জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
কোম্পানি শাসনামলে অদ্ভুতভাবে বাংলার সকল মুসলমান হঠাৎ করেই ভাবতে শুরু করল, এককালের শাসকশ্রেণি ছিল তারাই। যে মুসলিম শাসকেরা ব্রিটিশ আমলের আগে শাসন করত, তাদের শাসনামলে স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুসলমানেরা যে প্রশাসন বা রাজকার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, সে কথা আগেই বলা হয়েছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের পুরাতন শাসক ভাববার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনের সময় সেই প্রচলিত সম্প্রদায়কেন্দ্রিক ভাবনা থেকে বাঙালি মুসলমানদের সরিয়ে আনতে পেরেছিল তখনকার এগিয়ে থাকা সমাজ।
সে কথা বলার আগে ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের পর প্রশাসন এবং সামাজিক জীবনে যে পরিবর্তনগুলো এল, তা নিয়ে কিছু তথ্য সন্নিবেশ করা জরুরি।
কোনো সন্দেহ নেই, ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পূর্বেকার শাসকগোষ্ঠী।
বিদেশি মুসলমান ও উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সমন্বয়ে গঠিত শাসকশ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্রিটিশরা তাদের সহযোগী হিসেবে পেয়েছিল নব্য বাবুশ্রেণিকে। পড়ন্ত অভিজাতশ্রেণি নতুন শাসন নিয়ে সমালোচনা করেছে, কিন্তু বাবুশ্রেণি থেকে যে আমলাতন্ত্র গড়ে উঠেছিল, তারা ছিল ব্রিটিশদের অনুগত। ইংরেজদের প্রতি এই অন্ধ অনুরাগ মূলত গড়ে উঠেছিল কলকাতাভিত্তিক কতিপয় বানিয়া পরিবারের মধ্যে।
আরও একটি তথ্য এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেছিলেন, তাতে নতুন নতুন সুবিধাভোগী শ্রেণির আবির্ভাব হয়েছিল। উকিল, মোক্তার, কালেক্টরেট আমলা, শহুরে বাড়িওয়ালা, নতুন জমিদার, ইজারাদারেরা তখন ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে। ১৮৩০-এর দশকে ভারতবর্ষে ইংরেজির মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে অধিকসংখ্যক দেশি লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়। এর ফলে সুবিধাভোগী একটি মধ্যবিত্তশ্রেণির সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারি চাকরির বাইরেও বেসরকারিভাবে আরেকটি মধ্যবিত্তশ্রেণি তখন বিকশিত হয়েছিল। নৌপরিবহন, অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্য, অর্থকরী ফসলের বাজারের মাধ্যমে এই শ্রেণিটি বিকশিত হয়েছিল।
ব্রিটিশ-ভক্ত এই নব্য শ্রেণিটিতে যারা অধিষ্ঠিত হয়েছিল, তারা এসেছিল সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে। প্রথমেই ব্রিটিশদের সঙ্গে সখ্য হয়েছিল বেনিয়াশ্রেণির। এরাই মূলত মধ্যবিত্তশ্রেণির গোড়াপত্তন করেছিল। এদের কারণে তৎকালীন ব্যবসায়ী শ্রেণি টিকতে না পেরে নিজেদের পুঁজি প্রত্যাহার করে ভূমিতে বিনিয়োগ করতে থাকে। এই অবস্থাই ভূমি নিয়ন্ত্রণে পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুযোগ করে দেয়। পড়ন্ত জমিদারশ্রেণির কাছ থেকে ভূমি কিনে নেয় তাদেরই আমলারা অথবা নব্য ব্যবসায়ীরা।
এই প্রচণ্ড আলোড়ন পরবর্তীকালের সমাজ পরিবর্তনে বিশাল ভূমিকা রেখেছিল। এখানে সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলা যায়, কর্নওয়ালিসের এই ব্যবস্থার ফলে জেলা ও প্রদেশভিত্তিক অফিস-আদালত, উকিল-মোক্তার, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিকশিত হতে থাকে। নব্য ধনীরা সরকারের আনুকূল্য পেতে থাকে।
কোম্পানি শাসনামলে অদ্ভুতভাবে বাংলার সকল মুসলমান হঠাৎ করেই ভাবতে শুরু করল, এককালের শাসকশ্রেণি ছিল তারাই। যে মুসলিম শাসকেরা ব্রিটিশ আমলের আগে শাসন করত, তাদের শাসনামলে স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুসলমানেরা যে প্রশাসন বা রাজকার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, সে কথা আগেই বলা হয়েছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের পুরাতন শাসক ভাববার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনের সময় সেই প্রচলিত সম্প্রদায়কেন্দ্রিক ভাবনা থেকে বাঙালি মুসলমানদের সরিয়ে আনতে পেরেছিল তখনকার এগিয়ে থাকা সমাজ।
সে কথা বলার আগে ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের পর প্রশাসন এবং সামাজিক জীবনে যে পরিবর্তনগুলো এল, তা নিয়ে কিছু তথ্য সন্নিবেশ করা জরুরি।
কোনো সন্দেহ নেই, ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পূর্বেকার শাসকগোষ্ঠী।
বিদেশি মুসলমান ও উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সমন্বয়ে গঠিত শাসকশ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্রিটিশরা তাদের সহযোগী হিসেবে পেয়েছিল নব্য বাবুশ্রেণিকে। পড়ন্ত অভিজাতশ্রেণি নতুন শাসন নিয়ে সমালোচনা করেছে, কিন্তু বাবুশ্রেণি থেকে যে আমলাতন্ত্র গড়ে উঠেছিল, তারা ছিল ব্রিটিশদের অনুগত। ইংরেজদের প্রতি এই অন্ধ অনুরাগ মূলত গড়ে উঠেছিল কলকাতাভিত্তিক কতিপয় বানিয়া পরিবারের মধ্যে।
আরও একটি তথ্য এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেছিলেন, তাতে নতুন নতুন সুবিধাভোগী শ্রেণির আবির্ভাব হয়েছিল। উকিল, মোক্তার, কালেক্টরেট আমলা, শহুরে বাড়িওয়ালা, নতুন জমিদার, ইজারাদারেরা তখন ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে। ১৮৩০-এর দশকে ভারতবর্ষে ইংরেজির মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে অধিকসংখ্যক দেশি লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়। এর ফলে সুবিধাভোগী একটি মধ্যবিত্তশ্রেণির সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারি চাকরির বাইরেও বেসরকারিভাবে আরেকটি মধ্যবিত্তশ্রেণি তখন বিকশিত হয়েছিল। নৌপরিবহন, অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্য, অর্থকরী ফসলের বাজারের মাধ্যমে এই শ্রেণিটি বিকশিত হয়েছিল।
ব্রিটিশ-ভক্ত এই নব্য শ্রেণিটিতে যারা অধিষ্ঠিত হয়েছিল, তারা এসেছিল সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে। প্রথমেই ব্রিটিশদের সঙ্গে সখ্য হয়েছিল বেনিয়াশ্রেণির। এরাই মূলত মধ্যবিত্তশ্রেণির গোড়াপত্তন করেছিল। এদের কারণে তৎকালীন ব্যবসায়ী শ্রেণি টিকতে না পেরে নিজেদের পুঁজি প্রত্যাহার করে ভূমিতে বিনিয়োগ করতে থাকে। এই অবস্থাই ভূমি নিয়ন্ত্রণে পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুযোগ করে দেয়। পড়ন্ত জমিদারশ্রেণির কাছ থেকে ভূমি কিনে নেয় তাদেরই আমলারা অথবা নব্য ব্যবসায়ীরা।
এই প্রচণ্ড আলোড়ন পরবর্তীকালের সমাজ পরিবর্তনে বিশাল ভূমিকা রেখেছিল। এখানে সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলা যায়, কর্নওয়ালিসের এই ব্যবস্থার ফলে জেলা ও প্রদেশভিত্তিক অফিস-আদালত, উকিল-মোক্তার, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিকশিত হতে থাকে। নব্য ধনীরা সরকারের আনুকূল্য পেতে থাকে।
রাখাইনে প্রস্তাবিত মানবিক করিডর বাস্তবায়নের আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ এবং চীন-ভারতের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশকে জটিল ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে ফেলতে পারে। এটি শুধু সীমান্ত নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
১ দিন আগেসম্প্রতি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে একটি পাঠাগারে আক্রমণ চালিয়ে কিছু ব্যক্তি সব বইপুস্তক নিয়ে যায়। তাদের ইচ্ছে ছিল আগুন দিয়ে লাইব্রেরিটি ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু একজন পুলিশ অফিসারের হস্তক্ষেপে লাইব্রেরিটি ভস্মীভূত হওয়া থেকে মুক্তি পায়।
২ দিন আগেমে দিবস আসে প্রতিবছর, আসে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদার কথা মনে করিয়ে দিতে। ১৮৮৬ সালের শিকাগোর হে মার্কেট আন্দোলনের আগুন আজও নিভে যায়নি, বরং সময়ের পরম্পরায় সেই আগুনই আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকশ্রেণির অধিকারের প্রশ্নে।
২ দিন আগেজার্মানির বিজ্ঞানী ও লেখক গেয়র্গ ক্রিস্টফ লিশটেনব্যর্গ তাঁর দার্শনিক নিবন্ধের এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘সনাতনপন্থীরা এ-কথা মনে রাখেন না যে, মানুষের বিশ্বাস তাদের জ্ঞান এবং ইতিহাসের সাধারণ পরিবর্তনের ধারা অনুযায়ী বদলায়।
২ দিন আগে