Ajker Patrika

গরু নিয়ে মজার সব তথ্য

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৩, ১৪: ৩৫
Thumbnail image

আগামীকাল ঈদুল আজহা। কোরবানির জন্য গরু কিনে ফেলেছেন অনেকেই, কেউ আবার এখনো গরুর হাটে ছোটাছুটি করছেন গরু কিনতে। অর্থাৎ গরুর দিকে এখন সবার নজর। এই সুযোগে গরু নিয়ে মজার কিছু তথ্য দিচ্ছি। এর মধ্যে আছে প্রথম উড়োজাহাজে চড়া গরু, গরুর জন্য যুদ্ধ, সবচেয়ে বড় গরু, ছোট গরু, দামি গরুসহ গরুবিষয়ক আরও নানান খবর।

১. বুনো গরু থেকে পোষা বা গৃহপালিত গরুর উৎপত্তি হয়। যত দূর জানা যায়, আজ থেকে ১০ হাজার ৫০০ বছর আগে প্রথম গৃহপালিত গরুর উদ্ভব হয় বর্তমান তুরস্কে। এই গরুদের নাম তরিন কাউ। মোটামুটি ৭ হাজার বছর আগে জেবু ক্যাটল নামে আরেক ধরনের গৃহপালিত গরুর উদ্ভব হয় ভারতে। 

২. গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গরুর তকমাটি ব্লোসম নামের একটি স্ত্রী হলস্টেইন গরুর দখলে। প্রায় ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (৭৪.৮ ইঞ্চি) উচ্চতার গরুটি অবশ্য মারা যায় ২০১৫ সালে। মজার ঘটনা, ব্লোসম যে বছর মারা যায় অর্থাৎ ২০১৫ সালে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ একে দীর্ঘতম জীবিত গরুর মর্যাদা দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েসের অরেঞ্জভিলে ব্লোসমের মালিক পেটি মিডস–হ্যানসনের বাড়িতে গিয়ে যাচাই করে স্বীকৃতিটি দেওয়া হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই বছরের মে মাসে পায়ের ক্ষতের কারণে ১৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করে ব্লোসম। তারপর অবশ্য একে এযাবৎকালের দীর্ঘতম গরুর স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

মিডস-হ্যানসন জানান, গরুটি আসলে ছিল তাঁর বাবার। ওটার বয়স যখন দুই মাস, তখন থেকে তাঁদের অরেঞ্জভিলের খামারে এটিকে লালনপালন শুরু করেন। গরুটি জন্মের সময় সাধারণ একটি বাছুরের দ্বিগুণ ছিল গায়ে-গতরে। মারা যাওয়ার আগে এটার ওজন ছিল ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড। 

রানিকে লালন–পালন করা হয় সাভারের একটি খামারেআগের রেকর্ডের মালিক ছিলেন মাউন্ট কাতাহদিন। ১৯০০ সালের প্রথম দশকে রেকর্ডটি নিজের ঝুলিতে পুরে গরুটি। কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা ছিল ছয় ফুট দুই ইঞ্চি। এক অগ্নি দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। 

৩. দুঃখজনক ঘটনা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গরু ব্লোসম যেমন পৃথিবী বিদায় নিয়েছে তেমনি মারা গেছে গিনেস বুকের হিসেবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট গরু রানিও। গরুটি কিন্তু ছিল বাংলাদেশে। তাও সাভারে। মাত্র ২০ ইঞ্চি উচ্চতার রানির ওজন ছিল ২৬ কেজি। দুই বছরের ভুটানি জাতের গরুটি মারা যায় ২০২১ সালের আগস্টে। রানি বড় হয় শিকড় অ্যাগ্রো লিমিটেড নামের একটি খামারে। 

এর আগ পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট প্রাপ্তবয়স্ক গরুটির নাম মানিকিয়াম। উচ্চতা মোটে দুই ফুট, একটা ল্যাব্রাডার কুকুরের চেয়েও ছোট। দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালার আথোলিতে বাস মানিকিয়ামের। ওটার মালিক অক্ষয় এনভি নামের এক লোক। ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রেকর্ডটি ছিল তার ঝুলিতে। 

৪. গরুর হজম প্রক্রিয়ায় ঢেকুর এবং বায়ু ছাড়ার মাধ্যমে প্রচুর গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষ করে মিথেন বাতাসে ছেড়ে দেয়। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বলা হয় এ ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাসের ১৪.৫ শতাংশ আসে গবাদিপশু থেকে। 

চীনের মুদানজিয়াং সিটি মেগা ফার্ম৫. অনেক সময় বলা হয় গরুর চারটি পাকস্থলী আছে। সত্যি কথা হলো গরুর একটা বড় পাকস্থলী আছে, চার মধ্যে চারটি ভাগ আছে। এই চারটি অংশের কাজ অবশ্য আলাদা। 

৬. পৃথিবীর বড় খামারগুলোর অনেকগুলোর অবস্থানই চীন কিংবা অস্ট্রেলিয়ায়। অবশ্য সব ধরনের খামার এক রকম নয়। কোনো খামারের লক্ষ্য থাকে কৃষিপণ্য উৎপাদনে। অন্যরা আবার পশুপালনের জন্য বিখ্যাত। তবে এই খামারগুলোর মধ্যে মুদানজিয়াংয়ের হিসেবটা আলাদা। কারণ একে বিবেচনা করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খামার হিসেবে। 

কোনো কোনো সূত্রে এর আয়তন ২ কোটি ২৫ লাখ একর বা ৯১ হাজার ৫৪ বর্গকিলোমিটার বলা হলেও অন্য কোনো সূত্রের হিসেবে এর আকার মোটে ২ লাখ হেক্টর বা ২ হাজার বর্গকিলোমিটার। সেক্ষেত্রে অবশ্য আর একে সবচেয়ে বড় খামার বলা যাবে না। খামারটিতে গরু আছে এক লাখের বেশি। এটাও যদি আপনাকে সন্তুষ্ট করতে না পারে তাহলে বলি, খামারটি প্রতি বছর উৎপাদন করে ৮০ কোটি লিটার গরুর দুধ।

খামারটির অবস্থান উত্তর–পূর্ব চীনের মুদানজিয়াং এলাকায়। এই জায়গাটি রাশিয়ার সীমান্তের কাছে। মজার ঘটনা এই খামারের গরুগুলো কিন্তু চীনা গরু নয়। বরং নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, উরুগুয়ে ও চীন থেকে এখানে উন্নত জাতের গরু আমদানি করা হয়। তবে এই খামারে সাধারণত গরুদের উন্মুক্ত জায়গায় রাখা হয় না। বরং দালানের ভেতরে রেখে যত্ন করা হয়।

২০১৫ সালে খামারটি প্রতিষ্ঠিত করা হয় মূলত রাশিয়ায় দুগ্ধজাত বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের জন্য। গরুর খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য নানা ধরনের শস্যেরও চাষ করা হয়।

নিউজিল্যান্ডের একটি গরুর খামারপৃথিবীর বড় খামারগুলোর আরেকটি চায়না মডার্ন ডেয়ারি। এতে গরুর সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার। তালিকায় ওপরের দিকে থাকবে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অ্যানা ক্রিক নামের খামারটি। ৬০ লাখ একরের খামারটিতে গবাদিপশু অবশ্য খুব বেশি নেই, মোটে ৯ হাজার ৫০০। বড় খামারগুলোর তালিকায় আছে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি খামারও। ৪২ লাখ একরের খামারটির নাম ক্লিফটন হিলস, পশু আছে ১৪ হাজার। তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরির আলেকজান্দ্রিয়া। এতে পশু আছে ৫৫ হাজার।

৭. আজ থেকে ৯৩ বছর আগেও উড়োজাহাজে চড়েছিল গরু। এর নাম এলম ফার্ম ওলি। ১৯৩০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরির সেন্ট লুইসে একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে প্লেনে চড়ার সৌভাগ্য হয় এই গরুটির। মজার ঘটনা ওই যাত্রার সময় গরুটি থেকে ২২ লিটার দুধও সংগ্রহ করা হয়। 

৮. গরু নিয়ে যুদ্ধও হয়েছে। ১২৭২-৭৮ সাল পর্যন্ত ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে হয়েছিল ওয়ার অব দ্য কাউ। যুদ্ধ বাঁধে একটি গরু চুরিকে কেন্দ্র করে। 

৯. কানাডার আলবার্টার পোনোকার মোরসান খামার নাম কামিয়েছে দুষ্প্রাপ্য জাতের গরুর জন্য। এখানকার গরুগুলো বিক্রি হয় চড়া দামে। মিজি নামের একটি গরু অবশ্য এক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছে অন্যদের। ২০০৯ সালে টরেন্টোয় এক নিলামে এটি বিক্রি হয় ১২ লাখ ডলার বা প্রায় ১৩ কোটি টাকায়। 

সূত্র: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস, ট্রি হাগার ডট কম, এ জেড অ্যানিমেলস, পোনাকো নিউজ, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত