মাসুদ কামাল
এর মধ্যে দুই দিন হয়ে গেছে, কিন্তু দৃশ্যটা আমার মন থেকে সরছে না। একটা শিশুকে কোলে নিয়ে একজন মা দাঁড়িয়ে আছেন জলকামান থেকে ছোড়া প্রবল পানির তোড়ের সামনে। হতবিহ্বল শিশুটি ভয়ে আতঙ্কে জড়িয়ে ধরে আছে মাকে। পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবিটি দেখে আমি থমকে গেলাম। আমি নিজে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছি, রিপোর্টিং করেছি। অঘটন, দুর্ঘটনা, মৃতদেহ—এসব যেন চোখে সয়ে গেছে। সেই অভ্যস্ত চোখও যেন এই দৃশ্যটিকে ঠিক সহ্য করতে পারছিল না।
পরে একজন আমাকে ওই ঘটনার একটা ভিডিও পাঠাল। দেখলাম পানির তোড়ে বাচ্চা কোলে ওই মা কংক্রিটের রাজপথে পড়েই গেলেন। পড়ে গেলেন, কিন্তু সন্তানকে ছাড়লেন না। ডান হাতে সন্তানকে ধরে রেখে পুরো শরীরের ভর শেষ মুহূর্তে দিলেন বাঁ হাতের ওপর। আমি নিশ্চিত, ওই বাঁ হাতে তিনি প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছেন, এমনকি মচকেও যেতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঘটনা কোথায় ঘটেছে? কেন ঘটেছে? এই দেশেরই একটা ঘটনা এটি। কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, প্রকাশ্য রাজপথে। তাঁরা সমবেত হয়েছিলেন রাজধানীর শাহবাগ এলাকায়। তাঁদের দাবি ছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যে নিয়োগের সুপারিশ এরই মধ্যে সরকার করেছিল, সেটা বাতিল করা যাবে না। তাঁদের নিয়োগের আদেশ পুনর্বহাল করতে হবে। বিষয়টা বরং আরও একটু খোলাসা করা যাক।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ হয়েছে কয়েক ধাপে। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ হয়ে গেছে। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ১৪ জুন। লিখিত পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় একই বছরের ২১ এপ্রিল। ১২ জুন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর ফল প্রকাশিত হয়। খেয়াল করুন, ভাইভাসহ পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হয় হাসিনা সরকারের আমলে। ফল প্রকাশ হয় বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পুরো তিন মাস পর। এখন আগের সরকারের আমলে হয়ে যাওয়া পরীক্ষার রেজাল্ট নতুন সরকারের আমলে প্রকাশ করা ঠিক হবে কি না—এ নিয়ে দ্বিধা কিন্তু থাকতেই পারে। সে কারণে পরামর্শ চাওয়া হয় আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। তারা সম্মতি দেয়। সে অনুযায়ীই ৩১ অক্টোবর নিয়োগের জন্য ৬ হাজার ৫৩১ জনের নাম চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়। এমন অবস্থায় চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকা কয়েকজন হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ৬ ফেব্রুয়ারি এই পুরো নিয়োগ কার্যক্রমই বাতিল করে দেন। এ রকম পরিস্থিতিতে এই সাড়ে ৬ হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন তাঁদের নিয়োগের দাবিতে।
কথা হলো, হাইকোর্ট কেন এমন একটা রায় দিলেন? আসলে আদালত চলে আইনের ভিত্তিতে। এই যে নিয়োগটা, সেটা হয়েছে ২০১৮ সালের আইনের ভিত্তিতে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সেবার কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল। সেই সময়ের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা একপর্যায়ে রাগ করে পুরো কোটাই তুলে দিয়েছিলেন। তবে সেটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য তখন বলবৎ ছিল ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা এবং ৪ শতাংশ অন্য কোটা। এই নিয়ম মেনেই চলেছে নিয়োগ কার্যক্রম। এরপর ২০২৪-এর আন্দোলনের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে দাবির মুখে সরকার আরও একবার কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনে। সে অনুযায়ী ২০২৪-এর ২৩ জুলাই সরকার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে বলে, এর মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের পরিপত্রসহ আগের এ-সংক্রান্ত সব পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন বা আদেশ রহিত করা হলো। অর্থাৎ আগের সব বাদ। এবার থেকে নিয়োগ হবে নতুন নিয়মে। এর আলোকেই হাইকোর্টের আদেশটি আসে।
উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে অবশ্যই যুক্তি আছে। কিন্তু এই নির্বাচনপ্রক্রিয়া তো শুরু থেকে শেষ হয়েছে ২০২৪-এর ২৩ জুলাইয়ের আগেই। তাহলে আগের ঘটনায় নতুন নিয়ম কীভাবে প্রযোজ্য হবে? অথবা যদি হয়, তাহলে এই একই চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যে নিয়োগগুলো হয়েছে, সেগুলোইবা কীভাবে বৈধ হবে? আবার সুপারিশকৃতদের তালিকা প্রকাশের আগে তো আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সেই পরামর্শ অনুযায়ীই ৩১ অক্টোবর তালিকা প্রকাশ করা হলো। এরপর তিন মাস পার হয়ে গেছে। এই সময়ে এই সাড়ে ৬ হাজার মানুষের মানসিক অবস্থাটা কেমন ছিল? তাদের আজকের অবস্থাটাই-বা কেমন? আমি কোনো পক্ষ নিচ্ছি না, কেবল প্রশ্নগুলো করছি।
অনেককে বলতে শুনি, তারা রাস্তায় কেন নামে? কেন রাস্তা অবরোধ করে? দুই দিন আগেও যারা কোটা আন্দোলনের জন্য রাস্তা অবরোধ করেছে, সেই আন্দোলনের ফল হিসেবে এখন সরকারে গিয়ে বসেছে, তারাও দেখি একই প্রশ্ন করে! সরকারকে প্রায়ই বলতে শুনি, দায়িত্ব গ্রহণের পর এই ছয় মাসে তাদের নাকি দেড় শতাধিক আন্দোলন দমন করতে হয়েছে! তাদের এমন মন্তব্য আমাকে আহত করে। আমি বুঝতে পারি না, আন্দোলনকে দমন করতে হবে কেন? মানুষ আন্দোলন কেন করে? তাদের যা কিছু পাওয়ার কথা, তা যখন না পায়, তখনই তো তারা ক্ষুব্ধ হয়। আর এই ক্ষোভেরই চূড়ান্ত প্রকাশ হচ্ছে আন্দোলন। আন্দোলন কেউ শখে করে না। মাঝরাতে সুচিকিৎসার দাবিতে আহত ব্যক্তিদের রাজপথে বসে থাকাটা আরামদায়ক কোনো কাজ নয়। এই সাড়ে ৬ হাজার মানুষ প্রখর রোদে শাহবাগের রাস্তায় বসে ছিলেন, তাঁরা এখানে পিকনিকের মুডে ছিলেন না। তাঁদের প্রত্যেকের চোখেমুখে ছিল অনিশ্চয়তা আর উৎকণ্ঠার ছাপ। তাঁরা জানেন না, কী আছে তাঁদের সামনের জীবনে।
সরকারে যাঁরা আছেন, আন্দোলনকারীদের নিয়ে তাঁদের নানা মন্তব্য প্রায়ই দেখি। দেখি আর হতাশ হই। তাঁরা যেন এই আন্দোলনের মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান! ঠিক আগের সরকারের ফর্মুলা। হাসিনা সরকারও এ রকমই আচরণ করত, মন্তব্য করত। মাঝে একবার দেখলাম প্রধান উপদেষ্টা বললেন, ‘রাস্তা বন্ধ করবেন না, আপনাদের দাবি লিখিতভাবে আমাদেরকে জানান।’ সন্দেহ নেই, খুব ভালো প্রস্তাব। তাহলে এমন প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে উচিত ছিল—কোথায় কীভাবে জানাতে হবে, সেটা জানিয়ে দেওয়া। তা হয়েছে কি? হয়নি। আমি অন্তত কোথাও সে রকম কিছু দেখিনি। অথচ সরকার কিন্তু পারত, একটি বা দুটি ই-মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে দিতে। যেখানে ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা তাঁদের অভিযোগগুলো লিখে জানাতে পারবেন। তারপর সেসব অভিযোগ বিচার-বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বক্তব্য জানিয়ে দিলে হতো। সরকার বলতে পারত—এই এই সমস্যার সমাধান হবে, এখনই হবে অথবা একটু সময় লাগবে, এই এই সমস্যার সমাধান আমরা করতে পারব না, ইত্যাদি। সব সমস্যার সমাধান হয়তো হতো না, কিন্তু মানুষ এতটুকু অন্তত বুঝতে পারত যে তাদের কথাটা সরকার শুনছে। এ কাজে তো অনেক বেশি খরচও হতো না। তাহলে কেন হচ্ছে না?
কারণ ওই একটাই—এরা ক্ষমতায় বসেছে, আর বসে ভুলে গেছে কেন বসেছে।
লেখাটি শেষ করার আগে আবার ওই মায়ের কথায় আসি। তাঁদের শত অপরাধকে যদি মেনেও নিই, তারপরও মানবিকতা বলে তো একটা কথা থাকে। একজন মানুষকে, এক মাকে এভাবে আঘাত করা যায়? বিগত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে এ রকম দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখতাম। মন খারাপ করতাম। সমালোচনা, এমনকি গালাগালি পর্যন্ত করতাম ওই সরকারকে। এখনো গালি দিতে চাই। কিন্তু কার উদ্দেশে গালি দেব? তাহলে সে গালি যে নিজের গায়েই লাগবে।
এর মধ্যে দুই দিন হয়ে গেছে, কিন্তু দৃশ্যটা আমার মন থেকে সরছে না। একটা শিশুকে কোলে নিয়ে একজন মা দাঁড়িয়ে আছেন জলকামান থেকে ছোড়া প্রবল পানির তোড়ের সামনে। হতবিহ্বল শিশুটি ভয়ে আতঙ্কে জড়িয়ে ধরে আছে মাকে। পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবিটি দেখে আমি থমকে গেলাম। আমি নিজে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছি, রিপোর্টিং করেছি। অঘটন, দুর্ঘটনা, মৃতদেহ—এসব যেন চোখে সয়ে গেছে। সেই অভ্যস্ত চোখও যেন এই দৃশ্যটিকে ঠিক সহ্য করতে পারছিল না।
পরে একজন আমাকে ওই ঘটনার একটা ভিডিও পাঠাল। দেখলাম পানির তোড়ে বাচ্চা কোলে ওই মা কংক্রিটের রাজপথে পড়েই গেলেন। পড়ে গেলেন, কিন্তু সন্তানকে ছাড়লেন না। ডান হাতে সন্তানকে ধরে রেখে পুরো শরীরের ভর শেষ মুহূর্তে দিলেন বাঁ হাতের ওপর। আমি নিশ্চিত, ওই বাঁ হাতে তিনি প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছেন, এমনকি মচকেও যেতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঘটনা কোথায় ঘটেছে? কেন ঘটেছে? এই দেশেরই একটা ঘটনা এটি। কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, প্রকাশ্য রাজপথে। তাঁরা সমবেত হয়েছিলেন রাজধানীর শাহবাগ এলাকায়। তাঁদের দাবি ছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যে নিয়োগের সুপারিশ এরই মধ্যে সরকার করেছিল, সেটা বাতিল করা যাবে না। তাঁদের নিয়োগের আদেশ পুনর্বহাল করতে হবে। বিষয়টা বরং আরও একটু খোলাসা করা যাক।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ হয়েছে কয়েক ধাপে। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ হয়ে গেছে। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ১৪ জুন। লিখিত পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় একই বছরের ২১ এপ্রিল। ১২ জুন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর ফল প্রকাশিত হয়। খেয়াল করুন, ভাইভাসহ পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হয় হাসিনা সরকারের আমলে। ফল প্রকাশ হয় বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পুরো তিন মাস পর। এখন আগের সরকারের আমলে হয়ে যাওয়া পরীক্ষার রেজাল্ট নতুন সরকারের আমলে প্রকাশ করা ঠিক হবে কি না—এ নিয়ে দ্বিধা কিন্তু থাকতেই পারে। সে কারণে পরামর্শ চাওয়া হয় আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। তারা সম্মতি দেয়। সে অনুযায়ীই ৩১ অক্টোবর নিয়োগের জন্য ৬ হাজার ৫৩১ জনের নাম চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়। এমন অবস্থায় চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকা কয়েকজন হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ৬ ফেব্রুয়ারি এই পুরো নিয়োগ কার্যক্রমই বাতিল করে দেন। এ রকম পরিস্থিতিতে এই সাড়ে ৬ হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন তাঁদের নিয়োগের দাবিতে।
কথা হলো, হাইকোর্ট কেন এমন একটা রায় দিলেন? আসলে আদালত চলে আইনের ভিত্তিতে। এই যে নিয়োগটা, সেটা হয়েছে ২০১৮ সালের আইনের ভিত্তিতে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সেবার কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল। সেই সময়ের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা একপর্যায়ে রাগ করে পুরো কোটাই তুলে দিয়েছিলেন। তবে সেটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য তখন বলবৎ ছিল ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা এবং ৪ শতাংশ অন্য কোটা। এই নিয়ম মেনেই চলেছে নিয়োগ কার্যক্রম। এরপর ২০২৪-এর আন্দোলনের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে দাবির মুখে সরকার আরও একবার কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনে। সে অনুযায়ী ২০২৪-এর ২৩ জুলাই সরকার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে বলে, এর মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের পরিপত্রসহ আগের এ-সংক্রান্ত সব পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন বা আদেশ রহিত করা হলো। অর্থাৎ আগের সব বাদ। এবার থেকে নিয়োগ হবে নতুন নিয়মে। এর আলোকেই হাইকোর্টের আদেশটি আসে।
উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে অবশ্যই যুক্তি আছে। কিন্তু এই নির্বাচনপ্রক্রিয়া তো শুরু থেকে শেষ হয়েছে ২০২৪-এর ২৩ জুলাইয়ের আগেই। তাহলে আগের ঘটনায় নতুন নিয়ম কীভাবে প্রযোজ্য হবে? অথবা যদি হয়, তাহলে এই একই চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যে নিয়োগগুলো হয়েছে, সেগুলোইবা কীভাবে বৈধ হবে? আবার সুপারিশকৃতদের তালিকা প্রকাশের আগে তো আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সেই পরামর্শ অনুযায়ীই ৩১ অক্টোবর তালিকা প্রকাশ করা হলো। এরপর তিন মাস পার হয়ে গেছে। এই সময়ে এই সাড়ে ৬ হাজার মানুষের মানসিক অবস্থাটা কেমন ছিল? তাদের আজকের অবস্থাটাই-বা কেমন? আমি কোনো পক্ষ নিচ্ছি না, কেবল প্রশ্নগুলো করছি।
অনেককে বলতে শুনি, তারা রাস্তায় কেন নামে? কেন রাস্তা অবরোধ করে? দুই দিন আগেও যারা কোটা আন্দোলনের জন্য রাস্তা অবরোধ করেছে, সেই আন্দোলনের ফল হিসেবে এখন সরকারে গিয়ে বসেছে, তারাও দেখি একই প্রশ্ন করে! সরকারকে প্রায়ই বলতে শুনি, দায়িত্ব গ্রহণের পর এই ছয় মাসে তাদের নাকি দেড় শতাধিক আন্দোলন দমন করতে হয়েছে! তাদের এমন মন্তব্য আমাকে আহত করে। আমি বুঝতে পারি না, আন্দোলনকে দমন করতে হবে কেন? মানুষ আন্দোলন কেন করে? তাদের যা কিছু পাওয়ার কথা, তা যখন না পায়, তখনই তো তারা ক্ষুব্ধ হয়। আর এই ক্ষোভেরই চূড়ান্ত প্রকাশ হচ্ছে আন্দোলন। আন্দোলন কেউ শখে করে না। মাঝরাতে সুচিকিৎসার দাবিতে আহত ব্যক্তিদের রাজপথে বসে থাকাটা আরামদায়ক কোনো কাজ নয়। এই সাড়ে ৬ হাজার মানুষ প্রখর রোদে শাহবাগের রাস্তায় বসে ছিলেন, তাঁরা এখানে পিকনিকের মুডে ছিলেন না। তাঁদের প্রত্যেকের চোখেমুখে ছিল অনিশ্চয়তা আর উৎকণ্ঠার ছাপ। তাঁরা জানেন না, কী আছে তাঁদের সামনের জীবনে।
সরকারে যাঁরা আছেন, আন্দোলনকারীদের নিয়ে তাঁদের নানা মন্তব্য প্রায়ই দেখি। দেখি আর হতাশ হই। তাঁরা যেন এই আন্দোলনের মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান! ঠিক আগের সরকারের ফর্মুলা। হাসিনা সরকারও এ রকমই আচরণ করত, মন্তব্য করত। মাঝে একবার দেখলাম প্রধান উপদেষ্টা বললেন, ‘রাস্তা বন্ধ করবেন না, আপনাদের দাবি লিখিতভাবে আমাদেরকে জানান।’ সন্দেহ নেই, খুব ভালো প্রস্তাব। তাহলে এমন প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে উচিত ছিল—কোথায় কীভাবে জানাতে হবে, সেটা জানিয়ে দেওয়া। তা হয়েছে কি? হয়নি। আমি অন্তত কোথাও সে রকম কিছু দেখিনি। অথচ সরকার কিন্তু পারত, একটি বা দুটি ই-মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে দিতে। যেখানে ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা তাঁদের অভিযোগগুলো লিখে জানাতে পারবেন। তারপর সেসব অভিযোগ বিচার-বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বক্তব্য জানিয়ে দিলে হতো। সরকার বলতে পারত—এই এই সমস্যার সমাধান হবে, এখনই হবে অথবা একটু সময় লাগবে, এই এই সমস্যার সমাধান আমরা করতে পারব না, ইত্যাদি। সব সমস্যার সমাধান হয়তো হতো না, কিন্তু মানুষ এতটুকু অন্তত বুঝতে পারত যে তাদের কথাটা সরকার শুনছে। এ কাজে তো অনেক বেশি খরচও হতো না। তাহলে কেন হচ্ছে না?
কারণ ওই একটাই—এরা ক্ষমতায় বসেছে, আর বসে ভুলে গেছে কেন বসেছে।
লেখাটি শেষ করার আগে আবার ওই মায়ের কথায় আসি। তাঁদের শত অপরাধকে যদি মেনেও নিই, তারপরও মানবিকতা বলে তো একটা কথা থাকে। একজন মানুষকে, এক মাকে এভাবে আঘাত করা যায়? বিগত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে এ রকম দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখতাম। মন খারাপ করতাম। সমালোচনা, এমনকি গালাগালি পর্যন্ত করতাম ওই সরকারকে। এখনো গালি দিতে চাই। কিন্তু কার উদ্দেশে গালি দেব? তাহলে সে গালি যে নিজের গায়েই লাগবে।
এবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
২ ঘণ্টা আগেএবার সিডনির বইমেলায়ও মানুষের সমাগম কম হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটিতে ছিল সামান্যসংখ্যক মানুষ। পরদিন রোববার দীর্ঘকালের মেলাটি গতবারের মতো মানুষ টানতে পারেনি। আমি যখন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছাই, তখন যা দেখেছি তাতে এটা বলা চলে যে মানুষ আগের মতো আসেনি।
২ ঘণ্টা আগেকতভাবে যে লুটপাটের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে, তার হিসাব কোনো জ্যোতিষী হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তিও করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০০ বছরের মাঠ কেটে পুকুর, উজাড় গাছও’ শিরোনামের খবরটি পড়লে...
২ ঘণ্টা আগেড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
১ দিন আগে