Ajker Patrika

আইনশৃঙ্খলার অবনতি: অপরাধীর খুঁটি রাজনৈতিক দল, মব দমনে ব্যর্থ পুলিশ

  • বদলির শঙ্কায় শক্ত পদক্ষেপ নিতে ভয় পুলিশে।
  • রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চান আইজিপি
  • গত ৬ মাসে ১৯৩০ জন খুন, পুলিশ লাঞ্ছিতের ঘটনাও বেড়েছে।
শহীদুল ইসলামশাহরিয়ার হাসান, ঢাকা 
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৫১
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত

সবার সামনে পিটিয়ে হত্যা, পাথরে শরীর থেঁতলে দেওয়া, নিজের বাড়ির সামনে গুলি করে পায়ের রগ কেটে হত্যা, অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনতাই, চাঁদা না পেয়ে গুলি—এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা কয়েক দিন ধরে বেশ আলোচিত। কিন্তু পুলিশ অনেকটাই নির্বিকার। প্রতিটি ঘটনার সিটিটিভি ফুটেজ থাকলেও সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসেও দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নাগরিকেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো শক্তিশালী ভূমিকা না রাখায় অপরাধের মাত্রা বাড়ছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা মাঠে থাকলেও তাঁদের দৃশ্যমান তৎপরতা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন অসম্ভব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকা'কে বলেন, এখন থানাগুলোয় একধরনের ভীতি কাজ করে। কথায় কথায় থানা ঘেরাও হচ্ছে। অনেক সময় দোষ না থাকলেও দাবির মুখে পুলিশ সদস্যদের বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে কেউ নিজ থেকে কিছু করতে চান না। নিরাপদে দিন পার করার দিকেই সবার নজর। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কাউকে জোর করে কিছু করাতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে কোনো ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের পক্ষে বাহিনী কথা বলছে না। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব সহজে বদলাবে না।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে যত মানুষ খুন হয়েছিল, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে তার থেকে ৩৮৭ জন মানুষ বেশি খুন হয়েছে। এই সময়ে পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাও বেড়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিজেদের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়গুলোকে কীভাবে তা হ্যান্ডেল করছে, সেটিও দেখার বিষয়। পুলিশ ঠিকমতো কাজ না করলেও সেনাবাহিনীর তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে, তারা এখন কী করছে, সেদিকেও নজর দেওয়ার বিষয় আছে।

রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বাহিনীগুলোকে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে বলে মত দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, পুলিশের মনোবল এখনো ফিরে আসেনি, তাদের আরও বুস্ট করার দরকার আছে। তাহলে তারা আরও ভালো কাজ করতে পারবে। তবে তারা আগের থেকে একটু অ্যাকটিভ হয়েছে।

পুলিশ কেন আলোচিত সব ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে না, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় অনেক সময় আসামি ধরেও আটকে রাখা যায় না। কিছু ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ মহল থেকেও এসব বিষয়ে নির্দেশনা আসে। তিনি বলেন, পুলিশের অনেক সদস্যও এখন কাজে নামতে দ্বিধায় ভুগছেন। কারণ, অনেকের মধ্যে এখনো আক্রমণের শিকার হওয়ার আতঙ্ক রয়ে গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কিছু ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানায়, কিছু কিছু ঘটনা রেকর্ড রেখেই সবার সামনে আনা হচ্ছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল অস্থিরতা বাড়াচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। কারণ, তাড়াতাড়ি নির্বাচন আয়োজন এবং নির্বাচন পেছানোর দুই দাবিই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে। ফলে পুলিশকেও এসব হিসাবে রেখে কাজ করতে হচ্ছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, নির্বাচন নেই বলে আজকে দেশে এই ঘটনাগুলো ঘটছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে, মৃত্যু বাড়ছে, দুর্বৃত্তরা সুযোগ নিচ্ছে। একটা নির্বাচিত সরকার এলে নিঃসন্দেহে সেটা শক্তিশালী সরকার হবে।

জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রশাসন পুনরায় সংগঠিত হতে সময় নিচ্ছে। পুলিশকে কার্যকরভাবে কাজে ফেরানো এবং অপরাধ দমন দুটিই একই সঙ্গে চালানো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তিনি আশাবাদী, শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন অসম্ভব বলে মনে করেন আইজিপি।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, চুরি, ছিনতাই, মব সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যেকোনো সময় চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে পারে।

আলোচিত ঘটনায়ও সব আসামি গ্রেপ্তার নেই

গত বুধবার ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে বিকেলে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে কুপিয়ে এবং পাথর মেরে হত্যা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার খুলনার দৌলতপুরে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার চাঁদপুরে মসজিদের ভেতরেই কোপানো হয় ইমামকে। একই দিনে ঢাকার শ্যামলীতে ছিনতাইকারীরা এক যুবকের পরনের কাপড় ও স্যান্ডেল পর্যন্ত নিয়ে যায়। আর পল্লবীতে এক আবাসন প্রতিষ্ঠানে চাঁদা না পেয়ে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা।

গত সাত দিনে সংঘটিত এসব ঘটনার বেশির ভাগেরই সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে। এরপরও সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এসব ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বাহিনীগুলো শক্তিশালী কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। অপরাধীরা জানে তারা আইনের আওতায় আসবে না, তারা ছাড় পাবে—এই বিশ্বাস থেকেই তারা অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে।

অপরাধ বেড়েছে কতটা

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে সারা দেশে ১ হাজার ৯৩০ জন খুন হয়েছে। প্রতি মাসেই খুনের সংখ্যা বেড়েছে। জানুয়ারিতে ২৯৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ জন, মার্চে ৩১৬ জন, এপ্রিলে ৩৩৬ জন, মেতে ৩৪১ এবং জুন মাসে ৩৪৪ জন মানুষ খুন হয়েছে। এ ছাড়া গত ছয় মাসে সারা দেশে ৩৬৬টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৫৩৮টি। এই সময়ে ৫১৬ জন অপহরণ, ৩২৯ জন পুলিশ লাঞ্ছিত এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ১১ হাজার ৮টি ঘটনা পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়েছে।

অন্যদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে সারা দেশে ১ হাজার ৫৪৩ জন খুন এবং ২৮১ জনকে অপহরণ করা হয়। এই সময়ে ২৮১ জন পুলিশ সদস্য লাঞ্ছিত হন এবং ৬৮৮টি ডাকাতি ও ৪ হাজার ৭১৭টি চুরির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতনের ৯ হাজার ২টি ঘটনা পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়েছে।

আরো খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত