ড. মঞ্জুরে খোদা
২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের দিনটি বিশ্বরাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে আলাদা হয়ে থাকবে। নির্বাচনী প্রচারাভিযান ও নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি তাঁর নানা নীতির কারণে আলোচিত হয়ে আসছিলেন। গত মেয়াদে যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন, তখনো বিভিন্ন কারণে আলোচিত ছিলেন। তবে এবার সে মাত্রাকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন।
কেন তিনি এবার অধিক আলোচনায়, সেটার কারণ অবশ্য বহুবিধ। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে তাঁর আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক নীতি। শুধু অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও তা আলোচিত। ক্ষমতা গ্রহণ করেই তিনি শখানেক বিলে স্বাক্ষর করে তাঁর ঘোষিত প্রতিশ্রুতির পথে হাঁটা শুরু করেছেন। এ বিষয়ে তাঁকে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয়নি।
তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। যেমন মিত্র হিসেবে পরিচিত নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রণ না পেলেও প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত সি চিন পিং আমন্ত্রণ পেয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনিক অলিগার্করা কেউ আমন্ত্রণ থেকে বাদ পড়েননি। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার পাশেই শীর্ষ তিন ধনী টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জেফ বেজোস, মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের বিলিয়নিয়ার সিইও, অ্যাপলের সিইও টিম কুকও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নতুন প্রশাসনের জন্য বেশ কয়েকজন বিলিয়নিয়ারকে বেছে নিয়েছেন। তাঁর প্রশাসনে কমপক্ষে ১৩ জন বিলিয়নিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। ট্রাম্প নিজেও একজন বিলিয়নিয়ার। এই প্রথম মার্কিন সরকারের প্রশাসনে সবচেয়ে অধিকসংখ্যক ধনী ব্যক্তির প্রাধান্য থাকবে ও তাঁদের প্রশাসনে পরিণত হবে। যেমন তাঁর মন্ত্রিসভায় ট্রেজারি সেক্রেটারি হিসেবে আছেন বিলিয়নিয়ার হেজ ফান্ড ম্যানেজার স্কট বেসেন্ট, শিক্ষাসচিব হিসেবে বিলিয়নিয়ার লিন্ডা ম্যাকমোহন, বাণিজ্যসচিব হিসেবে বিলিয়নিয়ার হাওয়ার্ড লুটনিক, হোয়াইট হাউস এআই হিসেবে সিলিকন ভ্যালির ডেভিড স্যাক্স। এই অলিগার্করা তাঁর নির্বাচনী তহবিলে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দান করেছেন।
শপথ নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প কলমের এক খোঁচায় ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় সাজাপ্রাপ্ত প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তিকে সাধারণ ক্ষমা করেন। নির্বাহী আদেশে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেন। অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেন। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকতার বিধান বাতিল করেন। নির্বাহী আদেশে জলবায়ু-সংকট নিরসনে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকেও বের হয়ে আসার ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন।
বাণিজ্য ক্ষেত্রে ট্রাম্প আগে থেকেই আমদানি করা পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে ক্ষমতা গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক এই বিষয়ে ঘোষণা না এলেও বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও টানাপোড়েন তৈরি হয় এবং মুদ্রাবাজারেও তার প্রভাব পড়ে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও টানাপোড়েনের পর তিনি তা স্থগিত করেন। চীনসহ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের সঙ্গেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
ট্রাম্প পানামা খালের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আবারও উল্লেখ করেন এবং মার্কিন নিরাপত্তার অজুহাতে তা দখল করতে চান। সন্ত্রাসের মদদদাতা দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম বাদ দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চলছিল, তাকে রহিত করেন। মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর করবেন। গ্রিনল্যান্ড নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে শক্তি প্রয়োগেও পিছপা হবেন না বলে হুংকার দিয়েছেন। কানাডাকেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম প্রদেশ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছিলেন। সেটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা-ও এখন বিশ্বরাজনীতির একটি আলোচিত বিষয়। যতটুকু জানা যায়, এই বিষয়ে তিনি উভয় দেশের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
ট্রাম্প মনে করেন, তাঁর শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শরণার্থী ও অভিবাসীদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে দেশটির অবস্থা আমূল বদলে দিতে চান। আমেরিকাকে বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সক্ষমতা ও আঞ্চলিক প্রভাবের দিক থেকে সবার ওপরে রাখতে চান। ট্রাম্পের এই নীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। তিনি স্পষ্টত বলেছেন, তিনি চীনের অর্থনীতি, বাণিজ্যিক প্রভাব ও সম্প্রসারণকে ঠেকাতে চান। সে ক্ষেত্রে তিনি ভারতকে তাঁর সহযোগী মনে করেন, যদিও আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের সেই প্রভাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প-ঝড়ে ইতিমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি ভালোভাবেই দুলে উঠেছে। ট্রাম্প তাঁর অভিষেকের ভাষণে বলেন, আমেরিকার পতনের দিন শেষ, এখন থেকে সুবর্ণ যুগের শুভসূচনা শুরু। আসলেই কি তাই? তাঁর উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সম্প্রসারণ নীতির ফলাফল কি সুখকর হবে? জার্মানির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর গ্রিন পার্টির নেতা জোসকা ফিশারের মন্তব্য কিন্তু বলে ভিন্ন কথা, ‘যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর কোটিপতি মিত্ররা মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কর্তৃত্ববাদী অভিজাততন্ত্রে রূপান্তরিত করতে সফল হন, তাহলে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।’ ট্রাম্প নিজে একজন ব্যবসায়ী, তিনি রাজনীতিকে লেনদেন ও বাণিজ্যিক সুবিধা ও স্বার্থের অনুকূল হিসেবে দেখেন।
ট্রাম্প উচ্চ হারে চীনের পণ্যে কর আরোপের কথা বলেছেন। সেটা হলে বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। চীনের পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র অধিক শুল্ক আরোপ করলে ক্রেতারা অধিক অর্থে তাদের পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী হবে না। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কম দামের পণ্য আমদানির বিকল্প বাজারের সন্ধান করবেন। সে ক্ষেত্রে সুলভ শ্রমের বাজার বাংলাদেশ ছাড়া হয়তো তাঁদের সামনে বিকল্প থাকবে না, এটাই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারের একটি বড় সুযোগ তৈরি করবে। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বে চীনের পরেই বাংলাদেশের স্থান। কিন্তু বাংলাদেশ সেই সুযোগ গ্রহণ করতে চাইলে তাকে শিল্প খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিংব্যবস্থা, বিনিয়োগ পরিবেশ ও দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি করতে হবে। শুধু তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে নয়, কৃষিপণ্য, চা, চামড়া, ওষুধ, প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বহুবিধ সুযোগ বাড়তে পারে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের প্রায় ২৫ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক প্রদান করেই মার্কিন বাজারে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
এই সুযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সে ক্ষেত্রে এই সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে। কেননা, দেশে এখন কোনো নির্বাচিত স্থিতিশীল সরকার নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো ধরনের বড় বিনিয়োগ ও চুক্তির ক্ষেত্রে বিবেচনা করবে। সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি সেখানকার মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই মনে করে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন সুষ্ঠু গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায়ের সূচনায় সহায়ক হবে। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে পরিবর্তন ও ট্রাম্পের নয়া বাণিজ্যনীতির সুযোগকে গ্রহণ করতে হলে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের দিনটি বিশ্বরাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে আলাদা হয়ে থাকবে। নির্বাচনী প্রচারাভিযান ও নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি তাঁর নানা নীতির কারণে আলোচিত হয়ে আসছিলেন। গত মেয়াদে যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন, তখনো বিভিন্ন কারণে আলোচিত ছিলেন। তবে এবার সে মাত্রাকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন।
কেন তিনি এবার অধিক আলোচনায়, সেটার কারণ অবশ্য বহুবিধ। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে তাঁর আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক নীতি। শুধু অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও তা আলোচিত। ক্ষমতা গ্রহণ করেই তিনি শখানেক বিলে স্বাক্ষর করে তাঁর ঘোষিত প্রতিশ্রুতির পথে হাঁটা শুরু করেছেন। এ বিষয়ে তাঁকে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয়নি।
তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। যেমন মিত্র হিসেবে পরিচিত নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রণ না পেলেও প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত সি চিন পিং আমন্ত্রণ পেয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনিক অলিগার্করা কেউ আমন্ত্রণ থেকে বাদ পড়েননি। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার পাশেই শীর্ষ তিন ধনী টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জেফ বেজোস, মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের বিলিয়নিয়ার সিইও, অ্যাপলের সিইও টিম কুকও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নতুন প্রশাসনের জন্য বেশ কয়েকজন বিলিয়নিয়ারকে বেছে নিয়েছেন। তাঁর প্রশাসনে কমপক্ষে ১৩ জন বিলিয়নিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। ট্রাম্প নিজেও একজন বিলিয়নিয়ার। এই প্রথম মার্কিন সরকারের প্রশাসনে সবচেয়ে অধিকসংখ্যক ধনী ব্যক্তির প্রাধান্য থাকবে ও তাঁদের প্রশাসনে পরিণত হবে। যেমন তাঁর মন্ত্রিসভায় ট্রেজারি সেক্রেটারি হিসেবে আছেন বিলিয়নিয়ার হেজ ফান্ড ম্যানেজার স্কট বেসেন্ট, শিক্ষাসচিব হিসেবে বিলিয়নিয়ার লিন্ডা ম্যাকমোহন, বাণিজ্যসচিব হিসেবে বিলিয়নিয়ার হাওয়ার্ড লুটনিক, হোয়াইট হাউস এআই হিসেবে সিলিকন ভ্যালির ডেভিড স্যাক্স। এই অলিগার্করা তাঁর নির্বাচনী তহবিলে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দান করেছেন।
শপথ নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প কলমের এক খোঁচায় ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় সাজাপ্রাপ্ত প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তিকে সাধারণ ক্ষমা করেন। নির্বাহী আদেশে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেন। অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেন। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকতার বিধান বাতিল করেন। নির্বাহী আদেশে জলবায়ু-সংকট নিরসনে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকেও বের হয়ে আসার ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন।
বাণিজ্য ক্ষেত্রে ট্রাম্প আগে থেকেই আমদানি করা পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে ক্ষমতা গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক এই বিষয়ে ঘোষণা না এলেও বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও টানাপোড়েন তৈরি হয় এবং মুদ্রাবাজারেও তার প্রভাব পড়ে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও টানাপোড়েনের পর তিনি তা স্থগিত করেন। চীনসহ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের সঙ্গেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
ট্রাম্প পানামা খালের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আবারও উল্লেখ করেন এবং মার্কিন নিরাপত্তার অজুহাতে তা দখল করতে চান। সন্ত্রাসের মদদদাতা দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম বাদ দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চলছিল, তাকে রহিত করেন। মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর করবেন। গ্রিনল্যান্ড নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে শক্তি প্রয়োগেও পিছপা হবেন না বলে হুংকার দিয়েছেন। কানাডাকেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম প্রদেশ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছিলেন। সেটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা-ও এখন বিশ্বরাজনীতির একটি আলোচিত বিষয়। যতটুকু জানা যায়, এই বিষয়ে তিনি উভয় দেশের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
ট্রাম্প মনে করেন, তাঁর শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শরণার্থী ও অভিবাসীদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে দেশটির অবস্থা আমূল বদলে দিতে চান। আমেরিকাকে বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সক্ষমতা ও আঞ্চলিক প্রভাবের দিক থেকে সবার ওপরে রাখতে চান। ট্রাম্পের এই নীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। তিনি স্পষ্টত বলেছেন, তিনি চীনের অর্থনীতি, বাণিজ্যিক প্রভাব ও সম্প্রসারণকে ঠেকাতে চান। সে ক্ষেত্রে তিনি ভারতকে তাঁর সহযোগী মনে করেন, যদিও আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের সেই প্রভাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প-ঝড়ে ইতিমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি ভালোভাবেই দুলে উঠেছে। ট্রাম্প তাঁর অভিষেকের ভাষণে বলেন, আমেরিকার পতনের দিন শেষ, এখন থেকে সুবর্ণ যুগের শুভসূচনা শুরু। আসলেই কি তাই? তাঁর উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সম্প্রসারণ নীতির ফলাফল কি সুখকর হবে? জার্মানির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর গ্রিন পার্টির নেতা জোসকা ফিশারের মন্তব্য কিন্তু বলে ভিন্ন কথা, ‘যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর কোটিপতি মিত্ররা মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কর্তৃত্ববাদী অভিজাততন্ত্রে রূপান্তরিত করতে সফল হন, তাহলে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।’ ট্রাম্প নিজে একজন ব্যবসায়ী, তিনি রাজনীতিকে লেনদেন ও বাণিজ্যিক সুবিধা ও স্বার্থের অনুকূল হিসেবে দেখেন।
ট্রাম্প উচ্চ হারে চীনের পণ্যে কর আরোপের কথা বলেছেন। সেটা হলে বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। চীনের পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র অধিক শুল্ক আরোপ করলে ক্রেতারা অধিক অর্থে তাদের পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী হবে না। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কম দামের পণ্য আমদানির বিকল্প বাজারের সন্ধান করবেন। সে ক্ষেত্রে সুলভ শ্রমের বাজার বাংলাদেশ ছাড়া হয়তো তাঁদের সামনে বিকল্প থাকবে না, এটাই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারের একটি বড় সুযোগ তৈরি করবে। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বে চীনের পরেই বাংলাদেশের স্থান। কিন্তু বাংলাদেশ সেই সুযোগ গ্রহণ করতে চাইলে তাকে শিল্প খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিংব্যবস্থা, বিনিয়োগ পরিবেশ ও দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি করতে হবে। শুধু তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে নয়, কৃষিপণ্য, চা, চামড়া, ওষুধ, প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বহুবিধ সুযোগ বাড়তে পারে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের প্রায় ২৫ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক প্রদান করেই মার্কিন বাজারে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
এই সুযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সে ক্ষেত্রে এই সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে। কেননা, দেশে এখন কোনো নির্বাচিত স্থিতিশীল সরকার নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো ধরনের বড় বিনিয়োগ ও চুক্তির ক্ষেত্রে বিবেচনা করবে। সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি সেখানকার মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই মনে করে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন সুষ্ঠু গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায়ের সূচনায় সহায়ক হবে। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে পরিবর্তন ও ট্রাম্পের নয়া বাণিজ্যনীতির সুযোগকে গ্রহণ করতে হলে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
দেশের সংবিধান, পুলিশ, স্থানীয় সরকার, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের নানা আলাপ হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু এই সময়ে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে খুব বেশি কিছু করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারেরই গঠন করা শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
১১ ঘণ্টা আগেঈশ্বরকে এখনো বুঝে উঠতে পারিনি আমরা। এ কারণে মানবদেহ থাকলেও মনুষ্যত্ব, মানবিকতা নেই কিংবা মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি। ঈশ্বরকে বোঝার জন্য আমরা দায়বদ্ধ নই, যদিও আমাদের দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গটি এখানে আসার কথা ছিল না। শব্দটি প্রযোজ্য নয় এখানে। কিন্তু জন্ম, মৃত্যু ও ধর্মকে পুঁজি করে এক অদৃশ্য নাগপাশে বাঁধা পড়ে
১১ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধি নিয়ে রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। এক অংশ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নির্বাচন পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়; বিচার বিভাগে সংস্কার, হাসিনা সরকারের হত্যা-নির্যাতন, গুম-খুন ও দুর্নীতির বিচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষকরণসহ নানা
১১ ঘণ্টা আগেঢাকা শহরে পরিবহনের অব্যবস্থাপনার কারণে নগরবাসী কাহিল অনেক আগে থেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যানজটের অসহনীয় যন্ত্রণা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের কিছু উদ্যোগ গ্রহণের কারণে মানুষ আশার আলো দেখতে পেলেও সময়ের সঙ্গে সেই আশাও নিরাশায় পরিণত হয়েছে। মূলত পরিবহনমালিক ও নেতাদের অসহযোগিতার কারণে
১১ ঘণ্টা আগে