Ajker Patrika

রাজশাহী নগর

বর্জ্যের স্তূপ মহাসড়কের পাশে

  • প্রতিদিন গড়ে ৪০০ টন গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়।
  • বর্জ্য ফেলা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এবং কৃষিজমিতে।
  • চার ভাগের এক ভাগ বর্জ্য অপসারণই করা হয় না।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
মহাসড়কের পাশেই ফেলা হচ্ছে শহরের বর্জ্য। সম্প্রতি রাজশাহীর সিটি হাট এলাকায়।	 ছবি: আজকের পত্রিকা
মহাসড়কের পাশেই ফেলা হচ্ছে শহরের বর্জ্য। সম্প্রতি রাজশাহীর সিটি হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভাগাড় উঁচু হয়ে গেছে পাহাড়ের সমান। সেখানে আর বর্জ্য ফেলার জায়গা নেই। ফলে রাজশাহী শহরের শত শত টন বর্জ্য প্রতিদিনই এলোমেলোভাবে ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশে, কৃষিজমিতে এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেও। এসব বর্জ্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) ২০০৪ সালে নগরের উত্তর নওদাপাড়া মৌজায় সিটি হাটের পাশে একটি ডাম্পিং স্টেশন বা ভাগাড় চালু করে। সেটি অনেক আগেই পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এরপর থেকেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংকট শুরু হয়।

বর্তমানে শহরে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ টন গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে অন্তত এক-চতুর্থাংশ বর্জ্য অপসারণই করা হয় না বলে স্বীকার করেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি সিটি হাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভাগাড়ে আর জায়গা নেই বলে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বর্জ্য। কিছু বর্জ্য সড়কের পাশ থেকে নিচু জায়গায় মেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব বর্জ্য থেকে নির্গত তরল পদার্থ (লিচেট) আশপাশের কৃষিজমিতে ঢুকে পড়ছে। নাক চেপে ধরে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন মানুষ। গন্ধে হাঁসফাঁস করেন স্থানীয়রা। ওই এলাকায় কুকুর, কাক ও মাছির উপদ্রব সীমাহীন।

পাশেই রাজশাহী রেসিডেনশিয়াল কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আহসান বলেন, ‘কলেজ গেটের সামনে পর্যন্ত রাসিকের লোকজন আবর্জনা ফেলছে। কিছুদিন আগে তো একটি গরুর মৃতদেহসহ বর্জ্য ফেলে গেছে।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, বর্ষায় এসব বর্জ্য ড্রেন ও জলাশয়ে ধুয়ে গিয়ে পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে কলেরা, ডেঙ্গু, ত্বকের রোগ ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাও রয়েছে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এমদাদুল হক জানান, শহরের কঠিন বর্জ্যের প্রায় ৭১ শতাংশই খাদ্য ও সবজির বর্জ্য, যেগুলো ব্যবহার করে জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী, এসব বর্জ্য থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫৯ দশমিক ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এ ছাড়া অ্যানারোবিক ডাইজেশন পদ্ধতিতে এসব বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ৩ দশমিক ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে এজন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা।

পরিবেশবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্জ্য নিয়ে শহরে এখন বড় সংকট। অবিলম্বে আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ, বর্জ্য শ্রেণিবিন্যাস বাধ্যতামূলক করা, রিসাইক্লিং প্লান্ট ও বর্জ্য থেকে জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নিলে তা একটি ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, ‘আমাদের সিটি হাটের ভাগাড় দু-তিন বছর আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। আমরা নতুন একটি ল্যান্ডফিল করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। অনুমোদন, জমি অধিগ্রহণসহ নানা ধাপে এটি বাস্তবায়নে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে।’

তবে নতুন ল্যান্ডফিল করার আগে নির্বাচিত স্থানের ভূতাত্ত্বিক গঠন কেমন এবং সেখানে কোনো বর্জ্য বা ক্ষতিকর পদার্থ জমা করলে তা কীভাবে পানির স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে—এ বিষয়টি বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে রুয়েটের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হিল বাকী বলেন, সিটি হাটের ল্যান্ডফিলটি পারমিয়েবল অ্যালুভিয়াম মাটির ওপর অবস্থিত। বৃষ্টির পানিতে তরল বর্জ্য মাটি ও পানিতে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে। নতুন ল্যান্ডফিল স্থাপনের আগে হাইড্রো জিওলজিক্যাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট করা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয়বার বিধ্বস্ত হলো বিমানবাহিনীর এফ-৭, এই চীনা যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কী

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: পাইলটসহ নিহত ২২, আহত দেড় শতাধিক, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক

৯ লাখ টন চাল কিনবে বাংলাদেশ, আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত

পাইলটের মা-বাবাকে বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে নেওয়া হলো ঢাকায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত