Ajker Patrika

আশ্চর্য এক কাচের সৈকত আছে ক্যালিফোর্নিয়ায়

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫: ৩৪
আশ্চর্য এক কাচের সৈকত আছে ক্যালিফোর্নিয়ায়

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাবেন আশ্চর্য এক সৈকত। যেখানে শুধু ছড়িয়ে আছে নানা ধরনের কাচ। এ কারণে এটি পরিচিতি পেয়ে গেছে গ্লাস বিচ বা কাচের সৈকত নামে। শুনে অবাক হবেন, উপকূলীয় এলাকায় বাস করা মানুষের ফেলা নানা ধরনের আবর্জনা আর জঞ্জাল থেকেই সৃষ্টি এমন আশ্চর্য সৈকতের। 

কাচের সৈকতের অবস্থান ফোর্ট ব্র্যাগের ধারের ম্যাককেরিচার স্টেট পার্কে। প্রশান্ত মহাসাগর তীরের এই সৈকত অনন্য দুটি কারণে, একটি হলো এটি তৈরিতে বড় অবদান মানুষের। দ্বিতীয় ব্যাপারটি হলো সময় আর সাগরের ঢেউ কীভাবে মানুষের একটি ভুলকে সংশোধন করে দেয় এই সৈকতটি এর উজ্জ্বল উদাহরন। 

এবার বরং এ সৈকত সৃষ্টির ইতিহাসটি জেনে নেওয়া যাক। ১৯৪৯-৫০ সালের দিকে এখন যেখানে কাচের সৈকত এর আশপাশের এলাকা ছিল মানুষের আবর্জনা ফেলার জায়গা। ফোর্ট ব্র্যাগের বাসিন্দারা গৃহস্থালি যত জঞ্জাল আছে সব ওপর থেকে ছুড়ে ফেলত এখানে। তাঁদের এ সব অদরকারি জিনিসের মধ্যে ছিল প্রচুর কাচ, নানা ধরনের ভাঙা যন্ত্রপাতি এমনকি পরিত্যক্ত গাড়িও। ১৯৬০-র দশকের গোড়ার দিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে জঞ্জাল ফেলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু হয়। এ সময় বিষাক্ত যে কোনো দ্রব্য ফেলা নিষিদ্ধ করা হয়। শেষমেশ ১৯৬৭ সালে নর্থ কোস্ট ওয়াটার কোয়ালিটি বোর্ড অর্থাৎ এই উপকূলের পানির দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাদের দায়িত্ব, তারা বুঝতে পারে কত বড় একটা ভুল হয়ে আসছে এত বছর ধরে। জায়গাটিতে এ ধরনের জঞ্জাল ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। 

সৈকতের কাচে সূর্যরশ্মি পড়লে মনে হয় যেন গুপ্তধনের রাজ্যে চলে এসেছেনএর ত্রিশ বছরের বেশি সময় পরে জন্ম এই কাচের সৈকতের। কীভাবে? বছরের পর বছর ধরে সাগরের ঢেউ সৈকতের জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে নিয়ে যায়। তারপর এক সময় জলের তোড়ে এগুলো আবার ফিরে আসে, তবে চেহারা একেবারেই বদলে, মানে নানা রঙের ছোট, মসৃণ টুকরো হিসেবে। যেগুলোকে দেখে রত্নপাথর বলেই মনে হয়। আর জ্বলজ্বলে এই কাচগুলোই এখন দেখতে পান পর্যটকেরা। বিশেষ করে সূর্যের আলো পড়ে যখন জ্বলজ্বল করের ওঠে তখন আপনার মনে হতে পারে গুপ্তধনের কোনো রাজ্য আবিষ্কার করে ফেলেছেন। 

 কাছ থেকে দেখা সৈকতের কিছু কাচ২০০২ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পার্ক কর্তৃপক্ষ ৩৮ একরের কাচের সৈকত এলাকাটি কিনে নেয়। প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে একে ম্যাককেরিচার স্টেট পার্কের অন্তর্ভুক্ত করে। তারপর থেকে কাচের সৈকত হয়ে ওঠে পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য। 

বছরজুড়ে যে কোনো সময়ই সেখানে যেতে পারেন সৈকতটিতেকাচের সৈকতের বর্ণিল সব কাচ যত ইচ্ছা দেখতে পারবেন। তবে এগুলো সঙ্গে করে স্মারক হিসেবে নিয়ে আসা মানা। অবশ্য অনেকেই এর থোড়াই কেয়ার করেন। ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য লুকিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। বছরের পর বছর ধরে এভাবে সুন্দর সব কাচ নিয়ে আসার কারণে সৈকতের কোনো কোনো জায়গায় কাচের পরিমাণ গিয়েছে কমে। তাই অনেক পর্যটকই সেখানে গিয়ে কিছুটা হতাশ হন। ভাবেন হয়তো ভুল জায়গায় চলে এসেছেন। তবে সত্যি হলো, এখনো সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় বাহারি কাচের মেলা নজর কাড়বে। তবে এ জন্য সঠিক জায়গাটি খুঁজে পেতে হবে। 

প্রশান্ত মহাসাগরের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ মিলবে সৈকতটি ভ্রমণেক্যালিফোর্নিয়ার পরিচিত ও বিখ্যাত শহরগুলোর একটি সান ফ্রান্সিসকো, সেখান থেকে ঘণ্টা চারেক লাগে কাচের সৈকতে পৌঁছাতে। বছরজুড়ে যে কোনো সময়ই সেখানে যেতে পারেন। তবে পর্যটকের ভিড়-বাট্টা বেশি থাকে জুন, জুলাই আর আগস্টে। সৈকতজুড়ে বিছিয়ে থাকা রং-বেরঙের কাচ দেখার পাশাপাশি  প্রশান্ত মহাসাগরের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগেরও সুযোগ মেলে। চাইলে কোনো একটি ট্রেইল ধরে হাঁটতেও পারবেন বেশ খানিকটা সময়। কাচের সৈকতে গেলে সি গ্লাস মিউজিয়ামটাও দেখতে ভুলবেন না। কাচের সৈকত এলাকা থেকে গাড়িতে মিনিট পাঁচেকে পৌঁছে যাওয়া যায় সেখানে। ও একটা সতর্কবাণী, অনেকে লুকিয়ে সৈকতের কাচ পকেটভর্তি করে নিয়ে এলেও আপনি ভুলেও এই কাজ করবেন না যেন! কারণ ধরা পড়লে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা!

সূত্র: অ্যামুজিং প্ল্যানেট, ট্রাভেল টুডে ওয়র্ক টুমরো. কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত