Ajker Patrika

টক ই-অরেঞ্জ

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

ই-অরেঞ্জ মিষ্টি নয়, টক–এ কথা বুঝতে একটু সময় লেগেছে। অবিশ্বাস্য অফার দেখেও যাঁরা পানির দামে কিছু কিনতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, তাঁরা এখন ভুলের মাশুল দিচ্ছেন। প্রতারিত এই মানুষদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজেদের শেষ সম্বলটি বাজি রেখেছিলেন, ফলে তাঁদের অবস্থা মোটেই ভালো নয়।

প্রতারকেরা চালাকি করে পার পেয়ে যায়। সাধারণ মানুষের সরলতা ও লোভের সুযোগ নিয়ে প্রতারকেরা গল্পের প্লট সাজায়, তারপর ঝোপ বুঝে কোপ মারে। এই বাণিজ্যে এখন যোগ হয়েছে সমাজে গ্রহণযোগ্য মানুষদের যুক্ত করার কাজ। যাঁদের ওপর বিশ্বাস রাখা যায়, তাঁরাও কোনো না কোনোভাবে এই প্রতারকদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে যান কিংবা যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারকদের পক্ষে সাফাই গান। এতে সংশয়ী মানুষও বিভ্রান্ত হন এবং নেমে পড়েন এই জুয়ার আসরে। এটা এমনই এক জুয়া, পরাজয়ই একমাত্র সত্য সেখানে।

প্রতারকেরা এমন সব অফার দেয় শুরুতে, যা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। দেওয়া কথা রাখাও হয়। যাঁরা পণ্য বুঝে পান, তাঁরা প্রতারক প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সাফাইও গান। সেটা আবার ছড়িয়ে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমে। ১ লাখ টাকা দামের রেফ্রিজারেটর যদি ৫০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়, তাহলে শুরুতেই তো বুঝতে হবে, এ এক অসম্ভব কাণ্ড! কিন্তু কোনো ক্রিকেট বা ফেসবুক সেলিব্রিটি যখন সেই প্রতারক প্রতিষ্ঠানকে সার্টিফিকেট দিয়ে দেন কিংবা চাকরি নিয়ে নেন সেই প্রতিষ্ঠানেই, তখন কিন্তু সংশয়ী মানুষের সন্দেহ কিছুটা ফিকে হয়ে আসে। এই সময়ের মধ্যেই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়ে গেছে। প্রতারক প্রতিষ্ঠান প্রচারণায় খরচ করেছে অনেক টাকা। এবার তো পিঠটান দেওয়ার পালা। পাইপলাইন শুকিয়ে যাওয়া শুরু হয় যখন, তখনো শোনা যায় প্রতারক প্রতিষ্ঠানের চিৎকার, ‘আমরা সাময়িক অসুবিধায় পড়েছি, ঠিক হয়ে যাবে অচিরেই। আরও বিনিয়োগ হবে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিটি প্রতারক প্রতিষ্ঠান এই একই চিত্রনাট্য ধরে এগিয়ে যায়, কখনো কখনো তাতে যোগ করে নতুন মাত্রা।

সারা জীবনের অর্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে যাঁরা নিঃস্ব হয়ে গেলেন, তাঁদের জন্য সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই। প্রতারক চক্রের প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ার পর তাদের শাস্তি হয় কি না, হলে সেই শাস্তির পর জেল থেকে ফিরে এসে প্রতারণা করে যে অর্থ সঞ্চয় করা হয়েছে, তা ভোগ করে কি না, তা নিয়েও তদন্ত হওয়া দরকার। কোটি টাকা চুরি করার পর যদি সাত বছর জেল খাটতে হয়, তাহলে তা খুব বেশি কিছু নয়। জেল থেকে ফিরে এসে সেই টাকা ভোগ করা সম্ভব।

দুভাবে এই প্রতারণার পিঠে ছুরি মারা সম্ভব। প্রথমটি একটু কঠিন, নানা ধরনের প্রলোভন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রতারকেরা প্রকাশ্যেই প্রতারণার ক্ষেত্র তৈরি 
করার সময়টিতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের জানিয়ে দিতে পারে, আমাদের নজর আছে কিন্তু তোমাদের ওপর!

তবে শাস্তিটা যদি দৃষ্টান্তমূলক না হয়, তাহলে জেলে কিছুদিন থাকার ঝুঁকি নিয়েও এভাবে কোটি টাকা কামানোর পথ বন্ধ করা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত