জুবায়ের হাসান

কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে উঠবে একদিন ভয়াবহ রণক্ষেত্র। আর সেখানে সমাবেশ ঘটবে বিপুল সৈন্যের।
এই কাশ্মীর উপত্যকায় একসময় ছিল বাংলাদেশের মতোই একটা মুসলিম স্বাধীন সালতানাত, যা প্রতিষ্ঠা করেন শাহ মির্জা, ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। মির্জা ছিলেন একজন ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তি। তিনি বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সোয়াত অঞ্চল থেকে যান কাশ্মীরে। তিনি নিজ যোগ্যতাবলে হয়ে ওঠেন কাশ্মীরের হিন্দু রাজার খুব বিশ্বস্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী। পরে রাজার মৃত্যু হলে তিনি হন কাশ্মীরের শাসক, যাকে বলা হয় সুলতান। তিনি বিয়ে করেন কাশ্মীরের বিধবা রানিকে। ১৩৪৬ সালে সুলতান শাহ মির্জার প্রতিষ্ঠিত সেই সালতানাতের মুসলিম সুলতানেরা তখন থেকে প্রায় আড়াই শ বছর কাশ্মীর শাসন করেন। এরপর কাশ্মীরের সুলতানের হাত থেকে সম্রাট আকবর কাশ্মীর দখল করেন ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। ফলে কাশ্মীর চলে যায় মোগল সম্রাটদের নিয়ন্ত্রণে। কাশ্মীরে দীর্ঘকাল একটি স্বাধীন মুসলিম সালতানাত থাকার কারণে সে সময় সেখানে গড়ে উঠেছিল পৃথক জাতীয় বৈশিষ্ট্য। কাশ্মীরের মুসলমানরা ঘরে বলে কাশ্মীরি ভাষা; কিন্তু এখন তাঁদের সাংস্কৃতিক ভাষা হলো উর্দু। তবে এই উর্দুকে বলা হয় কাশ্মীরি উর্দু।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে ভারত যখন লোদি বংশের মুসলিম শাসনাধীন ছিল, তখন শিখ ধর্মের উদ্ভব ও বিস্তার ঘটতে থাকে। শিখ ধর্মের প্রবর্তক হলেন গুরু নানক (জন্ম-মৃত্যু: ১৪৬৯-১৫৩৯ খ্রিষ্টাব্দ)। তাঁর প্রচেষ্টায় সে সময় পাঞ্জাব এবং এর আশপাশ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক লোক শিখ ধর্মমত গ্রহণ করেন। একসময় পাঞ্জাবের শিখ রাজা রণজিৎ সিংয়ের (১৭৮০-১৮৩৯) নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল বিরাট একটা শিখ সাম্রাজ্য; যার রাজধানী ছিল লাহোর। মোগল সম্রাজ্যের পতনের যুগে তাদের হাত থেকে এই শিখ রাজা রণজিৎ সিং কাশ্মীর দখল করেন ১৮১৯-১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে। আর তাঁর প্রধান সেনাপতি গুলাব সিং জয় করেন জম্মু। রণজিৎ সিং ধর্মের দিক থেকে গোঁড়া শিখ হলেও তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি গুলাব সিং ছিলেন পাঞ্জাবি ডোগরা হিন্দু। তিনি গুলাব সিংকে দেন জম্মু শাসনের ভার।
শিখ রাজা রণজিৎ সিংয়ের মৃত্যুর পর ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি পাঞ্জাব দখল করে ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। অতঃপর ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কাশ্মীর দখল করে। জম্মুর হিন্দু রাজা গুলাব সিং ওই যুদ্ধে থাকেন নিরপেক্ষ। এ সময় গুলাব সিং ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে কাশ্মীর কিনে নেন ১০ লাখ স্টার্লিং পাউন্ড দিয়ে। সে সময় থেকে তিনি হন জম্মু-কাশ্মীরের করদ মহারাজা এবং ইংরেজদের মিত্র। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে জম্মু-কাশ্মীরের হিন্দু রাজা ছিলেন গুলাব সিংয়ের বংশের স্যার হরি সিং। তিনি কাশ্মীরকে ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। হরি সিং ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে যোগ দেন ভারতীয় ইউনিয়নে। ফলে কাশ্মীর নিয়ে বাধে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ছিল দুটি অংশে বিভক্ত। এক ভাগকে বলা হতো ব্রিটিশ ভারত, যা চলত সরাসরি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে। আর অন্য অংশকে বলা হতো দেশীয় রাজাদের শাসিত অংশ, যা ছিল মূলত করদ রাজ্য। করদ রাজ্যের রাজারা ব্রিটিশ প্রশাসনকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের বিনিময়ে তাদের রাজ্য এক প্রকার স্বাধীনভাবেই শাসন করত। ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যে এ ধরনের করদ রাজ্যের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে ছিল প্রায় ৫৮৪টি, যা ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের মোট আয়তনের প্রায় ৫ ভাগের ২ ভাগ। কাশ্মীর ছিল এমনই দেশীয় রাজাদের শাসনের অধীন একটি করদ রাজ্য। ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রশ্ন ওঠে, ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হলে এসব করদ রাজ্য ও দেশীয় রাজাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে। সিদ্ধান্ত হয়, দেশীয় রাজারা তাদের আপন ইচ্ছা-মর্জিতে ভারতে অথবা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন, কিংবা থাকতে পারবেন স্বাধীন।
ভারতের বর্তমান গুজরাট রাজ্যের অধীন জুনাগড় ছিল ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের একটি করদ রাজ্য। সে সময় জুনাগড়ের শাসক ছিলেন মুসলমান। কিন্তু বেশির ভাগ প্রজা ছিলেন হিন্দু। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের সময় জুনাগড়ের শাসক (নবাব) পাকিস্তানে যোগ দেন। কিন্তু ভারত জুনাগড় দখল করে এই যুক্তিতে যে জুনাগড় হিন্দুপ্রধান এবং তা পাকিস্তান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। দক্ষিণ ভারতে বিরাট আরেকটি ব্রিটিশ করদ রাজ্য ছিল হায়দরাবাদ। একে শাসন করতেন মুসলমান নবাব (হায়দরাবাদের নিজাম)। ১৯৪৭ সালে হায়দরাবাদের নিজাম ভারত কিংবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চান। কিন্তু ভারত এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদ আক্রমণ করে। ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে হায়দরাবাদের নিজামের সেনাবাহিনী এবং হায়দরাবাদের মুসলমানদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী সম্মিলিতভাবে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে ৬ দিনের মধ্যেই ভারতীয় সৈন্যবাহিনী হায়দরাবাদ দখল করে নেয়। নিহত হয় অনেক মুসলমান। এভাবে উৎখাত করা হয় হায়দরাবাদের ৬০০ বছরের মুসলমান শাসন। ২ লাখ ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনসংবলিত সেকালের বিশাল হায়দরাবাদ রাজ্য এখন ভারতের দক্ষিণের তিন রাজ্য তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত হয়ে বিলীন হয়েছে।
১৯৪৭ সালে কাশ্মীরের হিন্দু রাজা হরি সিং যোগ দিয়েছিলেন ভারতে। কিন্তু কাশ্মীরের বেশির ভাগ প্রজাই ছিলেন মুসলমান এবং তাঁদের আবাসভূমি পাকিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া। কাশ্মীরের মুসলমানরা রাজা হরি সিংয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আর তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলের পাঠান সৈন্যরা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দখলে নিয়ে নেয় কাশ্মীরের বিশাল এক অংশ। পৌঁছে যায় শ্রীনগরের উপকণ্ঠে। এভাবেই কাশ্মীর নিয়ে শুরু হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরু কাশ্মীর সমস্যাকে সমাধানের জন্য নিয়ে যান জাতিসংঘে। পাকিস্তান কাশ্মীর সমস্যাকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়নি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বলে যুদ্ধবিরতি করতে এবং কাশ্মীরে গণভোটের মাধ্যমে গণ-অভিমত (Plebiscite) গ্রহণ করতে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ফলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয় এবং দেশ দুটির মধ্যে স্থির হয় একটি যুদ্ধবিরোধী রেখা। এটাই হলো কাশ্মীরকে বিভাজনকারী সীমান্তরেখা লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে মোট পাঁচবার প্রস্তাব পাস করে বলে দেয় যে কাশ্মীরিরা পাকিস্তানে যোগ দেবে, নাকি ভারতে যোগ দেবে, সে সম্পর্কে কাশ্মীরের জনগণের কাছ থেকে গণ-অভিমত গ্রহণ করতে আয়োজন করতে হবে গণভোট। নেহরু প্রথমে গণভোটের প্রস্তাব মেনে নিলেও পরবর্তীকালে তা অমান্য করেন। তবে পাকিস্তান সম্মত হয় গণভোট গ্রহণে এবং এখনো তাতে স্থির আছে। ভারত সরকার ১৯৫৭ সালের ২৬ জানুয়ারি তাদের প্রজাতন্ত্র দিবসে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীরে গণ-অভিমত গ্রহণের পুনর্বার দাবি জানায়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে ভেটো দেয়। ফলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে গণ-অভিমত নেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
সাবেক জম্মু-কাশ্মীরের ৩ ভাগের ১ ভাগ অংশ পাকিস্তান দখল করেছিল। এই অংশ এখনো পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে আছে। একে বলা হয় আজাদ কাশ্মীর। পাকিস্তান এখনো কাশ্মীরিদের গণ-অভিমত গ্রহণে রাজি থাকায় সেই সাবেক জম্মু-কাশ্মীরের যে অংশ দখল করেছে, তাকে বলছে না পাকিস্তানের অংশ। দেশটি আজাদ কাশ্মীরকে এখন পর্যন্ত ঘোষণা করেনি নিজের কোনো প্রদেশ হিসেবে। আজাদ কাশ্মীরের রয়েছে একটি পৃথক পতাকা, আলাদা জাতীয় সংসদ, একজন প্রধানমন্ত্রী ও একজন প্রেসিডেন্ট। আজাদ কাশ্মীরের জনগণ পাকিস্তানি পাসপোর্টের পরিবর্তে একটি বিশেষ পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্যে পাকিস্তান এমন ব্যবস্থা নিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের পূর্বাংশে অবস্থিত লাদাখ অঞ্চল একসময় ছিল চীনের তিব্বতের অংশ। ব্রিটিশ শাসনামলে জম্মুর হিন্দু রাজা গুলাব সিং ব্রিটিশ সৈন্যদের সহযোগিতায় ১৮৩৪ থেকে ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিব্বতের লাদাখ অঞ্চল জয় করেন। এরপর ব্রিটিশদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা গুলাব সিং ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে কাশ্মীর কিনে নেন। এভাবে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ নিয়ে গঠিত হয় বৃহত্তর জম্মু-কাশ্মীর। লাদাখের মানুষ দেখতে অবিকল তিব্বতিদের মতো। তারা তিব্বতি ভাষায় কথা বলে। ধর্মে তারা হিন্দু নয়, মুসলমানও নয়। তারা হলো তিব্বতিদের মতো লামা বৌদ্ধ। ১৯৬২ সালে চীন ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা লাদাখের ৩২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়। চীনের দখল করা লাদাখ অঞ্চলের নতুন নামকরণ হয় আকসাই চীন। এদিকে ১৯৬৩ সালে চীন-পাকিস্তানের মধ্যে এক সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান তার দখলে থাকা লাদাখ অঞ্চলের ৫ হাজার ১৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকা চীনকে উপহার দেয়। ফলে চীন তার জিন জিয়াং বা উইঘুর প্রদেশ থেকে আকসাই চীন অঞ্চলের মধ্যে চলাচলের সংযোগ স্থাপনের সুযোগ লাভ করে। এভাবে কাশ্মীরের মহারাজাদের শাসনাধীন ব্রিটিশ আমলের করদ রাজ্য জম্মু-কাশ্মীর এখন তিন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশ আছে পাকিস্তানের হাতে, আর এক অংশ আছে ভারতের হাতে এবং অন্য অংশ আছে মহাচীনের নিয়ন্ত্রণে। কাশ্মীর সমস্যা তাই হয়ে উঠেছে আগের তুলনায় অনেক জটিল। এখন সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ভারত, পাকিস্তান ও চীন—এই তিন রাষ্ট্রের স্বার্থ। কাশ্মীর সমস্যা আর হয়ে নাই কেবলই ভারত-পাকিস্তান সমস্যা। কাশ্মীর সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনেরও প্রসঙ্গ। বর্তমানে ভারত কাশ্মীর সমস্যাকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে প্রচার করে। কাশ্মীর সংকট সমাধানে পাকিস্তান-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে ভারত নিজের খেয়ালখুশিমতো রাজি হয়। তবে ভারত কাশ্মীরবিষয়ক আলোচনায় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত করতে চায় না তৃতীয় কোনো দেশকে। কিন্তু বাস্তবে কাশ্মীর হলো আন্তর্জাতিক সমস্যা, যা প্রথমে ভারতই নিয়ে গিয়েছিল জাতিসংঘে। বর্তমানে ভারত পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট বাল্টিস্তান, চীনের দখলে থাকা আকসাই চীন, পাকিস্তান কর্তৃক চীনকে উপহার দেওয়া লাদাখের অংশ—এসবের সমন্বয়ে গঠিত পুরো অঞ্চলকেই নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে। তবে ভারত চীনের কাছে হারানো আকসাই চীন এলাকা ফিরে পাওয়ার জন্য দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ভারত কেবলই চাচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা বজায় রাখতে।
ভারত সরকার শুরুতে অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরকে দিয়েছিল যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন। যেমন কাশ্মীরে ছিল পৃথক রাষ্ট্রপতি। তিনি নির্বাচিত হতেন কাশ্মীরের নির্বাচকমণ্ডলী দিয়ে। কাশ্মীরের রাষ্ট্রপতিকে বলা হতো সর্দার-ই-রিয়াসত। তাঁর ছিল যথেষ্ট ক্ষমতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু এটা করতে পেরেছিলেন কাশ্মীরের নেতা শেখ আব্দুল্লাহর সঙ্গে খাতির জমিয়ে। শেখ আব্দুল্লাহ থাকতে চেয়েছিলেন ভারতের অনুগত হয়ে। ভারত দীর্ঘদিন এই শেখ আব্দুল্লাহ ও তাঁর পরিবার এবং তাঁদের রাজনৈতিক দলকে (ন্যাশনাল কনফারেন্স) কাশ্মীরের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে রাখে। অতঃপর সুযোগমতো ভারত সরকার ধাপে ধাপে কাশ্মীরকে প্রদত্ত বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বিলুপ্ত করে এবং শেখ আব্দুল্লাহর পরিবার কাশ্মীরের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন।
কাশ্মীর এখন ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যমাত্র। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের বিজেপি সরকার দেশটির সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ এবং অনুচ্ছেদ ৩৫(ক) বাতিল করে। এর মাধ্যমে ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের যে সীমিত স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা ছিল, সেটি বিলুপ্ত হয়। এরপর ভারতীয় আইনসভায় জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাস হয়। এই আইনের মাধ্যমে বৃহত্তর জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (Union Territory) সৃষ্টি করা হয়। এভাবে কাশ্মীর ভারতের পুরোপুরি হস্তগত হয়। আর কাশ্মীরের যেসব রাজনৈতিক নেতা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অনুগত হয়ে থেকে ছিলেন, তাঁরা বিমর্ষ ও হতবাক হয়ে যান।
ভারতীয় শাসনতন্ত্রের ৩৬৭ নম্বর ধারার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভারত ছাড়া যেকোনো রাষ্ট্রই বিদেশি রাষ্ট্র, তবে রাষ্ট্রপতি কোনো রাষ্ট্রকে ‘বিদেশি রাষ্ট্র নয়’ বলে ঘোষণা করতে পারেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁদের সংবিধানের এই ধারা অনুসারে কাশ্মীরকে করে নিয়েছেন ভারতীয় রাষ্ট্রের অংশ। ভারতের রাষ্ট্রপতি যে ভবিষ্যতে আর কোনো দেশকে এভাবে ভারতের অংশ করে নিতে চাইবেন না, সেটা বলা যায় না। ভারতীয় সংবিধানের এই ধারার জন্য বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। ভারত ১৯৪৮ সালে করেছিল হায়দরাবাদ দখল। এরপর ১৯৭৫ সালে দখল করে সিকিম। ভারতের এই সিকিম দখলে সে সময় বাংলাদেশ হয়েছিল বিশেষভাবে শঙ্কিত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুর পিতামহ গঙ্গাধর নেহরু ছিলেন কাশ্মীরের অধিবাসী। এ কারণে জওহর লাল নেহরু ব্যক্তিগতভাবে কাশ্মীরের জন্য অনুভব করতেন বিশেষ মমতা। তাই তিনি চান, কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকুক। একসময় অনেকে ভাবতেন, কাশ্মীর সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারে জম্মু-কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। যেমন যৌথ শাসন আছে ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে অ্যান্ডোরা (Andorra) নামক রাষ্ট্রে। অ্যান্ডোরা শাসিত হয় ফ্রান্স ও স্পেনের মাধ্যমে। অ্যান্ডোরার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না এই দুই রাষ্ট্র। কেবল পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষানীতির ক্ষেত্রে অ্যান্ডোরাকে আলোচনা করতে হয় ফ্রান্স ও স্পেনের সঙ্গে। এখন যদি জম্মু-কাশ্মীরকে পাকিস্তান এবং ভারতের যৌথ শাসনে আনা যায়, তবে উভয় দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে শান্তি। দূর হবে উভয় দেশের কোটি কোটি মানুষের দারিদ্র্য।
কাশ্মীর একসময় ছিল একটি পৃথক সালতানাত। কাশ্মীরিদের আছে একটি পৃথক ভাষা এবং এর সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলিম। তাই কাশ্মীরিরা হতে চাইতে পারে বাংলাদেশের মানুষের মতোই স্বাধীন। কাশ্মীরিরা পৃথক স্বাধীন কাশ্মীরি রাষ্ট্র গঠনের জন্য কিছুদিন আগেও ভারতের বিরুদ্ধে করেছে প্রচণ্ড সংগ্রাম। বর্তমানে তা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানে স্তিমিত হয়ে এলেও পুনরায় তা যেকোনো সময় প্রচণ্ড রূপ ধারণ করতে পারে। ভারতীয়দের ভাষায় কাশ্মীরদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে বলা হচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদ। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এটা হলো কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ব্রিটিশ শাসনামলেও কাশ্মীর ছিল একটি পৃথক দেশীয় রাজ্য। তখনো কাশ্মীর ছিল না ভারতের অংশ। কাশ্মীরের এই পার্থক্য চেতনা তাদের উদ্বুদ্ধ করছে স্বাধীন কাশ্মীর রাষ্ট্র গঠনের। তাই একে বলা চলে না ভারতীয় ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদ। বস্তুত ভারত কাশ্মীরকে কবজায় রাখতে এ ধরনের অনেক ভাষায় প্রয়োগ করতে পারে। একসময় অনেকে বলতেন, কাশ্মীরের উচিত হবে ভারতের সঙ্গে থাকা। কারণ, ভারত হলো একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র আর পাকিস্তান হলো ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গিয়ে পড়েছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির হাতে। বিজেপির নেতারা এখন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন অনেকটা হিটলারের আর্যবাদের তত্ত্বকে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে উঠবে একদিন ভয়াবহ রণক্ষেত্র। আর সেখানে সমাবেশ ঘটবে বিপুল সৈন্যের।
এই কাশ্মীর উপত্যকায় একসময় ছিল বাংলাদেশের মতোই একটা মুসলিম স্বাধীন সালতানাত, যা প্রতিষ্ঠা করেন শাহ মির্জা, ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। মির্জা ছিলেন একজন ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তি। তিনি বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সোয়াত অঞ্চল থেকে যান কাশ্মীরে। তিনি নিজ যোগ্যতাবলে হয়ে ওঠেন কাশ্মীরের হিন্দু রাজার খুব বিশ্বস্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী। পরে রাজার মৃত্যু হলে তিনি হন কাশ্মীরের শাসক, যাকে বলা হয় সুলতান। তিনি বিয়ে করেন কাশ্মীরের বিধবা রানিকে। ১৩৪৬ সালে সুলতান শাহ মির্জার প্রতিষ্ঠিত সেই সালতানাতের মুসলিম সুলতানেরা তখন থেকে প্রায় আড়াই শ বছর কাশ্মীর শাসন করেন। এরপর কাশ্মীরের সুলতানের হাত থেকে সম্রাট আকবর কাশ্মীর দখল করেন ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। ফলে কাশ্মীর চলে যায় মোগল সম্রাটদের নিয়ন্ত্রণে। কাশ্মীরে দীর্ঘকাল একটি স্বাধীন মুসলিম সালতানাত থাকার কারণে সে সময় সেখানে গড়ে উঠেছিল পৃথক জাতীয় বৈশিষ্ট্য। কাশ্মীরের মুসলমানরা ঘরে বলে কাশ্মীরি ভাষা; কিন্তু এখন তাঁদের সাংস্কৃতিক ভাষা হলো উর্দু। তবে এই উর্দুকে বলা হয় কাশ্মীরি উর্দু।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে ভারত যখন লোদি বংশের মুসলিম শাসনাধীন ছিল, তখন শিখ ধর্মের উদ্ভব ও বিস্তার ঘটতে থাকে। শিখ ধর্মের প্রবর্তক হলেন গুরু নানক (জন্ম-মৃত্যু: ১৪৬৯-১৫৩৯ খ্রিষ্টাব্দ)। তাঁর প্রচেষ্টায় সে সময় পাঞ্জাব এবং এর আশপাশ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক লোক শিখ ধর্মমত গ্রহণ করেন। একসময় পাঞ্জাবের শিখ রাজা রণজিৎ সিংয়ের (১৭৮০-১৮৩৯) নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল বিরাট একটা শিখ সাম্রাজ্য; যার রাজধানী ছিল লাহোর। মোগল সম্রাজ্যের পতনের যুগে তাদের হাত থেকে এই শিখ রাজা রণজিৎ সিং কাশ্মীর দখল করেন ১৮১৯-১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে। আর তাঁর প্রধান সেনাপতি গুলাব সিং জয় করেন জম্মু। রণজিৎ সিং ধর্মের দিক থেকে গোঁড়া শিখ হলেও তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি গুলাব সিং ছিলেন পাঞ্জাবি ডোগরা হিন্দু। তিনি গুলাব সিংকে দেন জম্মু শাসনের ভার।
শিখ রাজা রণজিৎ সিংয়ের মৃত্যুর পর ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি পাঞ্জাব দখল করে ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। অতঃপর ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কাশ্মীর দখল করে। জম্মুর হিন্দু রাজা গুলাব সিং ওই যুদ্ধে থাকেন নিরপেক্ষ। এ সময় গুলাব সিং ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে কাশ্মীর কিনে নেন ১০ লাখ স্টার্লিং পাউন্ড দিয়ে। সে সময় থেকে তিনি হন জম্মু-কাশ্মীরের করদ মহারাজা এবং ইংরেজদের মিত্র। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে জম্মু-কাশ্মীরের হিন্দু রাজা ছিলেন গুলাব সিংয়ের বংশের স্যার হরি সিং। তিনি কাশ্মীরকে ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। হরি সিং ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে যোগ দেন ভারতীয় ইউনিয়নে। ফলে কাশ্মীর নিয়ে বাধে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ছিল দুটি অংশে বিভক্ত। এক ভাগকে বলা হতো ব্রিটিশ ভারত, যা চলত সরাসরি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে। আর অন্য অংশকে বলা হতো দেশীয় রাজাদের শাসিত অংশ, যা ছিল মূলত করদ রাজ্য। করদ রাজ্যের রাজারা ব্রিটিশ প্রশাসনকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের বিনিময়ে তাদের রাজ্য এক প্রকার স্বাধীনভাবেই শাসন করত। ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যে এ ধরনের করদ রাজ্যের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে ছিল প্রায় ৫৮৪টি, যা ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের মোট আয়তনের প্রায় ৫ ভাগের ২ ভাগ। কাশ্মীর ছিল এমনই দেশীয় রাজাদের শাসনের অধীন একটি করদ রাজ্য। ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রশ্ন ওঠে, ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হলে এসব করদ রাজ্য ও দেশীয় রাজাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে। সিদ্ধান্ত হয়, দেশীয় রাজারা তাদের আপন ইচ্ছা-মর্জিতে ভারতে অথবা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন, কিংবা থাকতে পারবেন স্বাধীন।
ভারতের বর্তমান গুজরাট রাজ্যের অধীন জুনাগড় ছিল ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের একটি করদ রাজ্য। সে সময় জুনাগড়ের শাসক ছিলেন মুসলমান। কিন্তু বেশির ভাগ প্রজা ছিলেন হিন্দু। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের সময় জুনাগড়ের শাসক (নবাব) পাকিস্তানে যোগ দেন। কিন্তু ভারত জুনাগড় দখল করে এই যুক্তিতে যে জুনাগড় হিন্দুপ্রধান এবং তা পাকিস্তান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। দক্ষিণ ভারতে বিরাট আরেকটি ব্রিটিশ করদ রাজ্য ছিল হায়দরাবাদ। একে শাসন করতেন মুসলমান নবাব (হায়দরাবাদের নিজাম)। ১৯৪৭ সালে হায়দরাবাদের নিজাম ভারত কিংবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চান। কিন্তু ভারত এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদ আক্রমণ করে। ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে হায়দরাবাদের নিজামের সেনাবাহিনী এবং হায়দরাবাদের মুসলমানদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী সম্মিলিতভাবে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে ৬ দিনের মধ্যেই ভারতীয় সৈন্যবাহিনী হায়দরাবাদ দখল করে নেয়। নিহত হয় অনেক মুসলমান। এভাবে উৎখাত করা হয় হায়দরাবাদের ৬০০ বছরের মুসলমান শাসন। ২ লাখ ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনসংবলিত সেকালের বিশাল হায়দরাবাদ রাজ্য এখন ভারতের দক্ষিণের তিন রাজ্য তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত হয়ে বিলীন হয়েছে।
১৯৪৭ সালে কাশ্মীরের হিন্দু রাজা হরি সিং যোগ দিয়েছিলেন ভারতে। কিন্তু কাশ্মীরের বেশির ভাগ প্রজাই ছিলেন মুসলমান এবং তাঁদের আবাসভূমি পাকিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া। কাশ্মীরের মুসলমানরা রাজা হরি সিংয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আর তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলের পাঠান সৈন্যরা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দখলে নিয়ে নেয় কাশ্মীরের বিশাল এক অংশ। পৌঁছে যায় শ্রীনগরের উপকণ্ঠে। এভাবেই কাশ্মীর নিয়ে শুরু হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরু কাশ্মীর সমস্যাকে সমাধানের জন্য নিয়ে যান জাতিসংঘে। পাকিস্তান কাশ্মীর সমস্যাকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়নি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বলে যুদ্ধবিরতি করতে এবং কাশ্মীরে গণভোটের মাধ্যমে গণ-অভিমত (Plebiscite) গ্রহণ করতে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ফলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয় এবং দেশ দুটির মধ্যে স্থির হয় একটি যুদ্ধবিরোধী রেখা। এটাই হলো কাশ্মীরকে বিভাজনকারী সীমান্তরেখা লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে মোট পাঁচবার প্রস্তাব পাস করে বলে দেয় যে কাশ্মীরিরা পাকিস্তানে যোগ দেবে, নাকি ভারতে যোগ দেবে, সে সম্পর্কে কাশ্মীরের জনগণের কাছ থেকে গণ-অভিমত গ্রহণ করতে আয়োজন করতে হবে গণভোট। নেহরু প্রথমে গণভোটের প্রস্তাব মেনে নিলেও পরবর্তীকালে তা অমান্য করেন। তবে পাকিস্তান সম্মত হয় গণভোট গ্রহণে এবং এখনো তাতে স্থির আছে। ভারত সরকার ১৯৫৭ সালের ২৬ জানুয়ারি তাদের প্রজাতন্ত্র দিবসে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীরে গণ-অভিমত গ্রহণের পুনর্বার দাবি জানায়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে ভেটো দেয়। ফলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে গণ-অভিমত নেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
সাবেক জম্মু-কাশ্মীরের ৩ ভাগের ১ ভাগ অংশ পাকিস্তান দখল করেছিল। এই অংশ এখনো পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে আছে। একে বলা হয় আজাদ কাশ্মীর। পাকিস্তান এখনো কাশ্মীরিদের গণ-অভিমত গ্রহণে রাজি থাকায় সেই সাবেক জম্মু-কাশ্মীরের যে অংশ দখল করেছে, তাকে বলছে না পাকিস্তানের অংশ। দেশটি আজাদ কাশ্মীরকে এখন পর্যন্ত ঘোষণা করেনি নিজের কোনো প্রদেশ হিসেবে। আজাদ কাশ্মীরের রয়েছে একটি পৃথক পতাকা, আলাদা জাতীয় সংসদ, একজন প্রধানমন্ত্রী ও একজন প্রেসিডেন্ট। আজাদ কাশ্মীরের জনগণ পাকিস্তানি পাসপোর্টের পরিবর্তে একটি বিশেষ পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্যে পাকিস্তান এমন ব্যবস্থা নিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের পূর্বাংশে অবস্থিত লাদাখ অঞ্চল একসময় ছিল চীনের তিব্বতের অংশ। ব্রিটিশ শাসনামলে জম্মুর হিন্দু রাজা গুলাব সিং ব্রিটিশ সৈন্যদের সহযোগিতায় ১৮৩৪ থেকে ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিব্বতের লাদাখ অঞ্চল জয় করেন। এরপর ব্রিটিশদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা গুলাব সিং ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে কাশ্মীর কিনে নেন। এভাবে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ নিয়ে গঠিত হয় বৃহত্তর জম্মু-কাশ্মীর। লাদাখের মানুষ দেখতে অবিকল তিব্বতিদের মতো। তারা তিব্বতি ভাষায় কথা বলে। ধর্মে তারা হিন্দু নয়, মুসলমানও নয়। তারা হলো তিব্বতিদের মতো লামা বৌদ্ধ। ১৯৬২ সালে চীন ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা লাদাখের ৩২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়। চীনের দখল করা লাদাখ অঞ্চলের নতুন নামকরণ হয় আকসাই চীন। এদিকে ১৯৬৩ সালে চীন-পাকিস্তানের মধ্যে এক সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান তার দখলে থাকা লাদাখ অঞ্চলের ৫ হাজার ১৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকা চীনকে উপহার দেয়। ফলে চীন তার জিন জিয়াং বা উইঘুর প্রদেশ থেকে আকসাই চীন অঞ্চলের মধ্যে চলাচলের সংযোগ স্থাপনের সুযোগ লাভ করে। এভাবে কাশ্মীরের মহারাজাদের শাসনাধীন ব্রিটিশ আমলের করদ রাজ্য জম্মু-কাশ্মীর এখন তিন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশ আছে পাকিস্তানের হাতে, আর এক অংশ আছে ভারতের হাতে এবং অন্য অংশ আছে মহাচীনের নিয়ন্ত্রণে। কাশ্মীর সমস্যা তাই হয়ে উঠেছে আগের তুলনায় অনেক জটিল। এখন সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ভারত, পাকিস্তান ও চীন—এই তিন রাষ্ট্রের স্বার্থ। কাশ্মীর সমস্যা আর হয়ে নাই কেবলই ভারত-পাকিস্তান সমস্যা। কাশ্মীর সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনেরও প্রসঙ্গ। বর্তমানে ভারত কাশ্মীর সমস্যাকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে প্রচার করে। কাশ্মীর সংকট সমাধানে পাকিস্তান-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে ভারত নিজের খেয়ালখুশিমতো রাজি হয়। তবে ভারত কাশ্মীরবিষয়ক আলোচনায় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত করতে চায় না তৃতীয় কোনো দেশকে। কিন্তু বাস্তবে কাশ্মীর হলো আন্তর্জাতিক সমস্যা, যা প্রথমে ভারতই নিয়ে গিয়েছিল জাতিসংঘে। বর্তমানে ভারত পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট বাল্টিস্তান, চীনের দখলে থাকা আকসাই চীন, পাকিস্তান কর্তৃক চীনকে উপহার দেওয়া লাদাখের অংশ—এসবের সমন্বয়ে গঠিত পুরো অঞ্চলকেই নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে। তবে ভারত চীনের কাছে হারানো আকসাই চীন এলাকা ফিরে পাওয়ার জন্য দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ভারত কেবলই চাচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা বজায় রাখতে।
ভারত সরকার শুরুতে অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরকে দিয়েছিল যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন। যেমন কাশ্মীরে ছিল পৃথক রাষ্ট্রপতি। তিনি নির্বাচিত হতেন কাশ্মীরের নির্বাচকমণ্ডলী দিয়ে। কাশ্মীরের রাষ্ট্রপতিকে বলা হতো সর্দার-ই-রিয়াসত। তাঁর ছিল যথেষ্ট ক্ষমতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু এটা করতে পেরেছিলেন কাশ্মীরের নেতা শেখ আব্দুল্লাহর সঙ্গে খাতির জমিয়ে। শেখ আব্দুল্লাহ থাকতে চেয়েছিলেন ভারতের অনুগত হয়ে। ভারত দীর্ঘদিন এই শেখ আব্দুল্লাহ ও তাঁর পরিবার এবং তাঁদের রাজনৈতিক দলকে (ন্যাশনাল কনফারেন্স) কাশ্মীরের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে রাখে। অতঃপর সুযোগমতো ভারত সরকার ধাপে ধাপে কাশ্মীরকে প্রদত্ত বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বিলুপ্ত করে এবং শেখ আব্দুল্লাহর পরিবার কাশ্মীরের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন।
কাশ্মীর এখন ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যমাত্র। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের বিজেপি সরকার দেশটির সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ এবং অনুচ্ছেদ ৩৫(ক) বাতিল করে। এর মাধ্যমে ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের যে সীমিত স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা ছিল, সেটি বিলুপ্ত হয়। এরপর ভারতীয় আইনসভায় জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাস হয়। এই আইনের মাধ্যমে বৃহত্তর জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (Union Territory) সৃষ্টি করা হয়। এভাবে কাশ্মীর ভারতের পুরোপুরি হস্তগত হয়। আর কাশ্মীরের যেসব রাজনৈতিক নেতা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অনুগত হয়ে থেকে ছিলেন, তাঁরা বিমর্ষ ও হতবাক হয়ে যান।
ভারতীয় শাসনতন্ত্রের ৩৬৭ নম্বর ধারার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভারত ছাড়া যেকোনো রাষ্ট্রই বিদেশি রাষ্ট্র, তবে রাষ্ট্রপতি কোনো রাষ্ট্রকে ‘বিদেশি রাষ্ট্র নয়’ বলে ঘোষণা করতে পারেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁদের সংবিধানের এই ধারা অনুসারে কাশ্মীরকে করে নিয়েছেন ভারতীয় রাষ্ট্রের অংশ। ভারতের রাষ্ট্রপতি যে ভবিষ্যতে আর কোনো দেশকে এভাবে ভারতের অংশ করে নিতে চাইবেন না, সেটা বলা যায় না। ভারতীয় সংবিধানের এই ধারার জন্য বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। ভারত ১৯৪৮ সালে করেছিল হায়দরাবাদ দখল। এরপর ১৯৭৫ সালে দখল করে সিকিম। ভারতের এই সিকিম দখলে সে সময় বাংলাদেশ হয়েছিল বিশেষভাবে শঙ্কিত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুর পিতামহ গঙ্গাধর নেহরু ছিলেন কাশ্মীরের অধিবাসী। এ কারণে জওহর লাল নেহরু ব্যক্তিগতভাবে কাশ্মীরের জন্য অনুভব করতেন বিশেষ মমতা। তাই তিনি চান, কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকুক। একসময় অনেকে ভাবতেন, কাশ্মীর সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারে জম্মু-কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। যেমন যৌথ শাসন আছে ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে অ্যান্ডোরা (Andorra) নামক রাষ্ট্রে। অ্যান্ডোরা শাসিত হয় ফ্রান্স ও স্পেনের মাধ্যমে। অ্যান্ডোরার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না এই দুই রাষ্ট্র। কেবল পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষানীতির ক্ষেত্রে অ্যান্ডোরাকে আলোচনা করতে হয় ফ্রান্স ও স্পেনের সঙ্গে। এখন যদি জম্মু-কাশ্মীরকে পাকিস্তান এবং ভারতের যৌথ শাসনে আনা যায়, তবে উভয় দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে শান্তি। দূর হবে উভয় দেশের কোটি কোটি মানুষের দারিদ্র্য।
কাশ্মীর একসময় ছিল একটি পৃথক সালতানাত। কাশ্মীরিদের আছে একটি পৃথক ভাষা এবং এর সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলিম। তাই কাশ্মীরিরা হতে চাইতে পারে বাংলাদেশের মানুষের মতোই স্বাধীন। কাশ্মীরিরা পৃথক স্বাধীন কাশ্মীরি রাষ্ট্র গঠনের জন্য কিছুদিন আগেও ভারতের বিরুদ্ধে করেছে প্রচণ্ড সংগ্রাম। বর্তমানে তা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানে স্তিমিত হয়ে এলেও পুনরায় তা যেকোনো সময় প্রচণ্ড রূপ ধারণ করতে পারে। ভারতীয়দের ভাষায় কাশ্মীরদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে বলা হচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদ। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এটা হলো কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ব্রিটিশ শাসনামলেও কাশ্মীর ছিল একটি পৃথক দেশীয় রাজ্য। তখনো কাশ্মীর ছিল না ভারতের অংশ। কাশ্মীরের এই পার্থক্য চেতনা তাদের উদ্বুদ্ধ করছে স্বাধীন কাশ্মীর রাষ্ট্র গঠনের। তাই একে বলা চলে না ভারতীয় ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদ। বস্তুত ভারত কাশ্মীরকে কবজায় রাখতে এ ধরনের অনেক ভাষায় প্রয়োগ করতে পারে। একসময় অনেকে বলতেন, কাশ্মীরের উচিত হবে ভারতের সঙ্গে থাকা। কারণ, ভারত হলো একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র আর পাকিস্তান হলো ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গিয়ে পড়েছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির হাতে। বিজেপির নেতারা এখন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন অনেকটা হিটলারের আর্যবাদের তত্ত্বকে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে...
৫ ঘণ্টা আগে
যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের...
৫ ঘণ্টা আগে
দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়।
৫ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।
গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।
গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে
৩০ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে...
৫ ঘণ্টা আগে
যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের...
৫ ঘণ্টা আগে
দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়।
৫ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে বা পিছিয়ে দিতে হবে? কিন্তু তেমনই একটি প্রসঙ্গ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এক বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এমন সময়ে সংকট উত্তরণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানিয়েছে এনসিপি।
ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যখন আসবে তখন তফসিল দেওয়া হলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন তফসিল পেছাতে চাইব? আমরা চাই সংকট সমাধান করে তফসিল দেওয়া হোক।’ রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গটি এনসিপি নেতারা এমন সময় জনসমক্ষে আনলেন যখন পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তো তফসিল ঘোষণার কথা কমিশন বলেছিল। এখন এনসিপি নেতাদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সংকটের প্রসঙ্গটি জনপরিসরে এসেছে এবং বহুল আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
সিইসির সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই তাঁরা রাজনীতিতে সংকটময় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বলতে চেয়েছেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোনো কথা শোনা যায়নি। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা যে অত্যন্ত সংকটময়, যেমনটি এর আগে কখনো হয়নি সে কথা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই দেশবাসীকে অবহিত করেছেন। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলেছে। একই সঙ্গে বিএনপির দলীয় এবং নির্বাচনী কার্যক্রমও চলেছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংকটের তো কিছু নেই। এই কারণে রাজনীতিতে নতুন করে কিছু অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
হ্যাঁ, খালেদা জিয়ার সংকটময় স্বাস্থ্য পরিস্থিতির খবরে দেশবাসীর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই একটা উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। কারণ, তিনি দেশের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেত্রী হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধাভাজন। সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিকদের একজন। তাঁর জন্য সারা দেশের মানুষ তাই প্রার্থনা করেছে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং মানুষের প্রার্থনা ও ভালোবাসায় তিনি লন্ডনে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি এবার হাসপাতালে ভর্তির আগের অবস্থায় কিংবা তার চেয়েও সুস্থ হয়ে স্বস্থানে ফিরে আসবেন।
খালেদা জিয়া তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তিনি দলের চেয়ারপারসন হয়েও এই দীর্ঘ অসুস্থতার সময়ে কি দলের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পেরেছেন? কিংবা এবারও তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর কি দল এবং দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন? এমনকি তিনি যে তিনটি আসনে প্রার্থী হবেন বলে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই আসনগুলোতে তিনি কি সশরীরে নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারবেন? দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গের অসুস্থতা, সঙ্গে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ৮০ বছর বয়সী একজন মানুষের পক্ষে কি তা সম্ভব? সম্ভব নয়। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন, সবগুলোতে বিজয়ী হবেন। এমনকি লন্ডনের হাসপাতালে বসে নির্বাচন করলেও। তা ছাড়া এমন সম্ভাবনাও আছে যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন অন্য কোনো দল সেই আসনগুলোতে প্রার্থীই দেবে না। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে রাজনীতির সংকটময় এবং অস্থিতিশীল বলা যেতে পারে আমরা জানি না।
তবে দেশের রাজনীতিতে সংকট আছে। অস্থিতিশীলতাও আছে। কিন্তু তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নাই। সম্পর্ক আছে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না তা নিয়ে মানুষ নিঃশঙ্ক নয়। এটা একটা বড় সংকট। মানুষের আস্থার সংকট। আরও সংকট আছে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের সিদ্ধান্ত জামায়াতসহ যে দলগুলো বা যে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মানতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের ভূমিকা শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। এটা আরেকটা বড় সংকট। আরও সংকট আছে। নির্বাচনের মাঠে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে কি না তা নিয়ে এনসিপির যে উদ্বেগ সেটাও একটা বড় সংকট। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তো স্পষ্ট করেই বলেছেন ‘এখন যে ডিসি-এসপিদের নিয়োগ-বদলি করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখে। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলে আমরা মনে করি। এই বিষয়ে যেন ইসি ব্যবস্থা নেয় এবং নিরপেক্ষ লোক যেন নিয়োগ হয়।’ এর আগে তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও তুলেছিলেন। সেই পুনর্গঠন তো হয়নি। এই যে নানা ধরনের ক্ষতগুলো রাজনীতিতে রয়েছে, সেগুলোই সংকট। যথেষ্ট পুষ্টি উপাদান পেলে এর যেকোনো একটি ক্ষত ক্যানসারের মতো গুরুতর সংকট হয়ে উঠতে পারে। এর কোনোটির সঙ্গেই খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি তো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম বন্ধ করে বসে নেই! গত বৃহস্পতিবারও তো বিএনপি ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি চলেছে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া-প্রস্তুতিও। এখানে তো কোনো সংকট দেখা যাচ্ছে না।
সংকট আরও অনেক রকম আছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন। আগামীকাল রোববারই হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে। এই রিট আবেদনে সংসদ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। যুক্তি হলো, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এই কাজে নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রতিটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগকে দেওয়া হয়। নির্বাহী বিভাগ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করে। ফলে নির্বাচন নিয়ে নানামুখী বিতর্ক তৈরি হয়। অত্যন্ত জোরালো যুক্তি। দীর্ঘদিন ধরেই এসব প্রশ্ন ছিল। নিরসন হয়নি। ফলে এগুলোও রয়ে গেছে সংকট হিসেবে। এসবের মীমাংসা হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে বা পিছিয়ে দিতে হবে? কিন্তু তেমনই একটি প্রসঙ্গ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এক বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এমন সময়ে সংকট উত্তরণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানিয়েছে এনসিপি।
ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যখন আসবে তখন তফসিল দেওয়া হলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন তফসিল পেছাতে চাইব? আমরা চাই সংকট সমাধান করে তফসিল দেওয়া হোক।’ রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গটি এনসিপি নেতারা এমন সময় জনসমক্ষে আনলেন যখন পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তো তফসিল ঘোষণার কথা কমিশন বলেছিল। এখন এনসিপি নেতাদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সংকটের প্রসঙ্গটি জনপরিসরে এসেছে এবং বহুল আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
সিইসির সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই তাঁরা রাজনীতিতে সংকটময় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বলতে চেয়েছেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোনো কথা শোনা যায়নি। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা যে অত্যন্ত সংকটময়, যেমনটি এর আগে কখনো হয়নি সে কথা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই দেশবাসীকে অবহিত করেছেন। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলেছে। একই সঙ্গে বিএনপির দলীয় এবং নির্বাচনী কার্যক্রমও চলেছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংকটের তো কিছু নেই। এই কারণে রাজনীতিতে নতুন করে কিছু অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
হ্যাঁ, খালেদা জিয়ার সংকটময় স্বাস্থ্য পরিস্থিতির খবরে দেশবাসীর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই একটা উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। কারণ, তিনি দেশের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেত্রী হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধাভাজন। সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিকদের একজন। তাঁর জন্য সারা দেশের মানুষ তাই প্রার্থনা করেছে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং মানুষের প্রার্থনা ও ভালোবাসায় তিনি লন্ডনে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি এবার হাসপাতালে ভর্তির আগের অবস্থায় কিংবা তার চেয়েও সুস্থ হয়ে স্বস্থানে ফিরে আসবেন।
খালেদা জিয়া তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তিনি দলের চেয়ারপারসন হয়েও এই দীর্ঘ অসুস্থতার সময়ে কি দলের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পেরেছেন? কিংবা এবারও তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর কি দল এবং দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন? এমনকি তিনি যে তিনটি আসনে প্রার্থী হবেন বলে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই আসনগুলোতে তিনি কি সশরীরে নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারবেন? দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গের অসুস্থতা, সঙ্গে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ৮০ বছর বয়সী একজন মানুষের পক্ষে কি তা সম্ভব? সম্ভব নয়। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন, সবগুলোতে বিজয়ী হবেন। এমনকি লন্ডনের হাসপাতালে বসে নির্বাচন করলেও। তা ছাড়া এমন সম্ভাবনাও আছে যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন অন্য কোনো দল সেই আসনগুলোতে প্রার্থীই দেবে না। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে রাজনীতির সংকটময় এবং অস্থিতিশীল বলা যেতে পারে আমরা জানি না।
তবে দেশের রাজনীতিতে সংকট আছে। অস্থিতিশীলতাও আছে। কিন্তু তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নাই। সম্পর্ক আছে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না তা নিয়ে মানুষ নিঃশঙ্ক নয়। এটা একটা বড় সংকট। মানুষের আস্থার সংকট। আরও সংকট আছে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের সিদ্ধান্ত জামায়াতসহ যে দলগুলো বা যে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মানতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের ভূমিকা শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। এটা আরেকটা বড় সংকট। আরও সংকট আছে। নির্বাচনের মাঠে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে কি না তা নিয়ে এনসিপির যে উদ্বেগ সেটাও একটা বড় সংকট। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তো স্পষ্ট করেই বলেছেন ‘এখন যে ডিসি-এসপিদের নিয়োগ-বদলি করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখে। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলে আমরা মনে করি। এই বিষয়ে যেন ইসি ব্যবস্থা নেয় এবং নিরপেক্ষ লোক যেন নিয়োগ হয়।’ এর আগে তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও তুলেছিলেন। সেই পুনর্গঠন তো হয়নি। এই যে নানা ধরনের ক্ষতগুলো রাজনীতিতে রয়েছে, সেগুলোই সংকট। যথেষ্ট পুষ্টি উপাদান পেলে এর যেকোনো একটি ক্ষত ক্যানসারের মতো গুরুতর সংকট হয়ে উঠতে পারে। এর কোনোটির সঙ্গেই খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি তো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম বন্ধ করে বসে নেই! গত বৃহস্পতিবারও তো বিএনপি ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি চলেছে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া-প্রস্তুতিও। এখানে তো কোনো সংকট দেখা যাচ্ছে না।
সংকট আরও অনেক রকম আছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন। আগামীকাল রোববারই হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে। এই রিট আবেদনে সংসদ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। যুক্তি হলো, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এই কাজে নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রতিটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগকে দেওয়া হয়। নির্বাহী বিভাগ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করে। ফলে নির্বাচন নিয়ে নানামুখী বিতর্ক তৈরি হয়। অত্যন্ত জোরালো যুক্তি। দীর্ঘদিন ধরেই এসব প্রশ্ন ছিল। নিরসন হয়নি। ফলে এগুলোও রয়ে গেছে সংকট হিসেবে। এসবের মীমাংসা হওয়া জরুরি।

কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে
৩০ এপ্রিল ২০২৫
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের...
৫ ঘণ্টা আগে
দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়।
৫ ঘণ্টা আগেফারিহা জামান নাবিলা

যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্বাস কেড়ে নিচ্ছে। তারা এমন এক পৃথিবীর দিকে হাঁটছে, যেখানে নির্মল বাতাস বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় বড় শহর এখন বায়ুদূষণের চরম ঝুঁকিতে। বায়ুতে ধুলা, ধোঁয়া, কার্বন—সব মিলিয়ে বায়ুদূষণ এখন চরম পর্যায়ে চলে গেছে। শিশুদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি বায়ুদূষণ। বাংলাদেশের রাজধানী শহর প্রায়ই বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় উঠে আসছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও বিকাশকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
শহরের স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও কাশির হার বাড়ছে। ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে শহরজুড়ে বাতাস প্রায় ধোঁয়াটে হয়ে থাকে, যা শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। বায়ুদূষণ শুধু আজকের নয়, এটি সরাসরি আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আঘাত করছে।
বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটা মানুষের স্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকট। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বায়ুদূষণের কারণে। দেশে শিল্প এলাকা, ইটভাটা, কারখানা ও যানবাহনের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। ফলে বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাস, ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডসহ নানা দূষণ উপাদান মিশে যাচ্ছে। শিশুরা এসব দূষণের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, দুর্বল ফুসফুস নিয়ে বড় হচ্ছে। শহরে প্রায় সারা বছরই নির্মাণকাজ চলে। এসব কারণে যে ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুদের। ধুলাবালুর ছোট কণা ফুসফুসে সরাসরি গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে।
বাতাস বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো গাছ। সবুজ কমে যাওয়ায় বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকে এবং পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ পায় না। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আগামী প্রজন্মের শ্বাসযন্ত্রে। শিল্প-কারখানার মালিক, যানবাহনের মালিকদের অসতর্কতার জন্য বায়ুদূষণ দেখা দেয়। পরিবেশ আইন থাকলেও প্রয়োগ দুর্বল হওয়ায় দূষণ কমানোর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হয় না। প্রাপ্তবয়স্কর তুলনায় শিশুর শ্বাসযন্ত্র বেশি নাজুক। তারা বেশি দ্রুত শ্বাস নেয়, ফুসফুসের বৃদ্ধি চলমান থাকে ফলে দূষিত বাতাস তাদের দেহে আরও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এই কারণেই বায়ুতে থাকা বিষাক্ত কণা তাদের ভবিষ্যৎকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। পুরোনো বাস, ট্রাক ও লেগুনার ধোঁয়াই শহরের বড় দূষণকারী। অনুমোদনহীন ও পুরোনো প্রযুক্তির ইটভাটা বিপুল ক্ষতিকর ধোঁয়া ছাড়ে। ফলে বায়ুদূষণ দিনে দিনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।
বায়ুদূষণ থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা এবং পুরোনো গাড়িগুলো রাস্তায় না নামানো। ইলেকট্রিক বা হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।
সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ধোঁয়া পরিশোধক যন্ত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ইটভাটা তৈরি করা এবং ক্ষতিকর পুরোনো ভাটা বন্ধ করা। শহর ও গ্রামে গাছ লাগানো, রাস্তার পাশে সবুজ বেল্ট তৈরি করা, যাতে ধুলাবালু কমে ও বাতাস পরিষ্কার থাকে।
মানুষ বুঝে আর না বুঝে বায়ুদূষণ করে নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি করছে। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার, অপ্রয়োজনে গাড়ি না চালানো এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দূষণের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা আপডেট করা এবং কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
বায়ুদূষণ এক দিনে তৈরি হওয়া সমস্যা নয়। তাই সমাধানও এক দিনে হবে না। তবে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক—সবাই একসঙ্গে কাজ করলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলানো সম্ভব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ দেশ দিতে হলে আজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—উন্নয়ন হবে, কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। পরিষ্কার বাতাস আমাদের প্রাপ্য অধিকার এবং তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্বাস কেড়ে নিচ্ছে। তারা এমন এক পৃথিবীর দিকে হাঁটছে, যেখানে নির্মল বাতাস বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় বড় শহর এখন বায়ুদূষণের চরম ঝুঁকিতে। বায়ুতে ধুলা, ধোঁয়া, কার্বন—সব মিলিয়ে বায়ুদূষণ এখন চরম পর্যায়ে চলে গেছে। শিশুদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি বায়ুদূষণ। বাংলাদেশের রাজধানী শহর প্রায়ই বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় উঠে আসছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও বিকাশকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
শহরের স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও কাশির হার বাড়ছে। ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে শহরজুড়ে বাতাস প্রায় ধোঁয়াটে হয়ে থাকে, যা শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। বায়ুদূষণ শুধু আজকের নয়, এটি সরাসরি আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আঘাত করছে।
বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটা মানুষের স্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকট। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বায়ুদূষণের কারণে। দেশে শিল্প এলাকা, ইটভাটা, কারখানা ও যানবাহনের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। ফলে বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাস, ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডসহ নানা দূষণ উপাদান মিশে যাচ্ছে। শিশুরা এসব দূষণের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, দুর্বল ফুসফুস নিয়ে বড় হচ্ছে। শহরে প্রায় সারা বছরই নির্মাণকাজ চলে। এসব কারণে যে ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুদের। ধুলাবালুর ছোট কণা ফুসফুসে সরাসরি গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে।
বাতাস বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো গাছ। সবুজ কমে যাওয়ায় বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকে এবং পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ পায় না। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আগামী প্রজন্মের শ্বাসযন্ত্রে। শিল্প-কারখানার মালিক, যানবাহনের মালিকদের অসতর্কতার জন্য বায়ুদূষণ দেখা দেয়। পরিবেশ আইন থাকলেও প্রয়োগ দুর্বল হওয়ায় দূষণ কমানোর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হয় না। প্রাপ্তবয়স্কর তুলনায় শিশুর শ্বাসযন্ত্র বেশি নাজুক। তারা বেশি দ্রুত শ্বাস নেয়, ফুসফুসের বৃদ্ধি চলমান থাকে ফলে দূষিত বাতাস তাদের দেহে আরও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এই কারণেই বায়ুতে থাকা বিষাক্ত কণা তাদের ভবিষ্যৎকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। পুরোনো বাস, ট্রাক ও লেগুনার ধোঁয়াই শহরের বড় দূষণকারী। অনুমোদনহীন ও পুরোনো প্রযুক্তির ইটভাটা বিপুল ক্ষতিকর ধোঁয়া ছাড়ে। ফলে বায়ুদূষণ দিনে দিনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।
বায়ুদূষণ থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা এবং পুরোনো গাড়িগুলো রাস্তায় না নামানো। ইলেকট্রিক বা হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।
সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ধোঁয়া পরিশোধক যন্ত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ইটভাটা তৈরি করা এবং ক্ষতিকর পুরোনো ভাটা বন্ধ করা। শহর ও গ্রামে গাছ লাগানো, রাস্তার পাশে সবুজ বেল্ট তৈরি করা, যাতে ধুলাবালু কমে ও বাতাস পরিষ্কার থাকে।
মানুষ বুঝে আর না বুঝে বায়ুদূষণ করে নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি করছে। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার, অপ্রয়োজনে গাড়ি না চালানো এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দূষণের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা আপডেট করা এবং কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
বায়ুদূষণ এক দিনে তৈরি হওয়া সমস্যা নয়। তাই সমাধানও এক দিনে হবে না। তবে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক—সবাই একসঙ্গে কাজ করলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলানো সম্ভব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ দেশ দিতে হলে আজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—উন্নয়ন হবে, কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। পরিষ্কার বাতাস আমাদের প্রাপ্য অধিকার এবং তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে
৩০ এপ্রিল ২০২৫
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে...
৫ ঘণ্টা আগে
দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়।
৫ ঘণ্টা আগেনুসরাত রুষা

দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়। এই বৈপরীত্যই বলে দেয়—আইনের চোখ সবার জন্য সমান নয়; ক্ষমতা যাদের হাতে, দেশও যেন তাদেরই।
এক সপ্তাহে কয়েকটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। নোয়াখালীর বজরা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, সংস্কৃতির অংশ। সেখানে মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা, গালাগাল করে ‘বেপর্দা নারী’ বলে কটূক্তি করার একটা ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। একজন নারী যখন বললেন, ‘মক্কা-মদিনাতেও তো নারীরা মসজিদে যায়’—তখন পুরো এলাকার মানুষ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যেন যুক্তি ও বাস্তবতা তাদের কাছে অপরাধ, আর নারী হওয়া আরও বড় অপরাধ।
একই সপ্তাহে নরসিংদীতে ঘটেছে আরেকটা ঘটনা। অটোতে একটি ইসলামি দলের দুইজন কর্মী অপরিচিত মানুষ, তাঁরা আমার বন্ধুদের জোর করে ধর্ম গ্রহণের উপদেশ দিতে লাগলেন। বললেন, হিন্দু মেয়ে হলে বাড়তি দুঃখ হয় তাঁদের। তাই ইসলাম গ্রহণ করাই উত্তম! ধর্মের নামে কি এভাবে ঠেলেঠুলে মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়? এসব কি স্পষ্ট ধর্মীয় জবরদস্তির পর্যায়ে পড়ে না?
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়—শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কিছু হিজাব–বোরকা পরিহিত তরুণী অন্য মেয়েদের অপমান করছে শুধু তারা হিজাব পরে না বলে। নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার সামাজিক কাঠামোয় মেয়েদেরই অংশগ্রহণ—এটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। পিতৃতন্ত্র শুধু পুরুষদের হাতে থাকে না; নারীর হাত ধরেও সে বাড়ে, শক্তি পায়।
দেশজুড়ে যে অনানুষ্ঠানিক ‘মোরাল পুলিশিং’ চলছে—এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সংগঠিত একটি মানসিকতা, যা নারীর পোশাক, চলাফেরা, মতপ্রকাশ—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কারও হাতে লাঠি নেই, কিন্তু সবার কাছে আইন-শাসনের মতো রায় দেওয়ার মতো ক্ষমতা চর্চার বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনকে উপেক্ষা করে কেউ নিজেকে আইন রক্ষক সাজাচ্ছে, কেউ ধর্মের নামে অভিভাবক আবার কেউ সমাজের নামে বিচারক সাজছে।
এই দেশে মেয়েরা কি নাগরিক? নাকি শুধু নজরদারির বস্তু? যদি বাউলের গান ‘অপমান’ হয়, তবে ওয়াজে নারী বিদ্বেষ অপমান নয় কেন? যদি একজন নারী মসজিদে ঢুকতে না পারা অপরাধ না হয়, তবে তাঁকে গালাগাল করা অপরাধ নয় কেন? যদি হিজাব না পরা ‘অপরাধ’ হয়, তবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা অপরাধ নয় কেন?
এই দ্বৈত মানদণ্ডের নামই পিতৃতন্ত্র—যেখানে আইন নয়, চলে তাদের ইচ্ছায়; মানবতা নয়, চলে নিয়ন্ত্রণের নেশায়।
বাংলাদেশ কোনো একদল মানুষের নয়। নারীকে ভয় দেখিয়ে, নিয়ন্ত্রণ করে, অসম্মান করে যে সমাজ টিকিয়ে রাখা যায়—এ ধারণা ভ্রান্ত। উন্নত সমাজে নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্বাধীন চলাফেরা—এগুলো মৌলিক বিষয়। আমাদের এখানে এগুলো যেন ক্রমেই বিলাসিতায় পরিণত হচ্ছে।
সময় এসেছে এই অঘোষিত মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। প্রশ্ন করার—কারা আপনাদের এই অধিকার দিল? ধর্মের নামে অপমান, সমাজের নামে গালিগালাজ, নৈতিকতার নামে নিপীড়ন—এসব মানবতা নয়, ক্ষমতার প্রদর্শন।
বাংলাদেশের নারীরা আর কারও অনুমতির অপেক্ষায় নেই। রাস্তায়, ক্যাম্পাসে, মসজিদে, রিকশায়—সব জায়গায় তারা সমান নাগরিক অধিকার পাবে, সেটাই রাষ্ট্রীয় নিয়ম হওয়ার কথা ছিল। অধিকার নিয়ে, মর্যাদা নিয়ে, ভয়হীনভাবে বাঁচার জন্য রাষ্ট্রে যে জায়গা তাদের, সেটা ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়। এই বৈপরীত্যই বলে দেয়—আইনের চোখ সবার জন্য সমান নয়; ক্ষমতা যাদের হাতে, দেশও যেন তাদেরই।
এক সপ্তাহে কয়েকটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। নোয়াখালীর বজরা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, সংস্কৃতির অংশ। সেখানে মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা, গালাগাল করে ‘বেপর্দা নারী’ বলে কটূক্তি করার একটা ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। একজন নারী যখন বললেন, ‘মক্কা-মদিনাতেও তো নারীরা মসজিদে যায়’—তখন পুরো এলাকার মানুষ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যেন যুক্তি ও বাস্তবতা তাদের কাছে অপরাধ, আর নারী হওয়া আরও বড় অপরাধ।
একই সপ্তাহে নরসিংদীতে ঘটেছে আরেকটা ঘটনা। অটোতে একটি ইসলামি দলের দুইজন কর্মী অপরিচিত মানুষ, তাঁরা আমার বন্ধুদের জোর করে ধর্ম গ্রহণের উপদেশ দিতে লাগলেন। বললেন, হিন্দু মেয়ে হলে বাড়তি দুঃখ হয় তাঁদের। তাই ইসলাম গ্রহণ করাই উত্তম! ধর্মের নামে কি এভাবে ঠেলেঠুলে মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়? এসব কি স্পষ্ট ধর্মীয় জবরদস্তির পর্যায়ে পড়ে না?
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়—শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কিছু হিজাব–বোরকা পরিহিত তরুণী অন্য মেয়েদের অপমান করছে শুধু তারা হিজাব পরে না বলে। নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার সামাজিক কাঠামোয় মেয়েদেরই অংশগ্রহণ—এটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। পিতৃতন্ত্র শুধু পুরুষদের হাতে থাকে না; নারীর হাত ধরেও সে বাড়ে, শক্তি পায়।
দেশজুড়ে যে অনানুষ্ঠানিক ‘মোরাল পুলিশিং’ চলছে—এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সংগঠিত একটি মানসিকতা, যা নারীর পোশাক, চলাফেরা, মতপ্রকাশ—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কারও হাতে লাঠি নেই, কিন্তু সবার কাছে আইন-শাসনের মতো রায় দেওয়ার মতো ক্ষমতা চর্চার বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনকে উপেক্ষা করে কেউ নিজেকে আইন রক্ষক সাজাচ্ছে, কেউ ধর্মের নামে অভিভাবক আবার কেউ সমাজের নামে বিচারক সাজছে।
এই দেশে মেয়েরা কি নাগরিক? নাকি শুধু নজরদারির বস্তু? যদি বাউলের গান ‘অপমান’ হয়, তবে ওয়াজে নারী বিদ্বেষ অপমান নয় কেন? যদি একজন নারী মসজিদে ঢুকতে না পারা অপরাধ না হয়, তবে তাঁকে গালাগাল করা অপরাধ নয় কেন? যদি হিজাব না পরা ‘অপরাধ’ হয়, তবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা অপরাধ নয় কেন?
এই দ্বৈত মানদণ্ডের নামই পিতৃতন্ত্র—যেখানে আইন নয়, চলে তাদের ইচ্ছায়; মানবতা নয়, চলে নিয়ন্ত্রণের নেশায়।
বাংলাদেশ কোনো একদল মানুষের নয়। নারীকে ভয় দেখিয়ে, নিয়ন্ত্রণ করে, অসম্মান করে যে সমাজ টিকিয়ে রাখা যায়—এ ধারণা ভ্রান্ত। উন্নত সমাজে নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্বাধীন চলাফেরা—এগুলো মৌলিক বিষয়। আমাদের এখানে এগুলো যেন ক্রমেই বিলাসিতায় পরিণত হচ্ছে।
সময় এসেছে এই অঘোষিত মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। প্রশ্ন করার—কারা আপনাদের এই অধিকার দিল? ধর্মের নামে অপমান, সমাজের নামে গালিগালাজ, নৈতিকতার নামে নিপীড়ন—এসব মানবতা নয়, ক্ষমতার প্রদর্শন।
বাংলাদেশের নারীরা আর কারও অনুমতির অপেক্ষায় নেই। রাস্তায়, ক্যাম্পাসে, মসজিদে, রিকশায়—সব জায়গায় তারা সমান নাগরিক অধিকার পাবে, সেটাই রাষ্ট্রীয় নিয়ম হওয়ার কথা ছিল। অধিকার নিয়ে, মর্যাদা নিয়ে, ভয়হীনভাবে বাঁচার জন্য রাষ্ট্রে যে জায়গা তাদের, সেটা ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে
৩০ এপ্রিল ২০২৫
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে...
৫ ঘণ্টা আগে
যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের...
৫ ঘণ্টা আগে