Ajker Patrika

অনলাইন জুয়ায় বছরে দেশ থেকে পাচার ২০০০ কোটি টাকা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১: ৩০
Thumbnail image

দেশে ২০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ায় জড়িত। তারা মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে মাসে ১৫০ কোটি টাকার বেশি অবৈধভাবে লেনদেন করে। এভাবে বছরে লেনদেন হয় ১ হাজার ৬০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা ভার্চুয়াল মুদ্রায় রূপান্তরিত করে এবং হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়। জুয়ার এমন ১৮৬টি অ্যাপ ও লিংকের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই জুয়ায় দেশের সব মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট নম্বরই ব্যবহৃত হয়। জুয়ার টাকা লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট নম্বর মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে জুয়াড়িদের কাছে ভাড়ায় খাটে। এ রকম প্রায় দেড় হাজার নম্বরের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এই অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে সিআইডি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককে কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সিআইডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, দেশে ২০ লাখ মানুষ জুয়ার সাইট ও অ্যাপে নিবন্ধিত। তাদের মধ্যে ৫ লাখ মানুষ নিয়মিত জুয়া খেলে। দেশে কতগুলো জুয়ার সাইট ও অ্যাপ চালু আছে, তার সঠিক তথ্য নেই কোনো সংস্থার কাছে। তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুলিশ যখন যেগুলোর বিষয়ে তথ্য পায়, সেগুলোর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়।

 

সিআইডি সূত্রে জানা জায়, গত মাসে তারা জুয়ার ১৮৬টি সাইট, অ্যাপ, ইউটিউব ও ফেসবুক লিংকের তথ্য পেয়েছে। প্রতিটির বিষয়ে আলাদা তদন্ত হচ্ছে।

 

সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তবে একটি বন্ধ করলে সঙ্গে সঙ্গে আরও ১০টি জুয়ার সাইট খুলে যায়। কিছু গণমাধ্যম জুয়ার বিজ্ঞাপনও প্রচার করে।’ তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া বন্ধ করতে গণমাধ্যম, পুলিশ, মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটর সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে বন্ধ হবে।

Online-Gambling

সিআইডি জানায়, দেশি জুয়াড়িদের নিজস্ব কোনো অ্যাপ বা সাইট নেই। সব বিদেশে তৈরি এবং বিদেশ থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশে তাদের কিছু দালাল কাজ করে। জুয়ার ১৮৬টি অ্যাপ ও লিংকের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়া, সাইপ্রাস, আফ্রিকা ও ভারতের জুয়াড়িদের কাছে। এগুলোর মধ্যে অন্তত ৫০টি সাইট ও অ্যাপ বাংলাদেশি জুয়াড়িদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। প্রতিটি অ্যাপ ও সাইটে লেনদেনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের একটি করে ৫-৬টি এজেন্ট নম্বর দেওয়া থাকে। দেশে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক সেবা দিয়ে থাকে। এদের এজেন্ট নম্বরগুলো জুয়াড়িরা দৈনিক ভিত্তিতে এবং লাখে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা কমিশন ভিত্তিতে ভাড়া নেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এজেন্ট নম্বর টার্গেট করে জুয়াড়িরা। এ রকম ৩ হাজারের বেশি এজেন্ট নম্বর পেয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট সংস্থা। প্রতিটি এজেন্ট নম্বরে মাসে গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়। দেড় হাজার এজেন্ট নম্বরে মাসে দেড় শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়।

সিআইডির মতে, জুয়ার সাইট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে অস্বাভাবিক লেনদেনের এজেন্ট নম্বর সংখ্যাও। ফলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে ১৩টি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। গত জুনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এর আগে মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয় ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে জুয়ার টাকার পরিমাণ কত, তা জানা নেই কোনো সংস্থার। সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এজেন্ট নম্বরগুলোতে সন্দেহজনক লেনদেন বেশি হয়। সেগুলো নজরদারি করে জুয়াড়িদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা মিলছে।

সিআইডি গত ৩১ আগস্ট একটি চক্রের ছয়জনকে ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। সবাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট। তাঁরা বৈধ ব্যবসা করেন না। জুয়াড়িদের কাছে এজেন্ট নম্বর ভাড়া দিয়ে রেখেছিলেন। তাঁদের মধ্যে রেজাউল করিম একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ডিএসও। চক্রটি ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই এজেন্ট নম্বর দিয়ে জুয়াড়িদের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের কাছ থেকে ২১টি এজেন্ট নম্বর উদ্ধার করা হয়েছে। জুয়ার জন্য তারা একটি সার্ভারও তৈরি করেছে। তারা এক মাসেই ২০ কোটি টাকা লেনদেন করে। সিআইডি জানায়, এই চক্রের মূল হোতা শরীয়তপুরের মতিউর রহমান রাশিয়ার মস্কোতে আছেন। তাঁর সহযোগী যশোরের আশিকুর রহমান। চক্রটি বাংলাদেশে তিনটি ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করে। এ রকম প্রতিটি জেলায় জুয়াড়িদের এজেন্ট ও সাব-এজেন্ট আছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) রেজাউল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, জুয়ার অ্যাপ ও সাইটে এমএফএস এজেন্ট নম্বর দেওয়া থাকে। এই নম্বরগুলো বৈধ ব্যবসার কথা বলে অনুমোদন নেয়। তবে জুয়াড়িরা কমিশন বেশি দেওয়ায় এজেন্টরা বৈধ ব্যবসা রেখে জুয়াড়িদের সঙ্গে হাত মেলান। ইতিমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এমন কয়েকজন এজেন্ট এবং ডিএসও গ্রেপ্তার হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত