জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁকে সুবা বাংলার দেওয়ান করেছিলেন। নতুন দেওয়ান দেখলেন, বাংলার জমিদারেরা ঠিকভাবে খাজনা পরিশোধ করেন না। কী করে কর আদায় করা যায়, তা ভাবতে লাগলেন তিনি। প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন বাংলার সুবাদার বাদশাহের দৌহিত্র আজিমুশ্শান। তবে রাজস্ব আদায়ে সর্বেসর্বা ছিলেন দেওয়ান। তাই আর্থিক দিকগুলোর উন্নতি কী করে করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে থাকেন মুর্শিদকুলি খাঁ।
মুর্শিদকুলি খাঁর সঙ্গে বিরোধ ছিল বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত আজিমুশ্শানের। মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে তাঁর অফিস নিয়ে গেলেন মোজাফফরাবাদে। সে শহরের নাম দিলেন মুর্শিদাবাদ। ১৭১৭ সালে তিনি হলেন বাংলার সুবাদার। নবাব হিসেবেই পরিচিত হলেন তিনি। বাংলার রাজধানী হিসেবে পরিচিত হলো মুর্শিদাবাদ।
সে সময় নবাবের প্রশাসনে কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমরা পৌঁছে যাব মূল আলোচনায়। সর্বক্ষেত্রে কেন মুসলমানেরা পিছিয়ে ছিলেন, তার একটা আভাস পাওয়া যাবে তাতে।
নবাবি শাসনামলে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী শ্রেণি ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দু বানিয়া, মুৎসুদ্দি, বড় জমিদার ও প্রশাসনিক আমলা গোষ্ঠী। মুসলিম নবাবেরা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দিয়ে একটি সুসংগঠিত আমলাতন্ত্র গড়ে তুলেছিলেন। প্রশাসনযন্ত্রে হিন্দু আমলাদের অন্তর্ভুক্তি এত দ্রুত ঘটেছিল যে, নবাব আলীবর্দী খাঁর শাসনামলে প্রশাসনে হিন্দু আমলারাই পেয়ে গিয়েছিলেন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এতে নবাবদের সঙ্গে হিন্দু প্রশাসন একত্র হতে পেরেছিল এবং রাষ্ট্র গঠনে তা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
কেন প্রশাসনে মুসলিমদের উপস্থিতি ছিল অপেক্ষাকৃত কম? খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে, রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় আভিজাত্য থেকে স্থানীয় মুসলিমদের দূরে রাখা হয়েছিল। নবাবি রাষ্ট্রের সামরিক ও বিচার বিভাগে ছিল মুসলিম আধিক্য। কিন্তু এই মুসলমানেরা স্থানীয় মুসলমান নন।
তাঁরা সবাই ছিলেন বাইরে থেকে আসা মুসলমান। ধর্মান্তরিত মুসলমানদের রাখা হতো রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে দূরে। এ কাজটি করেছেন বাইরে থেকে আগত মুসলমানেরাই। তাঁরা স্থানীয় উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন; কিন্তু বাদ দিয়েছিলেন স্থানীয় মুসলিমদেরকে। উচ্চবর্ণের হিন্দু ছাড়া অন্য হিন্দুরাও বঞ্চিত হয়েছিলেন এ সময়।
নবাবি আমলে ক্ষমতা ভাগাভাগি হয় বাইরে থেকে আসা মুসলমান ও অভিজাত হিন্দুদের মধ্যে। স্থানীয় মুসলিমরা ক্ষমতার ভাগ পাননি। তাই ব্রিটিশ উপনিবেশ শুরু হলো যখন, তখন তা স্থানীয় মুসলিমদের জন্য খুব বেশি উত্তেজনার কারণ ঘটায়নি। তাঁদের জন্য এটা ছিল এক মালিকের হাত থেকে আরেক মালিকের হাতে পড়ার মতো ব্যাপার। এতে তাঁরা হারাননি কিছু। যে তিমিরে ছিলেন তাঁরা, সেই তিমিরই তাঁদের ঘিরে রেখেছিল পরিবর্তনের পরও। বরং আমলাতন্ত্র ও প্রশাসন যখন শ্বেতাঙ্গদের দিয়ে তৈরি হয়, তখন এর ভুক্তভোগী ছিল মূলত মুঘল ও হিন্দু অভিজাত শ্রেণি। হিন্দু অভিজাত আমলা শ্রেণি ক্ষমতা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এরপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে এসে এই সর্বসময়ের নির্যাতিত স্থানীয় মুসলিমরা ভাবতে শুরু করলেন তাঁরা ক্ষমতা হারিয়েছেন। সে-ও এক ব্যাখ্যাহীন বিষয়। তবে রাজনীতির কৌশলী পথই যে এ রকম একটি মিথ্যাকে ভিত্তি দিয়েছিল, সে কথাই বলা হবে এবার।
মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁকে সুবা বাংলার দেওয়ান করেছিলেন। নতুন দেওয়ান দেখলেন, বাংলার জমিদারেরা ঠিকভাবে খাজনা পরিশোধ করেন না। কী করে কর আদায় করা যায়, তা ভাবতে লাগলেন তিনি। প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন বাংলার সুবাদার বাদশাহের দৌহিত্র আজিমুশ্শান। তবে রাজস্ব আদায়ে সর্বেসর্বা ছিলেন দেওয়ান। তাই আর্থিক দিকগুলোর উন্নতি কী করে করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে থাকেন মুর্শিদকুলি খাঁ।
মুর্শিদকুলি খাঁর সঙ্গে বিরোধ ছিল বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত আজিমুশ্শানের। মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে তাঁর অফিস নিয়ে গেলেন মোজাফফরাবাদে। সে শহরের নাম দিলেন মুর্শিদাবাদ। ১৭১৭ সালে তিনি হলেন বাংলার সুবাদার। নবাব হিসেবেই পরিচিত হলেন তিনি। বাংলার রাজধানী হিসেবে পরিচিত হলো মুর্শিদাবাদ।
সে সময় নবাবের প্রশাসনে কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমরা পৌঁছে যাব মূল আলোচনায়। সর্বক্ষেত্রে কেন মুসলমানেরা পিছিয়ে ছিলেন, তার একটা আভাস পাওয়া যাবে তাতে।
নবাবি শাসনামলে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী শ্রেণি ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দু বানিয়া, মুৎসুদ্দি, বড় জমিদার ও প্রশাসনিক আমলা গোষ্ঠী। মুসলিম নবাবেরা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দিয়ে একটি সুসংগঠিত আমলাতন্ত্র গড়ে তুলেছিলেন। প্রশাসনযন্ত্রে হিন্দু আমলাদের অন্তর্ভুক্তি এত দ্রুত ঘটেছিল যে, নবাব আলীবর্দী খাঁর শাসনামলে প্রশাসনে হিন্দু আমলারাই পেয়ে গিয়েছিলেন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এতে নবাবদের সঙ্গে হিন্দু প্রশাসন একত্র হতে পেরেছিল এবং রাষ্ট্র গঠনে তা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
কেন প্রশাসনে মুসলিমদের উপস্থিতি ছিল অপেক্ষাকৃত কম? খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে, রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় আভিজাত্য থেকে স্থানীয় মুসলিমদের দূরে রাখা হয়েছিল। নবাবি রাষ্ট্রের সামরিক ও বিচার বিভাগে ছিল মুসলিম আধিক্য। কিন্তু এই মুসলমানেরা স্থানীয় মুসলমান নন।
তাঁরা সবাই ছিলেন বাইরে থেকে আসা মুসলমান। ধর্মান্তরিত মুসলমানদের রাখা হতো রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে দূরে। এ কাজটি করেছেন বাইরে থেকে আগত মুসলমানেরাই। তাঁরা স্থানীয় উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন; কিন্তু বাদ দিয়েছিলেন স্থানীয় মুসলিমদেরকে। উচ্চবর্ণের হিন্দু ছাড়া অন্য হিন্দুরাও বঞ্চিত হয়েছিলেন এ সময়।
নবাবি আমলে ক্ষমতা ভাগাভাগি হয় বাইরে থেকে আসা মুসলমান ও অভিজাত হিন্দুদের মধ্যে। স্থানীয় মুসলিমরা ক্ষমতার ভাগ পাননি। তাই ব্রিটিশ উপনিবেশ শুরু হলো যখন, তখন তা স্থানীয় মুসলিমদের জন্য খুব বেশি উত্তেজনার কারণ ঘটায়নি। তাঁদের জন্য এটা ছিল এক মালিকের হাত থেকে আরেক মালিকের হাতে পড়ার মতো ব্যাপার। এতে তাঁরা হারাননি কিছু। যে তিমিরে ছিলেন তাঁরা, সেই তিমিরই তাঁদের ঘিরে রেখেছিল পরিবর্তনের পরও। বরং আমলাতন্ত্র ও প্রশাসন যখন শ্বেতাঙ্গদের দিয়ে তৈরি হয়, তখন এর ভুক্তভোগী ছিল মূলত মুঘল ও হিন্দু অভিজাত শ্রেণি। হিন্দু অভিজাত আমলা শ্রেণি ক্ষমতা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এরপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে এসে এই সর্বসময়ের নির্যাতিত স্থানীয় মুসলিমরা ভাবতে শুরু করলেন তাঁরা ক্ষমতা হারিয়েছেন। সে-ও এক ব্যাখ্যাহীন বিষয়। তবে রাজনীতির কৌশলী পথই যে এ রকম একটি মিথ্যাকে ভিত্তি দিয়েছিল, সে কথাই বলা হবে এবার।
শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি রচনা করতে গিয়ে আমরা নষ্ট করে চলেছি মাটির উর্বরতা শক্তি, নদীপ্রবাহ ও পানি, পরিবেশ ও প্রতিবেশ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা সংস্থার এক হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালে দেশে কৃষিজমি ছিল মোট জমির প্রায় ৮৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ সালে তা নেমে হয় ৭৫ শতাংশে। আর এ ১৫ বছরে তা নিশ্চয়ই আরও অনেকখানি কমে এসেছে।
৪ ঘণ্টা আগেআমি যখন সিডনি আসি, তখন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিশেষত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। একসময় যে আমাদের একটি বা একাধিক বইমেলার প্রয়োজন পড়তে পারে, সেটা দূরদর্শী ব্যতীত কারও মাথায় আসেনি। কিন্তু বাংলা, বাঙালি মানেই বিদ্রোহ আর দ্রোহের ভেতর দিয়ে নতুন কোনো ইতিহাস রচনা। সে ইতিহাস যে শুধু দেশের মাটিতে
৪ ঘণ্টা আগেগত বছরের জুলাইয়ের পর থেকেই ছাত্রসমাজকে দেখছি বিভিন্ন অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র বা তরুণসমাজ কোনো অন্যায়-অবিচার বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, এটাই স্বাভাবিক। কোটা সংস্কারের দাবি ছিল যৌক্তিক। এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে জুলাই মাসে দেশের ছাত্রসমাজ যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল, সেই আন্দো
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জনগণের প্রত্যাশা যেমন বাড়ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও গভীর পর্যবেক্ষণ রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে যে, এই সরকার প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে। ৩১ জ
৪ ঘণ্টা আগে