শাইখ সিরাজ
পারফিউম মেকার ইলিয়াস নতুন নতুন সুগন্ধি নিয়ে প্রায়ই আমার অফিসে আসেন। গত সপ্তাহে এলেন একটা খুশির খবর জানাতে। তিনি সুগন্ধি তৈরির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের একটা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। গত ঈদুল ফিতরের আগে তাঁর সুগন্ধি বানানোর প্রক্রিয়া নিয়ে একটা অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছিলাম। সেই অনুষ্ঠান দেখেই নাকি ওই প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়েছে। আমার এডিট প্যানেলে বসে ইলিয়াসের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। যশোরে আম চাষে তরুণের সাফল্য নিয়ে প্রতিবেদন এডিট চলছিল। এই দেখে ইলিয়াস বললেন, ‘আমারও তো চারটি আমবাগান আছে।’ আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘তাই নাকি!’ তিনি জানালেন, রাজশাহীর বাঘায় তাঁর চারটি আমবাগান থেকে প্রতিবছর ভালো একটা আয় হয়। কোনো ঝুটঝামেলা নেই। আম পাড়ার আগেই অনলাইনে বুকিং হয়ে যায়। শুধু ইলিয়াস নন, আম নিয়ে এমন বাণিজ্যে নেমেছেন অনেক তরুণ-তরুণী। এ বছর আমের মৌসুম শুরু হয়েছে।
আম—এই একটি শব্দেই যেন মিশে আছে বাঙালির আবেগ, স্মৃতি আর স্বাদ। বাংলার প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে আধুনিক কৃষিনির্ভর অর্থনীতি পর্যন্ত, আম এক অদ্ভুত ধারাবাহিকতায় আমাদের জীবন, সংস্কৃতি ও কৃষিতে গেঁথে আছে। শুধু স্বাদের জন্য নয়, আম আমাদের কাছে রীতিমতো এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
বিশ্ব ইতিহাস ঘেঁটেও আমের অস্তিত্ব ও মাহাত্ম্য খুঁজে পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ সালে যখন আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় পা রাখেন, তখনই তিনি প্রথম দেখেন আমের বাগান। ষষ্ঠ শতকে চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ যখন ভারতবর্ষে ভ্রমণে আসেন, তিনিও আমের স্বাদে মুগ্ধ হয়ে দেশে ফেরার আগে আম পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মোগল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙা এলাকায় এক লাখ আমগাছ রোপণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলেন সুবিশাল আমবাগান—যার ধারাবাহিকতা এখনো টিকে আছে।
বাংলাদেশের কৃষিপণ্য তালিকায় আম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ২৪ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে আম উৎপাদনে বিশ্বের সপ্তম স্থানে রয়েছে। এই বিপুল উৎপাদনের পরও রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই পিছিয়ে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে আমের চাহিদা বাড়ছেই। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৯ সালের মধ্যে বৈশ্বিক আম বাজারের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
দুঃখজনকভাবে, এত বড় বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রায় নগণ্য। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছিল ৭৮৮ টন আম। কিন্তু পরের বছরই সেই পরিমাণ কমে দাঁড়ায় মাত্র ২৮৮ টনে, যা ক্রমান্বয়ে আরও কমে প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। এই পতনের মূল কারণ শুধু বৈদেশিক নীতি বা প্রতিযোগিতা নয়—বরং আমাদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, মান নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি এবং একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীর অনিয়ম।
২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা চেইনশপ ওয়ালমার্টে বাংলাদেশি আমের প্রবেশ ঘটে। এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। ওই সময় এফএও, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের সহায়তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরার হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আম বাছাই করা হয় রপ্তানির জন্য। কৃষকেরা ব্যাগিং পদ্ধতি গ্রহণ করেন, মান নিয়ন্ত্রণে সরাসরি যুক্ত হন এবং এক আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ শুরু হয়।
কিন্তু এ আশার বেলুন হঠাৎ করেই চুপসে যায়। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দ্বীপ ইন্টারন্যাশনাল কয়েক টন আম পাঠানোর পরই রপ্তানিতে ব্যাঘাত ঘটে। সরকারের একটি কোয়ারেন্টাইন বিভাগ হঠাৎ করে এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, অন্য দেশে রপ্তানি করা এক চালানে ফলের মধ্যে ফ্রুট ফ্লাই থাকার অভিযোগে। এতে করে ওয়ালমার্টের সঙ্গে করা বড় চুক্তিটি বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যাঁরা ওই সময় রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁরা জানান—প্রধান সমস্যা ছিল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফিকেশনের অভাব। আন্তর্জাতিক হোলসেল বাজারে প্রবেশ করতে হলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মান নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট মানদণ্ড মানতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির জন্য ইইউ কমপ্লায়েন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই বিষয়টি অবহেলিত ছিল।
এরই মাঝে আশার আলো দেখিয়েছে কিছু বেসরকারি উদ্যোগ। মালিক সিডস কোম্পানি বছর দুই ধরে গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফায়েড আম উৎপাদন করে দেখিয়েছে, বাংলাদেশও মানসম্পন্ন আম উৎপাদনে সক্ষম। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য গ্যাপ সার্টিফিকেশন এখন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।
এদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও আমের বিপণনে এসেছে বড় পরিবর্তন। করোনাকালে সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় যখন কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তখন কিছু তরুণ উদ্যোক্তা সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আম বিক্রির ব্যবস্থা করেন। ‘আমের ঝুড়ি’, ‘ফজলি ডটকম’, ‘ম্যাঙ্গো বাজার’—নানান নামে গড়ে ওঠা এসব উদ্যোগ কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করে। এতে মধ্যস্বত্বভোগী ও বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমে আসে এবং কৃষক পান ন্যায্য দাম।
এই অনলাইন বিপণনের সফলতা আম চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শুধু রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জ নয়, এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে উন্নত জাতের আমের বাগান। কৃষিশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে আম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণে। নাটোর অঞ্চলের টক জাতের আম, যা একসময় দাম না পেয়ে নষ্ট হতো, তা দিয়েই এখন জ্যাম, জুস, চাটনি ইত্যাদি পণ্য তৈরি হচ্ছে।
এখানে প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ খান চৌধুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি প্রথমবারের মতো শিল্পপর্যায়ে আম প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করেন। ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে সে সময় এই উদ্যোগের খবর তুলে ধরি। আজ সেই পথ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা।
সরকার আশা করছে, ২০২৫ সালেই অন্তত ৪ হাজার টন আম রপ্তানি সম্ভব হবে। আর এই লক্ষ্য পূরণে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। মানসম্পন্ন উৎপাদন, সঠিক সময়ে সংগ্রহ, আধুনিক প্যাকেজিং ও সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থার পাশাপাশি চাই আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা। কৃষককে সংগঠিত করে দিতে হবে গ্যাপ সার্টিফিকেশন, গড়ে তুলতে হবে রপ্তানিমুখী সহায়ক অবকাঠামো।
আমের রসে যেমন আছে মিষ্টি স্বাদ, তেমনি এর রপ্তানি সম্ভাবনায় রয়েছে আমাদের কৃষির জন্য এক মধুর ভবিষ্যৎ। সময় এসেছে আমকে শুধু একটি মৌসুমি ফল হিসেবে না দেখে একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য হিসেবে গড়ে তোলার। আমাদের আম যদি বিদেশি বাজার জয় করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের কৃষিও পৌঁছাবে এক নতুন উচ্চতায়।
এই স্বপ্ন শুধু কৃষকের নয়, আমাদের সবার।
পারফিউম মেকার ইলিয়াস নতুন নতুন সুগন্ধি নিয়ে প্রায়ই আমার অফিসে আসেন। গত সপ্তাহে এলেন একটা খুশির খবর জানাতে। তিনি সুগন্ধি তৈরির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের একটা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। গত ঈদুল ফিতরের আগে তাঁর সুগন্ধি বানানোর প্রক্রিয়া নিয়ে একটা অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছিলাম। সেই অনুষ্ঠান দেখেই নাকি ওই প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়েছে। আমার এডিট প্যানেলে বসে ইলিয়াসের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। যশোরে আম চাষে তরুণের সাফল্য নিয়ে প্রতিবেদন এডিট চলছিল। এই দেখে ইলিয়াস বললেন, ‘আমারও তো চারটি আমবাগান আছে।’ আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘তাই নাকি!’ তিনি জানালেন, রাজশাহীর বাঘায় তাঁর চারটি আমবাগান থেকে প্রতিবছর ভালো একটা আয় হয়। কোনো ঝুটঝামেলা নেই। আম পাড়ার আগেই অনলাইনে বুকিং হয়ে যায়। শুধু ইলিয়াস নন, আম নিয়ে এমন বাণিজ্যে নেমেছেন অনেক তরুণ-তরুণী। এ বছর আমের মৌসুম শুরু হয়েছে।
আম—এই একটি শব্দেই যেন মিশে আছে বাঙালির আবেগ, স্মৃতি আর স্বাদ। বাংলার প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে আধুনিক কৃষিনির্ভর অর্থনীতি পর্যন্ত, আম এক অদ্ভুত ধারাবাহিকতায় আমাদের জীবন, সংস্কৃতি ও কৃষিতে গেঁথে আছে। শুধু স্বাদের জন্য নয়, আম আমাদের কাছে রীতিমতো এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
বিশ্ব ইতিহাস ঘেঁটেও আমের অস্তিত্ব ও মাহাত্ম্য খুঁজে পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ সালে যখন আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় পা রাখেন, তখনই তিনি প্রথম দেখেন আমের বাগান। ষষ্ঠ শতকে চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ যখন ভারতবর্ষে ভ্রমণে আসেন, তিনিও আমের স্বাদে মুগ্ধ হয়ে দেশে ফেরার আগে আম পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মোগল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙা এলাকায় এক লাখ আমগাছ রোপণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলেন সুবিশাল আমবাগান—যার ধারাবাহিকতা এখনো টিকে আছে।
বাংলাদেশের কৃষিপণ্য তালিকায় আম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ২৪ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে আম উৎপাদনে বিশ্বের সপ্তম স্থানে রয়েছে। এই বিপুল উৎপাদনের পরও রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই পিছিয়ে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে আমের চাহিদা বাড়ছেই। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৯ সালের মধ্যে বৈশ্বিক আম বাজারের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
দুঃখজনকভাবে, এত বড় বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রায় নগণ্য। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছিল ৭৮৮ টন আম। কিন্তু পরের বছরই সেই পরিমাণ কমে দাঁড়ায় মাত্র ২৮৮ টনে, যা ক্রমান্বয়ে আরও কমে প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। এই পতনের মূল কারণ শুধু বৈদেশিক নীতি বা প্রতিযোগিতা নয়—বরং আমাদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, মান নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি এবং একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীর অনিয়ম।
২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা চেইনশপ ওয়ালমার্টে বাংলাদেশি আমের প্রবেশ ঘটে। এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। ওই সময় এফএও, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের সহায়তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরার হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আম বাছাই করা হয় রপ্তানির জন্য। কৃষকেরা ব্যাগিং পদ্ধতি গ্রহণ করেন, মান নিয়ন্ত্রণে সরাসরি যুক্ত হন এবং এক আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ শুরু হয়।
কিন্তু এ আশার বেলুন হঠাৎ করেই চুপসে যায়। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দ্বীপ ইন্টারন্যাশনাল কয়েক টন আম পাঠানোর পরই রপ্তানিতে ব্যাঘাত ঘটে। সরকারের একটি কোয়ারেন্টাইন বিভাগ হঠাৎ করে এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, অন্য দেশে রপ্তানি করা এক চালানে ফলের মধ্যে ফ্রুট ফ্লাই থাকার অভিযোগে। এতে করে ওয়ালমার্টের সঙ্গে করা বড় চুক্তিটি বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যাঁরা ওই সময় রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁরা জানান—প্রধান সমস্যা ছিল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফিকেশনের অভাব। আন্তর্জাতিক হোলসেল বাজারে প্রবেশ করতে হলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মান নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট মানদণ্ড মানতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির জন্য ইইউ কমপ্লায়েন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই বিষয়টি অবহেলিত ছিল।
এরই মাঝে আশার আলো দেখিয়েছে কিছু বেসরকারি উদ্যোগ। মালিক সিডস কোম্পানি বছর দুই ধরে গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফায়েড আম উৎপাদন করে দেখিয়েছে, বাংলাদেশও মানসম্পন্ন আম উৎপাদনে সক্ষম। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য গ্যাপ সার্টিফিকেশন এখন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।
এদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও আমের বিপণনে এসেছে বড় পরিবর্তন। করোনাকালে সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় যখন কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তখন কিছু তরুণ উদ্যোক্তা সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আম বিক্রির ব্যবস্থা করেন। ‘আমের ঝুড়ি’, ‘ফজলি ডটকম’, ‘ম্যাঙ্গো বাজার’—নানান নামে গড়ে ওঠা এসব উদ্যোগ কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করে। এতে মধ্যস্বত্বভোগী ও বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমে আসে এবং কৃষক পান ন্যায্য দাম।
এই অনলাইন বিপণনের সফলতা আম চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শুধু রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জ নয়, এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে উন্নত জাতের আমের বাগান। কৃষিশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে আম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণে। নাটোর অঞ্চলের টক জাতের আম, যা একসময় দাম না পেয়ে নষ্ট হতো, তা দিয়েই এখন জ্যাম, জুস, চাটনি ইত্যাদি পণ্য তৈরি হচ্ছে।
এখানে প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ খান চৌধুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি প্রথমবারের মতো শিল্পপর্যায়ে আম প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করেন। ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে সে সময় এই উদ্যোগের খবর তুলে ধরি। আজ সেই পথ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা।
সরকার আশা করছে, ২০২৫ সালেই অন্তত ৪ হাজার টন আম রপ্তানি সম্ভব হবে। আর এই লক্ষ্য পূরণে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। মানসম্পন্ন উৎপাদন, সঠিক সময়ে সংগ্রহ, আধুনিক প্যাকেজিং ও সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থার পাশাপাশি চাই আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা। কৃষককে সংগঠিত করে দিতে হবে গ্যাপ সার্টিফিকেশন, গড়ে তুলতে হবে রপ্তানিমুখী সহায়ক অবকাঠামো।
আমের রসে যেমন আছে মিষ্টি স্বাদ, তেমনি এর রপ্তানি সম্ভাবনায় রয়েছে আমাদের কৃষির জন্য এক মধুর ভবিষ্যৎ। সময় এসেছে আমকে শুধু একটি মৌসুমি ফল হিসেবে না দেখে একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য হিসেবে গড়ে তোলার। আমাদের আম যদি বিদেশি বাজার জয় করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের কৃষিও পৌঁছাবে এক নতুন উচ্চতায়।
এই স্বপ্ন শুধু কৃষকের নয়, আমাদের সবার।
১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তা কি খুব অপ্রত্যাশিত ছিল? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘গোপালগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। কিন্তু ঘটনা এত বড় হবে, সে তথ্য ছিল না।’ অর্থাৎ ছোটখাটো ঘটনা ঘটবে, সেটা সরকারের জানা ছিল।
১৭ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি ফেনীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। গত বছরও ফেনী, নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বন্যার পানি যত না ভয়ংকর, তার চেয়েও বেশি বিপদ হয় নিরাপদ আশ্রয় আর খাদ্যসংকট নিয়ে।
১৭ ঘণ্টা আগেখুলনা ওয়াসার নকশাকারক পদে আছেন জি এম আব্দুল গফফার। তাঁর নিয়োগ হয়েছিল পাম্প অপারেটর পদে। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি প্রভাব খাটিয়ে পাম্প থেকে প্রধান কার্যালয়ে চলে আসেন।
১৭ ঘণ্টা আগেআবারও বন্যা, আবারও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশের পূর্বাঞ্চলে, বিশেষত ফেনী অঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে একাধিক নদীর প্লাবন এবং সেই সঙ্গে অবিরাম বর্ষণের ফলে উত্তরবঙ্গও বন্যা প্লাবিত হতে পারে।
২ দিন আগে