বিভুরঞ্জন সরকার
সম্প্রতি ঢাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে জাপানি বিনিয়োগ পরামর্শক তাকাও হিরোসে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট ভাষ্য, তাঁরা দ্রুত মুনাফার খোঁজে থাকা আগ্রাসী বিনিয়োগকারী, খামখেয়ালিও। তাকাও হিরোসে বলেন, ‘যে মুহূর্তে দেখব, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা জাপানে ফিরে যাব। প্লিজ, আর সহিংসতা নয়। মতপার্থক্য থাকতেই পারে, তার সমাধানও রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা তোমাদের দিকে নজর রাখছে—তাদের ভড়কে দিও না।’ তাঁর মন্তব্য নিছক কূটনৈতিক নয়; আন্তর্জাতিক পুঁজিপ্রবাহের মনস্তত্ত্বের সরাসরি প্রতিফলন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ও অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগপ্রবাহে বড় ধাক্কা দেয়। ২০০৬–২০০৮ সালের জরুরি অবস্থা, ২০১৩–১৪ সালের দীর্ঘস্থায়ী সহিংস অবরোধ, নির্বাচনী সহিংসতা ও হরতাল—এসবই বিদেশি ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে কিছু বিনিয়োগ প্রকল্প স্থগিত হয়েছে, কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে, আবার কেউ কেউ বিনিয়োগ পরিকল্পনা পিছিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ গত কয়েক বছর বহু চড়াই-উতরাই—রাজনৈতিক অস্থিরতা, গণ-অভ্যুত্থান, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট—পার করলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা ভেঙে পড়েনি। সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও জিডিপিতে বড়ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং মূল্যস্ফীতি কমেছে। তাঁর সর্বশেষ উদাহরণ, প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সাম্প্রতিক মন্তব্য। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিসংখ্যানের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার টেকসই নিশ্চয়তা দেখতে চান।
এর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য আরও একটি অপরিহার্য—নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে অস্থিশীলতা বিরাজমান। গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলার নজিরবিহীন অবনতি হয়েছিল। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। গত এক বছরে কিছুটা উন্নতি হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটাদাগে স্বস্তিদায়ক নয়। বিশেষ পুলিশ বাহিনীর নজিরবিহীন ভঙ্গুর অবস্থা এর জন্য দায়ী। এই দুটি বড় ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে পারেনি। এটি তো অস্বীকার যাবে না, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে না। আর তার জন্য দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর অপরিহার্য। এটি দেশি-বিদেশি সব বিনিয়োগকারীর একান্ত কাম্য।
কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সংশয়ের মধ্যে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও তা নিয়ে মানুষের মনে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে বিভক্তি রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, সেটা প্রায় নিশ্চিত। এরপর সবচেয়ে বড় দল বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায় এবং তাদের দাবির মুখেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা। কিন্তু বিএনপি ছাড়া সরকার পতনের আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা অন্য কোনো দলের তেমন উৎসাহ রয়েছে বলে মনে হয় না।
এ ক্ষেত্রে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তো বলেই দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। জামায়াতে অনাগ্রহ স্পষ্ট। এই অবস্থায় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে কি না—তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক নীতি বা ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় সংহতি নেই। ক্ষমতার জন্য রাস্তায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার যে ধারা বহু বছর ধরে চলে আসছে, সেটি বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের। বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি আস্থানির্ভর প্রক্রিয়া—এটি রাতারাতি গড়ে ওঠে না, ভেঙে যেতেও সময় লাগে না।
শক্তিশালী দেশীয় বিনিয়োগকারী ভিত্তি ছাড়া বিদেশি মূলধনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেন তাকাও হিরোসে। দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বার্থে মূলধন বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমানো সব সময় সুবিধাজনক নাও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী দেশীয় বিনিয়োগকারী ভিত্তি প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের ভিত্তি আরও গভীর হতে হবে।’
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে অবিশ্বাস ও পারস্পরিক দোষারোপের যে পরিবেশ, তা বিনিয়োগবান্ধব নয়। যেকোনো সময় ছোটখাটো রাজনৈতিক অস্থিরতা—একটি অবরোধ, একটি সংঘর্ষ, একটি বিতর্কিত রায়—বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় আঘাত হানতে পারে। আর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা শুধু ঢাকার রাজনীতি নয়, বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম দেখে সিদ্ধান্ত নেন।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় স্পষ্ট। প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতার ভাষা চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে। এবি পার্টির ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের কথায়, ‘গত বছরের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে শেষ সংঘাত হওয়া উচিত।‘ এই প্রতিশ্রুতি শুধু রাজনৈতিক বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য আইনগত কাঠামো ও নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত হতে চান—সরকার পরিবর্তন হলে নীতি কি বদলে যাবে, প্রকল্প কি আটকে যাবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির আলাউদ্দিন মোহাম্মদের ভাষায়, বাংলাদেশ আগের সেই শাসনকালে ফিরবে না; যেখানে মুদ্রাবাজার, পুঁজিবাজার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছিল লুটপাটের উৎস। এই আস্থা গড়ে তুলতে হবে, কারণ আস্থাই হলো পুঁজির সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।
তৃতীয়ত, আমাদের কেবল বিদেশি পুঁজির ওপর নির্ভর করলে হবে না; একটি শক্তিশালী দেশীয় বিনিয়োগ ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ থেমে গেলে যাতে অর্থনীতি হোঁচট না খায়, সে জন্য অভ্যন্তরীণ মূলধন বাজারকে গভীর ও বৈচিত্র্যময় করতে হবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন ও অর্থনৈতিক সংস্কার—এই তিন স্তম্ভ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখা সম্ভব নয়। সুশাসন, স্থিতিশীল নীতি ও আস্থার রাজনীতি ছাড়া টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়, আর তা নিশ্চিত করা না গেলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি তুলে নিতে দ্বিধা করবেন না। আজকের সতর্কবার্তা তাই কেবল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও এক কঠিন বাস্তবতার ইঙ্গিত। তাকাও হিরোসের সতর্কবার্তায় সেসব দিকই ফুটে উঠেছে।
সম্প্রতি ঢাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে জাপানি বিনিয়োগ পরামর্শক তাকাও হিরোসে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট ভাষ্য, তাঁরা দ্রুত মুনাফার খোঁজে থাকা আগ্রাসী বিনিয়োগকারী, খামখেয়ালিও। তাকাও হিরোসে বলেন, ‘যে মুহূর্তে দেখব, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা জাপানে ফিরে যাব। প্লিজ, আর সহিংসতা নয়। মতপার্থক্য থাকতেই পারে, তার সমাধানও রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা তোমাদের দিকে নজর রাখছে—তাদের ভড়কে দিও না।’ তাঁর মন্তব্য নিছক কূটনৈতিক নয়; আন্তর্জাতিক পুঁজিপ্রবাহের মনস্তত্ত্বের সরাসরি প্রতিফলন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ও অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগপ্রবাহে বড় ধাক্কা দেয়। ২০০৬–২০০৮ সালের জরুরি অবস্থা, ২০১৩–১৪ সালের দীর্ঘস্থায়ী সহিংস অবরোধ, নির্বাচনী সহিংসতা ও হরতাল—এসবই বিদেশি ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে কিছু বিনিয়োগ প্রকল্প স্থগিত হয়েছে, কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে, আবার কেউ কেউ বিনিয়োগ পরিকল্পনা পিছিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ গত কয়েক বছর বহু চড়াই-উতরাই—রাজনৈতিক অস্থিরতা, গণ-অভ্যুত্থান, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট—পার করলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা ভেঙে পড়েনি। সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও জিডিপিতে বড়ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং মূল্যস্ফীতি কমেছে। তাঁর সর্বশেষ উদাহরণ, প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সাম্প্রতিক মন্তব্য। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিসংখ্যানের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার টেকসই নিশ্চয়তা দেখতে চান।
এর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য আরও একটি অপরিহার্য—নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে অস্থিশীলতা বিরাজমান। গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলার নজিরবিহীন অবনতি হয়েছিল। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। গত এক বছরে কিছুটা উন্নতি হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটাদাগে স্বস্তিদায়ক নয়। বিশেষ পুলিশ বাহিনীর নজিরবিহীন ভঙ্গুর অবস্থা এর জন্য দায়ী। এই দুটি বড় ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে পারেনি। এটি তো অস্বীকার যাবে না, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে না। আর তার জন্য দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর অপরিহার্য। এটি দেশি-বিদেশি সব বিনিয়োগকারীর একান্ত কাম্য।
কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সংশয়ের মধ্যে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও তা নিয়ে মানুষের মনে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে বিভক্তি রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, সেটা প্রায় নিশ্চিত। এরপর সবচেয়ে বড় দল বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায় এবং তাদের দাবির মুখেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা। কিন্তু বিএনপি ছাড়া সরকার পতনের আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা অন্য কোনো দলের তেমন উৎসাহ রয়েছে বলে মনে হয় না।
এ ক্ষেত্রে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তো বলেই দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। জামায়াতে অনাগ্রহ স্পষ্ট। এই অবস্থায় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে কি না—তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক নীতি বা ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় সংহতি নেই। ক্ষমতার জন্য রাস্তায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার যে ধারা বহু বছর ধরে চলে আসছে, সেটি বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের। বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি আস্থানির্ভর প্রক্রিয়া—এটি রাতারাতি গড়ে ওঠে না, ভেঙে যেতেও সময় লাগে না।
শক্তিশালী দেশীয় বিনিয়োগকারী ভিত্তি ছাড়া বিদেশি মূলধনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেন তাকাও হিরোসে। দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বার্থে মূলধন বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমানো সব সময় সুবিধাজনক নাও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী দেশীয় বিনিয়োগকারী ভিত্তি প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের ভিত্তি আরও গভীর হতে হবে।’
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে অবিশ্বাস ও পারস্পরিক দোষারোপের যে পরিবেশ, তা বিনিয়োগবান্ধব নয়। যেকোনো সময় ছোটখাটো রাজনৈতিক অস্থিরতা—একটি অবরোধ, একটি সংঘর্ষ, একটি বিতর্কিত রায়—বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় আঘাত হানতে পারে। আর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা শুধু ঢাকার রাজনীতি নয়, বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম দেখে সিদ্ধান্ত নেন।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় স্পষ্ট। প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতার ভাষা চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে। এবি পার্টির ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের কথায়, ‘গত বছরের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে শেষ সংঘাত হওয়া উচিত।‘ এই প্রতিশ্রুতি শুধু রাজনৈতিক বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য আইনগত কাঠামো ও নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত হতে চান—সরকার পরিবর্তন হলে নীতি কি বদলে যাবে, প্রকল্প কি আটকে যাবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির আলাউদ্দিন মোহাম্মদের ভাষায়, বাংলাদেশ আগের সেই শাসনকালে ফিরবে না; যেখানে মুদ্রাবাজার, পুঁজিবাজার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছিল লুটপাটের উৎস। এই আস্থা গড়ে তুলতে হবে, কারণ আস্থাই হলো পুঁজির সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।
তৃতীয়ত, আমাদের কেবল বিদেশি পুঁজির ওপর নির্ভর করলে হবে না; একটি শক্তিশালী দেশীয় বিনিয়োগ ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ থেমে গেলে যাতে অর্থনীতি হোঁচট না খায়, সে জন্য অভ্যন্তরীণ মূলধন বাজারকে গভীর ও বৈচিত্র্যময় করতে হবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন ও অর্থনৈতিক সংস্কার—এই তিন স্তম্ভ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখা সম্ভব নয়। সুশাসন, স্থিতিশীল নীতি ও আস্থার রাজনীতি ছাড়া টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়, আর তা নিশ্চিত করা না গেলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি তুলে নিতে দ্বিধা করবেন না। আজকের সতর্কবার্তা তাই কেবল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও এক কঠিন বাস্তবতার ইঙ্গিত। তাকাও হিরোসের সতর্কবার্তায় সেসব দিকই ফুটে উঠেছে।
২২শে শ্রাবণ (৬ আগস্ট) ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ওই দিন বাংলা একাডেমি ও ছায়ানট কর্তৃক রবীন্দ্রনাথ স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
১৫ ঘণ্টা আগেখবরটা শুনে হাসব না কাঁদব, বুঝতে পারছি না। বসুন্ধরা শপিং মলে যুথী নামে যে চোর ধরা পড়েছেন, তিনি নাকি আন্তজেলা পকেটমার চক্রের নেতৃত্বে আছেন! তার মানে পকেটমারদেরও সংগঠন রয়েছে এবং তাতে নেতা ও কর্মীও রয়েছেন।
১৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক গভীর রূপান্তরের ভেতর দিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলের পরিণতিতে যখন দেশে একধরনের দমন-পীড়ন ও এককেন্দ্রিক ক্ষমতার গঠন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল, তখন নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজ মিলে গড়ে তোলে এক অভাবিত প্রতিরোধ,
২ দিন আগেজুলাই অভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে আমাদের অর্জন কী, সে প্রশ্ন আজ সবার। জুলাই আন্দোলনের সময় কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য না থাকলেও শেখ হাসিনার পতনের পর মানুষের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল—রাষ্ট্রের যে পদ্ধতি শাসককে কর্তৃত্বপরায়ণ, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্টে পরিণত করে, সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।
২ দিন আগে