Ajker Patrika

বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ শুরু করল চীন, উদ্বেগে ভারত ও বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
তিব্বতীয় মালভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইয়ারলুং সাংপো নদী। ছবি: এএফপি
তিব্বতীয় মালভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইয়ারলুং সাংপো নদী। ছবি: এএফপি

তিব্বতের পাহাড়ি অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ শুরু করেছে চীন, যা ভারত ও বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং গত শনিবার (১৯ জুলাই) ইয়ারলুং সাংপো নদীতে এই প্রকল্পের নির্মাণ উদ্বোধন করেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদীটি তিব্বতের মালভূমি পেরিয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম রাজ্যে ঢুকে পরে নাম বদলে সিয়াং ও ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত হয় এবং এরপর বাংলাদেশে যমুনা নদীতে রূপ নেয়।

প্রায় ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের নাম ‘মোতো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র’। এটি নির্মাণ শেষে বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ ‘থ্রি গর্জেস’কেও ছাড়িয়ে যাবে এবং তার তিন গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে বলে দাবি করা হচ্ছে।

চীনের দাবি, এই প্রকল্প স্থানীয় উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণকে প্রাধান্য দেবে। তবে ভারত ও বাংলাদেশ আশঙ্কা করছে, চীন এই বাঁধ ব্যবহার করে উজান থেকে পানি নিয়ন্ত্রণ বা সরিয়ে নিতে পারে—যা নিচের দেশগুলোর জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার লোই ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিব্বতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদীগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকায় কার্যত চীনের হাতে ভারতের অর্থনীতির শ্বাসনালি ধরা রয়েছে।

চলতি মাসে এক সাক্ষাৎকারে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু বলেন, ‘এই বাঁধ নির্মাণ আমাদের আদিবাসী সমাজ ও জীবিকার জন্য অস্তিত্ব সংকট তৈরি করবে। এটি একরকম জলবোমা হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। যদি হঠাৎ পানি ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে পুরো সিয়াং উপত্যকা ধ্বংস হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, এতে আদি জনগোষ্ঠীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি, ঘরবাড়ি এমনকি প্রাণ পর্যন্ত হুমকির মুখে পড়বে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা চীনের সঙ্গে এই মেগাবাঁধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং চীনকে ডাউনস্ট্রিম (নিম্নাঞ্চলীয়) দেশের স্বার্থরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও পরামর্শের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরা হয়।

ভারত ইতিমধ্যে সিয়াং নদীর ওপর নিজস্ব জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে, যা চীনের বাঁধ থেকে হঠাৎ পানি ছাড়ার ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি বাফার হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশও গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের কাছে এই প্রকল্প নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানিয়েছে এবং বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

চীনা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই তিব্বতের এই নদী অববাহিকাকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এই বাঁধ নির্মিত হচ্ছে এমন এক প্রাকৃতিক খাতে, যা বিশ্বের সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘ খাতগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। এখানেই ইয়ারলুং সাংপো নদী নামচা বরওয়া পর্বতের চারপাশ দিয়ে ঘুরে তীব্র গতিতে নিচে নেমে আসে—এই অংশকেই বলা হয় ‘গ্রেট বেন্ড’ বা মহাবক্রতা।

বিবিসি এর আগের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, কর্তৃপক্ষ প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খননের পরিকল্পনা করেছে, যার মাধ্যমে নদীর একটি অংশকে অ১ন্য পথে সরিয়ে নেওয়া হবে।

শিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৌশলীরা নদীকে ‘সোজা করা’র কাজ ও জলপ্রবাহকে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে চালিত করে পাঁচটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলবেন। এই বিদ্যুৎ তিব্বতের বাইরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠানো হবে, তবে স্থানীয় চাহিদাও মেটানো হবে।

চীনা সরকারের ‘পশ্চিম থেকে পূর্বে বিদ্যুৎ পাঠানো’ নীতির (xidiandongsong) আওতায় তিব্বতের দুর্গম উপত্যকা ও পাহাড়ি নদীগুলোতে মেগাবাঁধ নির্মাণে জোর দেওয়া হচ্ছে, যাতে পূর্বাঞ্চলের শিল্পনগরীগুলোকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিজে এই প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে তৎপর।

চীন এই প্রকল্পগুলোকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করলেও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এসব প্রকল্প তিব্বতিদের ভূমি ও পরিবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের একটি উপায় মাত্র।

গত বছর আরেকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার দায়ে শত শত তিব্বতিকে আটক করে চীন। তখন অনেককে মারধরও করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি, যা নিশ্চিত হওয়া ভিডিও ফুটেজেও দেখা গেছে। তিব্বতের জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ উপত্যকাগুলোর প্লাবন ও ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের ঝুঁকি নিয়েও পরিবেশবিদেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয়বার বিধ্বস্ত হলো বিমানবাহিনীর এফ-৭, এই চীনা যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কী

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: পাইলটসহ নিহত ২০, আহত দেড় শতাধিক, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক

৯ লাখ টন চাল কিনবে বাংলাদেশ, আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত

পাইলটের মা-বাবাকে বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে নেওয়া হলো ঢাকায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত