এম আর রহমান
দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যেন দখলের উন্মাদনায় পেয়ে বসেছে। কানাডা, পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড, সর্বশেষ ফিলিস্তিনের গাজা দখলের পরিকল্পনার ঘোষণা তিনি দিয়েছেন। এ যেন মামাবাড়ির আবদার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সেই অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার মতো উদ্ভট প্রস্তাব দিয়ে পুরো বিশ্বে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দেন ট্রাম্প। অবশ্য ক্ষমতার প্রথম মেয়াদেও তিনি কানাডা দখল করতে চেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে ট্রাম্প কানাডার প্রতি একধরনের ‘অস্থির’ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সমঝোতা নীতির জন্য ‘ভুল পথে’ চলছে এবং যদি কখনো তার দখলে আসে, তাহলে তাকে ‘নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা’ যাবে। এর মধ্যে ট্রাম্পের রাজনীতির মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করতেন, বিশ্বের শক্তিশালী দেশ হিসেবে, আমেরিকাকে তার নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার জন্য আরও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এবার ওভাল অফিসে বসার আগেই ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। বিক্রির প্রস্তাবে রাজি না হলে ডেনমার্কের পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের হুমকি দেন তিনি। ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে গ্রিনল্যান্ডকে নিজেদের ভূখণ্ডে পরিণত করা খুবই জরুরি। ২০১৯ সালে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডও কিনতে চেয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা মনে করতেন, গ্রিনল্যান্ডের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ (যেমন খনিজ ও জ্বালানি) এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ডেনমার্ক সরকার ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে হাস্যকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। গ্রিনল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কিম কিলসেন বলেছিলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়’। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে মজার আলোচনার সূত্রপাত হয়। অনেকেই একে ট্রাম্পের উপনিবেশবাদী মানসিকতার প্রতিফলন বলে সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানও গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটিও প্রত্যাখ্যাত হয়।
ওভাল অফিসে প্রবেশের আগেই ট্রাম্প মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে আমেরিকা উপসাগর রাখার ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে এই ঘোষণা বাস্তব রূপ নিয়েছে।
এদিকে গাজাকে একটি ‘বড় রিয়েল এস্টেট সাইট’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গাজা পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব নিতে চায় তাঁর প্রশাসন। অঞ্চলটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গোলাবারুদ সরিয়ে শহরটি ঢেলে সাজানোর কথা জানান। তিনি চান গাজাবাসীকে অন্য কোনো স্থানে সরিয়ে দিতে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আমরা এটির মালিকানা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও হামাসের ফিরে আসার মতো কিছুই নেই এখানে। জায়গাটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’ তবে হামাস ইতিমধ্যে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ ছাড়া ট্রাম্প পানামা খাল দখলের হুমকি দিয়েছেন এবং এটি করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন। হুমকি অনুযায়ী, পানামা খাল দখলে ট্রাম্প যদি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেন, তা গুরুতর যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। অবশ্য ট্রাম্পের হুমকির পরদিনই জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে পানামা।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটগুলোর একটি পানামা খাল। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই খাল। এর মাধ্যমে কমেছে কয়েক হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব। পানামা খালের মধ্য দিয়ে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের দূরত্ব মাত্র ৮২ কিলোমিটার। পানামা খাল না থাকলে এক মহাসাগর থেকে আরেক মহাসাগর পাড়ি দিতে ঘুরতে হতো অতিরিক্ত আরও ১৩ হাজার কিলোমিটারের জলপথ। এই দূরত্ব কমানোর মাধ্যমে পানামা খাল পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথে।
প্রতিবছর আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরগামী হাজার হাজার জাহাজ পাড়ি দেয় এই খাল দিয়ে। বহন হয় কোটি কোটি টন পণ্য। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে পানামা খাল পাড়ি দিয়েছে ১০ হাজার জাহাজ। বহন হয়েছে ৪২ কোটি টন পণ্য। উত্তর-পূর্ব এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া পণ্যের ৪০ শতাংশই পরিবহন হয়েছে পানামা খাল দিয়ে। বছরে পানামা খাল দিয়ে বহন হওয়া পণ্যের তিন-চতুর্থাংশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে পানামা খাল ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক পরেই আছে চীন।
বর্তমানে পানামা খালের মালিকানা মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার হাতে থাকলেও একসময় এই খালটি পরিচালনা করত যুক্তরাষ্ট্র। বিগত শতাব্দীর একদম শুরুর দিকে ১৯০৩ সালে পানামাকে প্রতিবেশী কলম্বিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন হতে সাহায্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিনিময়ে পানামা খাল খননের অধিকার গ্রহণ করে ওয়াশিংটন। ১৯০৪ সালে শুরু হয় খাল খোঁড়ার কাজ। প্রায় এক দশকের নির্মাণযজ্ঞের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৪ সালে শুরু হয় এই খাল ব্যবহারের কার্যক্রম।
তবে পানামা খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই খবরদারির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল পানামায়। এরই ধারাবাহিকতায় খালে মার্কিন দখলদারত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়েন পানামাবাসী। রক্তক্ষয়ী এই বিক্ষোভে প্রাণ হারান প্রায় ২৮ জন মানুষ। পানামাবাসীর ক্ষোভের পাশাপাশি পানামা খাল পরিত্যাগ করতে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি। চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ১৯৭৭ সালে খালটি পানামার হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দেশটির সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। এরপরও প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি সময়ে যৌথ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ১৯৯৯ সালে চূড়ান্তভাবে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ দেশটির হাতে তুলে দেয় ওয়াশিংটন। তবে শুধু বাণিজ্যিক কারণেই নয়, সামরিক দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পানামা খাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই খালের মাধ্যমেই একই সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে নিজেদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। পানামা খাল দিয়ে খুব সহজেই এক মহাসাগর থেকে আরেক মহাসাগর কিংবা নিজেদের এক উপকূল থেকে আরেক উপকূলে সব ধরনের যুদ্ধজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে পানামা খাল ব্যবহারের জন্য শুল্ক দিতে হয় প্রতিটি জাহাজকে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পরিবহন হয় এই খাল দিয়ে, সে হিসাবে সবচেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। আর এতেই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। তাঁর মতে, এসব শুল্ক অতিরিক্ত।
২০২৩ সালে ব্যাপক খরার কারণে প্রায় বন্ধই হতে বসেছিল পানামা খাল। দৈনিক এই খাল ব্যবহার করে জাহাজ পারাপারের সংখ্যা নেমে এসেছিল মাত্র ২২টিতে। সে সময় পানামা খালের দুই প্রান্তে তৈরি হয়েছিল বিশাল জাহাজজটের। খালটি পাড়ি দিতে অনেক ক্ষেত্রে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়ে ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে জাহাজগুলোকে। অবশ্য পরে এই খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল ফের স্বাভাবিক হলেও এই খাল ব্যবহারে জাহাজের শুল্ক ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন কিছুদিন আগে পানামার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ডানপন্থী ও জাতীয়তাবাদী নেতা হোসে রাউল মুলিনো। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রই এই খালের প্রধান ব্যবহারকারী, তাই ভাড়া বৃদ্ধির মাশুল তাদেরই বহন করতে হবে সবচেয়ে বেশি। আর তাই মুলিনোর এই শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ততেই চটেছেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া পানামা খাল নিয়ে ট্রাম্পের এই হুমকির পেছনে রয়েছে চীনের ব্যাপারে তার উদ্বেগের বিষয়টিও। ট্রাম্পসহ যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল মহলের অনেকেরই ধারণা, ওয়াশিংটনকে চাপে রাখতে পানামার দিকে চোখ দিয়েছে বেইজিং। এর অংশ হিসেবে পানামার আশপাশে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রভাব বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে তারা।
হংকংভিত্তিক একটি কোম্পানি পানামা খালসংলগ্ন পাঁচটি বন্দরের মধ্যে দুটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এই বন্দর দুটি পানামা খালের দুই প্রান্তে অবস্থিত। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা হয়েছে, ভবিষ্যতে পানামাকে কেন্দ্র করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে চীন, যা হুমকিতে ফেলবে পানামাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্বেগ সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে পানামাও। ট্রাম্পের উদ্বেগ প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় পানামার প্রেসিডেন্ট মুলিনো বলেছেন, পানামা খাল এবং সংলগ্ন অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চি পানামার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা একইভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। একই সঙ্গে পানামা খালে চীন কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকেও তিনি অস্বীকার করেন।
আসলে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি এবং প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন। তবে ট্রাম্পের এ ধরনের মনোভাব আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে। ফলে সংঘাত বৃদ্ধি এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে, গ্রিনল্যান্ডের মতো একটি ভূখণ্ড দখল করার উদ্যোগ আমেরিকার সামগ্রিক আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।
দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যেন দখলের উন্মাদনায় পেয়ে বসেছে। কানাডা, পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড, সর্বশেষ ফিলিস্তিনের গাজা দখলের পরিকল্পনার ঘোষণা তিনি দিয়েছেন। এ যেন মামাবাড়ির আবদার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সেই অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার মতো উদ্ভট প্রস্তাব দিয়ে পুরো বিশ্বে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দেন ট্রাম্প। অবশ্য ক্ষমতার প্রথম মেয়াদেও তিনি কানাডা দখল করতে চেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে ট্রাম্প কানাডার প্রতি একধরনের ‘অস্থির’ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সমঝোতা নীতির জন্য ‘ভুল পথে’ চলছে এবং যদি কখনো তার দখলে আসে, তাহলে তাকে ‘নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা’ যাবে। এর মধ্যে ট্রাম্পের রাজনীতির মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করতেন, বিশ্বের শক্তিশালী দেশ হিসেবে, আমেরিকাকে তার নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার জন্য আরও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এবার ওভাল অফিসে বসার আগেই ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। বিক্রির প্রস্তাবে রাজি না হলে ডেনমার্কের পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের হুমকি দেন তিনি। ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে গ্রিনল্যান্ডকে নিজেদের ভূখণ্ডে পরিণত করা খুবই জরুরি। ২০১৯ সালে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডও কিনতে চেয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা মনে করতেন, গ্রিনল্যান্ডের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ (যেমন খনিজ ও জ্বালানি) এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ডেনমার্ক সরকার ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে হাস্যকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। গ্রিনল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কিম কিলসেন বলেছিলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়’। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে মজার আলোচনার সূত্রপাত হয়। অনেকেই একে ট্রাম্পের উপনিবেশবাদী মানসিকতার প্রতিফলন বলে সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানও গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটিও প্রত্যাখ্যাত হয়।
ওভাল অফিসে প্রবেশের আগেই ট্রাম্প মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে আমেরিকা উপসাগর রাখার ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে এই ঘোষণা বাস্তব রূপ নিয়েছে।
এদিকে গাজাকে একটি ‘বড় রিয়েল এস্টেট সাইট’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গাজা পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব নিতে চায় তাঁর প্রশাসন। অঞ্চলটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গোলাবারুদ সরিয়ে শহরটি ঢেলে সাজানোর কথা জানান। তিনি চান গাজাবাসীকে অন্য কোনো স্থানে সরিয়ে দিতে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আমরা এটির মালিকানা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও হামাসের ফিরে আসার মতো কিছুই নেই এখানে। জায়গাটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’ তবে হামাস ইতিমধ্যে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ ছাড়া ট্রাম্প পানামা খাল দখলের হুমকি দিয়েছেন এবং এটি করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন। হুমকি অনুযায়ী, পানামা খাল দখলে ট্রাম্প যদি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেন, তা গুরুতর যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। অবশ্য ট্রাম্পের হুমকির পরদিনই জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে পানামা।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটগুলোর একটি পানামা খাল। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই খাল। এর মাধ্যমে কমেছে কয়েক হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব। পানামা খালের মধ্য দিয়ে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের দূরত্ব মাত্র ৮২ কিলোমিটার। পানামা খাল না থাকলে এক মহাসাগর থেকে আরেক মহাসাগর পাড়ি দিতে ঘুরতে হতো অতিরিক্ত আরও ১৩ হাজার কিলোমিটারের জলপথ। এই দূরত্ব কমানোর মাধ্যমে পানামা খাল পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথে।
প্রতিবছর আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরগামী হাজার হাজার জাহাজ পাড়ি দেয় এই খাল দিয়ে। বহন হয় কোটি কোটি টন পণ্য। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে পানামা খাল পাড়ি দিয়েছে ১০ হাজার জাহাজ। বহন হয়েছে ৪২ কোটি টন পণ্য। উত্তর-পূর্ব এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া পণ্যের ৪০ শতাংশই পরিবহন হয়েছে পানামা খাল দিয়ে। বছরে পানামা খাল দিয়ে বহন হওয়া পণ্যের তিন-চতুর্থাংশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে পানামা খাল ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক পরেই আছে চীন।
বর্তমানে পানামা খালের মালিকানা মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার হাতে থাকলেও একসময় এই খালটি পরিচালনা করত যুক্তরাষ্ট্র। বিগত শতাব্দীর একদম শুরুর দিকে ১৯০৩ সালে পানামাকে প্রতিবেশী কলম্বিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন হতে সাহায্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিনিময়ে পানামা খাল খননের অধিকার গ্রহণ করে ওয়াশিংটন। ১৯০৪ সালে শুরু হয় খাল খোঁড়ার কাজ। প্রায় এক দশকের নির্মাণযজ্ঞের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৪ সালে শুরু হয় এই খাল ব্যবহারের কার্যক্রম।
তবে পানামা খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই খবরদারির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল পানামায়। এরই ধারাবাহিকতায় খালে মার্কিন দখলদারত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়েন পানামাবাসী। রক্তক্ষয়ী এই বিক্ষোভে প্রাণ হারান প্রায় ২৮ জন মানুষ। পানামাবাসীর ক্ষোভের পাশাপাশি পানামা খাল পরিত্যাগ করতে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি। চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ১৯৭৭ সালে খালটি পানামার হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দেশটির সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। এরপরও প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি সময়ে যৌথ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ১৯৯৯ সালে চূড়ান্তভাবে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ দেশটির হাতে তুলে দেয় ওয়াশিংটন। তবে শুধু বাণিজ্যিক কারণেই নয়, সামরিক দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পানামা খাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই খালের মাধ্যমেই একই সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে নিজেদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। পানামা খাল দিয়ে খুব সহজেই এক মহাসাগর থেকে আরেক মহাসাগর কিংবা নিজেদের এক উপকূল থেকে আরেক উপকূলে সব ধরনের যুদ্ধজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে পানামা খাল ব্যবহারের জন্য শুল্ক দিতে হয় প্রতিটি জাহাজকে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পরিবহন হয় এই খাল দিয়ে, সে হিসাবে সবচেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। আর এতেই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। তাঁর মতে, এসব শুল্ক অতিরিক্ত।
২০২৩ সালে ব্যাপক খরার কারণে প্রায় বন্ধই হতে বসেছিল পানামা খাল। দৈনিক এই খাল ব্যবহার করে জাহাজ পারাপারের সংখ্যা নেমে এসেছিল মাত্র ২২টিতে। সে সময় পানামা খালের দুই প্রান্তে তৈরি হয়েছিল বিশাল জাহাজজটের। খালটি পাড়ি দিতে অনেক ক্ষেত্রে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়ে ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে জাহাজগুলোকে। অবশ্য পরে এই খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল ফের স্বাভাবিক হলেও এই খাল ব্যবহারে জাহাজের শুল্ক ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন কিছুদিন আগে পানামার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ডানপন্থী ও জাতীয়তাবাদী নেতা হোসে রাউল মুলিনো। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রই এই খালের প্রধান ব্যবহারকারী, তাই ভাড়া বৃদ্ধির মাশুল তাদেরই বহন করতে হবে সবচেয়ে বেশি। আর তাই মুলিনোর এই শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ততেই চটেছেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া পানামা খাল নিয়ে ট্রাম্পের এই হুমকির পেছনে রয়েছে চীনের ব্যাপারে তার উদ্বেগের বিষয়টিও। ট্রাম্পসহ যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল মহলের অনেকেরই ধারণা, ওয়াশিংটনকে চাপে রাখতে পানামার দিকে চোখ দিয়েছে বেইজিং। এর অংশ হিসেবে পানামার আশপাশে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রভাব বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে তারা।
হংকংভিত্তিক একটি কোম্পানি পানামা খালসংলগ্ন পাঁচটি বন্দরের মধ্যে দুটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এই বন্দর দুটি পানামা খালের দুই প্রান্তে অবস্থিত। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা হয়েছে, ভবিষ্যতে পানামাকে কেন্দ্র করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে চীন, যা হুমকিতে ফেলবে পানামাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্বেগ সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে পানামাও। ট্রাম্পের উদ্বেগ প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় পানামার প্রেসিডেন্ট মুলিনো বলেছেন, পানামা খাল এবং সংলগ্ন অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চি পানামার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা একইভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। একই সঙ্গে পানামা খালে চীন কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকেও তিনি অস্বীকার করেন।
আসলে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি এবং প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন। তবে ট্রাম্পের এ ধরনের মনোভাব আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে। ফলে সংঘাত বৃদ্ধি এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে, গ্রিনল্যান্ডের মতো একটি ভূখণ্ড দখল করার উদ্যোগ আমেরিকার সামগ্রিক আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।
এবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
২ ঘণ্টা আগেএবার সিডনির বইমেলায়ও মানুষের সমাগম কম হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটিতে ছিল সামান্যসংখ্যক মানুষ। পরদিন রোববার দীর্ঘকালের মেলাটি গতবারের মতো মানুষ টানতে পারেনি। আমি যখন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছাই, তখন যা দেখেছি তাতে এটা বলা চলে যে মানুষ আগের মতো আসেনি।
২ ঘণ্টা আগেকতভাবে যে লুটপাটের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে, তার হিসাব কোনো জ্যোতিষী হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তিও করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০০ বছরের মাঠ কেটে পুকুর, উজাড় গাছও’ শিরোনামের খবরটি পড়লে...
২ ঘণ্টা আগেড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
১ দিন আগে