Ajker Patrika

দুই ভাইয়ের এক স্ত্রী, কেন এমন প্রথা ভারতীয় এই নৃগোষ্ঠীর

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ১২: ২৬
বর প্রদীপ ও কপিল নেগি এবং কনে সুনীতা চৌহান। ছবি: সংগৃহীত
বর প্রদীপ ও কপিল নেগি এবং কনে সুনীতা চৌহান। ছবি: সংগৃহীত

হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার শিল্লাই গ্রামের ট্রান্স-গিরি অঞ্চলে প্রাচীন রীতিনীতির অনুসরণে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমী বিবাহ অনুষ্ঠান—এক নারী বিয়ে করেছেন দুই ভাইকে। হাট্টি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পলিয়ান্ড্রি বিয়েতে শত শত অতিথি অংশগ্রহণ করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, দুই বরের নাম প্রদীপ ও কপিল নেগি এবং কনের নাম সুনীতা চৌহান। তাঁরা জানান, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এবং পারিবারিক সম্মতিতে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ১২ জুলাই থেকে টানা তিন দিন চলে বিবাহ উৎসব। অনুষ্ঠানে স্থানীয় লোকগান ও নৃত্যে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ে। ব্যতিক্রমী এই বিয়ের নানা দৃশ্য এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।

কনে সুনীতা বলেন, ‘আমি হাট্টি সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতাম। কোনো ধরনের চাপের মুখে পড়ে নয়, স্বাধীনভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। আমরা যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছি, তার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।’

শিল্লাই গ্রামের বড় ভাই প্রদীপ একজন সরকারি কর্মচারী এবং ছোট ভাই কপিল বিদেশে কর্মরত। প্রদীপ বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যেই এই রীতিনীতি অনুসরণ করছি, কারণ আমরা আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। এটা আমাদের দুই ভাইয়ের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।’ কপিল বলেন, ‘আমি বিদেশে থাকলেও এই বিয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্ত্রীকে ভালোবাসা, স্থিতি ও সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছি।’

হিমাচল প্রদেশের রাজস্ব আইনে এই প্রথা বৈধ হিসেবে স্বীকৃত এবং স্থানীয়ভাবে এটি ‘জোড়িদারা’ নামে পরিচিত। ট্রান্স-গিরির বাদহানা গ্রামে গত ছয় বছরে অন্তত পাঁচটি এমন বিয়ে হয়েছে। হাট্টি সম্প্রদায় মূলত হিমাচল ও উত্তরাখণ্ড সীমান্তবর্তী একটি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী। তিন বছর আগে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিলি সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই অঞ্চলে পলিয়ান্ড্রি বিয়ে প্রচলিত ছিল। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার প্রসার ও আর্থিক উন্নতির ফলে এই প্রথা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। তবে অল্প হলেও এখনো কিছু গ্রামে এ ধরনের বিয়ে দেখা যায়।

হাট্টি সম্প্রদায়ের প্রায় ৩ লাখ মানুষ সিরমৌরের প্রায় ৪৫০টি গ্রামে বসবাস করে। ট্রান্স-গিরি অঞ্চলে এখনো কিছু গ্রামে এই প্রথা প্রচলিত রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের জৌনসর বাবর ও হিমাচলের কিন্নৌর জেলায়ও একসময় এই প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিয়ান্ড্রি প্রথার অন্যতম কারণ ছিল ভূমির বিভাজন ঠেকানো। একটি পরিবারের কৃষিজমি ভাইদের মধ্যে ভাগ হয়ে না যাক, সেটাই ছিল মূল চিন্তা। এখনো এই গোষ্ঠীর নারীদের জমির ওপর অধিকার নিয়ে বিতর্ক আছে। কেন্দ্রীয় হাট্টি সমিতির সাধারণ সম্পাদক কুন্দন সিং শাস্ত্রী পিটিআইকে বলেন, ‘হাজার বছর আগে এই প্রথার সূচনা হয়েছিল পারিবারিক কৃষিজমি রক্ষা, যৌথ পরিবারের বন্ধন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। অনেক সময় সৎভাইয়েরাও এক কনে বিয়ে করতেন। এতে পারিবারিক ঐক্য ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব বজায় থাকত।’

হাট্টি সম্প্রদায়ের এই অনন্য বিয়ের রীতি ‘জাজদা’ নামে পরিচিত। এতে কনে শোভাযাত্রাসহ বরপক্ষের গ্রামে আসে। বরের বাড়িতে ‘সীঞ্জ’ নামের এক আচার পালিত হয়, যেখানে স্থানীয় ভাষায় মন্ত্রোচ্চারণ করে পুরোহিত কনে ও বরদের গায়ে পবিত্র জল ছিটিয়ে দেন এবং শেষে গুড় মুখে দিয়ে আশীর্বাদ করেন যেন কুলদেবতা তাঁদের বৈবাহিক জীবনে মধুরতা আনেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত