আব্দুর রাজ্জাক প্রকৌশলী
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই বিভিন্ন মিডিয়ায়, বিশেষ করে সামাজিক মিডিয়ায় বিভিন্ন গল্প প্রচারিত হয়ে আসছিল। গল্প বললাম এই কারণে, যেসব খবর আমরা সচরাচর দেখতে পাই বা শুনতে পাই, যার সত্যতা আছে সেগুলো ব্যতীত, অনুমাননির্ভর বা কোনো কাল্পনিক খবর প্রচারিত হয়ে আসছিল। এক পক্ষের এই ধরনের অনুমাননির্ভর খবরের সঙ্গে অন্য পক্ষের অনুমাননির্ভর খবরের কোনো মিল ছিল না, প্রায় ক্ষেত্রেই এগুলো বিপরীত ধারার ছিল।
সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রায় ক্ষেত্রেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা যেত—খবরের কোন অংশটুকু বিশ্বাস করবে বা কোনটা করবে না। বিশেষ করে সামাজিকমাধ্যমের খবরগুলো খুবই মুখরোচক ছিল। এক পক্ষ খুশি হতো তাদের মনের কথা প্রকাশ করার জন্য, অন্য পক্ষ এই খবর শুনে সাংঘাতিক বিরক্ত হতো। যারা বিরক্ত হতো, তাদের পক্ষ থেকে মুখরোচক সংবাদ প্রকাশের পরে অন্য পক্ষ বিরক্ত হতো।
বেশ কয়েক বছর যাবৎ এ রকম আজগুবি অথচ মুখরোচক খবর প্রচারিত হয়ে আসছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন সামাজিকমাধ্যমের খবরদাতা এ রকম খবর পরিবেশন করতেন। এইসব খবর বিশ্বাস করা বা প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো তথ্য-প্রমাণ ছিল না। এ রকম খবর প্রচার করতে করতে গোয়েবলসীয় কায়দায় বিশ্বাসযোগ্য করা হয়েছিল অনেকের কাছে। পৃথিবীর সব সমাজেই, বিশেষ করে আমাদের সমাজে একটু বেশি, এই ধরনের আষাঢ়ে মুখরোচক গল্প শুনতে মানুষ ভালোবাসে।
এখানে প্রাচীন যুগের একটি গল্প বলি। কোনো এক দেশের রাজা শিকার করতে ভালোবাসতেন। তিনি দলবল নিয়ে শিকার করতে যেতেন, সঙ্গে অনেক সহচর থাকত রাজাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য। এই সহচরেরা বিভিন্ন গালগল্প করে রাজাকে আনন্দ দিত। যেসব আষাঢ়ে আজগুবি গল্প বলা হতো, এইসব গল্পের সঠিকতা যাচাই করার জন্য কোনো মাপকাঠি ছিল না। রাজার এই সঙ্গীদের মধ্যে দুজন ব্যক্তি থাকতেন। একজনের নাম ছিল চাটা। সে বিভিন্ন চাটাম মারত, তাই তার নাম চাটা। আরেকজনের নাম ছিল খাটা। চাটা যে চাটাম মারত সেগুলোকে যুক্তিতর্ক দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলত এই খাটা, তাই তার নাম খাটা। বেশ কিছুদিন যাওয়ার পরে চাটা দেখল, সে মজার মজার চাটাম মারে, রাজা বেশ আনন্দ পায়। রাত্রে বসে বসে অদ্ভুত ধরনের মজার মজার চাটাম সে রচনা করে, সবার সামনে পরিবেশন করে, সবাই আনন্দে উদ্বেলিত থাকে।
চাটা একদিন রাজার কাছে প্রস্তাব দিল, ‘রাজামশাই, আমি সুন্দর সুন্দর চাটাম মারি, আপনাকে আনন্দ দিই, আপনার সহচরেরা আনন্দ পায়। আমি অনেক কষ্ট করে এইসব আজগুবি চাটাম রচনা করি, খাটা তেমন কোনো কাজ করে না। ও শুধু আপনার সঙ্গে ঘুরে, মাঝে মাঝে দু-একটা যুক্তি দিয়ে কথা বলে আমার এই গল্পকে শুদ্ধ করে দেয়। আমার মনে হয় খাটার আর দরকার নেই, আমার বেতন বাড়িয়ে দিন।’ রাজা খাটাকে বাদ দিয়ে চাটাকে নিয়েই শিকারে বের হয়ে গেলেন।
অনেক ঘোরাঘুরির পরেও রাজা সেই দিন তেমন কোনো শিকার সামনে পেলেন না। রাজা একটু বিরক্ত, কোনো শিকার নেই। তাই আনন্দ পাওয়ার জন্য চাটাকে বললেন, ‘চাটা, তুমি এবার তোমার চাটাম ছাড়ো।’ চাটা আরম্ভ করল, ‘রাজামশাই, আপনার বাবার সঙ্গে একদিন এই রকম শিকারে বের হয়েছি। সামনে কোনো শিকার নেই। মাইলের পর মাইল শুধু পানি আর পানি। মাঝে মাঝে কিছু শাপলা ও শালুক পাতা দেখা যাচ্ছিল। অনেক দূরে একটি শাপলা পাতার ওপরে বক দেখা গিয়েছিল, আপনার বাবার হাতে এত নিরিখ ছিল যে, এক মাইল দূর থেকে ওই বকটাকে লক্ষ্য করে গুলি করলেন। বকের চোখের ভেতর গুলি লেগে পায়ের মধ্য থেকে বের হয়ে গেল।’ রাজা আনন্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাটাকে বললেন, ‘চোখের মধ্যে গুলি লাগলে পায়ের মধ্যে থেকে কেমন করে বের হবে? তুমি আমাকে বুঝিয়ে বলো, এর যুক্তি কোথায়।’ চাটা মহামুশকিলে পড়ে গেল, কোনোভাবেই এটাকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারল না। রাজা চাটার ওপর খুবই অখুশি হলেন।
রাজামশাই নির্দেশ দিলেন খাটাকে আবার নিয়ে আসতে, নিশ্চয়ই খাটার কাছে এর যুক্তি থাকবে। যে কথা সেই কাজ। খাটাকে ডেকে আনা হলো। খাটাকে রাজা বললেন, ‘আমার বাবা এক মাইল দূরের বককে গুলি করলেন, চোখে গুলি ঢুকে পা থেকে বের হয়ে গেল। এটা কেমন করে সম্ভব? তুমি এটা যুক্তি দিয়ে খাটিয়ে দাও।’ বুদ্ধিমান খাটা একটু চিন্তা করে বলল, ‘রাজামশাই, ওই বকটা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আরেক পা দিয়ে নিজের কান চুলকাচ্ছিল, তখন আপনার বাবা বকটাকে গুলি করেছিল তাই গুলি চোখে লেগে যে পা দিয়ে কান চুলকাচ্ছিল তার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল।’ রাজা যুক্তি খুঁজে পেলেন। রাজার সঙ্গে যারা ছিল তারাও যুক্তি খুঁজে পেল, সবাই খুব খুশি। তখন রাজা ঘোষণা করলেন, খাটার বেতন দ্বিগুণ করে দিয়ে খাটাকে সঙ্গে রাখতে হবে।
গল্পটা বললাম এই কারণে, বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজের মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার চাটাম শুনে খুব মজায় আছে। মুখরোচক সংবাদ, মুখরোচক চাটাম প্রতিমুহূর্তে আমরা শুনছি আধুনিক প্রযুক্তির কারণে—ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক একটি ব্যাপার আছে—সে যেটা পছন্দ করে বা পছন্দ করতে চায় সেই ধরনের খবর শুনতে ভালোবাসে, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বাসও করে ফেলে। তাই তার পক্ষে খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সে মজা পায়, যুক্তিতর্ক দিয়ে এটাকে খাটানোর চেষ্টা করে না। এইসব খবর শুনে অনেকে আনন্দে আত্মহারা হয়ে, অযৌক্তিক বেআইনি অনেক কাজ করে বসে। এর প্রমাণ আমরা দেখছি বেশ কিছুদিন যাবৎ। এই ধরনের মুখরোচক গল্প, আজগুবি চাটাম শোনার পরিণতি যে ভয়াবহ, সেটা আমরা কিছুটা বুঝতেও পারছি। এ রকম চলতে থাকলে ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে আমাদের সমাজে। আমাদের বিদেশি দাতা বন্ধুরা যেসব বিষয়ের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে, যেমন জঙ্গিবাদ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, সেইসব কাজও সমাজে হচ্ছে গুজবের ওপর ভিত্তি করে, আষাঢ়ে গল্প শুনে।
সমাজ বা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা আষাঢ়ে কল্পনাপ্রসূত গল্প না শুনে, যুক্তি-তর্ক দিয়ে সবকিছু খাটিয়ে যেন সিদ্ধান্ত নেন। বিরোধী পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁরাও যেন কল্পনাপ্রসূত অবাস্তব কোনো কিছুর ওপর নির্ভর না করে, বাস্তবতার ভিত্তিতে তাঁদের কাজও এগিয়ে নেন।
এইসব আষাঢ়ে গল্প থেকে বিরত থাকার জন্য দরকার আমাদের জাতীয় গণমাধ্যমকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা দিয়ে, সঠিক তথ্যসমৃদ্ধ খবর প্রচার করতে অনুমোদন দেওয়া। যেসব সংবাদের ভিত্তি আছে, অর্থাৎ যুক্তিতর্ক দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য যেসব সংবাদ, সেসব পরিবেশন করা। একমাত্র সরকার তার নিয়ন্ত্রণ থেকে সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিলে ধীরে ধীরে গুজব বন্ধ হবে, মুখরোচক আজগুবি গল্প বন্ধ হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই বিভিন্ন মিডিয়ায়, বিশেষ করে সামাজিক মিডিয়ায় বিভিন্ন গল্প প্রচারিত হয়ে আসছিল। গল্প বললাম এই কারণে, যেসব খবর আমরা সচরাচর দেখতে পাই বা শুনতে পাই, যার সত্যতা আছে সেগুলো ব্যতীত, অনুমাননির্ভর বা কোনো কাল্পনিক খবর প্রচারিত হয়ে আসছিল। এক পক্ষের এই ধরনের অনুমাননির্ভর খবরের সঙ্গে অন্য পক্ষের অনুমাননির্ভর খবরের কোনো মিল ছিল না, প্রায় ক্ষেত্রেই এগুলো বিপরীত ধারার ছিল।
সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রায় ক্ষেত্রেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা যেত—খবরের কোন অংশটুকু বিশ্বাস করবে বা কোনটা করবে না। বিশেষ করে সামাজিকমাধ্যমের খবরগুলো খুবই মুখরোচক ছিল। এক পক্ষ খুশি হতো তাদের মনের কথা প্রকাশ করার জন্য, অন্য পক্ষ এই খবর শুনে সাংঘাতিক বিরক্ত হতো। যারা বিরক্ত হতো, তাদের পক্ষ থেকে মুখরোচক সংবাদ প্রকাশের পরে অন্য পক্ষ বিরক্ত হতো।
বেশ কয়েক বছর যাবৎ এ রকম আজগুবি অথচ মুখরোচক খবর প্রচারিত হয়ে আসছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন সামাজিকমাধ্যমের খবরদাতা এ রকম খবর পরিবেশন করতেন। এইসব খবর বিশ্বাস করা বা প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো তথ্য-প্রমাণ ছিল না। এ রকম খবর প্রচার করতে করতে গোয়েবলসীয় কায়দায় বিশ্বাসযোগ্য করা হয়েছিল অনেকের কাছে। পৃথিবীর সব সমাজেই, বিশেষ করে আমাদের সমাজে একটু বেশি, এই ধরনের আষাঢ়ে মুখরোচক গল্প শুনতে মানুষ ভালোবাসে।
এখানে প্রাচীন যুগের একটি গল্প বলি। কোনো এক দেশের রাজা শিকার করতে ভালোবাসতেন। তিনি দলবল নিয়ে শিকার করতে যেতেন, সঙ্গে অনেক সহচর থাকত রাজাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য। এই সহচরেরা বিভিন্ন গালগল্প করে রাজাকে আনন্দ দিত। যেসব আষাঢ়ে আজগুবি গল্প বলা হতো, এইসব গল্পের সঠিকতা যাচাই করার জন্য কোনো মাপকাঠি ছিল না। রাজার এই সঙ্গীদের মধ্যে দুজন ব্যক্তি থাকতেন। একজনের নাম ছিল চাটা। সে বিভিন্ন চাটাম মারত, তাই তার নাম চাটা। আরেকজনের নাম ছিল খাটা। চাটা যে চাটাম মারত সেগুলোকে যুক্তিতর্ক দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলত এই খাটা, তাই তার নাম খাটা। বেশ কিছুদিন যাওয়ার পরে চাটা দেখল, সে মজার মজার চাটাম মারে, রাজা বেশ আনন্দ পায়। রাত্রে বসে বসে অদ্ভুত ধরনের মজার মজার চাটাম সে রচনা করে, সবার সামনে পরিবেশন করে, সবাই আনন্দে উদ্বেলিত থাকে।
চাটা একদিন রাজার কাছে প্রস্তাব দিল, ‘রাজামশাই, আমি সুন্দর সুন্দর চাটাম মারি, আপনাকে আনন্দ দিই, আপনার সহচরেরা আনন্দ পায়। আমি অনেক কষ্ট করে এইসব আজগুবি চাটাম রচনা করি, খাটা তেমন কোনো কাজ করে না। ও শুধু আপনার সঙ্গে ঘুরে, মাঝে মাঝে দু-একটা যুক্তি দিয়ে কথা বলে আমার এই গল্পকে শুদ্ধ করে দেয়। আমার মনে হয় খাটার আর দরকার নেই, আমার বেতন বাড়িয়ে দিন।’ রাজা খাটাকে বাদ দিয়ে চাটাকে নিয়েই শিকারে বের হয়ে গেলেন।
অনেক ঘোরাঘুরির পরেও রাজা সেই দিন তেমন কোনো শিকার সামনে পেলেন না। রাজা একটু বিরক্ত, কোনো শিকার নেই। তাই আনন্দ পাওয়ার জন্য চাটাকে বললেন, ‘চাটা, তুমি এবার তোমার চাটাম ছাড়ো।’ চাটা আরম্ভ করল, ‘রাজামশাই, আপনার বাবার সঙ্গে একদিন এই রকম শিকারে বের হয়েছি। সামনে কোনো শিকার নেই। মাইলের পর মাইল শুধু পানি আর পানি। মাঝে মাঝে কিছু শাপলা ও শালুক পাতা দেখা যাচ্ছিল। অনেক দূরে একটি শাপলা পাতার ওপরে বক দেখা গিয়েছিল, আপনার বাবার হাতে এত নিরিখ ছিল যে, এক মাইল দূর থেকে ওই বকটাকে লক্ষ্য করে গুলি করলেন। বকের চোখের ভেতর গুলি লেগে পায়ের মধ্য থেকে বের হয়ে গেল।’ রাজা আনন্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাটাকে বললেন, ‘চোখের মধ্যে গুলি লাগলে পায়ের মধ্যে থেকে কেমন করে বের হবে? তুমি আমাকে বুঝিয়ে বলো, এর যুক্তি কোথায়।’ চাটা মহামুশকিলে পড়ে গেল, কোনোভাবেই এটাকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারল না। রাজা চাটার ওপর খুবই অখুশি হলেন।
রাজামশাই নির্দেশ দিলেন খাটাকে আবার নিয়ে আসতে, নিশ্চয়ই খাটার কাছে এর যুক্তি থাকবে। যে কথা সেই কাজ। খাটাকে ডেকে আনা হলো। খাটাকে রাজা বললেন, ‘আমার বাবা এক মাইল দূরের বককে গুলি করলেন, চোখে গুলি ঢুকে পা থেকে বের হয়ে গেল। এটা কেমন করে সম্ভব? তুমি এটা যুক্তি দিয়ে খাটিয়ে দাও।’ বুদ্ধিমান খাটা একটু চিন্তা করে বলল, ‘রাজামশাই, ওই বকটা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আরেক পা দিয়ে নিজের কান চুলকাচ্ছিল, তখন আপনার বাবা বকটাকে গুলি করেছিল তাই গুলি চোখে লেগে যে পা দিয়ে কান চুলকাচ্ছিল তার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল।’ রাজা যুক্তি খুঁজে পেলেন। রাজার সঙ্গে যারা ছিল তারাও যুক্তি খুঁজে পেল, সবাই খুব খুশি। তখন রাজা ঘোষণা করলেন, খাটার বেতন দ্বিগুণ করে দিয়ে খাটাকে সঙ্গে রাখতে হবে।
গল্পটা বললাম এই কারণে, বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজের মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার চাটাম শুনে খুব মজায় আছে। মুখরোচক সংবাদ, মুখরোচক চাটাম প্রতিমুহূর্তে আমরা শুনছি আধুনিক প্রযুক্তির কারণে—ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক একটি ব্যাপার আছে—সে যেটা পছন্দ করে বা পছন্দ করতে চায় সেই ধরনের খবর শুনতে ভালোবাসে, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বাসও করে ফেলে। তাই তার পক্ষে খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সে মজা পায়, যুক্তিতর্ক দিয়ে এটাকে খাটানোর চেষ্টা করে না। এইসব খবর শুনে অনেকে আনন্দে আত্মহারা হয়ে, অযৌক্তিক বেআইনি অনেক কাজ করে বসে। এর প্রমাণ আমরা দেখছি বেশ কিছুদিন যাবৎ। এই ধরনের মুখরোচক গল্প, আজগুবি চাটাম শোনার পরিণতি যে ভয়াবহ, সেটা আমরা কিছুটা বুঝতেও পারছি। এ রকম চলতে থাকলে ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে আমাদের সমাজে। আমাদের বিদেশি দাতা বন্ধুরা যেসব বিষয়ের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে, যেমন জঙ্গিবাদ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, সেইসব কাজও সমাজে হচ্ছে গুজবের ওপর ভিত্তি করে, আষাঢ়ে গল্প শুনে।
সমাজ বা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা আষাঢ়ে কল্পনাপ্রসূত গল্প না শুনে, যুক্তি-তর্ক দিয়ে সবকিছু খাটিয়ে যেন সিদ্ধান্ত নেন। বিরোধী পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁরাও যেন কল্পনাপ্রসূত অবাস্তব কোনো কিছুর ওপর নির্ভর না করে, বাস্তবতার ভিত্তিতে তাঁদের কাজও এগিয়ে নেন।
এইসব আষাঢ়ে গল্প থেকে বিরত থাকার জন্য দরকার আমাদের জাতীয় গণমাধ্যমকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা দিয়ে, সঠিক তথ্যসমৃদ্ধ খবর প্রচার করতে অনুমোদন দেওয়া। যেসব সংবাদের ভিত্তি আছে, অর্থাৎ যুক্তিতর্ক দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য যেসব সংবাদ, সেসব পরিবেশন করা। একমাত্র সরকার তার নিয়ন্ত্রণ থেকে সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিলে ধীরে ধীরে গুজব বন্ধ হবে, মুখরোচক আজগুবি গল্প বন্ধ হবে।
একাত্তরের যুদ্ধকালের মতো সমষ্টিগত দুঃসময় আমাদের জীবনে আর কখনো আসেনি। যুদ্ধটা ছিল রাজনৈতিক এবং তাতে জাতীয়তাবাদ নানাভাবে ও বিভিন্ন দিক দিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তি সে সময়ে বিশেষভাবে প্রকাশ পায়, তার দুর্বলতাও যে ধরা পড়েনি এমন নয়। বাঙালির জাতীয়তাবাদের শক্তি ছিল ঐক্যে...
৩ ঘণ্টা আগেনতুন শিল্পকারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাবের ওপর আয়োজিত এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক গণশুনানি সব শ্রেণির গ্রাহক প্রতিনিধিদের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারেনি। গত বুধবার ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই গণশুনানির আয়োজন করেছিল বিইআরসি।
৪ ঘণ্টা আগেবর্তমান পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনে সামাজিক অপরাধের ব্যাপকতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি জনমনে যথেষ্ট আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। সমাজ হলো নাগরিকদের জন্য একটি দায়বদ্ধতার জায়গা। যেখানে মানবিক ও পারস্পরিক সম্পর্কগুলোর প্রতিনিয়ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার...
৪ ঘণ্টা আগেরচিত হয়েছিল। এর মধ্যেই নিহিত ছিল এক নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন ও দিকনির্দেশনা। স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ দশক পেরিয়ে এলেও সংবিধানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আজও অপরিসীম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। তবে সেই পরিবর্তন বা সংশোধন হবে কীভাবে—এটাই এখন বিতর্কের বিষয়।
৪ ঘণ্টা আগে