সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
সন্ধ্যা নেমেছে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি আমরা তিন সহকর্মী। মনের অজান্তে একটা মোটরবাইককে জায়গা দিয়ে দিলাম, পাশ কেটে চলে গেল ফুটপাতের ওপর দিয়ে। হঠাৎ খেয়াল হলে তিনজনই আলোচনা করতে থাকলাম বিষয়টা নিয়ে। ফুটপাত নিশ্চয় যানবাহন চলাচলের পথ না, হাঁটার পথ।
এই আলোচনা করতে করতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের সামনে উঠে এল আরও একটা মোটরবাইক। আরোহী সংখ্যা দুই। পথ আটকে দাঁড়ালাম আমরা। আমার এক সহকর্মী বললেন, ‘এই ভাই এই, এটা তো ফুটপাত, হাঁটার রাস্তা। আপনি বাইক উঠিয়েছেন কেন?’
চালক উত্তর দিলেন, ‘জি ভাই
জি। নামছি।’
আমি নামার জায়গা দিয়ে বললাম, ‘জি ভাই জি ভাই না করে নামেন।’
চোখ গোল গোল করে রাঙিয়ে চালকের জবাব এল, ‘নামমু না!’
এ কথা বলে আমাদের পাশ কাটিয়ে ফুটপাতের ওপর দিয়েই চলে গেল সেই মোটরবাইক। আমার অন্য সহকর্মী রেগে গিয়ে শুধু বললেন, ‘অসভ্য।’ তারা শুনতে পেয়েছে কি না, জানি না।
এরপর আরও কয়েকটি সাইকেল ও মোটরবাইক আমাদের পাশ কাটিয়ে ফুটপাতের ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে গেল। আমরা কাউকে আর কিছু বলতে পারলাম না। ব্যর্থ হয়ে নিজেদের বোঝালাম, এদের কিছু বলে লাভ নেই। ওহ, সেই যানবাহনের চালকদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি। আমরা প্রাণে বেঁচে গেছি! আহত হওয়া তো
দূরের কথা।
কিন্তু নাঈমের মতো ছেলেরা ময়লার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মরে যায়। সে এক বিরাট ব্যাপার। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মরলে শহীদ হওয়া যায়। কেন যে ঠুনকো মোটরবাইক আর সাইকেলচালকদের চাকার সঙ্গে ধাক্কা খাই আমরা!
বেশ কয়েকবার চোখে পড়েছে, ফুটপাতে মোটরবাইক উঠিয়ে দিলে পথচারীরা বাইকারদের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। ঘটনা শেষে হাতাহাতিতে গিয়ে গড়ায়। আর মোড়ে মোড়ে ‘অসহায়’ ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকে। রাস্তার মাঝ বরাবর ফুটপাতে কী হয়, কী না হয়, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা থাকে না। থাকার কথাও না। যেকোনো যানচালকের ন্যূনতম আইনের ধারণা থাকার কথা, বিবেক থাকার কথা। তবে কেউ আইন অমান্য করলে যে পুলিশের একটা দায়িত্ব থাকে, সেটা আশা করি বারবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মনে করিয়ে দিতে হবে না।
‘ফুট’ মানে পা আর ‘পাথ’ মানে পথ—শব্দ ধরে অর্থ না জানলেও একজন পড়ালেখা না জানা মানুষও বলতে পারবেন ফুটপাত হচ্ছে পায়ে হাঁটার পথ। হেঁটেই মানুষ ফুটপাতের ওপর দিয়ে চলাচল করে, দ্বিচক্রযান নিয়ে নয়। এ কথা বলে প্রতিবাদ করতে গেলে অন্যায়কারী ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ প্রবাদটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রয়োগ করেন। ব্যাপারটা হয়ে যায় এ রকম, দুই পক্ষ একে অপরকে ‘বেয়াদপ’, ‘অসভ্য’ আখ্যা দিয়ে তর্কযুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। দুই পক্ষই যার যার কারণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত থাকে। চলে একে অপরকে অসম্মান করার প্রতিযোগিতা। দেখুন তো, ঘটনা কোথা থেকে কোথায় গিয়ে গড়ায়!
এ প্রসঙ্গে আরেকটা ঘটনা মনে পড়ল। একবার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেছি। ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে ঠেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে অটোরিকশা। এর মধ্যে বাঁ পাশ থেকে একটা ব্যক্তিগত গাড়ি বরাবর এসে গতি ধীর করে। গাড়ি আর অটোরিকশাচালকেরা জড়িয়ে যান তর্কে। কেন গাড়িটিকে অটোরিকশা জায়গা দিল না ডান পাশে যাওয়ার জন্য, তা নিয়ে ঝগড়া। তর্কে তর্কে অটোরিকশাচালক জানালেন, তাঁর বয়স ৫০ আর গাড়িচালক বললেন, তাঁর বয়স ৩০। যান চালনার অভিজ্ঞতা নিয়ে চলল আরেক দফা বাগ্বিতণ্ডা। জায়গা পেলে গাড়িচালক বিড়বিড় করতে করতে সামনে এগিয়ে যান। আমার বেশি বয়সী অটোরিকশাচালক বললেন, ‘দুনিয়াডা বেদ্দপের, বুঝলেন?’
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সন্ধ্যা নেমেছে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি আমরা তিন সহকর্মী। মনের অজান্তে একটা মোটরবাইককে জায়গা দিয়ে দিলাম, পাশ কেটে চলে গেল ফুটপাতের ওপর দিয়ে। হঠাৎ খেয়াল হলে তিনজনই আলোচনা করতে থাকলাম বিষয়টা নিয়ে। ফুটপাত নিশ্চয় যানবাহন চলাচলের পথ না, হাঁটার পথ।
এই আলোচনা করতে করতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের সামনে উঠে এল আরও একটা মোটরবাইক। আরোহী সংখ্যা দুই। পথ আটকে দাঁড়ালাম আমরা। আমার এক সহকর্মী বললেন, ‘এই ভাই এই, এটা তো ফুটপাত, হাঁটার রাস্তা। আপনি বাইক উঠিয়েছেন কেন?’
চালক উত্তর দিলেন, ‘জি ভাই
জি। নামছি।’
আমি নামার জায়গা দিয়ে বললাম, ‘জি ভাই জি ভাই না করে নামেন।’
চোখ গোল গোল করে রাঙিয়ে চালকের জবাব এল, ‘নামমু না!’
এ কথা বলে আমাদের পাশ কাটিয়ে ফুটপাতের ওপর দিয়েই চলে গেল সেই মোটরবাইক। আমার অন্য সহকর্মী রেগে গিয়ে শুধু বললেন, ‘অসভ্য।’ তারা শুনতে পেয়েছে কি না, জানি না।
এরপর আরও কয়েকটি সাইকেল ও মোটরবাইক আমাদের পাশ কাটিয়ে ফুটপাতের ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে গেল। আমরা কাউকে আর কিছু বলতে পারলাম না। ব্যর্থ হয়ে নিজেদের বোঝালাম, এদের কিছু বলে লাভ নেই। ওহ, সেই যানবাহনের চালকদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি। আমরা প্রাণে বেঁচে গেছি! আহত হওয়া তো
দূরের কথা।
কিন্তু নাঈমের মতো ছেলেরা ময়লার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মরে যায়। সে এক বিরাট ব্যাপার। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মরলে শহীদ হওয়া যায়। কেন যে ঠুনকো মোটরবাইক আর সাইকেলচালকদের চাকার সঙ্গে ধাক্কা খাই আমরা!
বেশ কয়েকবার চোখে পড়েছে, ফুটপাতে মোটরবাইক উঠিয়ে দিলে পথচারীরা বাইকারদের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। ঘটনা শেষে হাতাহাতিতে গিয়ে গড়ায়। আর মোড়ে মোড়ে ‘অসহায়’ ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকে। রাস্তার মাঝ বরাবর ফুটপাতে কী হয়, কী না হয়, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা থাকে না। থাকার কথাও না। যেকোনো যানচালকের ন্যূনতম আইনের ধারণা থাকার কথা, বিবেক থাকার কথা। তবে কেউ আইন অমান্য করলে যে পুলিশের একটা দায়িত্ব থাকে, সেটা আশা করি বারবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মনে করিয়ে দিতে হবে না।
‘ফুট’ মানে পা আর ‘পাথ’ মানে পথ—শব্দ ধরে অর্থ না জানলেও একজন পড়ালেখা না জানা মানুষও বলতে পারবেন ফুটপাত হচ্ছে পায়ে হাঁটার পথ। হেঁটেই মানুষ ফুটপাতের ওপর দিয়ে চলাচল করে, দ্বিচক্রযান নিয়ে নয়। এ কথা বলে প্রতিবাদ করতে গেলে অন্যায়কারী ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ প্রবাদটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রয়োগ করেন। ব্যাপারটা হয়ে যায় এ রকম, দুই পক্ষ একে অপরকে ‘বেয়াদপ’, ‘অসভ্য’ আখ্যা দিয়ে তর্কযুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। দুই পক্ষই যার যার কারণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত থাকে। চলে একে অপরকে অসম্মান করার প্রতিযোগিতা। দেখুন তো, ঘটনা কোথা থেকে কোথায় গিয়ে গড়ায়!
এ প্রসঙ্গে আরেকটা ঘটনা মনে পড়ল। একবার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেছি। ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে ঠেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে অটোরিকশা। এর মধ্যে বাঁ পাশ থেকে একটা ব্যক্তিগত গাড়ি বরাবর এসে গতি ধীর করে। গাড়ি আর অটোরিকশাচালকেরা জড়িয়ে যান তর্কে। কেন গাড়িটিকে অটোরিকশা জায়গা দিল না ডান পাশে যাওয়ার জন্য, তা নিয়ে ঝগড়া। তর্কে তর্কে অটোরিকশাচালক জানালেন, তাঁর বয়স ৫০ আর গাড়িচালক বললেন, তাঁর বয়স ৩০। যান চালনার অভিজ্ঞতা নিয়ে চলল আরেক দফা বাগ্বিতণ্ডা। জায়গা পেলে গাড়িচালক বিড়বিড় করতে করতে সামনে এগিয়ে যান। আমার বেশি বয়সী অটোরিকশাচালক বললেন, ‘দুনিয়াডা বেদ্দপের, বুঝলেন?’
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁকে সুবা বাংলার দেওয়ান করেছিলেন। নতুন দেওয়ান দেখলেন, বাংলার জমিদারেরা ঠিকভাবে খাজনা পরিশোধ করেন না। কী করে কর আদায় করা যায়, তা ভাবতে লাগলেন তিনি। প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন বাংলার সুবাদার বাদশাহের দৌহিত্র আজিমুশ্শান। তবে রাজস্ব আদায়ে সর্বেসর্বা ছিলেন
১২ ঘণ্টা আগেশিল্পভিত্তিক অর্থনীতি রচনা করতে গিয়ে আমরা নষ্ট করে চলেছি মাটির উর্বরতা শক্তি, নদীপ্রবাহ ও পানি, পরিবেশ ও প্রতিবেশ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা সংস্থার এক হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালে দেশে কৃষিজমি ছিল মোট জমির প্রায় ৮৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ সালে তা নেমে হয় ৭৫ শতাংশে। আর এ ১৫ বছরে তা নিশ্চয়ই আরও অনেকখানি কমে এসেছে।
১২ ঘণ্টা আগেআমি যখন সিডনি আসি, তখন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিশেষত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। একসময় যে আমাদের একটি বা একাধিক বইমেলার প্রয়োজন পড়তে পারে, সেটা দূরদর্শী ব্যতীত কারও মাথায় আসেনি। কিন্তু বাংলা, বাঙালি মানেই বিদ্রোহ আর দ্রোহের ভেতর দিয়ে নতুন কোনো ইতিহাস রচনা। সে ইতিহাস যে শুধু দেশের মাটিতে
১২ ঘণ্টা আগেগত বছরের জুলাইয়ের পর থেকেই ছাত্রসমাজকে দেখছি বিভিন্ন অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র বা তরুণসমাজ কোনো অন্যায়-অবিচার বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, এটাই স্বাভাবিক। কোটা সংস্কারের দাবি ছিল যৌক্তিক। এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে জুলাই মাসে দেশের ছাত্রসমাজ যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল, সেই আন্দো
১২ ঘণ্টা আগে