Ajker Patrika

বিসিবির তদন্ত কি শুধুই লোকদেখানো?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ম্যাচ গড়াপেটা, স্পট ফিক্সিং এবং সন্দেহজনক খেলার অভিযোগের তদন্ত নিয়েও আছে প্রশ্ন। ছবি: সংগৃহীত
ম্যাচ গড়াপেটা, স্পট ফিক্সিং এবং সন্দেহজনক খেলার অভিযোগের তদন্ত নিয়েও আছে প্রশ্ন। ছবি: সংগৃহীত

আইসিসি সাধারণত কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে যদি তদন্ত করে, তদন্ত শেষে সেটির ফল বা রায় আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, নাসির হোসেন আর সোহেলী আক্তারের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পেছনে যেসব কারণ, বিস্তারিত তুলে ধরে আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট।

বছরের পর বছর ধরে বিপিএলসহ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ম্যাচ গড়াপেটা, স্পট ফিক্সিং এবং সন্দেহজনক খেলার অভিযোগ এলে বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিট বা এসিইউ নিজেদের মতো তদন্ত করে। কিন্তু সেই তদন্তের ফল বা রায় আনুষ্ঠানিকভাবে কি প্রকাশ হয়? উত্তরটা স্বয়ং বিসিবি দিতে পারবে কিনা সন্দেহ! কখনো কথিত ছায়া তদন্ত, কখনো মৌখিক অনুসন্ধান, আবার কখনো টুর্নামেন্টের মাঝপথে গঠিত তদন্ত কমিটি, এসবের কোনো রিপোর্ট প্রকাশ বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত বিসিবির নেই বললেই চলে।

সবশেষ বিপিএলে একাধিক ক্রিকেটারের খেলার চেতনা পরিপন্থী ঘটনা বিসিবি দুর্নীতি দমন বিভাগের প্রধান মেজর (অব.) মো. রায়ান আজাদের ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরলে তা আলোচনায় আসে। যেখানে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে কিছু ঘটনা তুলে ধরেছিলেন তিনি, যেটি বিসিবি সভাপতির অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরপর বিসিবি তিন আইনজীবী ও একজন সাবেক ক্রিকেটারকে নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে সেই কমিটির কার্যক্রমও ধীরগতির। দুই মাস ধরে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বললে চলে।

সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) সন্দেহজনক কিছু ঘটনা। মিরপুরে গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের ম্যাচে শাইনপুকুরের দুই ব্যাটার রহিম আহমেদ ও মিনহাজুল আবেদীন সাব্বিরের স্ট্যাম্পড হওয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। দুজনের আউটের ধরন দেখে মনে হয়েছে, যেন চিত্রনাট্য অনুসরণ করেই তাঁরা খেলেছেন। এ নিয়ে কোচ, সাবেক ক্রিকেটারের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ঝাঁজাল প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন ফেসবুকে।

ঘটনার পরদিন গতকাল বিসিবির এসিইউ প্রধান একাডেমি মাঠে পরিচালনা করেন অভিনব এক ‘তদন্ত’। সংশ্লিষ্ট দুই ব্যাটারকে মাঝ উইকেটে এনে হুবহু সেই আউটের দৃশ্য মঞ্চস্থ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভিডিও ধারণ করে পর্যবেক্ষণ করেন কর্মকর্তারা। এরপর দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলে তাদের বিসিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। মাঠের অপরাধ তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে এমন ‘ডেমো’ যথেষ্ট হাস্যরসেরও জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এসব শুধু লোক দেখানো!

বিসিবি কাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ম্যাচে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্পর্কে অবগত এবং বিষয়টি অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক্রিকেটে ন্যায্যতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে তারা আপসহীন। যেকোনো ধরনের দুর্নীতি বা খেলার নৈতিকতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমাদের সহনশীল নীতি রয়েছে। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সত্যিই ব্যবস্থা নেওয়া হবে? অতীতে দুর্নীতি দমনে বিসিবি যতটা গর্জন ছুড়েছে, বাস্তবে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেই তো এই প্রশ্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত