অরুণ কর্মকার
এমনিতেই ফেব্রুয়ারি এলে রাজপথগুলো আগুনরাঙা হয়ে ওঠে। বাতাসে গনগনে ফুলকি ছড়াতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি এ দেশের প্রতিটি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় ১৯৫২ সালে তার রচিত পথের কথা। এবার, এই ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার সঙ্গে বাড়তি যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের উত্তাপ। মানুষ এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশ এক রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘিরে সৃষ্ট নানামুখী টানাপোড়েন ওই উত্তাপ ছড়ানোর পাশাপাশি কিছু প্রশ্নেরও জন্ম দিচ্ছে।
নতুন মেরুকরণের প্রধান উপাদান হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন একটি রাজনৈতিক দল এখন আত্মপ্রকাশের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। একই সঙ্গে গঠনপ্রক্রিয়ার মধ্যেই নতুন দলের নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন প্রকাশ্যে এসেছে। অপেক্ষাকৃত তরুণদের উদ্যোগ ও সমন্বয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় হয়তো এ ধরনের টানাপোড়েন একেবারে অস্বাভাবিক নয়। তবে বিষয়টি যেভাবে প্রকাশ্যে এসেছে এবং আসছে, তাতে স্বাভাবিক মনে করে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
কারণ, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদেরও অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন। তাতে এ কথা স্পষ্ট যে নতুন দলের উদ্যোক্তা এবং পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে নেতৃত্বের বিষয়ে একাধিক বলয় তৈরি হয়েছে। আত্মপ্রকাশের আগেই এই অবস্থা নেতাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তরুণদের উদ্যোগ ও নেতৃত্বে একটি উদারপন্থী (তাঁরা অবশ্য মধ্যপন্থী বলেছেন) রাজনৈতিক দল হওয়া সময়ের দাবি। তাঁদের সেই দাবি মেটাতে হবে। নতুন দল অবশ্য আরও দু-একটি হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। এখনো যে শোনা যাচ্ছে না, তা-ও নয়। তবে সেসব বাতাসেই ভেসে বেড়াচ্ছে। হয়তো এমন দলগুলোর উদ্যোক্তারা বিষয়টি আড়ালে রেখেই শেষ মুহূর্তে প্রকাশিত হতে চান।
এই মেরুকরণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো বিএনপির প্রতিক্রিয়া। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের একটি অংশ বিএনপিকে বোধ হয় কিছুটা উদ্বিগ্ন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, কোন রাজনৈতিক দল কতটুকু সংস্কার চায়, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে এবং তিনি তা দেশবাসীকে জানানোর জন্য ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবেন। এরপর বিএনপি নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে সংস্কারের বিষয়ে আর কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। বরং তাঁরা দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জোরদার করেছেন। এই দাবিতে তাঁরা রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালন করছেন।
অবশ্য বিএনপি আগে থেকেই বলে এসেছে যে সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী সংস্কার করা হবে, তাদের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে তা রয়েছে। কিন্তু তাতে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি, বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা মিটবে বলে মনে হয় না। তাই নতুন দলের উদ্যোক্তা, পৃষ্ঠপোষক এবং জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনের আগে অন্তত মৌলিক বিষয়ে সংস্কার সম্পন্ন করার কথা বলে যাচ্ছে। ফলে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে সমঝোতা তৈরি হয়েছিল, তা এখন কার্যত ভেঙে গেছে। ধারণা করা যায়, সামনের দিনগুলোতে তা আরও ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছাবে।
রাজনৈতিক মেরুকরণে নতুন অনুষঙ্গ হয়ে সামনে এসেছে আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ। জুলাই গণহত্যা, গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত নন—এমন আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষমা চাইলে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পেতে পারেন বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে এমন প্রস্তাব এসেছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারও তেমন চিন্তাভাবনাই করছে বলে প্রতীয়মান হয়, যখন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বিষয়টি প্রকাশ্যে বলেন। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারাও এ ধরনের ‘রিডিম এবং রিকনসিলিয়েশন’-এ রাজি বলে জানা যায়। তবে বিষয়টিতে বিএনপির ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির স্পষ্ট বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা বিষয়টিকে দেখছেন ছাত্রদের নতুন দল গঠনের ক্ষেত্রে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা হিসেবে। জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য হলো, গণহত্যার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত ও বিচারকাজ আগে সম্পন্ন করা হোক। ক্ষমার চিন্তা তারপর হতে পারে। আগে নয়।
কোনো কোনো ছাত্রনেতা এবং রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমা চেয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসন, নিবন্ধন বাতিল কিংবা নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই সুযোগ দেওয়া আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার একটি প্রয়াস হতে পারে। তাঁরা মনে করেন, শেখ হাসিনা এবং সরকার ও দলের মূল নেতৃত্বের কারও ক্ষমা চেয়ে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। অন্যদের অনেকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ নিয়ে রাজনীতিতে আসতে পারেন। সেটা কখনোই প্রকৃত ও পূর্ণ ক্ষমতার আওয়ামী লীগ হবে না। কিন্তু তাঁদেরই রাজনীতি করতে দেওয়া হবে। এইভাবে আওয়ামী লীগ হবে বিভক্ত ও হীনবলসম্পন্ন একটি নামসর্বস্ব দল। এটা না করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা রাখার ফল বিপরীত হতে পারে। যেমন হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক স্বার্থে জামায়াতকে কোণঠাসা করে টিকিয়ে রাখা এবং শেষে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যে ভুল করেছিল, তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যাতে আওয়ামী লীগও সেই সুযোগ নিতে না পারে।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনেও কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার জাতীয় দৈনিক সমকালকে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধের দাবি উদ্বেগের। এতে বাংলাদেশিরা হয়তো আরেকটি নির্বাচন পেতে যাচ্ছে, যেখানে তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে না।’ নিষিদ্ধের পরিবর্তে কী করা যেতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘সঠিক উপায়ে তদন্ত করে অভিযোগ গঠন করে বিচার করা।’
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তাতে আরও একটি মাত্রা যুক্ত করেছে বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গন এবং তার বাইরেও ছাত্ররাজনীতি ও নতুন ছাত্রসংগঠন গঠন নিয়ে বিভেদ, রক্তাক্ত, হানাহানি। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানেরও আগে থেকে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি এবং অনেক ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন দেখা গেছে। অন্য অনেক সংগঠনের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষেই কথা বলেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে একটি জটিল সমীকরণ। ছাত্ররাজনীতি করতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে বাধা দেওয়া হচ্ছে সাধারণ ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষ থেকেই। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগেই গঠিত হচ্ছে নতুন ছাত্রসংগঠন।
এ কথা সবাই স্বীকার করবেন যে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা তখন নিজেদের সাধারণ ছাত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু তাঁদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো ছাত্রসংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন। এখন নতুন রাজনৈতিক দলের এবং ছাত্রসংগঠনের নেতা হিসেবে তাঁদেরই দেখা যাচ্ছে। তাহলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ বা নিষিদ্ধ নিয়ে হানাহানি কেন? নতুন মেরুকরণ থেকে কোনো সুফল পেতে হলে এসব বিষয়ের বৈষম্যহীন ফয়সালা দরকার।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
এমনিতেই ফেব্রুয়ারি এলে রাজপথগুলো আগুনরাঙা হয়ে ওঠে। বাতাসে গনগনে ফুলকি ছড়াতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি এ দেশের প্রতিটি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় ১৯৫২ সালে তার রচিত পথের কথা। এবার, এই ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার সঙ্গে বাড়তি যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের উত্তাপ। মানুষ এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশ এক রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘিরে সৃষ্ট নানামুখী টানাপোড়েন ওই উত্তাপ ছড়ানোর পাশাপাশি কিছু প্রশ্নেরও জন্ম দিচ্ছে।
নতুন মেরুকরণের প্রধান উপাদান হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন একটি রাজনৈতিক দল এখন আত্মপ্রকাশের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। একই সঙ্গে গঠনপ্রক্রিয়ার মধ্যেই নতুন দলের নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন প্রকাশ্যে এসেছে। অপেক্ষাকৃত তরুণদের উদ্যোগ ও সমন্বয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় হয়তো এ ধরনের টানাপোড়েন একেবারে অস্বাভাবিক নয়। তবে বিষয়টি যেভাবে প্রকাশ্যে এসেছে এবং আসছে, তাতে স্বাভাবিক মনে করে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
কারণ, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদেরও অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন। তাতে এ কথা স্পষ্ট যে নতুন দলের উদ্যোক্তা এবং পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে নেতৃত্বের বিষয়ে একাধিক বলয় তৈরি হয়েছে। আত্মপ্রকাশের আগেই এই অবস্থা নেতাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তরুণদের উদ্যোগ ও নেতৃত্বে একটি উদারপন্থী (তাঁরা অবশ্য মধ্যপন্থী বলেছেন) রাজনৈতিক দল হওয়া সময়ের দাবি। তাঁদের সেই দাবি মেটাতে হবে। নতুন দল অবশ্য আরও দু-একটি হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। এখনো যে শোনা যাচ্ছে না, তা-ও নয়। তবে সেসব বাতাসেই ভেসে বেড়াচ্ছে। হয়তো এমন দলগুলোর উদ্যোক্তারা বিষয়টি আড়ালে রেখেই শেষ মুহূর্তে প্রকাশিত হতে চান।
এই মেরুকরণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো বিএনপির প্রতিক্রিয়া। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের একটি অংশ বিএনপিকে বোধ হয় কিছুটা উদ্বিগ্ন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, কোন রাজনৈতিক দল কতটুকু সংস্কার চায়, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে এবং তিনি তা দেশবাসীকে জানানোর জন্য ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবেন। এরপর বিএনপি নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে সংস্কারের বিষয়ে আর কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। বরং তাঁরা দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জোরদার করেছেন। এই দাবিতে তাঁরা রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালন করছেন।
অবশ্য বিএনপি আগে থেকেই বলে এসেছে যে সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী সংস্কার করা হবে, তাদের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে তা রয়েছে। কিন্তু তাতে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি, বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা মিটবে বলে মনে হয় না। তাই নতুন দলের উদ্যোক্তা, পৃষ্ঠপোষক এবং জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনের আগে অন্তত মৌলিক বিষয়ে সংস্কার সম্পন্ন করার কথা বলে যাচ্ছে। ফলে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে সমঝোতা তৈরি হয়েছিল, তা এখন কার্যত ভেঙে গেছে। ধারণা করা যায়, সামনের দিনগুলোতে তা আরও ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছাবে।
রাজনৈতিক মেরুকরণে নতুন অনুষঙ্গ হয়ে সামনে এসেছে আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ। জুলাই গণহত্যা, গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত নন—এমন আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষমা চাইলে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পেতে পারেন বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে এমন প্রস্তাব এসেছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারও তেমন চিন্তাভাবনাই করছে বলে প্রতীয়মান হয়, যখন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বিষয়টি প্রকাশ্যে বলেন। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারাও এ ধরনের ‘রিডিম এবং রিকনসিলিয়েশন’-এ রাজি বলে জানা যায়। তবে বিষয়টিতে বিএনপির ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির স্পষ্ট বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা বিষয়টিকে দেখছেন ছাত্রদের নতুন দল গঠনের ক্ষেত্রে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা হিসেবে। জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য হলো, গণহত্যার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত ও বিচারকাজ আগে সম্পন্ন করা হোক। ক্ষমার চিন্তা তারপর হতে পারে। আগে নয়।
কোনো কোনো ছাত্রনেতা এবং রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমা চেয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসন, নিবন্ধন বাতিল কিংবা নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই সুযোগ দেওয়া আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার একটি প্রয়াস হতে পারে। তাঁরা মনে করেন, শেখ হাসিনা এবং সরকার ও দলের মূল নেতৃত্বের কারও ক্ষমা চেয়ে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। অন্যদের অনেকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ নিয়ে রাজনীতিতে আসতে পারেন। সেটা কখনোই প্রকৃত ও পূর্ণ ক্ষমতার আওয়ামী লীগ হবে না। কিন্তু তাঁদেরই রাজনীতি করতে দেওয়া হবে। এইভাবে আওয়ামী লীগ হবে বিভক্ত ও হীনবলসম্পন্ন একটি নামসর্বস্ব দল। এটা না করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা রাখার ফল বিপরীত হতে পারে। যেমন হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক স্বার্থে জামায়াতকে কোণঠাসা করে টিকিয়ে রাখা এবং শেষে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যে ভুল করেছিল, তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যাতে আওয়ামী লীগও সেই সুযোগ নিতে না পারে।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনেও কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার জাতীয় দৈনিক সমকালকে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধের দাবি উদ্বেগের। এতে বাংলাদেশিরা হয়তো আরেকটি নির্বাচন পেতে যাচ্ছে, যেখানে তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে না।’ নিষিদ্ধের পরিবর্তে কী করা যেতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘সঠিক উপায়ে তদন্ত করে অভিযোগ গঠন করে বিচার করা।’
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তাতে আরও একটি মাত্রা যুক্ত করেছে বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গন এবং তার বাইরেও ছাত্ররাজনীতি ও নতুন ছাত্রসংগঠন গঠন নিয়ে বিভেদ, রক্তাক্ত, হানাহানি। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানেরও আগে থেকে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি এবং অনেক ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন দেখা গেছে। অন্য অনেক সংগঠনের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষেই কথা বলেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে একটি জটিল সমীকরণ। ছাত্ররাজনীতি করতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে বাধা দেওয়া হচ্ছে সাধারণ ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষ থেকেই। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগেই গঠিত হচ্ছে নতুন ছাত্রসংগঠন।
এ কথা সবাই স্বীকার করবেন যে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা তখন নিজেদের সাধারণ ছাত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু তাঁদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো ছাত্রসংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন। এখন নতুন রাজনৈতিক দলের এবং ছাত্রসংগঠনের নেতা হিসেবে তাঁদেরই দেখা যাচ্ছে। তাহলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ বা নিষিদ্ধ নিয়ে হানাহানি কেন? নতুন মেরুকরণ থেকে কোনো সুফল পেতে হলে এসব বিষয়ের বৈষম্যহীন ফয়সালা দরকার।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতা হলেও স্বৈরশাসক হাসিনা কিংবা আন্দোলনকারীরা তা আন্দাজ করতে পারেননি। জনগণ তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছিল স্বৈরশাসক হাসিনাকে...
১৫ ঘণ্টা আগেতথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ বা পিআইবিতে তারুণ্যের উৎসবে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশিশক্তিনির্ভর ছাত্ররাজনীতির অবসান হওয়া প্রয়োজন। ছাত্রদের দেশের কল্যাণে ইতিবাচক রাজনীতি করতে...
১৫ ঘণ্টা আগেএকুশ মানে মাথা নত না করা—শিক্ষাবিদ আবুল ফজলের বলা এই বাক্যটি এতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে আর কবে দেখা দিয়েছে? নানা লোকের নানা মতবাদে দেশের ভাবনার ভারসাম্য যখন বিপদের সম্মুখীন, তখন একুশ আমাদের কোন অনুপ্রেরণা দেয়, সেটা নির্ধারণ করার দায়িত্বও এ সময়কার মানুষদের ওপর বর্তায়।
২ দিন আগেবাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত
২ দিন আগে