Ajker Patrika

কল্পনা নয়, সত্যি এমন সুন্দর স্টেডিয়াম আছে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১৪: ২৩
Thumbnail image

জেলেদের ছোট্ট এক গ্রাম হেনেগসা। সেখানে দেখা মিলবে এক স্টেডিয়ামের। আদপে একে স্টেডিয়াম বলা যায় কি না, এটা নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। দর্শকদের বসার জন্য সেই অর্থে কোনো স্ট্যান্ড বা গ্যালারিও নেই। আন্তর্জাতিক ম্যাচ দূরে থাক, বড় কোনো খেলাও হয় না। শৌখিন একটি ক্লাবের খেলোয়াড় এবং জেলেপাড়ার শিশু-কিশোরেরাই এখানে খেলে কেবল। তার পরও এটা এমন এক স্টেডিয়াম, যেখানে খেলারও দরকার পড়ে না, কেবল একবার একে দেখলেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবেন।

নরওয়ের দ্য হেনেগসা ইদরেতস্লগ স্টেডিয়ন নামের ফুটবল স্টেডিয়ামটি সবার নজর কেড়েছে এর অবস্থানের কারণে। পাথুরে এক দ্বীপে স্টেডিয়ামটি। চারপাশের নজরকাড়া দৃশ্যের মধ্যে আছে খাঁজকাটা সব চূড়ার একের পর এক পর্বত, খোলা সাগর। আশপাশের নানা আকারের পাথরও খেলার মাঠটিকে অন্যরকম এক চেহারা দিয়েছে। সব মিলিয়ে আপনার মনে সন্দেহ হতেই পারে যে এমন সুন্দর কোনো স্টেডিয়াম থাকতে পারে! কল্পলোকের কোনো রাজ্যে চলে এলাম না তো? কিংবা দিবা স্বপ্ন দেখছেন? 

কিন্তু শরীরে চিমটি কাটলেই নিশ্চিত হবেন, যা দেখছেন তা সত্যি। অনেকেই একে বিবেচনা করেন পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্টেডিয়াম হিসেবে।

স্টেডিয়ামের চারপাশের দৃশ্য মুগ্ধ করবে আপনাকেহেগেনসা লফোতুন দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বিখ্যাত জেলে গ্রামগুলোর একটি। কয়েকটি ছোট দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা গ্রামটি থেকে যেদিকেই তাকান, আশপাশের দৃশ্য মুগ্ধ করবে আপনাকে। তবে এটা কোনোভাবেই কেবল ঘুমন্ত কোনো জেলে গ্রাম নয়। এখানে চমৎকার কিছু আর্ট গ্যালারিও আছে।

গ্রামের কেন্দ্র থেকে মাছ শুকানোর বা শুঁটকি তৈরির র‍্যাকগুলো পাশ কাটিয়ে সহজেই আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন মাঠটির ধারে। মাঠটিতে কৃত্রিম টার্ফ বা ঘাসের চাপড়া বসানো আছে। অবশ্য নরওয়ের অনেক স্টেডিয়ামেই এ ধরনের কৃত্রিম টার্ফের ব্যবহার চোখে পড়বে আপনার। এই স্টেডিয়াম বা মাঠটি মূলত ব্যবহার করেন শৌখিন ক্লাব হেনেগসা আই এলের খেলোয়াড়েরা। তারাই মাঠটির দেখভাল করেন। 

অনেকেই একে বিবেচনা করেন পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্টেডিয়াম হিসেবেগ্রামটির জনসংখ্যা কম হওয়ায় ক্লাবটি বড়দের দল সেভাবে তৈরি করতে পারে না। তবে শিশু-কিশোরদের দলগুলো এটি ব্যবহার করে। স্থানীয় স্কুলের শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবেও এটি কাজে লাগে। বিখ্যাত লফোটেন ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ফেস্টিভালের প্রদর্শনীর জায়গা হিসেবেও ব্যবহার করা হয় একে। 

স্টেডিয়ামের চারপাশে অ্যাসফল্টের ঢালাই একই সঙ্গে দর্শকদের বসার ও পার্কিংয়ের জায়গার কাজ করছে। তবে স্টেডিয়ামটিতে খুব বেশি মানুষ খেলা দেখার সুযোগ না থাকাটা বড় কোনো সমস্যা নয়, কারণ হেনেগসা গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৫০০। 

স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটেরও ব্যবস্থা আছেনরওয়ের এই দ্বীপটি এমনিতেই দেখতে বড় সুন্দর। আর্ট ফেস্টিভালের কারণেও অনেকের নজর কেড়েছে। তারপর আবার এর দক্ষিণ অংশে পাথর সমান করে কেটে এমন এক স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে, যেটি অনেকের বিবেচনায় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়াম। এটির কথা আবার ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে মানুষের ভালোই নজরে পড়েছে। বিশেষ করে ওপর থেকে তোলা স্টেডিয়ামটির ছবি অনেকেরই চোখ কপালে তুলে দিয়েছে। তাই ছোট্ট জেলে গ্রাম আর স্টেডিয়াম দেখতে অনেক পর্যটকই হাজির হচ্ছেন দ্বীপটিতে। 

নরওয়ের শীতল, অন্ধকার মাসগুলোতেও ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে খেলা চলে স্টেডিয়ামটিতে। তবে বেশি মজা হয় গ্রীষ্মেই, কারণ এখানকার গ্রীষ্মে রাতেও আলো থাকে। 

হেগেনসা লফোতুন দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বিখ্যাত জেলে গ্রামগুলোর একটি‘দেখতে ভারি ভালো লাগে, কারণ বড় হতে থাকা ছেলে-মেয়েরা এখানে জমা হয়, কফি খেতে ও খেলা দেখতে।’ বলেন স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী রেগনার পেলসন, ‘ফুটবল পিচটি প্রচুর ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে গ্রীষ্মে আলো থাকায় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই এখানে খেলা চলে।’  কখনো কখনো রাত ২টার দিকে মাঠে খেলতে চলে আসি আমরা।’ বলেন স্থানীয় খেলোয়াড় সারা ক্যাসপারসেন। 

মাঠের সবুজ টার্ফ কিন্তু কৃত্রিমকাজেই পাঠক নরওয়ের ঠান্ডাটা যদি সামলাতে পারেন, সেখানকার অসাধারণ দৃশ্য আর চমৎকার এই স্টেডিয়ামটি একনজর দেখার জন্য দেশটিতে একটি বার ঘুরে আসতেই পারেন। আর গ্রীষ্মে ২৪ ঘণ্টা আলোর দেখা পাওয়ার মজাটাও কম নয়। রাতের বেলা সূর্যের আলোয় স্টেডিয়ামটিতে খেলার একটা সুযোগ যদি পান, তবে তো কথাই নেই! সারা জীবন বন্ধুমহলে বলার মতো একটি গল্প জমা হয়ে গেল আপনার ভান্ডারে! 

সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, ফিফা ডট কম, লাইফ নরওয়ে ডট নেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত