মো. ফজলুল করিম
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে স্নায়ুযুদ্ধের দিন শেষ হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য চলে সব জায়গায়। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া—সব জায়গায় আমেরিকানদের দাপট দেখেছে বিশ্ব। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায় ছিল ভিন্নতা। ট্রাম্পের এই শাসনামলে আবার রাশিয়াকে সামনে নিয়ে আসেন পুতিন। চীন–রাশিয়ার সখ্য এই সময়ে আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি বাড়ে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার এই যুদ্ধ আসলে একদিনে শুরু হয়নি। ২০১৪ সালে বন্দর নগরী ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূচনা হয়। এরপর ইউক্রেনের আরও দুটি অংশ রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে চলে যায়, যাদের ইতিমধ্যে দেশ হিসেবে রাশিয়া স্বীকৃতি দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া রাশিয়ার যুদ্ধ ইউক্রেন দখল করার চূড়ান্ত রূপ মাত্র।
কথা হলো, রাশিয়ার কাছে ইউক্রেন এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? ইউক্রেন হলো ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যকার বাফার স্টেট। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পশ্চিমঘেঁষা বর্তমান প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে ইউক্রেন ধীরে ধীরে পশ্চিমাদের দিকে হেলতে থাকে। ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা আমেরিকার কাছে ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে পরিগণিত হয়। এটি পুতিনের জন্য বড় হুমকি ছিল এই জন্য যে, ন্যাটো বা আমেরিকা এই ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়াকে সব সময় চাপে রাখার কৌশলে ছিল।
ইউক্রেনের দুই দিকে রাশিয়া, একদিকে বেলারুশ এবং অন্যদিকে পোল্যান্ড হওয়ায় এই দেশটি ইউরোপের কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ রাশিয়ার কাছে। কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার প্রভাব ধরে রাখতে ইউক্রেনকে বাগে আনা পুতিনের লক্ষ্য। আমার ধারণা রাশিয়া বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে সরিয়ে রাশিয়াপন্থী পুতুল সরকার বসাতেই এই যুদ্ধের আয়োজন করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায় জেলেনস্কির বক্তব্যেও।
ইউক্রেনের এই যুদ্ধ আসলে রাশিয়ার সক্ষমতা প্রমাণ করার যুদ্ধ। বাইডেনের আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করার যুদ্ধ। ট্রাম্পের আমলে বহির্বিশ্বে গর্তে ঢুকে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আসাকে চ্যালেঞ্জ করতেই এই যুদ্ধ। ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য না করলে রাশিয়া হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেন দখল করে নিতে পারে।
পুতিনের অভিলাষ খুব সহজেই অনুমেয় যে, পূর্ব ইউরোপে তারা আবার প্রভাব ফিরিয়ে আনতে চায়। পারলে আবার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে এই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু মাত্র।
যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি চায়, এখনো ঠিক স্পষ্ট নয়। কিছু অবরোধ ছাড়া তাদের দিক থেকে তেমন কিছু শোনা যায়নি। সংগত কারণেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মুখে হতাশার বাণী শোনা গেছে। পশ্চিমাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সামরিক সহায়তা না পেয়ে দৃশ্যত তারা হতাশ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো স্পষ্ট করে বলেছে তারা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না। হিটলার পোল্যান্ড দখলের পর ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যেভাবে জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তা হয়তো এবার দেখা যাবে না। বড় মানবিক বিপর্যয় এড়াতে বিশ্ব নেতাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে ইউক্রেনের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাবে, এটা দেখার বিষয়। তবে এই যুদ্ধে ইউক্রেনে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে, তা স্পষ্ট। ইউরোপে বিশেষ করে পোল্যান্ড ও জার্মানিকে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হবে। শুধু শরণার্থী নয়, অর্থনীতির ওপরও এর প্রভাব পড়বে। তেলের দাম থেকে শুরু করে বাণিজ্য সবকিছুতেই ভাটার টান দেখবে বিশ্ব।
রাশিয়ার এই ক্ষমতার দম্ভ পুরো ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। করোনার পর এই যুদ্ধের সূচনার জন্য এককভাবে রাশিয়া দায়ী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুতিন তার ক্ষমতার আওয়াজ দিতে যেভাবে বিশ্বকে হুমকির মধ্যে ফেলছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই যুদ্ধ ইউক্রেনের মানুষকে যেভাবে বড় মানবিক সংকটে ফেলে দিল, তার দায়ভার পুতিনকে নিতেই হবে।
লেখক: ড. মো. ফজলুল করিম, সহযোগী অধ্যাপক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভূতপূর্ব ফ্যাকাল্টি, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে স্নায়ুযুদ্ধের দিন শেষ হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য চলে সব জায়গায়। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া—সব জায়গায় আমেরিকানদের দাপট দেখেছে বিশ্ব। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায় ছিল ভিন্নতা। ট্রাম্পের এই শাসনামলে আবার রাশিয়াকে সামনে নিয়ে আসেন পুতিন। চীন–রাশিয়ার সখ্য এই সময়ে আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি বাড়ে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার এই যুদ্ধ আসলে একদিনে শুরু হয়নি। ২০১৪ সালে বন্দর নগরী ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূচনা হয়। এরপর ইউক্রেনের আরও দুটি অংশ রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে চলে যায়, যাদের ইতিমধ্যে দেশ হিসেবে রাশিয়া স্বীকৃতি দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া রাশিয়ার যুদ্ধ ইউক্রেন দখল করার চূড়ান্ত রূপ মাত্র।
কথা হলো, রাশিয়ার কাছে ইউক্রেন এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? ইউক্রেন হলো ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যকার বাফার স্টেট। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পশ্চিমঘেঁষা বর্তমান প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে ইউক্রেন ধীরে ধীরে পশ্চিমাদের দিকে হেলতে থাকে। ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা আমেরিকার কাছে ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে পরিগণিত হয়। এটি পুতিনের জন্য বড় হুমকি ছিল এই জন্য যে, ন্যাটো বা আমেরিকা এই ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়াকে সব সময় চাপে রাখার কৌশলে ছিল।
ইউক্রেনের দুই দিকে রাশিয়া, একদিকে বেলারুশ এবং অন্যদিকে পোল্যান্ড হওয়ায় এই দেশটি ইউরোপের কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ রাশিয়ার কাছে। কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার প্রভাব ধরে রাখতে ইউক্রেনকে বাগে আনা পুতিনের লক্ষ্য। আমার ধারণা রাশিয়া বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে সরিয়ে রাশিয়াপন্থী পুতুল সরকার বসাতেই এই যুদ্ধের আয়োজন করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায় জেলেনস্কির বক্তব্যেও।
ইউক্রেনের এই যুদ্ধ আসলে রাশিয়ার সক্ষমতা প্রমাণ করার যুদ্ধ। বাইডেনের আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করার যুদ্ধ। ট্রাম্পের আমলে বহির্বিশ্বে গর্তে ঢুকে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আসাকে চ্যালেঞ্জ করতেই এই যুদ্ধ। ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য না করলে রাশিয়া হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেন দখল করে নিতে পারে।
পুতিনের অভিলাষ খুব সহজেই অনুমেয় যে, পূর্ব ইউরোপে তারা আবার প্রভাব ফিরিয়ে আনতে চায়। পারলে আবার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে এই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু মাত্র।
যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি চায়, এখনো ঠিক স্পষ্ট নয়। কিছু অবরোধ ছাড়া তাদের দিক থেকে তেমন কিছু শোনা যায়নি। সংগত কারণেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মুখে হতাশার বাণী শোনা গেছে। পশ্চিমাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সামরিক সহায়তা না পেয়ে দৃশ্যত তারা হতাশ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো স্পষ্ট করে বলেছে তারা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না। হিটলার পোল্যান্ড দখলের পর ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যেভাবে জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তা হয়তো এবার দেখা যাবে না। বড় মানবিক বিপর্যয় এড়াতে বিশ্ব নেতাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে ইউক্রেনের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাবে, এটা দেখার বিষয়। তবে এই যুদ্ধে ইউক্রেনে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে, তা স্পষ্ট। ইউরোপে বিশেষ করে পোল্যান্ড ও জার্মানিকে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হবে। শুধু শরণার্থী নয়, অর্থনীতির ওপরও এর প্রভাব পড়বে। তেলের দাম থেকে শুরু করে বাণিজ্য সবকিছুতেই ভাটার টান দেখবে বিশ্ব।
রাশিয়ার এই ক্ষমতার দম্ভ পুরো ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। করোনার পর এই যুদ্ধের সূচনার জন্য এককভাবে রাশিয়া দায়ী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুতিন তার ক্ষমতার আওয়াজ দিতে যেভাবে বিশ্বকে হুমকির মধ্যে ফেলছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই যুদ্ধ ইউক্রেনের মানুষকে যেভাবে বড় মানবিক সংকটে ফেলে দিল, তার দায়ভার পুতিনকে নিতেই হবে।
লেখক: ড. মো. ফজলুল করিম, সহযোগী অধ্যাপক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভূতপূর্ব ফ্যাকাল্টি, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান
মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁকে সুবা বাংলার দেওয়ান করেছিলেন। নতুন দেওয়ান দেখলেন, বাংলার জমিদারেরা ঠিকভাবে খাজনা পরিশোধ করেন না। কী করে কর আদায় করা যায়, তা ভাবতে লাগলেন তিনি। প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন বাংলার সুবাদার বাদশাহের দৌহিত্র আজিমুশ্শান। তবে রাজস্ব আদায়ে সর্বেসর্বা ছিলেন
৬ ঘণ্টা আগেশিল্পভিত্তিক অর্থনীতি রচনা করতে গিয়ে আমরা নষ্ট করে চলেছি মাটির উর্বরতা শক্তি, নদীপ্রবাহ ও পানি, পরিবেশ ও প্রতিবেশ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা সংস্থার এক হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালে দেশে কৃষিজমি ছিল মোট জমির প্রায় ৮৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ সালে তা নেমে হয় ৭৫ শতাংশে। আর এ ১৫ বছরে তা নিশ্চয়ই আরও অনেকখানি কমে এসেছে।
৭ ঘণ্টা আগেআমি যখন সিডনি আসি, তখন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিশেষত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। একসময় যে আমাদের একটি বা একাধিক বইমেলার প্রয়োজন পড়তে পারে, সেটা দূরদর্শী ব্যতীত কারও মাথায় আসেনি। কিন্তু বাংলা, বাঙালি মানেই বিদ্রোহ আর দ্রোহের ভেতর দিয়ে নতুন কোনো ইতিহাস রচনা। সে ইতিহাস যে শুধু দেশের মাটিতে
৭ ঘণ্টা আগেগত বছরের জুলাইয়ের পর থেকেই ছাত্রসমাজকে দেখছি বিভিন্ন অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র বা তরুণসমাজ কোনো অন্যায়-অবিচার বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, এটাই স্বাভাবিক। কোটা সংস্কারের দাবি ছিল যৌক্তিক। এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে জুলাই মাসে দেশের ছাত্রসমাজ যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল, সেই আন্দো
৭ ঘণ্টা আগে