Ajker Patrika

মর্মান্তিক

সম্পাদকীয়
মর্মান্তিক

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল ভবনে সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে আছে পুরো জাতি। স্কুলের শিক্ষার্থীরাই মূলত ওই দুর্ঘটনার শিকার হয়। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব ছবি কিংবা ভিডিও দেখা গেছে, তার বেশির ভাগই বীভৎস! অবাধ প্রচারের সুযোগ নিয়ে এ রকম বীভৎস ভিডিও বা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে দেওয়া কোনোভাবেই নৈতিক আচরণ হতে পারে না।

বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পরিচালনা করার সময় যে বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখা দরকার, সেগুলো মেনেই কি বিমানটি আকাশে উড়েছিল? এ ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটি আমাদের নাগরিক নিরাপত্তা, বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দিকটি নিয়েও ভাবায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কেবল যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই কি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, নাকি উড্ডয়নের আগে বিমানটি যথাযথ কারিগরি পরীক্ষা করা হয়নি—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

প্রশিক্ষণ বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত কিছু সুরক্ষা নির্দেশিকা ও এলাকা বাছাইয়ের মানদণ্ড রয়েছে। যেসব অঞ্চলে জনবসতি নেই অথবা কম, সেসব এলাকাই তো প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিতে হয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান নিয়ন্ত্রণ হারালে কতটা ভয়াবহতার সৃষ্টি হতে পারে, তা উত্তরার ঘটনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটবে না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?

এই দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনেক হাসপাতালেই আহতদের চিকিৎসা চলছে। গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও অনেক। দগ্ধ শিশুদের চিৎকারে বিদীর্ণ হচ্ছে আকাশ-বাতাস। রক্তের প্রয়োজন অনেক। কত শতাংশ পুড়েছে, তার ওপর নির্ভর করে বাঁচা-মরার প্রশ্ন। তাই নির্দয় হয়েই বলতে হচ্ছে, এই ট্র্যাজেডি এখনো সমাপ্তির কাছে পৌঁছায়নি। আহতদের সুচিকিৎসা সম্পন্ন হলেই কেবল এর সমাপ্তি ঘটবে। যে পরিবারগুলো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের সন্তানদের জন্য চোখের পানি ফেলছে, তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। যাঁরা এরই মধ্যে সন্তানহারা হয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানাতে পারি, কিন্তু কোনো শব্দমালা দিয়েই তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়া সম্ভব নয়।

দুর্ঘটনার পর ঘটা কিছু ঘটনার উল্লেখ করা দরকার। দুর্ঘটনাস্থলে দেখা গেছে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘লাইক’ কামানোদের দাপট। শত শত মানুষ জড়ো হয়ে উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। বিশাল বহর নিয়ে কোনো কোনো সংগঠনের কর্মীরা তাঁদের দলনেতাদের নিয়ে হাসপাতালে আহতদের দেখতে গেছেন, যা চিকিৎসাসেবা ব্যাহত করেছে। এগুলো যেন না ঘটে, তার জন্য যে সচেতনতা প্রয়োজন, তা কবে হবে?

জানি, এই শোকাবহ ঘটনায় সান্ত্বনা দেওয়া যায় না। তার পরও আমরা চাইব, এই শোক বহন করার শক্তি অর্জন করুক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত