবেন। এটা তো পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য না। এসব নিম্ন আদালতের ব্যাপার।
উচ্চ আদালতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা আগের রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলল, ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ হচ্ছে। কিন্তু তাদের জ্ঞানও নেই যে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ কী? বিচারকদের একটা সভা ডাকা হয়েছিল, সেখানে কোনো মামলার রায় হওয়ার কথা নয়। সেখানে তারা হাজার হাজার তরুণকে ডেকে আনল, যেহেতু তারা পরিবর্তন করেছে। তারা সবাইকে পদত্যাগে বাধ্য করল। এরপরও তো অনেককে দোসর ট্যাগ দিয়েছে। তাহলে বিচারকেরা কীভাবে কাজ করবেন? স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নেই। আগে ছিল একটা প্যাটার্ন (ধরন), এখন চলছে আরেক প্যাটার্ন। আমি বলি, আগের তুলনায় অবস্থা আরও খারাপ।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাম্প্রতিক সময়ে খুন, ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
আমার প্রশ্ন হলো, বৃদ্ধি হবে না কেন? খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আছে। আইনের উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে সাজা দেওয়া, যাতে অপরাধীরা অপরাধগুলো না করতে পারে। আইনের প্রয়োগ হলে অপকর্মগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, আইন প্রয়োগের যে পরিস্থিতি এবং সার্বিকভাবে সরকারের যে দুর্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে অপরাধীরা তো ফিল করছে না যে কেউ অপরাধ করলে তাদের সাজা হবে। তাদের মনে কোনো ভয়ভীতি নেই। ১১ মাস ধরে তারা দেখছে, সংবিধান ও আইনকে বাইরে রেখে কাজ হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম, শিল্পকারখানা জোর করে দখল করা হচ্ছে। এভাবে সবকিছু হচ্ছে বলে একটা সামাজিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে যে, কোনো অপরাধ করলে তেমন কিছু হবে না। সে কারণে এই অপরাধগুলো বাড়ছে।
এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আসলে এখন আর নেই। যদি তাদের সক্ষমতা থাকত, তাহলে তারা শক্তি প্রয়োগটা অব্যাহত রাখত। কিন্তু গত সরকারের সময় এই বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এই বাহিনীর একটা বড় অংশ, বিশেষ করে ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তারা সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি, ভালো জায়গায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। এরপর যখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তখন সেই সুবিধাপ্রাপ্ত শত শত পুলিশ কর্মকর্তা এই সরকারের টার্গেটে পড়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় কিছু পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং দেশের অধিকাংশ থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই ট্রমা থেকে তারা বের হতে পারেনি।
৫ আগস্টের আগে একধরনের ঘটনা ঘটেছে, আবার এর পরে আরেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এই সরকার সেই বিচার করেনি। ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছে। সেই ইনডেমনিটির কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। আমরা যে আজকে দাঁড়িয়ে কাজ করব, আমরা কাদের বিরুদ্ধে যাব? জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা যদি আবার আমাদের মারে বা আওয়ামী লীগের দোসর বলে। তাহলে আমাদের কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? সে কারণে তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা থাকার দরকার ছিল, সেটার দুর্বলতার কারণে সরকার বারবার বললেও সেইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর দাঁড়াতে পারেনি।
সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
সরকারের পলিসির কারণে ব্যর্থ হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর কতগুলো ঘটনা ঘটেছিল। যেমন যাত্রাবাড়ীর একটা কলেজে আগের দিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কাজী নজরুল কলেজের ছাত্ররা হামলা, ভাঙচুর, আগুন দিয়ে লুটপাট করেছিল। পুলিশ কিন্তু সেখানে যায়নি। সরকার সে সময় ব্যাখ্যা দিয়েছিল—পুলিশ গেলে আরও বেশি সমস্যা হতো। সেই ঘটনা ধরে বলা যায়, যাদের গায়ে শক্তি আছে, তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এর পরে আরও অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
লালবাগ থানায় তখন একটা মামলা হয়েছিল। সে সময় ওসি বলেছিলেন, ৪০০ জনকে আসামি করেছেন। আমি তদন্ত করে দেখি, ব্যাপার কী? তখন সেই সময়কার ছাত্রদের নেতা এবং এখনকার এনসিপির নেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কয়েক হাজার লোকের সমাগম করে থানা ঘেরাও করে ওই থানার ওসিকে চাপ দিয়ে মামলা নিতে বাধ্য করেছিল। সেই ঘটনায় বোঝা গেছে, আমাদের কোনো কাজ করতে বাধা নেই। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা হলো, সেখানেও তো পুলিশ বাহিনী যায়নি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জুতার মালা পরানো হলো।
সব কটি ঘটনায় তো প্রমাণিত হয়েছে, যারা এসব অপকর্ম করেছে, তাদের বুকে অনেক সাহস। এসব ঘটনায় সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ থেকে বলা যায়, পুলিশের সক্ষমতার চেয়ে সরকারের সক্ষমতায় বড় ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা দেখেছি, সরকার অনেক ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, বিগত সরকারের পুলিশ পিটুনি খাবে এবং নির্যাতিত হবে, সরকার সেটা চেয়েছে। সরকার অনেক ঘটনায় চুপ ছিল।
কিন্তু আইনের কথা হলো, অপরাধী যে দলেরই হোক, তাকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সাজা পেতে হবে। কিন্তু অনেক ঘটনায় সরকার তার দায়িত্ব পালন করেনি। এটা তো কোনো আইনগত প্রক্রিয়া হতে পারে না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সরকার অনেক দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল এবং অনেক থানা থেকে অস্ত্র লুটের পর সেভাবে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যাপার কি পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটার জন্য দায়ী?
প্রতিটি ঘটনার একটা ইনিশিয়াল ব্যাপার থাকে। আপনি যখন মাটির হাঁড়ি তৈরি করবেন, তখন আপনাকে প্রথমে হাতে মাটি নিতে হবে। তারপর মেকানিজম করে করে হাঁড়িটা তৈরি করতে হবে। একই কথা বিল্ডিং নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও। ৫ আগস্টের পরে যত ঘটনা ঘটেছে, সে সময় শক্তভাবে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরবর্তী সময়ে সেটা কমে যেত। সে সময় অভ্যুত্থানকারী নেতারাই নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছিল। সরকারপ্রধান তো বলেছেন, অভ্যুত্থানকারীরাই তাঁকে নিয়োগ করেছে। যারা নিয়োগ দেয়, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তো করার কিছু থাকে না। সেই সময় থেকে দুর্বলতা শুরু হয়েছে। অনেক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বলাবলি হলেও কাজ হবে না। কারণ, ট্রেন অলরেডি লাইনের বাইরে চলে গেছে। কাজেই লাইনে ট্রেন ওঠানোর জন্য বিকল্প কোনো ভাবনা আমার জানা নেই। একমাত্র সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে যদি সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়। আর একটা হলো, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে নতুন আশার সৃষ্টি হতে পারে।
সেনাবাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না?
একদিকে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলো, অন্যদিকে সেনাপ্রধানের অপসারণের প্রসঙ্গ তোলা হলো, ভারতে পাঠানোরও থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। এ রকমভাবে সেনাপ্রধানকে থ্রেট দিলে কি তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
সেনাবাহিনীর ট্রেনিং তো একটাই দেওয়া হয়—যদি কন্ট্রোল করতে না পারো, তাহলে সরাসরি গুলি করো। গুলি করলে তো মানুষ মারা যাবে। ওই ধরনের রিস্ক তারা নিতে চাইছে না। তবে তারা ১৬ জুলাইয়ে গোপালগঞ্জের ঘটনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে বলে আমার মনে হয়।
এখন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সেভাবে তৎপর দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
আসলে মানবাধিকারের শিকড়ে যেতে হবে। মানবাধিকার ধারণাটা এসেছে সমাজতন্ত্রকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য। আমেরিকা সেই ফর্মুলাটা আবিষ্কার করেছিল। কারণ, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানবাধিকার নেই। সেখানে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করা যায় না। আমরা বিশ্ববাসীর মানবাধিকার নিশ্চিত করব। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ধ্বংসের পর সেটার আর কার্যকারিতা নেই। ১০ বছর আগেও সেটার কার্যকারিতা ছিল।
কিন্তু আমেরিকা যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চালায়, সেখানে তো মানবাধিকার রক্ষিত হয় না। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। সেখানে কি কোনো মানবাধিকার রক্ষার সুযোগ আছে? মানবাধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী সেই আলোচনাটা আর নেই।
আমাদের দেশে আশির দশকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনজিওগুলো। এনজিওগুলোর ফান্ড দেশের বাইরে থেকে আসে। এনজিওগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলে সত্যিকারভাবে গুম-খুন, রাজনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারা বলার কারণে কিছুটা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই সময়কার অনেক এনজিও-প্রধান এখন ক্ষমতার পার্ট হয়ে গেছেন। শুধু পার্ট না, কয়েকজন তো সরাসরি উপদেষ্টা হয়েছেন। এখন যাঁরা ক্ষমতা পরিবর্তন করে এনাদের ক্ষমতায় বসালেন, এখন যদি তাঁরাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন, সেটা তো লজ্জার বিষয় হবে তাঁদের জন্যও।
এখন তাঁরা বলছেন না, কিন্তু একসময় তো কথা বলতেই হবে। তাঁদের বিবেকের কাছে তো জবাবদিহি করতে হবে। তবে একদম যে কেউ বলছেন না, তা কিন্তু নয়। সারা হোসেন, শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না বলছেন। একটা অংশ বলছেন, কিন্তু বড় অংশটা তো এই পরিবর্তনের ফলভোগী। আর ফান্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর কি বিচারব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
৫ আগস্টের পরেই আমরা বলা শুরু করেছিলাম, বিচার বিভাগে; বিশেষ করে যেসব জায়গায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল, সেগুলো দূর করা দরকার। একটা উদাহরণ দিই—আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন মামলায় জামিন পান নিম্ন আদালত থেকে, তখন জামিনের কপি পেতে আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হতো, যাতে তারা আড়াই মাস পরে আপিল করতে পারে। নিয়ম হলো দুই দিনের মধ্যে সেটা পাওয়া। এসব মেকানিজম করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার খর্ব করার জন্য। আমরা কিন্তু চেয়েছিলাম সেই বিচার বিভাগের পরিবর্তন।
কিন্তু আমরা এখন অন্য আলোকে কিছু বিষয় দেখতে পাচ্ছি। শুধু বোতলটা পরিবর্তিত হয়েছে। আগের বোতল নেই। এখনকার বাস্তবতা হলো, বহু আইনজীবী কোর্টে যেতে পারেন না। ৬০-৭০ জন আইনজীবী ঢাকা বারের একটা চেম্বার ভাঙচুর করেছেন একটা মামলার জন্য। সেই মামলার সত্যতা কতটুকু আছে, সেটা আমি জানি না। সেটা থাকলেও চেম্বার ভাঙচুরের জন্য আইনজীবীদের জেলে যাওয়ার কথা নয়। ৬০ জন আইনজীবী আপিল বিভাগের নির্দেশে জেলে ছিলেন।
এরপর শত শত আইনজীবীকে কোর্টে গেলে মারধর করা হচ্ছে। বিচারকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের পরে জোর করে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে। একটা মামলায় বাদীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আসামিকে আপনি চেনেন? নাম কী? বলতে পারেননি। কারণ, ৪০০ আসামিকে কীভাবে চিনবে? তখন বিচারক অর্ডার দিতে রাজি হননি। সঙ্গে সঙ্গে বিচারককে ঘেরাও করা হয়েছিল। যখন দেশে রুল অব ল থাকে না, তখন তো ন্যায়বিচারও থাকে না। জজকে নিরাপত্তা কে দেবে? এখন জজ তো নিরাপত্তার জন্য যা চাইবেন, তা-ই করবেন। এটা তো পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য না। এসব নিম্ন আদালতের ব্যাপার।
উচ্চ আদালতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা আগের রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলল, ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ হচ্ছে। কিন্তু তাদের জ্ঞানও নেই যে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ কী? বিচারকদের একটা সভা ডাকা হয়েছিল, সেখানে কোনো মামলার রায় হওয়ার কথা নয়। সেখানে তারা হাজার হাজার তরুণকে ডেকে আনল, যেহেতু তারা পরিবর্তন করেছে। তারা সবাইকে পদত্যাগে বাধ্য করল। এরপরও তো অনেককে দোসর ট্যাগ দিয়েছে। তাহলে বিচারকেরা কীভাবে কাজ করবেন? স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নেই। আগে ছিল একটা প্যাটার্ন (ধরন), এখন চলছে আরেক প্যাটার্ন। আমি বলি, আগের তুলনায় অবস্থা আরও খারাপ।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনমন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাসহ বিচারব্যবস্থা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

সাম্প্রতিক সময়ে খুন, ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
আমার প্রশ্ন হলো, বৃদ্ধি হবে না কেন? খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আছে। আইনের উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে সাজা দেওয়া, যাতে অপরাধীরা অপরাধগুলো না করতে পারে। আইনের প্রয়োগ হলে অপকর্মগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, আইন প্রয়োগের যে পরিস্থিতি এবং সার্বিকভাবে সরকারের যে দুর্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে অপরাধীরা তো ফিল করছে না যে কেউ অপরাধ করলে তাদের সাজা হবে। তাদের মনে কোনো ভয়ভীতি নেই। ১১ মাস ধরে তারা দেখছে, সংবিধান ও আইনকে বাইরে রেখে কাজ হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম, শিল্পকারখানা জোর করে দখল করা হচ্ছে। এভাবে সবকিছু হচ্ছে বলে একটা সামাজিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে যে, কোনো অপরাধ করলে তেমন কিছু হবে না। সে কারণে এই অপরাধগুলো বাড়ছে।
এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আসলে এখন আর নেই। যদি তাদের সক্ষমতা থাকত, তাহলে তারা শক্তি প্রয়োগটা অব্যাহত রাখত। কিন্তু গত সরকারের সময় এই বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এই বাহিনীর একটা বড় অংশ, বিশেষ করে ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তারা সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি, ভালো জায়গায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। এরপর যখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তখন সেই সুবিধাপ্রাপ্ত শত শত পুলিশ কর্মকর্তা এই সরকারের টার্গেটে পড়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় কিছু পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং দেশের অধিকাংশ থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই ট্রমা থেকে তারা বের হতে পারেনি।
৫ আগস্টের আগে একধরনের ঘটনা ঘটেছে, আবার এর পরে আরেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এই সরকার সেই বিচার করেনি। ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছে। সেই ইনডেমনিটির কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। আমরা যে আজকে দাঁড়িয়ে কাজ করব, আমরা কাদের বিরুদ্ধে যাব? জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা যদি আবার আমাদের মারে বা আওয়ামী লীগের দোসর বলে। তাহলে আমাদের কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? সে কারণে তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা থাকার দরকার ছিল, সেটার দুর্বলতার কারণে সরকার বারবার বললেও সেইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর দাঁড়াতে পারেনি।
সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
সরকারের পলিসির কারণে ব্যর্থ হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর কতগুলো ঘটনা ঘটেছিল। যেমন যাত্রাবাড়ীর একটা কলেজে আগের দিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কাজী নজরুল কলেজের ছাত্ররা হামলা, ভাঙচুর, আগুন দিয়ে লুটপাট করেছিল। পুলিশ কিন্তু সেখানে যায়নি। সরকার সে সময় ব্যাখ্যা দিয়েছিল—পুলিশ গেলে আরও বেশি সমস্যা হতো। সেই ঘটনা ধরে বলা যায়, যাদের গায়ে শক্তি আছে, তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এর পরে আরও অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
লালবাগ থানায় তখন একটা মামলা হয়েছিল। সে সময় ওসি বলেছিলেন, ৪০০ জনকে আসামি করেছেন। আমি তদন্ত করে দেখি, ব্যাপার কী? তখন সেই সময়কার ছাত্রদের নেতা এবং এখনকার এনসিপির নেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কয়েক হাজার লোকের সমাগম করে থানা ঘেরাও করে ওই থানার ওসিকে চাপ দিয়ে মামলা নিতে বাধ্য করেছিল। সেই ঘটনায় বোঝা গেছে, আমাদের কোনো কাজ করতে বাধা নেই। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা হলো, সেখানেও তো পুলিশ বাহিনী যায়নি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জুতার মালা পরানো হলো।
সব কটি ঘটনায় তো প্রমাণিত হয়েছে, যারা এসব অপকর্ম করেছে, তাদের বুকে অনেক সাহস। এসব ঘটনায় সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ থেকে বলা যায়, পুলিশের সক্ষমতার চেয়ে সরকারের সক্ষমতায় বড় ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা দেখেছি, সরকার অনেক ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, বিগত সরকারের পুলিশ পিটুনি খাবে এবং নির্যাতিত হবে, সরকার সেটা চেয়েছে। সরকার অনেক ঘটনায় চুপ ছিল।
কিন্তু আইনের কথা হলো, অপরাধী যে দলেরই হোক, তাকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সাজা পেতে হবে। কিন্তু অনেক ঘটনায় সরকার তার দায়িত্ব পালন করেনি। এটা তো কোনো আইনগত প্রক্রিয়া হতে পারে না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সরকার অনেক দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল এবং অনেক থানা থেকে অস্ত্র লুটের পর সেভাবে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যাপার কি পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটার জন্য দায়ী?
প্রতিটি ঘটনার একটা ইনিশিয়াল ব্যাপার থাকে। আপনি যখন মাটির হাঁড়ি তৈরি করবেন, তখন আপনাকে প্রথমে হাতে মাটি নিতে হবে। তারপর মেকানিজম করে করে হাঁড়িটা তৈরি করতে হবে। একই কথা বিল্ডিং নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও। ৫ আগস্টের পরে যত ঘটনা ঘটেছে, সে সময় শক্তভাবে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরবর্তী সময়ে সেটা কমে যেত। সে সময় অভ্যুত্থানকারী নেতারাই নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছিল। সরকারপ্রধান তো বলেছেন, অভ্যুত্থানকারীরাই তাঁকে নিয়োগ করেছে। যারা নিয়োগ দেয়, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তো করার কিছু থাকে না। সেই সময় থেকে দুর্বলতা শুরু হয়েছে। অনেক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বলাবলি হলেও কাজ হবে না। কারণ, ট্রেন অলরেডি লাইনের বাইরে চলে গেছে। কাজেই লাইনে ট্রেন ওঠানোর জন্য বিকল্প কোনো ভাবনা আমার জানা নেই। একমাত্র সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে যদি সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়। আর একটা হলো, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে নতুন আশার সৃষ্টি হতে পারে।
সেনাবাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না?
একদিকে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলো, অন্যদিকে সেনাপ্রধানের অপসারণের প্রসঙ্গ তোলা হলো, ভারতে পাঠানোরও থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। এ রকমভাবে সেনাপ্রধানকে থ্রেট দিলে কি তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
সেনাবাহিনীর ট্রেনিং তো একটাই দেওয়া হয়—যদি কন্ট্রোল করতে না পারো, তাহলে সরাসরি গুলি করো। গুলি করলে তো মানুষ মারা যাবে। ওই ধরনের রিস্ক তারা নিতে চাইছে না। তবে তারা ১৬ জুলাইয়ে গোপালগঞ্জের ঘটনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে বলে আমার মনে হয়।
এখন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সেভাবে তৎপর দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
আসলে মানবাধিকারের শিকড়ে যেতে হবে। মানবাধিকার ধারণাটা এসেছে সমাজতন্ত্রকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য। আমেরিকা সেই ফর্মুলাটা আবিষ্কার করেছিল। কারণ, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানবাধিকার নেই। সেখানে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করা যায় না। আমরা বিশ্ববাসীর মানবাধিকার নিশ্চিত করব। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ধ্বংসের পর সেটার আর কার্যকারিতা নেই। ১০ বছর আগেও সেটার কার্যকারিতা ছিল।
কিন্তু আমেরিকা যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চালায়, সেখানে তো মানবাধিকার রক্ষিত হয় না। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। সেখানে কি কোনো মানবাধিকার রক্ষার সুযোগ আছে? মানবাধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী সেই আলোচনাটা আর নেই।
আমাদের দেশে আশির দশকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনজিওগুলো। এনজিওগুলোর ফান্ড দেশের বাইরে থেকে আসে। এনজিওগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলে সত্যিকারভাবে গুম-খুন, রাজনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারা বলার কারণে কিছুটা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই সময়কার অনেক এনজিও-প্রধান এখন ক্ষমতার পার্ট হয়ে গেছেন। শুধু পার্ট না, কয়েকজন তো সরাসরি উপদেষ্টা হয়েছেন। এখন যাঁরা ক্ষমতা পরিবর্তন করে এনাদের ক্ষমতায় বসালেন, এখন যদি তাঁরাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন, সেটা তো লজ্জার বিষয় হবে তাঁদের জন্যও।
এখন তাঁরা বলছেন না, কিন্তু একসময় তো কথা বলতেই হবে। তাঁদের বিবেকের কাছে তো জবাবদিহি করতে হবে। তবে একদম যে কেউ বলছেন না, তা কিন্তু নয়। সারা হোসেন, শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না বলছেন। একটা অংশ বলছেন, কিন্তু বড় অংশটা তো এই পরিবর্তনের ফলভোগী। আর ফান্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর কি বিচারব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
৫ আগস্টের পরেই আমরা বলা শুরু করেছিলাম, বিচার বিভাগে; বিশেষ করে যেসব জায়গায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল, সেগুলো দূর করা দরকার। একটা উদাহরণ দিই—আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন মামলায় জামিন পান নিম্ন আদালত থেকে, তখন জামিনের কপি পেতে আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হতো, যাতে তারা আড়াই মাস পরে আপিল করতে পারে। নিয়ম হলো দুই দিনের মধ্যে সেটা পাওয়া। এসব মেকানিজম করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার খর্ব করার জন্য। আমরা কিন্তু চেয়েছিলাম সেই বিচার বিভাগের পরিবর্তন।
কিন্তু আমরা এখন অন্য আলোকে কিছু বিষয় দেখতে পাচ্ছি। শুধু বোতলটা পরিবর্তিত হয়েছে। আগের বোতল নেই। এখনকার বাস্তবতা হলো, বহু আইনজীবী কোর্টে যেতে পারেন না। ৬০-৭০ জন আইনজীবী ঢাকা বারের একটা চেম্বার ভাঙচুর করেছেন একটা মামলার জন্য। সেই মামলার সত্যতা কতটুকু আছে, সেটা আমি জানি না। সেটা থাকলেও চেম্বার ভাঙচুরের জন্য আইনজীবীদের জেলে যাওয়ার কথা নয়। ৬০ জন আইনজীবী আপিল বিভাগের নির্দেশে জেলে ছিলেন।
এরপর শত শত আইনজীবীকে কোর্টে গেলে মারধর করা হচ্ছে। বিচারকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের পরে জোর করে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে। একটা মামলায় বাদীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আসামিকে আপনি চেনেন? নাম কী? বলতে পারেননি। কারণ, ৪০০ আসামিকে কীভাবে চিনবে? তখন বিচারক অর্ডার দিতে রাজি হননি। সঙ্গে সঙ্গে বিচারককে ঘেরাও করা হয়েছিল। যখন দেশে রুল অব ল থাকে না, তখন তো ন্যায়বিচারও থাকে না। জজকে নিরাপত্তা কে দেবে? এখন জজ তো নিরাপত্তার জন্য যা চাইবেন, তা-ই করবেন। এটা তো পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য না। এসব নিম্ন আদালতের ব্যাপার।
উচ্চ আদালতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা আগের রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলল, ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ হচ্ছে। কিন্তু তাদের জ্ঞানও নেই যে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ কী? বিচারকদের একটা সভা ডাকা হয়েছিল, সেখানে কোনো মামলার রায় হওয়ার কথা নয়। সেখানে তারা হাজার হাজার তরুণকে ডেকে আনল, যেহেতু তারা পরিবর্তন করেছে। তারা সবাইকে পদত্যাগে বাধ্য করল। এরপরও তো অনেককে দোসর ট্যাগ দিয়েছে। তাহলে বিচারকেরা কীভাবে কাজ করবেন? স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নেই। আগে ছিল একটা প্যাটার্ন (ধরন), এখন চলছে আরেক প্যাটার্ন। আমি বলি, আগের তুলনায় অবস্থা আরও খারাপ।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাম্প্রতিক সময়ে খুন, ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
আমার প্রশ্ন হলো, বৃদ্ধি হবে না কেন? খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আছে। আইনের উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে সাজা দেওয়া, যাতে অপরাধীরা অপরাধগুলো না করতে পারে। আইনের প্রয়োগ হলে অপকর্মগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, আইন প্রয়োগের যে পরিস্থিতি এবং সার্বিকভাবে সরকারের যে দুর্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে অপরাধীরা তো ফিল করছে না যে কেউ অপরাধ করলে তাদের সাজা হবে। তাদের মনে কোনো ভয়ভীতি নেই। ১১ মাস ধরে তারা দেখছে, সংবিধান ও আইনকে বাইরে রেখে কাজ হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম, শিল্পকারখানা জোর করে দখল করা হচ্ছে। এভাবে সবকিছু হচ্ছে বলে একটা সামাজিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে যে, কোনো অপরাধ করলে তেমন কিছু হবে না। সে কারণে এই অপরাধগুলো বাড়ছে।
এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আসলে এখন আর নেই। যদি তাদের সক্ষমতা থাকত, তাহলে তারা শক্তি প্রয়োগটা অব্যাহত রাখত। কিন্তু গত সরকারের সময় এই বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এই বাহিনীর একটা বড় অংশ, বিশেষ করে ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তারা সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি, ভালো জায়গায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। এরপর যখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তখন সেই সুবিধাপ্রাপ্ত শত শত পুলিশ কর্মকর্তা এই সরকারের টার্গেটে পড়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় কিছু পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং দেশের অধিকাংশ থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই ট্রমা থেকে তারা বের হতে পারেনি।
৫ আগস্টের আগে একধরনের ঘটনা ঘটেছে, আবার এর পরে আরেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এই সরকার সেই বিচার করেনি। ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছে। সেই ইনডেমনিটির কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। আমরা যে আজকে দাঁড়িয়ে কাজ করব, আমরা কাদের বিরুদ্ধে যাব? জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা যদি আবার আমাদের মারে বা আওয়ামী লীগের দোসর বলে। তাহলে আমাদের কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? সে কারণে তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা থাকার দরকার ছিল, সেটার দুর্বলতার কারণে সরকার বারবার বললেও সেইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর দাঁড়াতে পারেনি।
সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
সরকারের পলিসির কারণে ব্যর্থ হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর কতগুলো ঘটনা ঘটেছিল। যেমন যাত্রাবাড়ীর একটা কলেজে আগের দিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কাজী নজরুল কলেজের ছাত্ররা হামলা, ভাঙচুর, আগুন দিয়ে লুটপাট করেছিল। পুলিশ কিন্তু সেখানে যায়নি। সরকার সে সময় ব্যাখ্যা দিয়েছিল—পুলিশ গেলে আরও বেশি সমস্যা হতো। সেই ঘটনা ধরে বলা যায়, যাদের গায়ে শক্তি আছে, তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এর পরে আরও অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
লালবাগ থানায় তখন একটা মামলা হয়েছিল। সে সময় ওসি বলেছিলেন, ৪০০ জনকে আসামি করেছেন। আমি তদন্ত করে দেখি, ব্যাপার কী? তখন সেই সময়কার ছাত্রদের নেতা এবং এখনকার এনসিপির নেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কয়েক হাজার লোকের সমাগম করে থানা ঘেরাও করে ওই থানার ওসিকে চাপ দিয়ে মামলা নিতে বাধ্য করেছিল। সেই ঘটনায় বোঝা গেছে, আমাদের কোনো কাজ করতে বাধা নেই। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা হলো, সেখানেও তো পুলিশ বাহিনী যায়নি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জুতার মালা পরানো হলো।
সব কটি ঘটনায় তো প্রমাণিত হয়েছে, যারা এসব অপকর্ম করেছে, তাদের বুকে অনেক সাহস। এসব ঘটনায় সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ থেকে বলা যায়, পুলিশের সক্ষমতার চেয়ে সরকারের সক্ষমতায় বড় ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা দেখেছি, সরকার অনেক ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, বিগত সরকারের পুলিশ পিটুনি খাবে এবং নির্যাতিত হবে, সরকার সেটা চেয়েছে। সরকার অনেক ঘটনায় চুপ ছিল।
কিন্তু আইনের কথা হলো, অপরাধী যে দলেরই হোক, তাকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সাজা পেতে হবে। কিন্তু অনেক ঘটনায় সরকার তার দায়িত্ব পালন করেনি। এটা তো কোনো আইনগত প্রক্রিয়া হতে পারে না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সরকার অনেক দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল এবং অনেক থানা থেকে অস্ত্র লুটের পর সেভাবে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যাপার কি পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটার জন্য দায়ী?
প্রতিটি ঘটনার একটা ইনিশিয়াল ব্যাপার থাকে। আপনি যখন মাটির হাঁড়ি তৈরি করবেন, তখন আপনাকে প্রথমে হাতে মাটি নিতে হবে। তারপর মেকানিজম করে করে হাঁড়িটা তৈরি করতে হবে। একই কথা বিল্ডিং নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও। ৫ আগস্টের পরে যত ঘটনা ঘটেছে, সে সময় শক্তভাবে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরবর্তী সময়ে সেটা কমে যেত। সে সময় অভ্যুত্থানকারী নেতারাই নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছিল। সরকারপ্রধান তো বলেছেন, অভ্যুত্থানকারীরাই তাঁকে নিয়োগ করেছে। যারা নিয়োগ দেয়, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তো করার কিছু থাকে না। সেই সময় থেকে দুর্বলতা শুরু হয়েছে। অনেক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বলাবলি হলেও কাজ হবে না। কারণ, ট্রেন অলরেডি লাইনের বাইরে চলে গেছে। কাজেই লাইনে ট্রেন ওঠানোর জন্য বিকল্প কোনো ভাবনা আমার জানা নেই। একমাত্র সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে যদি সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়। আর একটা হলো, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে নতুন আশার সৃষ্টি হতে পারে।
সেনাবাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না?
একদিকে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলো, অন্যদিকে সেনাপ্রধানের অপসারণের প্রসঙ্গ তোলা হলো, ভারতে পাঠানোরও থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। এ রকমভাবে সেনাপ্রধানকে থ্রেট দিলে কি তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
সেনাবাহিনীর ট্রেনিং তো একটাই দেওয়া হয়—যদি কন্ট্রোল করতে না পারো, তাহলে সরাসরি গুলি করো। গুলি করলে তো মানুষ মারা যাবে। ওই ধরনের রিস্ক তারা নিতে চাইছে না। তবে তারা ১৬ জুলাইয়ে গোপালগঞ্জের ঘটনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে বলে আমার মনে হয়।
এখন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সেভাবে তৎপর দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
আসলে মানবাধিকারের শিকড়ে যেতে হবে। মানবাধিকার ধারণাটা এসেছে সমাজতন্ত্রকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য। আমেরিকা সেই ফর্মুলাটা আবিষ্কার করেছিল। কারণ, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানবাধিকার নেই। সেখানে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করা যায় না। আমরা বিশ্ববাসীর মানবাধিকার নিশ্চিত করব। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ধ্বংসের পর সেটার আর কার্যকারিতা নেই। ১০ বছর আগেও সেটার কার্যকারিতা ছিল।
কিন্তু আমেরিকা যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চালায়, সেখানে তো মানবাধিকার রক্ষিত হয় না। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। সেখানে কি কোনো মানবাধিকার রক্ষার সুযোগ আছে? মানবাধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী সেই আলোচনাটা আর নেই।
আমাদের দেশে আশির দশকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনজিওগুলো। এনজিওগুলোর ফান্ড দেশের বাইরে থেকে আসে। এনজিওগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলে সত্যিকারভাবে গুম-খুন, রাজনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারা বলার কারণে কিছুটা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই সময়কার অনেক এনজিও-প্রধান এখন ক্ষমতার পার্ট হয়ে গেছেন। শুধু পার্ট না, কয়েকজন তো সরাসরি উপদেষ্টা হয়েছেন। এখন যাঁরা ক্ষমতা পরিবর্তন করে এনাদের ক্ষমতায় বসালেন, এখন যদি তাঁরাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন, সেটা তো লজ্জার বিষয় হবে তাঁদের জন্যও।
এখন তাঁরা বলছেন না, কিন্তু একসময় তো কথা বলতেই হবে। তাঁদের বিবেকের কাছে তো জবাবদিহি করতে হবে। তবে একদম যে কেউ বলছেন না, তা কিন্তু নয়। সারা হোসেন, শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না বলছেন। একটা অংশ বলছেন, কিন্তু বড় অংশটা তো এই পরিবর্তনের ফলভোগী। আর ফান্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর কি বিচারব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
৫ আগস্টের পরেই আমরা বলা শুরু করেছিলাম, বিচার বিভাগে; বিশেষ করে যেসব জায়গায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল, সেগুলো দূর করা দরকার। একটা উদাহরণ দিই—আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন মামলায় জামিন পান নিম্ন আদালত থেকে, তখন জামিনের কপি পেতে আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হতো, যাতে তারা আড়াই মাস পরে আপিল করতে পারে। নিয়ম হলো দুই দিনের মধ্যে সেটা পাওয়া। এসব মেকানিজম করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার খর্ব করার জন্য। আমরা কিন্তু চেয়েছিলাম সেই বিচার বিভাগের পরিবর্তন।
কিন্তু আমরা এখন অন্য আলোকে কিছু বিষয় দেখতে পাচ্ছি। শুধু বোতলটা পরিবর্তিত হয়েছে। আগের বোতল নেই। এখনকার বাস্তবতা হলো, বহু আইনজীবী কোর্টে যেতে পারেন না। ৬০-৭০ জন আইনজীবী ঢাকা বারের একটা চেম্বার ভাঙচুর করেছেন একটা মামলার জন্য। সেই মামলার সত্যতা কতটুকু আছে, সেটা আমি জানি না। সেটা থাকলেও চেম্বার ভাঙচুরের জন্য আইনজীবীদের জেলে যাওয়ার কথা নয়। ৬০ জন আইনজীবী আপিল বিভাগের নির্দেশে জেলে ছিলেন।
এরপর শত শত আইনজীবীকে কোর্টে গেলে মারধর করা হচ্ছে। বিচারকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের পরে জোর করে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে। একটা মামলায় বাদীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আসামিকে আপনি চেনেন? নাম কী? বলতে পারেননি। কারণ, ৪০০ আসামিকে কীভাবে চিনবে? তখন বিচারক অর্ডার দিতে রাজি হননি। সঙ্গে সঙ্গে বিচারককে ঘেরাও করা হয়েছিল। যখন দেশে রুল অব ল থাকে না, তখন তো ন্যায়বিচারও থাকে না। জজকে নিরাপত্তা কে দেবে? এখন জজ তো নিরাপত্তার জন্য যা চাইবেন, তা-ই করবেন। এটা তো পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য না। এসব নিম্ন আদালতের ব্যাপার।
উচ্চ আদালতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা আগের রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলল, ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ হচ্ছে। কিন্তু তাদের জ্ঞানও নেই যে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ কী? বিচারকদের একটা সভা ডাকা হয়েছিল, সেখানে কোনো মামলার রায় হওয়ার কথা নয়। সেখানে তারা হাজার হাজার তরুণকে ডেকে আনল, যেহেতু তারা পরিবর্তন করেছে। তারা সবাইকে পদত্যাগে বাধ্য করল। এরপরও তো অনেককে দোসর ট্যাগ দিয়েছে। তাহলে বিচারকেরা কীভাবে কাজ করবেন? স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নেই। আগে ছিল একটা প্যাটার্ন (ধরন), এখন চলছে আরেক প্যাটার্ন। আমি বলি, আগের তুলনায় অবস্থা আরও খারাপ।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
২ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
২ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
২ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
২০ জুলাই ২০২৫
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
২ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
২ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
২ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।
শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।
এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।
এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।
শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।
এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।
এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
২০ জুলাই ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
২ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
২ ঘণ্টা আগেহেনা শিকদার

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।
একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।
এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।
এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।
স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।
একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।
এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।
এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।
স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
২০ জুলাই ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
২ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
২ ঘণ্টা আগেরিয়াদ হোসেন

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
২০ জুলাই ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
২ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
২ ঘণ্টা আগে