মৃত্যুঞ্জয় রায়
শিশু থেকে বুড়ো—কে না পছন্দ করে কোমল পানীয় খেতে? গরমের মধ্যে এক বোতল কোকা-কোলা—আহা কী প্রশান্তিই না দেয়! কিন্তু এ প্রশান্তিটুকু পাওয়ার জন্য আমাদের যে কী পরিমাণ মূল্য দিতে হচ্ছে, সে কথা আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি? না, আমি ওই এক বোতল কোমল পানীয়র মূল্যের কথা বলছি না। বলছি, সেই এক বোতল কোমল পানীয় খাওয়ার কারণে আমাদের পরিবেশের যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে, স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেসব ক্ষতি পূরণের জন্য মূল্য দেওয়ার কথা।
দুই দশক আগে ভারতের কেরালার পালাক্কাদ জেলার প্লাচিমাদা গ্রামে কোকা-কোলা কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ এবং পরিবেশকে বিপর্যস্ত করা হয়েছিল, এত দিন পর আমরা অনেকেই হয়তো সে কথা ভুলে গেছি। ২০০০ সালের শুরুতে সেখানে কোকা-কোলা কোম্পানির কারখানা স্থাপনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। কোকো-কোলা কারখানা স্থাপনের ছয় মাস পরই সেখানে পানির তীব্র সংকট শুরু হয়। পানির অভাবে সেখানকার মানুষের জীবন ও কৃষিকাজ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। তাই এর প্রতিবাদে সেখানকার মানুষেরা রুখে দাঁড়িয়েছিল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিলামা নামের একজন আদিবাসী নারী। তিনি বিশ্ববাসীর কাছে বার্তা দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘তাদের বলবেন, যখন কোকা-কোলা পান করে, আদতে তারা তখন আমাদের মানুষের রক্ত পান করে।’ শেষে অব্যাহত আন্দোলনের মুখে ২০০৪ সালের মার্চে কোকো-কোলা কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কীভাবে আসলে সেই কোম্পানি পরিবেশদূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল? কোম্পানি বোতলজাত কোমল পানীয় ও পানির জন্য সেখান থেকে রোজ ১৫ লাখ লিটার পানি তুলত। এতে সেখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগতভাবে নিচে নামতে থাকে ও পানিতে বিভিন্ন দূষক পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে সেখানকার মানুষ পানির সংকটে পড়ে। ২০০০ সালে প্লাচিমাদায় কোকা-কোলা কারখানাকে ১ লাখ ২৪ হাজার বোতল কোকা-কোলা, ফান্টা, লিমকা, থামস আপ, কিনলে, মাজা ও স্পাইট উৎপাদনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে কারখানা ছয়টি নলকূপের মাধ্যমে সেখান থেকে এমন পরিমাণ পানি উত্তোলন করেছিল, যা দিয়ে কোটি বোতলেরও বেশি পানীয় উৎপাদন করা যায়। এর ফলে পানির স্তর ১৫০ ফুট থেকে নেমে ৫০০ ফুটে চলে যায়। সে এলাকার ২৬০টি নলকূপে পানি ওঠা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে চাষাবাদেও ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ে। যতটুকু পানি অবশিষ্ট ছিল, তা-ও দূষিত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া কারখানার বর্জ্য সেখানকার মাটি, খাল, জমি ও নলকূপে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানকার জীববৈচিত্র্যের ওপর এবং স্বাস্থ্যে ঝুঁকি দেখা দেয়। সে আন্দোলনের পক্ষে একটি সংবাদপত্র অবস্থান নেওয়ায় কোকা-কোলা কোম্পানি ওই পত্রিকা থেকে ৬ কোটি রুপি মূল্যের বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তবু পত্রিকাটির সম্পাদক তাঁর অবস্থানে কঠোর ছিলেন। আন্দোলনও সফল হয়েছিল।
শুধু ভারতে নয়, অন্য দেশেও এর বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। যুক্তরাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে প্লাস্টিকদূষণে শীর্ষে কোকো-কোলা। তিন বছর আগে সামুদ্রিক প্রাণী সুরক্ষায় কাজ করা সংস্থা সারফারস অ্যাগেইনস্ট সুয়েজের (এসএএস) এক গবেষণায় সে তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির গবেষণা বলেছে, যুক্তরাজ্যের উপকূল অঞ্চলে যে পরিমাণ দূষণ হয়, তার তিন ভাগের দুই ভাগ (৬৫ শতাংশ) দূষণের জন্য দায়ী কোকা-কোলাসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানের বোতল ও ক্যান। এসএএস এসব প্রতিষ্ঠানকে এরূপ প্যাকেজিংয়ের পরিমাণ কমিয়ে রিফিল মডেলের পাশাপাশি অল-ইন রিটার্ন স্কিমে পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে। ব্র্যান্ড নিরীক্ষা প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ১২টি প্রতিষ্ঠান ৫২ শতাংশের বেশি দূষণের জন্য দায়ী।
এ দেশে ২০২১ সালে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) ঢাকার ধানমন্ডি লেক ও ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। সে জরিপে তারা দেখতে পেয়েছিল যে, সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কোকো-কোলা এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এ ছাড়া পেপসিকো, ইউনিলিভার, নেসলে, পারটেক্স গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপসহ আরও বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্লাস্টিকের মোড়ক ও বোতল। সে গবেষণায় কোকা-কোলা কোম্পানির কিনলের বোতলের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, শতাংশের হিসাবে যা মোট প্রাপ্ত প্লাস্টিকের মধ্যে ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া রয়েছে অন্যান্য পণ্যের প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট, সসের কনটেইনার ইত্যাদি। এগুলোর পরিমাণ মোট প্লাস্টিকের প্রায় ২০ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পেপসিকো কোম্পানি, ১২ ভাগ। এসব কোম্পানির রিফিল ও রিসাইকেল প্ল্যান্ট থাকা দরকার। প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্য পণ্যগুলো পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এসব সামগ্রী ব্যবহারের পর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা তৈরি করা দরকার।
কোমল পানীয় কেড়ে নিচ্ছে পরিবেশের কোমলতা, রুক্ষ শুষ্ক জলহীন পরিবেশে কী করে জন্মাবে গাছপালা, বাঁচবে প্রাণিকূল? পরিবেশ বিনাশের পাশাপাশি বিনাশ ঘটছে মানুষের প্রাণেরও। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুইস আলবের্তো জামোরার নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণা থেকে সম্প্রতি জানা গেছে যে, একটি কোকা-কোলা আয়ু কেড়ে নেয় ১২ মিনিট করে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে তাদের এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল গত বছর।
কোকা-কোলা বিশ্বের একটি জনপ্রিয় কোমলপানীয় ব্র্যান্ড। কোম্পানি সব সময়ই বলছে যে তারা সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ড মেনে ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে উৎপাদন করে। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন গবেষকদের গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। কোকা-কোলা ও অন্য কোম্পানিগুলো অন্তত তিনভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে, যেমন এক. কারখানা চালাতে যে বিপুল পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছে তাতে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বাড়ছে, দুই. পানীয় উৎপাদনের জন্য মাটির নিচ থেকে যে বিপুল পরিমাণ পানি তুলছে তাতে স্থানীয়ভাবে পানির সংকট তৈরি হচ্ছে, যার মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে জীবকুলের ওপর এবং তিন. পানীয় বাজারজাতকরণের জন্য যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করছে তাতেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। প্লাস্টিকজনিত দূষণের প্রধানতম কারণ এসব প্লাস্টিক বোতল।
ভাবলে অবাক লাগে যে, বিশ্বের চারটি বড় কোম্পানি (কোকা-কোলা, পেপসিকো, নেস্লে ও ইউনিলিভার) প্রতিবছর ছয়টি উন্নয়নশীল দেশে প্রায় আধা মিলিয়ন টন (৫ লাখ টন) প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি করছে। এই হিসাবে রোজ যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য তারা তৈরি করছে তা দিয়ে ৮৩টি বড় ফুটবল মাঠ ভরে ফেলা সম্ভব। যদি এসব কোম্পানি প্লাস্টিকের বোতলগুলো পুড়িয়েও ফেলে তাহলেও তা থেকে প্রায় ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হবে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কয়েক সেকেন্ডের কোমল পানীয়র মজা নিতে আমরা পৃথিবীর মানুষেরা বছরে প্রায় ৭৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করছি, ২০৩০ সালে গিয়ে তা দাঁড়াবে ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে। প্রকৃতপক্ষে এই সামান্য মজা নিতে আমরা নিজেদের ও পরিবেশের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছি। এসব বিষয় নিয়ে দ্রুত আরও বিস্তারিত গবেষণা ও উত্তরণের পথ বের করা দরকার।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
শিশু থেকে বুড়ো—কে না পছন্দ করে কোমল পানীয় খেতে? গরমের মধ্যে এক বোতল কোকা-কোলা—আহা কী প্রশান্তিই না দেয়! কিন্তু এ প্রশান্তিটুকু পাওয়ার জন্য আমাদের যে কী পরিমাণ মূল্য দিতে হচ্ছে, সে কথা আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি? না, আমি ওই এক বোতল কোমল পানীয়র মূল্যের কথা বলছি না। বলছি, সেই এক বোতল কোমল পানীয় খাওয়ার কারণে আমাদের পরিবেশের যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে, স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেসব ক্ষতি পূরণের জন্য মূল্য দেওয়ার কথা।
দুই দশক আগে ভারতের কেরালার পালাক্কাদ জেলার প্লাচিমাদা গ্রামে কোকা-কোলা কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ এবং পরিবেশকে বিপর্যস্ত করা হয়েছিল, এত দিন পর আমরা অনেকেই হয়তো সে কথা ভুলে গেছি। ২০০০ সালের শুরুতে সেখানে কোকা-কোলা কোম্পানির কারখানা স্থাপনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। কোকো-কোলা কারখানা স্থাপনের ছয় মাস পরই সেখানে পানির তীব্র সংকট শুরু হয়। পানির অভাবে সেখানকার মানুষের জীবন ও কৃষিকাজ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। তাই এর প্রতিবাদে সেখানকার মানুষেরা রুখে দাঁড়িয়েছিল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিলামা নামের একজন আদিবাসী নারী। তিনি বিশ্ববাসীর কাছে বার্তা দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘তাদের বলবেন, যখন কোকা-কোলা পান করে, আদতে তারা তখন আমাদের মানুষের রক্ত পান করে।’ শেষে অব্যাহত আন্দোলনের মুখে ২০০৪ সালের মার্চে কোকো-কোলা কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কীভাবে আসলে সেই কোম্পানি পরিবেশদূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল? কোম্পানি বোতলজাত কোমল পানীয় ও পানির জন্য সেখান থেকে রোজ ১৫ লাখ লিটার পানি তুলত। এতে সেখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগতভাবে নিচে নামতে থাকে ও পানিতে বিভিন্ন দূষক পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে সেখানকার মানুষ পানির সংকটে পড়ে। ২০০০ সালে প্লাচিমাদায় কোকা-কোলা কারখানাকে ১ লাখ ২৪ হাজার বোতল কোকা-কোলা, ফান্টা, লিমকা, থামস আপ, কিনলে, মাজা ও স্পাইট উৎপাদনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে কারখানা ছয়টি নলকূপের মাধ্যমে সেখান থেকে এমন পরিমাণ পানি উত্তোলন করেছিল, যা দিয়ে কোটি বোতলেরও বেশি পানীয় উৎপাদন করা যায়। এর ফলে পানির স্তর ১৫০ ফুট থেকে নেমে ৫০০ ফুটে চলে যায়। সে এলাকার ২৬০টি নলকূপে পানি ওঠা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে চাষাবাদেও ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ে। যতটুকু পানি অবশিষ্ট ছিল, তা-ও দূষিত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া কারখানার বর্জ্য সেখানকার মাটি, খাল, জমি ও নলকূপে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানকার জীববৈচিত্র্যের ওপর এবং স্বাস্থ্যে ঝুঁকি দেখা দেয়। সে আন্দোলনের পক্ষে একটি সংবাদপত্র অবস্থান নেওয়ায় কোকা-কোলা কোম্পানি ওই পত্রিকা থেকে ৬ কোটি রুপি মূল্যের বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তবু পত্রিকাটির সম্পাদক তাঁর অবস্থানে কঠোর ছিলেন। আন্দোলনও সফল হয়েছিল।
শুধু ভারতে নয়, অন্য দেশেও এর বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। যুক্তরাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে প্লাস্টিকদূষণে শীর্ষে কোকো-কোলা। তিন বছর আগে সামুদ্রিক প্রাণী সুরক্ষায় কাজ করা সংস্থা সারফারস অ্যাগেইনস্ট সুয়েজের (এসএএস) এক গবেষণায় সে তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির গবেষণা বলেছে, যুক্তরাজ্যের উপকূল অঞ্চলে যে পরিমাণ দূষণ হয়, তার তিন ভাগের দুই ভাগ (৬৫ শতাংশ) দূষণের জন্য দায়ী কোকা-কোলাসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানের বোতল ও ক্যান। এসএএস এসব প্রতিষ্ঠানকে এরূপ প্যাকেজিংয়ের পরিমাণ কমিয়ে রিফিল মডেলের পাশাপাশি অল-ইন রিটার্ন স্কিমে পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে। ব্র্যান্ড নিরীক্ষা প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ১২টি প্রতিষ্ঠান ৫২ শতাংশের বেশি দূষণের জন্য দায়ী।
এ দেশে ২০২১ সালে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) ঢাকার ধানমন্ডি লেক ও ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। সে জরিপে তারা দেখতে পেয়েছিল যে, সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কোকো-কোলা এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এ ছাড়া পেপসিকো, ইউনিলিভার, নেসলে, পারটেক্স গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপসহ আরও বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্লাস্টিকের মোড়ক ও বোতল। সে গবেষণায় কোকা-কোলা কোম্পানির কিনলের বোতলের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, শতাংশের হিসাবে যা মোট প্রাপ্ত প্লাস্টিকের মধ্যে ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া রয়েছে অন্যান্য পণ্যের প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট, সসের কনটেইনার ইত্যাদি। এগুলোর পরিমাণ মোট প্লাস্টিকের প্রায় ২০ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পেপসিকো কোম্পানি, ১২ ভাগ। এসব কোম্পানির রিফিল ও রিসাইকেল প্ল্যান্ট থাকা দরকার। প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্য পণ্যগুলো পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এসব সামগ্রী ব্যবহারের পর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা তৈরি করা দরকার।
কোমল পানীয় কেড়ে নিচ্ছে পরিবেশের কোমলতা, রুক্ষ শুষ্ক জলহীন পরিবেশে কী করে জন্মাবে গাছপালা, বাঁচবে প্রাণিকূল? পরিবেশ বিনাশের পাশাপাশি বিনাশ ঘটছে মানুষের প্রাণেরও। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুইস আলবের্তো জামোরার নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণা থেকে সম্প্রতি জানা গেছে যে, একটি কোকা-কোলা আয়ু কেড়ে নেয় ১২ মিনিট করে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে তাদের এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল গত বছর।
কোকা-কোলা বিশ্বের একটি জনপ্রিয় কোমলপানীয় ব্র্যান্ড। কোম্পানি সব সময়ই বলছে যে তারা সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ড মেনে ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে উৎপাদন করে। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন গবেষকদের গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। কোকা-কোলা ও অন্য কোম্পানিগুলো অন্তত তিনভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে, যেমন এক. কারখানা চালাতে যে বিপুল পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছে তাতে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বাড়ছে, দুই. পানীয় উৎপাদনের জন্য মাটির নিচ থেকে যে বিপুল পরিমাণ পানি তুলছে তাতে স্থানীয়ভাবে পানির সংকট তৈরি হচ্ছে, যার মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে জীবকুলের ওপর এবং তিন. পানীয় বাজারজাতকরণের জন্য যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করছে তাতেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। প্লাস্টিকজনিত দূষণের প্রধানতম কারণ এসব প্লাস্টিক বোতল।
ভাবলে অবাক লাগে যে, বিশ্বের চারটি বড় কোম্পানি (কোকা-কোলা, পেপসিকো, নেস্লে ও ইউনিলিভার) প্রতিবছর ছয়টি উন্নয়নশীল দেশে প্রায় আধা মিলিয়ন টন (৫ লাখ টন) প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি করছে। এই হিসাবে রোজ যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য তারা তৈরি করছে তা দিয়ে ৮৩টি বড় ফুটবল মাঠ ভরে ফেলা সম্ভব। যদি এসব কোম্পানি প্লাস্টিকের বোতলগুলো পুড়িয়েও ফেলে তাহলেও তা থেকে প্রায় ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হবে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কয়েক সেকেন্ডের কোমল পানীয়র মজা নিতে আমরা পৃথিবীর মানুষেরা বছরে প্রায় ৭৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করছি, ২০৩০ সালে গিয়ে তা দাঁড়াবে ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে। প্রকৃতপক্ষে এই সামান্য মজা নিতে আমরা নিজেদের ও পরিবেশের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছি। এসব বিষয় নিয়ে দ্রুত আরও বিস্তারিত গবেষণা ও উত্তরণের পথ বের করা দরকার।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
১৭ ঘণ্টা আগেবর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
১৭ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
১৭ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
২ দিন আগে