মৃত্যুঞ্জয় রায়
আজকের পত্রিকায় ১৩ আগস্ট একটি সংবাদ পড়ে এবং এ বিষয়ে টিভি চ্যানেলের সংবাদ দেখে মর্মাহত হয়েছিলাম। এভাবে কেউ কোনো দেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ ঘটাতে পারে? আজকের পত্রিকায় ‘সাদাপাথরের সৌন্দর্য হারানোর কান্না’ শিরোনামের সে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় পাথরের লুটপাট। সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা ইতিমধ্যে দেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই সুন্দর পর্যটনকেন্দ্রটি থেকে পাথর লুট করে প্রকৃতির আসল সৌন্দর্যকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।
সিলেট শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। উপজেলাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী হওয়ায় মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রচুর পাথর ও মাটি নেমে আসে ধলই নদ দিয়ে গড়িয়ে। ভোলাগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলই নদে আসা সেসব পাথর জমা হয়ে পড়ে ছিল পাথরের বিছানার মতো। সেসব পাথরের ওপর দিয়ে বা ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পানির স্বচ্ছ-শীতল স্রোত বয়ে যেত। পাথরগুলোর রং সাদা থাকায় ধীরে ধীরে পাথরজমা সে স্থানের নাম হয়ে ওঠে ‘সাদাপাথর’। ধলই নদের উৎসমুখের সে জায়গাটি হলো ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। বিছানো সেসব সাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ নীল জল, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড় ও পাহাড়ি বন, ওপরে নীল আকাশ সে জায়গাটিকে করে তুলেছে প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি।
সিলেটে বেড়াতে এলে অনেকেই সেই চিত্রময়ী সুন্দরের কাছে ছুটে আসেন, মনের আনন্দে উপভোগ করেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। মেঘালয়ের পাহাড়গুলোর ঝরনা থেকে নেমে আসা শীতল জলধারা পর্যটকদের এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে দেয়। ধীরে ধীরে সাদাপাথর স্থানটি হয়ে ওঠে সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় এক পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে।
১০-১২ বছর আগে গড়ে ওঠা সেই পর্যটনকেন্দ্রের রূপ অনেকটাই এ রকমের ছিল বছরখানেক আগপর্যন্ত। এর পর থেকেই দৃশ্যপট বদলাতে থাকে, শুরু হয় সাদাপাথর এলাকায় পাথর চুরি এবং সর্বশেষ লুটের উৎসব। মূলত গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে সাদাপাথর চুরি ও লুটপাট শুরু হয়, সম্প্রতি সেটা লুটের মহোৎসবে রূপ নেয়। শত শত নৌকায় করে ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ লুটে নেয় পাথরগুলো। সে লুটপাটের মাধ্যমে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে স্থানটিকে ফতুর করে ফেলেছে। পাথর লুটেরাদের যে যেভাবে পারে সেভাবে পাথর নিয়ে যেতে থাকে। পাথর তুলে তুলে সেখানে গর্ত তৈরি করে ফেলে, ধলই নদের পানি ঘোলা করে সেই পানিতেই পাথর শিকার করে দলে দলে মানুষেরা। কয়েক বছর আগে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর জায়গাটির যে ছবি চোখে ভেসে ওঠে, তা এখন ক্ষতবিক্ষত, বিবস্ত্র এক বালুকাভূমি।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও ইজারা প্রথা বাতিল হওয়ার পরও সেখান থেকে এভাবে পাথর লুটের ঘটনা বিস্ময়কর। আগে যত দূর চোখ যেত, পাথরের বিছানা চোখে পড়ত। এখন সেসব অতীতের স্মৃতি। বর্তমানে পাথর লুটের পর জায়গাটি যেন ধু ধু বালুচর। অভিজ্ঞদের দেওয়া তথ্যমতে ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে জায়গাটি থেকে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর লুট করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সেখানকার প্রায় ৭৫ শতাংশ পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা রয়েছে বিজিবি ক্যাম্পের কাছে।
পরিবেশবিদদের ধারণা, এভাবে স্থানটিকে পাথরশূন্য ও ক্ষতবিক্ষত করে ফেলার কারণে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বাড়তে পারে, ধুয়ে নিয়ে যেতে পারে ধলই নদের দুই পাড়ের মাটি। কেননা এসব পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির তীব্র স্রোত পাথরে বাধা পেতে পেতে দুর্বল হয়ে পড়ত, এখন সেই তীব্র স্রোতের বেগ কমাতে আর পাথরগুলো রইল না। এ ছাড়া স্থানটি পাথরাবৃত থাকায় পানির তোড়ে মাটি ও বালু সরে যেতে পারে না। পাথর থাকায় ধলই নদের পানি যতটা স্বচ্ছ থাকে, পাথরশূন্য হওয়ায় পানির সে স্বচ্ছতা আর থাকবে না। এতে পানি ঘোলা হয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের যোগ্য থাকবে না।
কোনো প্রাকৃতিক আবাসস্থল নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। কেননা যেকোনো প্রাকৃতিক আবাসস্থল বিনষ্ট করলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে সেসব আবাসস্থলে থাকা নানা রকম জীববৈচিত্র্যের ওপর। সাদাপাথরের পাথর লুটের কারণে সেখানকার প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে। অবশ্যই এর কোনো না কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে সে স্থানের জীববৈচিত্র্যের ওপর। এর সঙ্গে রয়েছে ভূমিক্ষয়ের আশঙ্কা।
প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পাথর তোলায়, কোয়ারিগুলো বন্ধ করে টহল বাড়িয়েছে। সে কারণে কয়েক দিন আগে থেকে সেখানে পাথর তোলা বন্ধ রয়েছে। তবে শত শত লোক যেভাবে সেখানে ৫ আগস্টের পর থেকে পাথর লুট করল, তা যে এসব নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্থানীয় এসব পাথর ব্যবসায়ী ও আহরণকারীরা নাকি অনেক শক্তিশালী, প্রশাসন কিংবা স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরাও নাকি তাঁদের কিছু করতে পারেন না, এ রকম কথা চাউর আছে সেখানে। স্থানীয় নেতা ও রাজনীতিবিদদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। এমতাবস্থায় কয়েক দিন ধরে চলল পাথর লুটের মহোৎসব; অথচ কেউ তাদের বাধা দিল না।
এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের বিতর্কও কম নেই। স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিবিদ ইতিমধ্যেই বলেছেন, যে পাথর এই জনপদের মানুষের পবিত্র আমানত, সেই পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দিয়ে ১০ লাখ লোকের পেটে লাথি মারা হয়েছে। কেননা এসব পাথর তুলে তাঁদের জীবন চলত। মানলাম সে কথা। ১০ লাখ লোক যদি সেখানকার পাথর তুলে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাহলে এখন যে পাথরভূমি শূন্য মরুভূমিতে পরিণত হলো, সেখান থেকে এরপর তাঁরা আর কী তুলবেন? নিষেধাজ্ঞা মান্য করার চেয়ে অমান্য করায় কি তাহলে সেসব মানুষের কপালেই পাথরের আঘাত পড়ল? আর সাদাপাথর এলাকায় পর্যটন স্পট গড়ে ওঠার কারণে স্থানীয় মানুষের যে আয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল, তারই বা কী হবে? সাদাপাথর যেতেন মানুষ পাথর দেখতে; তাঁরা নিশ্চয়ই পাথরশূন্য মাটি দেখতে সেখানে যাবেন না, সে কথা হলফ করে বলা যায়, সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটের ফলে সে এলাকার পর্যটন সম্ভাবনাকেও গলাটিপে হত্যা করা হলো।
জানি না, প্রকৃতিবিদ ও ভূতাত্ত্বিকদের মতামত কী? প্রতি বর্ষাকালেই শুনেছি, পানির সঙ্গে পাথর আসে, ওখানে সেসব পাথর থিতু হয়। কিন্তু বহুকাল আগে থেকে ওখানে নদীতলের ভূগর্ভে যেসব পাথরের মজুত গড়ে উঠেছিল যুগ যুগ ধরে, সেগুলোর পুনর্জন্ম বা পুনর্ভরণ কীভাবে হবে? জানি না, এই গভীর ক্ষত সারিয়ে সাদাপাথর আবার কবে পাথরভূমিতে পরিণত হবে।
এর আগে আমরা একইভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পর্যটনকেন্দ্র জাফলংকে মরে যেতে দেখেছি। পাথরখেকো লোভী মানুষেরা সে উদাহরণ থেকেও কোনো শিক্ষা নিল না। স্থানীয় মানুষদের অনেকেরই অভিমত, পাথর চোর চক্র এত শক্তিশালী যে মুখ খোলা মানেই নিজের বিপদ ডেকে আনা। এ জন্য স্থানীয় অনেকের প্রতিরোধের ইচ্ছা থাকলেও তাঁরা ছিলেন অসহায়। পাথরগুলো তো লুট হয়েই গেল, এখন লুটেরাদের ধরপাকড় করে কি আর পাথরগুলো ফিরিয়ে আনা যাবে? তবে এ থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা নেওয়া দরকার, পাথরের মতো কোনো বনের গাছগুলো যেন লুট না হয়।
লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়
কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
আজকের পত্রিকায় ১৩ আগস্ট একটি সংবাদ পড়ে এবং এ বিষয়ে টিভি চ্যানেলের সংবাদ দেখে মর্মাহত হয়েছিলাম। এভাবে কেউ কোনো দেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ ঘটাতে পারে? আজকের পত্রিকায় ‘সাদাপাথরের সৌন্দর্য হারানোর কান্না’ শিরোনামের সে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় পাথরের লুটপাট। সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা ইতিমধ্যে দেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই সুন্দর পর্যটনকেন্দ্রটি থেকে পাথর লুট করে প্রকৃতির আসল সৌন্দর্যকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।
সিলেট শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। উপজেলাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী হওয়ায় মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রচুর পাথর ও মাটি নেমে আসে ধলই নদ দিয়ে গড়িয়ে। ভোলাগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলই নদে আসা সেসব পাথর জমা হয়ে পড়ে ছিল পাথরের বিছানার মতো। সেসব পাথরের ওপর দিয়ে বা ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পানির স্বচ্ছ-শীতল স্রোত বয়ে যেত। পাথরগুলোর রং সাদা থাকায় ধীরে ধীরে পাথরজমা সে স্থানের নাম হয়ে ওঠে ‘সাদাপাথর’। ধলই নদের উৎসমুখের সে জায়গাটি হলো ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। বিছানো সেসব সাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ নীল জল, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড় ও পাহাড়ি বন, ওপরে নীল আকাশ সে জায়গাটিকে করে তুলেছে প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি।
সিলেটে বেড়াতে এলে অনেকেই সেই চিত্রময়ী সুন্দরের কাছে ছুটে আসেন, মনের আনন্দে উপভোগ করেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। মেঘালয়ের পাহাড়গুলোর ঝরনা থেকে নেমে আসা শীতল জলধারা পর্যটকদের এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে দেয়। ধীরে ধীরে সাদাপাথর স্থানটি হয়ে ওঠে সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় এক পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে।
১০-১২ বছর আগে গড়ে ওঠা সেই পর্যটনকেন্দ্রের রূপ অনেকটাই এ রকমের ছিল বছরখানেক আগপর্যন্ত। এর পর থেকেই দৃশ্যপট বদলাতে থাকে, শুরু হয় সাদাপাথর এলাকায় পাথর চুরি এবং সর্বশেষ লুটের উৎসব। মূলত গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে সাদাপাথর চুরি ও লুটপাট শুরু হয়, সম্প্রতি সেটা লুটের মহোৎসবে রূপ নেয়। শত শত নৌকায় করে ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ লুটে নেয় পাথরগুলো। সে লুটপাটের মাধ্যমে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে স্থানটিকে ফতুর করে ফেলেছে। পাথর লুটেরাদের যে যেভাবে পারে সেভাবে পাথর নিয়ে যেতে থাকে। পাথর তুলে তুলে সেখানে গর্ত তৈরি করে ফেলে, ধলই নদের পানি ঘোলা করে সেই পানিতেই পাথর শিকার করে দলে দলে মানুষেরা। কয়েক বছর আগে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর জায়গাটির যে ছবি চোখে ভেসে ওঠে, তা এখন ক্ষতবিক্ষত, বিবস্ত্র এক বালুকাভূমি।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও ইজারা প্রথা বাতিল হওয়ার পরও সেখান থেকে এভাবে পাথর লুটের ঘটনা বিস্ময়কর। আগে যত দূর চোখ যেত, পাথরের বিছানা চোখে পড়ত। এখন সেসব অতীতের স্মৃতি। বর্তমানে পাথর লুটের পর জায়গাটি যেন ধু ধু বালুচর। অভিজ্ঞদের দেওয়া তথ্যমতে ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে জায়গাটি থেকে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর লুট করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সেখানকার প্রায় ৭৫ শতাংশ পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা রয়েছে বিজিবি ক্যাম্পের কাছে।
পরিবেশবিদদের ধারণা, এভাবে স্থানটিকে পাথরশূন্য ও ক্ষতবিক্ষত করে ফেলার কারণে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বাড়তে পারে, ধুয়ে নিয়ে যেতে পারে ধলই নদের দুই পাড়ের মাটি। কেননা এসব পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির তীব্র স্রোত পাথরে বাধা পেতে পেতে দুর্বল হয়ে পড়ত, এখন সেই তীব্র স্রোতের বেগ কমাতে আর পাথরগুলো রইল না। এ ছাড়া স্থানটি পাথরাবৃত থাকায় পানির তোড়ে মাটি ও বালু সরে যেতে পারে না। পাথর থাকায় ধলই নদের পানি যতটা স্বচ্ছ থাকে, পাথরশূন্য হওয়ায় পানির সে স্বচ্ছতা আর থাকবে না। এতে পানি ঘোলা হয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের যোগ্য থাকবে না।
কোনো প্রাকৃতিক আবাসস্থল নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। কেননা যেকোনো প্রাকৃতিক আবাসস্থল বিনষ্ট করলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে সেসব আবাসস্থলে থাকা নানা রকম জীববৈচিত্র্যের ওপর। সাদাপাথরের পাথর লুটের কারণে সেখানকার প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে। অবশ্যই এর কোনো না কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে সে স্থানের জীববৈচিত্র্যের ওপর। এর সঙ্গে রয়েছে ভূমিক্ষয়ের আশঙ্কা।
প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পাথর তোলায়, কোয়ারিগুলো বন্ধ করে টহল বাড়িয়েছে। সে কারণে কয়েক দিন আগে থেকে সেখানে পাথর তোলা বন্ধ রয়েছে। তবে শত শত লোক যেভাবে সেখানে ৫ আগস্টের পর থেকে পাথর লুট করল, তা যে এসব নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্থানীয় এসব পাথর ব্যবসায়ী ও আহরণকারীরা নাকি অনেক শক্তিশালী, প্রশাসন কিংবা স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরাও নাকি তাঁদের কিছু করতে পারেন না, এ রকম কথা চাউর আছে সেখানে। স্থানীয় নেতা ও রাজনীতিবিদদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। এমতাবস্থায় কয়েক দিন ধরে চলল পাথর লুটের মহোৎসব; অথচ কেউ তাদের বাধা দিল না।
এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের বিতর্কও কম নেই। স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিবিদ ইতিমধ্যেই বলেছেন, যে পাথর এই জনপদের মানুষের পবিত্র আমানত, সেই পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দিয়ে ১০ লাখ লোকের পেটে লাথি মারা হয়েছে। কেননা এসব পাথর তুলে তাঁদের জীবন চলত। মানলাম সে কথা। ১০ লাখ লোক যদি সেখানকার পাথর তুলে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাহলে এখন যে পাথরভূমি শূন্য মরুভূমিতে পরিণত হলো, সেখান থেকে এরপর তাঁরা আর কী তুলবেন? নিষেধাজ্ঞা মান্য করার চেয়ে অমান্য করায় কি তাহলে সেসব মানুষের কপালেই পাথরের আঘাত পড়ল? আর সাদাপাথর এলাকায় পর্যটন স্পট গড়ে ওঠার কারণে স্থানীয় মানুষের যে আয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল, তারই বা কী হবে? সাদাপাথর যেতেন মানুষ পাথর দেখতে; তাঁরা নিশ্চয়ই পাথরশূন্য মাটি দেখতে সেখানে যাবেন না, সে কথা হলফ করে বলা যায়, সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটের ফলে সে এলাকার পর্যটন সম্ভাবনাকেও গলাটিপে হত্যা করা হলো।
জানি না, প্রকৃতিবিদ ও ভূতাত্ত্বিকদের মতামত কী? প্রতি বর্ষাকালেই শুনেছি, পানির সঙ্গে পাথর আসে, ওখানে সেসব পাথর থিতু হয়। কিন্তু বহুকাল আগে থেকে ওখানে নদীতলের ভূগর্ভে যেসব পাথরের মজুত গড়ে উঠেছিল যুগ যুগ ধরে, সেগুলোর পুনর্জন্ম বা পুনর্ভরণ কীভাবে হবে? জানি না, এই গভীর ক্ষত সারিয়ে সাদাপাথর আবার কবে পাথরভূমিতে পরিণত হবে।
এর আগে আমরা একইভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পর্যটনকেন্দ্র জাফলংকে মরে যেতে দেখেছি। পাথরখেকো লোভী মানুষেরা সে উদাহরণ থেকেও কোনো শিক্ষা নিল না। স্থানীয় মানুষদের অনেকেরই অভিমত, পাথর চোর চক্র এত শক্তিশালী যে মুখ খোলা মানেই নিজের বিপদ ডেকে আনা। এ জন্য স্থানীয় অনেকের প্রতিরোধের ইচ্ছা থাকলেও তাঁরা ছিলেন অসহায়। পাথরগুলো তো লুট হয়েই গেল, এখন লুটেরাদের ধরপাকড় করে কি আর পাথরগুলো ফিরিয়ে আনা যাবে? তবে এ থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা নেওয়া দরকার, পাথরের মতো কোনো বনের গাছগুলো যেন লুট না হয়।
লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়
কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
বাংলাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন শতাধিক। প্রতিবছর এখানে হাজারো গবেষণা হয়, যার বড় অংশের উদ্দেশ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ। নিঃসন্দেহে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষকের মর্যাদা এবং বৈশ্বিক পরিচিতি বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম।
৩ ঘণ্টা আগেখবরটি খুবই লজ্জার। বাংলাদেশ বিমানের একজন কেবিন ক্রু সোনা পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৪ আগস্ট বিকেলে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে বিজি-৩৪০ ফ্লাইটে ঢাকায় অবতরণ করার পর গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমের সময় এই কেবিন ক্রুর গতিবিধিতে সন্দেহ জাগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। স্ক্যানিং মেশিনের নিচে তিনি পা দিয়ে কিছু লুকানোর
৩ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি ঢাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে জাপানি বিনিয়োগ পরামর্শক তাকাও হিরোসে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট ভাষ্য, তাঁরা দ্রুত মুনাফার খোঁজে থাকা আগ্রাসী বিনিয়োগকারী, খামখেয়ালিও।
১৪ ঘণ্টা আগে২২শে শ্রাবণ (৬ আগস্ট) ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ওই দিন বাংলা একাডেমি ও ছায়ানট কর্তৃক রবীন্দ্রনাথ স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
১ দিন আগে