Ajker Patrika

নোয়াখালীর হাতিয়া

ইলিশের আকাল, হতাশ জেলে

  • নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ জুলাই শুরু হয়েছে ইলিশ শিকারের মৌসুম। চলবে আগস্ট পর্যন্ত।
  • হাতিয়ার বড় ২০টি ঘাটের ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার নৌকা নদীতে বিচরণ করে ইলিশ ধরতে।
  • এখন দিনে ৩০-৪০টি ট্রলার নদীতে যায়।
ইসমাইল হোসেন কিরন,  হাতিয়া (নোয়াখালী)  
নোয়াখালীর হাতিয়ায় নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় ঘাটের খালে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে নৌকা। সম্প্রতি সূর্যমুখী ঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নোয়াখালীর হাতিয়ায় নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় ঘাটের খালে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে নৌকা। সম্প্রতি সূর্যমুখী ঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘাটে নেই চিরচেনা হাঁকডাক। চায়ের দোকানে উচ্চ স্বরে বাজছে না গান। পাওয়া যাচ্ছে না বরফ ভাঙার আওয়াজ। জেলে, শ্রমিক, ব্যাপারী, আড়তদার—সবাই ঝিমিয়ে আছেন। চোখেমুখে হতাশার চাপ। কারণ, শিকারের মৌসুমে ইলিশের আকাল চলছে। নদীতে যাওয়া জেলে নৌকাগুলো শূন্য হাতে ফিরে আসছে। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ২০টি বড় ঘাটে এখন এই মন্দা অবস্থা চলছে।

ইলিশ শিকার ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ইলিশের ভরা মৌসুম। চলবে আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিবছর এ সময় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জেলেরা নদীতে রুপালি ইলিশ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করেন। এখানকার নিঝুম দ্বীপ, বন্দরটিলা, সুইজের ঘাট, মোক্তারিয়া, দানারদোল, সূর্যমুখী, কাজিরবাজার, বাংলাবাজার, চেয়ারম্যান ঘাটসহ বড় ২০টি ঘাটের ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার জেলে নৌকা নদীতে বিচরণ করে ইলিশ ধরতে।

জেলেরা জানান, এ বছর জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। প্রতিদিন প্রায় শূন্য হাতে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে তাঁদের। মৌসুমের প্রায় অর্ধেক সময় চলে গেলেও এখনো লাভের মুখ দেখেননি তাঁরা। নদীতে নামতে গিয়ে দিন দিন দেনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সূর্যমুখী ঘাটের দক্ষিণে খালপাড়ে বসে ছিলেন সবুর আলী (৫৫)। বাড়ি ভোলার দৌলতখানে। ভালো মাছ পাওয়ার আশায় গত সপ্তাহে এখানে এলেও এখনো সেই আশা পূরণ হয়নি। সবুর জানান, প্রতিদিন দেনা করে নদীতে গেলেও শূন্য হাতে ফিরতে হয়। এ কারণে গত চার দিন নদীতে না গিয়ে ঘাটে বেকার বসে আছেন। বাড়ি থেকে আসার সময় সংসার খরচ চালানোর জন্য এক টাকাও দিয়ে আসতে পারেননি। পরিকল্পনা ছিল, নদীতে মাছ ধরে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন। এখন সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

সবুরের মতো অনেকে নদীতে না গিয়ে ঘাট এলাকায় বেকার সময় কাটাচ্ছেন। আব্দুর রব মাঝি জানান, তাঁর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আটজন কাজ করেন। মাছ না পাওয়ায় তিনি ইতিমধ্যে দেড় লাখ টাকা দেনার মধ্যে পড়ে গেছেন। তাঁর দুই লোক কাউকে কিছু না বলে গোপনে চট্টগ্রাম চলে গেছেন। এখন নৌকাটি ঘাটে পড়ে আছে।

রব মাঝির তথ্য অনুযায়ী, সূর্যমুখী ঘাটে স্থানীয় ও বাইরের মিলিয়ে ৫ শতাধিক ট্রলার রয়েছে। দিনে ৩০-৪০টি ট্রলার নদীতে যায়। মাছ না থাকায় অন্যরা ঘাটে বেকার সময় পার করছেন।

ঘাটের শ্রমিক সর্দার নূর ইসলাম জানান, তাঁর অধীনে ৮৫ শ্রমিক কাজ করেন। কোনো নৌকা বা ট্রলার ভিড়লে তাঁরা সেখান থেকে মাছ টুকরিতে করে নিলামের বাক্সে এনে দেন। প্রতিদিন যে টাকা পান তা ভাগ করে নেন ৮৫ জন। এ বছর প্রতিদিন কাজ শেষে ভাগে প্রত্যেকে ৩০-৪০ টাকা করে পাচ্ছেন। এতে নিজেদের চা-নাশতার খরচই হচ্ছে না। সংসার চলছে দেনা করে।

এ নিয়ে কথা হলে সূর্যমুখী ঘাট মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজুর রহমান নান্টু বলেন, ‘১৯৯৩ সাল থেকে আমি মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এই বছরের মতো এত কঠিন অবস্থা আর কখনো দেখিনি। মৌসুমের প্রথম থেকেই মাছ নেই। অনেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অন্যত্র চলে গেছেন। ঘাটে পড়ে থাকা অসংখ্য নৌকার জেলেরা পালিয়ে গেছেন। ঘাটে সবার মুখে হতাশা।

শুধু সূর্যমুখী ঘাটে নয়, একই অবস্থা হাতিয়ার ২০টি ঘাটে। মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই অনেকটা দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান ভরা মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে জাটকা নিধন, মা ইলিশ ধরা ছাড়াও নদীতে ডুবোচর ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি জানান, কলকারখানার বর্জ্য নদীতে আসায় সেখানে মাছের বিচরণ অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এ জন্য নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি আশা করছেন, মৌসুমের সামনের সময়গুলোতে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয়বার বিধ্বস্ত হলো বিমানবাহিনীর এফ-৭, এই চীনা যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কী

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: পাইলটসহ নিহত ২২, আহত দেড় শতাধিক, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক

৯ লাখ টন চাল কিনবে বাংলাদেশ, আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত

পাইলটের মা-বাবাকে বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে নেওয়া হলো ঢাকায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত