মো. হাবিবুর রহমান
ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির পক্ষ থেকে মতামত দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রস্তাবনা। সেটি পুরোপুরি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকটা পুনর্লিখনের মতো। সেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা হয়েছে। এটা সমুচিত বলে বিএনপি মনে করে না।’
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সব ইস্যুতে যাঁরা একমত পোষণ করেন না, এমন অনেকেই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন বলেই আমার বিশ্বাস। সত্যি তো, একাত্তরের গৌরবগাথার সঙ্গে আর কোনো আন্দোলন-অভ্যুত্থানকে এক কাতারে ফেলা অনুচিত। স্বাধীনতার চেয়ে বড় অর্জন বাঙালির আর কিছু নেই, হতে পারে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে ‘ফ্যাসিবাদ’, ‘গণতন্ত্র’, ‘গণ-অভ্যুত্থান’—এই শব্দগুলো এখন খুব সহজেই ব্যবহৃত হয়। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ দেড় দশক ধরে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবার গণতন্ত্রের ধারায় ফেরার পথ খুলেছে। কিন্তু কেউ কেউ অবশ্য চুপেচাপে প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গণতন্ত্রের পথ কি সত্যিই সুগম হয়েছে? নাকি এই পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপকৌশলও চলছে? একাত্তর ও চব্বিশকে এক কাতারে ফেলে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর এই অপচেষ্টা মেনে নেওয়ার মতো নয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই উলটপুরাণও কি গভীর পর্যালোচনার দাবি রাখে না?
প্রথমত, ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান এক নয়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি দখলদার-হানাদার শক্তির বিরুদ্ধে সর্বজনীন জাতীয় লড়াই, যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল একটি বিদ্যমান সরকারবিরোধী আন্দোলন, যা শেষ পর্যন্ত ওই সরকারের পতন ও ক্ষমতার পালাবদল ঘটিয়েছে। একটিতে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, অন্যটিতে হয়েছে সরকারের পরিবর্তন। এই দুটি বিষয় কখনো এক বা সমপর্যায়ের হতে পারে না। যাঁরা চব্বিশের বিজয়কে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ বলছেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসের আত্মিক ও রাজনৈতিক বিকৃতি ঘটাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামল নিয়ে সমালোচনা অবশ্যই হবে। সে সময় ফ্যাসিবাদী প্রবণতা অবশ্যই প্রবল হয়ে উঠেছিল। ফ্যাসিবাদ হলো একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে ভিন্নমত দমন করা হয়, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয় এবং একক নেতার পূজা করা হয়। আওয়ামী লীগের শাসনে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করা হয়েছে, গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে—এগুলো গণতান্ত্রিক শাসনের সঙ্গে যায় না, তাই আওয়ামী লীগের শাসনকে ফ্যাসিবাদ বলে গালমন্দ করা যেতেই পারে। তারা অবশ্যই নিন্দনীয় কাজ করেছে। কিন্তু যাঁরা আওয়ামী শাসনামলের নিন্দা করছেন তাঁরা কি বর্তমান পরিস্থিতিকে বহুত্ববাদ বা গণতন্ত্রের প্রসার বলবেন? নাকি আমরা আসলে একটি চক্রের মধ্যে পড়ে গেছি, যেখানে একপক্ষ ক্ষমতায় থাকলে তাকে স্বৈরতন্ত্র বলা হবে, আর অন্যপক্ষ ক্ষমতায় আসলে সেটিকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে প্রচার করা হবে?
একাত্তর আর চব্বিশকে একই কাতারে ফেলা যেমন বিকৃত ইতিহাসের লক্ষণ, তেমনি একপক্ষের একনায়কতন্ত্রকে ‘ফ্যাসিবাদ’ এবং অন্যপক্ষের ‘ইচ্ছাতন্ত্র’কে গণতন্ত্র বলা কি রাজনৈতিক ভণ্ডামি নয়? আওয়ামী লীগের শাসনকালকে একনায়কতন্ত্র বলে প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে পক্ষপাতমুক্তভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের সাত মাসের শাসনকালে ইতিবাচক ধারার চেয়ে নেতিবাচক প্রবণতাই কি বেশি দেখা যাচ্ছে না? কেউ কেউ তাই মনে করছেন চিরাচরিত ক্ষমতার রাজনীতির দুষ্টচক্রই যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতার পালাবদল মানেই নতুন শক্তির আগমন এবং পুরোনো শক্তির দমন। এভাবেই একদল ফ্যাসিবাদী হয়ে যায়, আরেক দল গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা হয়ে ওঠে—যতক্ষণ না তারা নিজেরাই ক্ষমতায় আসে। একাত্তর ও চব্বিশকে এক কাতারে আনার এই প্রবণতা মূলত এই দুষ্টচক্রেরই বহিঃপ্রকাশ, যেখানে ইতিহাসকে হাতিয়ার বানিয়ে ক্ষমতাকে জায়েজ করা হয়। অথচ প্রকৃত গণতন্ত্র মানে তো জনগণের মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার, নির্বাচন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান। কিন্তু বাংলাদেশ কি সেই পথে হাঁটছে? নাকি ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার আরেকটি রূপ দেখছে?
বর্তমান সরকার ও তাদের সমর্থকেরা বলছেন, তাঁরা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা কী বলছে? ভিন্নমত প্রকাশ ও প্রচারের অবাধ সুযোগ কি দেওয়া হচ্ছে? সংবাদপত্র কি মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে? দেশে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দল কি সরকারের কাছ থেকে সমান সুযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে? নতুন গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ আনুকূল্য পাচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী শাসনামলে যাঁরা অন্যায় করেছেন, লুটপাট, অর্থ পাচার, হত্যা, গুমসহ নিষ্ঠুরতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁদের অবশ্যই বিচার হতে হবে, শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগ করার কারণে নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা হলে সেটা মানবিক ও গণতান্ত্রিক আচরণ বলে মনে হবে কি?
একাত্তর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লড়াই ছিল, চব্বিশ ছিল রাজনৈতিক পরিবর্তনের অধ্যায়। এই দুই সময়কে এক কাতারে এনে বর্তমান শাসনব্যবস্থাকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা ইতিহাসের বিকৃতি এবং রাজনৈতিক চাতুরী ছাড়া কিছু নয়। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা মানে শুধু ক্ষমতা পরিবর্তন বা শাসকদের মুখ বদলানো নয়, বরং শাসনের ধরন ও গুণগত পরিবর্তন করা। অন্যথায়, আমরা শুধু এক শাসকগোষ্ঠী সরিয়ে আরেক শাসকগোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিচ্ছি আর ইতিহাসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করছি।
লেখক: উন্নয়ন ও মানবাধিকারকর্মী
ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির পক্ষ থেকে মতামত দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রস্তাবনা। সেটি পুরোপুরি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকটা পুনর্লিখনের মতো। সেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা হয়েছে। এটা সমুচিত বলে বিএনপি মনে করে না।’
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সব ইস্যুতে যাঁরা একমত পোষণ করেন না, এমন অনেকেই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন বলেই আমার বিশ্বাস। সত্যি তো, একাত্তরের গৌরবগাথার সঙ্গে আর কোনো আন্দোলন-অভ্যুত্থানকে এক কাতারে ফেলা অনুচিত। স্বাধীনতার চেয়ে বড় অর্জন বাঙালির আর কিছু নেই, হতে পারে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে ‘ফ্যাসিবাদ’, ‘গণতন্ত্র’, ‘গণ-অভ্যুত্থান’—এই শব্দগুলো এখন খুব সহজেই ব্যবহৃত হয়। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ দেড় দশক ধরে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবার গণতন্ত্রের ধারায় ফেরার পথ খুলেছে। কিন্তু কেউ কেউ অবশ্য চুপেচাপে প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গণতন্ত্রের পথ কি সত্যিই সুগম হয়েছে? নাকি এই পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপকৌশলও চলছে? একাত্তর ও চব্বিশকে এক কাতারে ফেলে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর এই অপচেষ্টা মেনে নেওয়ার মতো নয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই উলটপুরাণও কি গভীর পর্যালোচনার দাবি রাখে না?
প্রথমত, ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান এক নয়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি দখলদার-হানাদার শক্তির বিরুদ্ধে সর্বজনীন জাতীয় লড়াই, যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল একটি বিদ্যমান সরকারবিরোধী আন্দোলন, যা শেষ পর্যন্ত ওই সরকারের পতন ও ক্ষমতার পালাবদল ঘটিয়েছে। একটিতে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, অন্যটিতে হয়েছে সরকারের পরিবর্তন। এই দুটি বিষয় কখনো এক বা সমপর্যায়ের হতে পারে না। যাঁরা চব্বিশের বিজয়কে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ বলছেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসের আত্মিক ও রাজনৈতিক বিকৃতি ঘটাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামল নিয়ে সমালোচনা অবশ্যই হবে। সে সময় ফ্যাসিবাদী প্রবণতা অবশ্যই প্রবল হয়ে উঠেছিল। ফ্যাসিবাদ হলো একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে ভিন্নমত দমন করা হয়, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয় এবং একক নেতার পূজা করা হয়। আওয়ামী লীগের শাসনে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করা হয়েছে, গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে—এগুলো গণতান্ত্রিক শাসনের সঙ্গে যায় না, তাই আওয়ামী লীগের শাসনকে ফ্যাসিবাদ বলে গালমন্দ করা যেতেই পারে। তারা অবশ্যই নিন্দনীয় কাজ করেছে। কিন্তু যাঁরা আওয়ামী শাসনামলের নিন্দা করছেন তাঁরা কি বর্তমান পরিস্থিতিকে বহুত্ববাদ বা গণতন্ত্রের প্রসার বলবেন? নাকি আমরা আসলে একটি চক্রের মধ্যে পড়ে গেছি, যেখানে একপক্ষ ক্ষমতায় থাকলে তাকে স্বৈরতন্ত্র বলা হবে, আর অন্যপক্ষ ক্ষমতায় আসলে সেটিকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে প্রচার করা হবে?
একাত্তর আর চব্বিশকে একই কাতারে ফেলা যেমন বিকৃত ইতিহাসের লক্ষণ, তেমনি একপক্ষের একনায়কতন্ত্রকে ‘ফ্যাসিবাদ’ এবং অন্যপক্ষের ‘ইচ্ছাতন্ত্র’কে গণতন্ত্র বলা কি রাজনৈতিক ভণ্ডামি নয়? আওয়ামী লীগের শাসনকালকে একনায়কতন্ত্র বলে প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে পক্ষপাতমুক্তভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের সাত মাসের শাসনকালে ইতিবাচক ধারার চেয়ে নেতিবাচক প্রবণতাই কি বেশি দেখা যাচ্ছে না? কেউ কেউ তাই মনে করছেন চিরাচরিত ক্ষমতার রাজনীতির দুষ্টচক্রই যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতার পালাবদল মানেই নতুন শক্তির আগমন এবং পুরোনো শক্তির দমন। এভাবেই একদল ফ্যাসিবাদী হয়ে যায়, আরেক দল গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা হয়ে ওঠে—যতক্ষণ না তারা নিজেরাই ক্ষমতায় আসে। একাত্তর ও চব্বিশকে এক কাতারে আনার এই প্রবণতা মূলত এই দুষ্টচক্রেরই বহিঃপ্রকাশ, যেখানে ইতিহাসকে হাতিয়ার বানিয়ে ক্ষমতাকে জায়েজ করা হয়। অথচ প্রকৃত গণতন্ত্র মানে তো জনগণের মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার, নির্বাচন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান। কিন্তু বাংলাদেশ কি সেই পথে হাঁটছে? নাকি ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার আরেকটি রূপ দেখছে?
বর্তমান সরকার ও তাদের সমর্থকেরা বলছেন, তাঁরা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা কী বলছে? ভিন্নমত প্রকাশ ও প্রচারের অবাধ সুযোগ কি দেওয়া হচ্ছে? সংবাদপত্র কি মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে? দেশে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দল কি সরকারের কাছ থেকে সমান সুযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে? নতুন গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ আনুকূল্য পাচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী শাসনামলে যাঁরা অন্যায় করেছেন, লুটপাট, অর্থ পাচার, হত্যা, গুমসহ নিষ্ঠুরতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁদের অবশ্যই বিচার হতে হবে, শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগ করার কারণে নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা হলে সেটা মানবিক ও গণতান্ত্রিক আচরণ বলে মনে হবে কি?
একাত্তর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লড়াই ছিল, চব্বিশ ছিল রাজনৈতিক পরিবর্তনের অধ্যায়। এই দুই সময়কে এক কাতারে এনে বর্তমান শাসনব্যবস্থাকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা ইতিহাসের বিকৃতি এবং রাজনৈতিক চাতুরী ছাড়া কিছু নয়। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা মানে শুধু ক্ষমতা পরিবর্তন বা শাসকদের মুখ বদলানো নয়, বরং শাসনের ধরন ও গুণগত পরিবর্তন করা। অন্যথায়, আমরা শুধু এক শাসকগোষ্ঠী সরিয়ে আরেক শাসকগোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিচ্ছি আর ইতিহাসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করছি।
লেখক: উন্নয়ন ও মানবাধিকারকর্মী
এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামের নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের দু’জন প্রথম সারির সংগঠক তাসনিম জারা ও সারজিস আলমের মধ্যে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে কোনোভাবেই কেবল ব্যক্তি দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।
৩ ঘণ্টা আগেএকাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষদের আত্মকথনগুলো বেশ উপভোগ্য। এরা সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং দোষ চাপিয়েছেন অন্যের ঘাড়ে। হামিদুর রহমান কমিশন প্রধান অপরাধী হিসেবে ইয়াহিয়া খানকে চিহ্নিত করেছে বটে, তবে সর্বাধিক নিন্দা...
৯ ঘণ্টা আগেআমি এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে সব মানুষ সমান সুযোগ পাবে, অন্যায়-অবিচার থাকবে না, সবাই ন্যায্য অধিকার পাবে। ধনী-গরিবের মধ্যে বিশাল পার্থক্য থাকবে না, প্রত্যেকে তার প্রাপ্য সম্মান পাবে। উন্নত দেশ মানে শুধু বিল্ডিং, রাস্তা বা প্রযুক্তির
৯ ঘণ্টা আগে২৬ মার্চ বাংলাদেশের ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস। দিনটি এক গৌরবময় অধ্যায়ের স্মারক, যেখানে বাঙালি জাতির বীরত্ব, সাহসিকতা, আত্মত্যাগ ও বিজয়ের অমর কাহিনি জড়িয়ে আছে। একাত্তরের রক্তঝরা পথ বেয়ে যে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল, তা আজ পাঁচ দশকের বেশি সময়...
১০ ঘণ্টা আগে