Ajker Patrika

অপরাধের ব্যাপকতা

ড. তামান্না তাসকীন
তামান্না তাসকীন। ছবি: সংগৃহীত
তামান্না তাসকীন। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনে সামাজিক অপরাধের ব্যাপকতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি জনমনে যথেষ্ট আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। সমাজ হলো নাগরিকদের জন্য একটি দায়বদ্ধতার জায়গা। যেখানে মানবিক ও পারস্পরিক সম্পর্কগুলোর প্রতিনিয়ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধের চর্চার জায়গা সৃষ্টি হয়। আর সেই মূল্যবোধগুলো সমাজের মধ্যে কতটুকু ক্রিয়া করছে, তা জনগণের আচরণের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হতে দেখা যায়। যে সমাজে ইতিবাচক সামাজিক মূল্যবোধের চর্চা যত বেশি হতে দেখা যায়, সে সমাজে সামাজিক অপরাধ তত কম হয়। ফলে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাও সহজ হয়।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে এগুলো সবই তো পাঠ্যপুস্তকের কথা, এতে নতুনত্ব কী আছে? নতুনত্ব কথাতে নেই এটি যেমন একদিকে ঠিক, অন্যদিকে বর্তমান সমাজে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলোর কারণে জনগণের জীবনে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তার থেকে পরিত্রাণের জন্য মানবীয় মানুষ তৈরি করার কোনো বিকল্প নেই, সেটিও সবার কাছে অনুধাবনের বিষয় হওয়া উচিত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কিছুদিন পরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতির কারণে। সে সময় সবাই পাড়া বা মহল্লায় নিজ এলাকার ব্যক্তিরা একত্র হয়ে দল গঠন করে ডাকাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এতে যথেষ্ট কাজ হয়েছিল। খুব বেশি ক্ষতির হাত থেকে জনগণ বেঁচে গিয়েছে। সারাক্ষণ মোবাইলে ডুবে থাকা ছেলেটাও সেদিন ‘জেন-জি’ নাম নিয়ে কীভাবে একসঙ্গে পথ চলতে হয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে।

প্রযুক্তি থেকে কেউই আমরা দূরে থাকতে পারব না। তবে প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে মানবীয় মূল্যবোধের চর্চা বন্ধ করা যাবে না। আজকের বাংলাদেশ নারীদের জন্য ধর্ষণের ক্ষেত্র হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত হতে দেওয়া যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। যেখানেই অন্যায় হবে আর যার সঙ্গে অপরাধ সংঘটিত হবে, তার পাশে সবাইকে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে হবে। আমার তো কিছু হয়নি, আমি কেন এগিয়ে যাব—এ ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে সবাইকে একসঙ্গে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। তা না হলে রাষ্ট্র যতই চেষ্টা করুক না কেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সামাজিক অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের মতো এত বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী আর কোনো দেশের আছে কি না সন্দেহ। কিছুদিন আগে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত তারুণ্য উৎসবের স্লোগান ছিল, ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’। আমার তো মনে হয় আগে নিজেকে বদলাতে হবে, তাহলে দেশ বদলে যাবে। বাংলাদেশের তরুণসমাজকে বলতে চাই, তোমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করো, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করো। বাংলাদেশের কান্নার আওয়াজ যেন মানবিক মানুষ হিসেবে তোমাকে তৈরি করে। বাড়ির বাইরে নারী-পুরুষ সবাই যেন সুরক্ষিত থাকে। প্রতিদিন সুস্থভাবে নিরাপদ অবস্থায় বাড়ি ফেরার চাওয়া খুব বেশি কিছু না। দেশকে সত্যিকারভাবে কেউ ভালোবাসলে সে কখনোই কোনো অন্যায় করতে পারে না।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত