আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করার জন্য পানামা খাল খনন করতে গিয়ে নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন একটি জলপথ নির্মাণে বাস্তবে আর মানচিত্রে বিস্তর ফারাক রয়েছে। প্রকৃতি বুঝিয়ে দেয় সে লড়াই ছাড়া হাল ছাড়ে না। পানামা খাল খননে নির্মাণ শ্রমিকদের একটি সাপখোপে ভরা জঙ্গলে আক্ষরিক অর্থেই পাহাড় ঠেলতে হয়েছিল। গড় তাপমাত্রা ছিল ৮০-৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০৫ ইঞ্চি।
বোঝাই যাচ্ছে খাল খনন চাট্টিখানি কথা ছিল না। শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়। ভারী বর্ষণ, আর্দ্রতা ও বিভিন্ন রোগ ছিল অন্যতম প্রতিবন্ধক। প্রথমে ফ্রান্স খাল খনন শুরু করলে নানা কারণে ২০ হাজার শ্রমিক মারা যায়। পরে খনন বন্ধ রাখা হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র তার কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে খনন শুরু করে। তবুও ৫ হাজার ৬০০ শ্রমিক মারা গিয়েছিল। আর অধিকাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল পীতজ্বর (ইয়োলো ফিভার) ও ম্যালেরিয়া মহামারি।
১৮৮১ সালে খালটি খনন শুরু করে ফ্রান্স। ভৌগোলিক নকশা অনুযায়ী এর অবস্থান পার্বত্য অঞ্চলে। ফলে পাহাড় কেটে খালটি তৈরি করলে খালের পানির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতার সমান হবে না। এ কারণে ফরাসিরা পাহাড়গুলো একবারে কেটে সমতল ভূমি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বৃষ্টিপ্রধান এলাকা হওয়ায় এ ধরনের নকশায় সমুদ্রের সঙ্গে এক সমতলে তৈরি করলে পাহাড় থেকে আশপাশের মাটি ধসে খালটি ভরাট হয়ে যেত। নির্মাণকাজ শুরুর কয়েক বছর পর নকশার এত বড় ত্রুটি দেখে ১৯৮৮ সালে প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয় ফ্রান্স।
পরে যুক্তরাষ্ট্র পাহাড় কেটে সমতল ভূমি তৈরির পরিবর্তে জাহাজকে কীভাবে পাহাড়ে তোলা যায় তার ব্যবস্থা করে। এ জন্য আরেকটি বড় প্রকল্প হাতে নিতে হয়, যার পরিণতি গাতুন হ্রদ। যুক্তরাষ্ট্রের নকশা অনুযায়ী, পানামা খালে জাহাজগুলো প্রবেশ করাতে কতগুলো কৃত্রিম জলাশয় নির্মাণ করা হয়, যার নাম ‘লক’। এর মাধ্যমে জাহাজগুলোকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৬ মিটার উঁচুতে গাতুন হ্রদ পর্যন্ত তোলা হবে এবং এই হ্রদ পাড়ি দিয়ে পুনরায় কিছু লক অতিক্রম করে জাহাজগুলো সাগরে নেমে যাবে।
পানামা ১৮১৯ সাল থেকেই কলম্বিয়ার অংশ। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজগুলো সহজে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে নেওয়ার জন্য খাল খননের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে কলম্বিয়া সরকার। এই প্রত্যাখ্যানের পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি কথিত অভ্যুত্থান ঘটে এবং ১৯০৩ সালে জন্ম হয় পানামা নামের স্বাধীন রাষ্ট্র। এরপর অবশ্য খাল খননে বেগ পেতে হয়নি। পানামা-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি সম্পন্ন হলে মার্কিন সরকার ১৯০৪ সালে খালটি পুনরায় খনন শুরু করে। শেষ হয় ১৯১৪ সালে।
এই খালে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব তীর থেকে পশ্চিম তীরে যেতে আগে দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল অঞ্চল ঘুরে যেতে হতো। এতে আনুমানিক ১৫ হাজার কিলোমিটার ঘুরতে হতো। খাল খননের পর এই দূরত্ব প্রায় অর্ধেক কমে আসে। উত্তর আমেরিকার এক দিকের উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যদিকের উপকূলে যেতে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার পথ কম পাড়ি দিতে হয়। ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোরও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পথ বেঁচে যায়।
পানামা খাল বেশি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর চীন, জাপান, চিলি ও দক্ষিণ কোরিয়া। প্রতিটি বড় জাহাজকে এই পথ পাড়ি দিতে ব্যয় করতে হয় প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলার করে। বর্তমানে বছরে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি টোল আদায় হয় এ খাল থেকে।
আটলান্টিক থেকে পানামা খাল হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করতে একটি জাহাজের সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। এই দীর্ঘ ও যান্ত্রিক একটি জলপথ পাড়ি দিতে জাহাজগুলোকে উচ্চহারে শুল্ক দিতে হয়। পানামা খালের এই শুল্কহার পৃথিবীর অন্য সব জলপথের শুল্কের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বলে প্রচলিত। এ কারণেই একে বলা হয় সবচেয়ে ব্যয়বহুল জলপথ। প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জলপথ দিয়ে বছরে ১৫ হাজারেরও বেশি জাহাজ চলাচল করে।
তথ্যসূত্র: হিস্ট্রি ডটকম, ব্রিটানিকা ডটকম
আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করার জন্য পানামা খাল খনন করতে গিয়ে নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন একটি জলপথ নির্মাণে বাস্তবে আর মানচিত্রে বিস্তর ফারাক রয়েছে। প্রকৃতি বুঝিয়ে দেয় সে লড়াই ছাড়া হাল ছাড়ে না। পানামা খাল খননে নির্মাণ শ্রমিকদের একটি সাপখোপে ভরা জঙ্গলে আক্ষরিক অর্থেই পাহাড় ঠেলতে হয়েছিল। গড় তাপমাত্রা ছিল ৮০-৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০৫ ইঞ্চি।
বোঝাই যাচ্ছে খাল খনন চাট্টিখানি কথা ছিল না। শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়। ভারী বর্ষণ, আর্দ্রতা ও বিভিন্ন রোগ ছিল অন্যতম প্রতিবন্ধক। প্রথমে ফ্রান্স খাল খনন শুরু করলে নানা কারণে ২০ হাজার শ্রমিক মারা যায়। পরে খনন বন্ধ রাখা হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র তার কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে খনন শুরু করে। তবুও ৫ হাজার ৬০০ শ্রমিক মারা গিয়েছিল। আর অধিকাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল পীতজ্বর (ইয়োলো ফিভার) ও ম্যালেরিয়া মহামারি।
১৮৮১ সালে খালটি খনন শুরু করে ফ্রান্স। ভৌগোলিক নকশা অনুযায়ী এর অবস্থান পার্বত্য অঞ্চলে। ফলে পাহাড় কেটে খালটি তৈরি করলে খালের পানির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতার সমান হবে না। এ কারণে ফরাসিরা পাহাড়গুলো একবারে কেটে সমতল ভূমি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বৃষ্টিপ্রধান এলাকা হওয়ায় এ ধরনের নকশায় সমুদ্রের সঙ্গে এক সমতলে তৈরি করলে পাহাড় থেকে আশপাশের মাটি ধসে খালটি ভরাট হয়ে যেত। নির্মাণকাজ শুরুর কয়েক বছর পর নকশার এত বড় ত্রুটি দেখে ১৯৮৮ সালে প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয় ফ্রান্স।
পরে যুক্তরাষ্ট্র পাহাড় কেটে সমতল ভূমি তৈরির পরিবর্তে জাহাজকে কীভাবে পাহাড়ে তোলা যায় তার ব্যবস্থা করে। এ জন্য আরেকটি বড় প্রকল্প হাতে নিতে হয়, যার পরিণতি গাতুন হ্রদ। যুক্তরাষ্ট্রের নকশা অনুযায়ী, পানামা খালে জাহাজগুলো প্রবেশ করাতে কতগুলো কৃত্রিম জলাশয় নির্মাণ করা হয়, যার নাম ‘লক’। এর মাধ্যমে জাহাজগুলোকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৬ মিটার উঁচুতে গাতুন হ্রদ পর্যন্ত তোলা হবে এবং এই হ্রদ পাড়ি দিয়ে পুনরায় কিছু লক অতিক্রম করে জাহাজগুলো সাগরে নেমে যাবে।
পানামা ১৮১৯ সাল থেকেই কলম্বিয়ার অংশ। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজগুলো সহজে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে নেওয়ার জন্য খাল খননের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে কলম্বিয়া সরকার। এই প্রত্যাখ্যানের পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি কথিত অভ্যুত্থান ঘটে এবং ১৯০৩ সালে জন্ম হয় পানামা নামের স্বাধীন রাষ্ট্র। এরপর অবশ্য খাল খননে বেগ পেতে হয়নি। পানামা-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি সম্পন্ন হলে মার্কিন সরকার ১৯০৪ সালে খালটি পুনরায় খনন শুরু করে। শেষ হয় ১৯১৪ সালে।
এই খালে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব তীর থেকে পশ্চিম তীরে যেতে আগে দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল অঞ্চল ঘুরে যেতে হতো। এতে আনুমানিক ১৫ হাজার কিলোমিটার ঘুরতে হতো। খাল খননের পর এই দূরত্ব প্রায় অর্ধেক কমে আসে। উত্তর আমেরিকার এক দিকের উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যদিকের উপকূলে যেতে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার পথ কম পাড়ি দিতে হয়। ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোরও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পথ বেঁচে যায়।
পানামা খাল বেশি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর চীন, জাপান, চিলি ও দক্ষিণ কোরিয়া। প্রতিটি বড় জাহাজকে এই পথ পাড়ি দিতে ব্যয় করতে হয় প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলার করে। বর্তমানে বছরে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি টোল আদায় হয় এ খাল থেকে।
আটলান্টিক থেকে পানামা খাল হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করতে একটি জাহাজের সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। এই দীর্ঘ ও যান্ত্রিক একটি জলপথ পাড়ি দিতে জাহাজগুলোকে উচ্চহারে শুল্ক দিতে হয়। পানামা খালের এই শুল্কহার পৃথিবীর অন্য সব জলপথের শুল্কের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বলে প্রচলিত। এ কারণেই একে বলা হয় সবচেয়ে ব্যয়বহুল জলপথ। প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জলপথ দিয়ে বছরে ১৫ হাজারেরও বেশি জাহাজ চলাচল করে।
তথ্যসূত্র: হিস্ট্রি ডটকম, ব্রিটানিকা ডটকম
ভারতের মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। মাঝ রাস্তায় দুই ঘোড়ার লড়াইয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়। এই তাণ্ডবের মধ্যে একটি ঘোড়া একটি অটো রিকশার ওপর লাফিয়ে পড়ে। এতে দুজন গুরুতর আহত হন। এরপর ঘোড়াটি প্রায় ২০ মিনিট রিকশার ভেতরে আটকে ছিল।
২ দিন আগেহাঙ্গেরির মধ্যযুগে একটি মঠ প্যাননহালমা আর্চঅ্যাবি। এই মঠের কয়েক শ বছরের পুরোনো বই সাম্প্রতিক সময়ে এসে গুবরে পোকার আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। আর বইগুলোকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষায় শুরু হয়েছে এক বড় আকারের উদ্ধার অভিযান। মঠটির লাইব্রেরি থেকে সরানো হচ্ছে হাতে বাঁধানো প্রায় এক লাখ বই।
৩ দিন আগেইন্টারনেট দুনিয়ায় হাতির বাচ্চাদের নিষ্পাপ ও কৌতুক উদ্রেককারী কার্যকলাপের সুন্দর ভিডিওগুলো সব সময়ই মন দর্শকদের মনে ছুঁয়ে যায়। সম্প্রতি, এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি ভিডিও। যেখানে একটি ছোট হাতির বাচ্চাকে একটি ভাঁজ করা চেয়ারে বসার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
৪ দিন আগেহিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার শিল্লাই গ্রামের ট্রান্স-গিরি অঞ্চলে প্রাচীন রীতিনীতির অনুসরণে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমী বিবাহ অনুষ্ঠান—এক নারী বিয়ে করেছেন দুই ভাইকে। হাট্টি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পলিয়ান্ড্রি বিয়েতে শত শত অতিথি অংশ নেন।
৬ দিন আগে