Ajker Patrika

টেলিগ্রাফের অনুসন্ধান /অভিনব ‘ভিসা প্রতারণা’ করে যুক্তরাজ্যে ঢুকছে বহু পাকিস্তানি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ০০: ২৭
পাকিস্তানিদের ভিসা জালিয়াতির মূল হোতা সাইয়েদ কামরান হায়দার। ছবি: দ্য টেলিগ্রাফ
পাকিস্তানিদের ভিসা জালিয়াতির মূল হোতা সাইয়েদ কামরান হায়দার। ছবি: দ্য টেলিগ্রাফ

ব্রিটেনে ভুয়া নথির মাধ্যমে পাকিস্তানি অভিবাসীদের প্রবেশের একটি চাঞ্চল্যকর চিত্র উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের অনুসন্ধানে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত ‘মিরপুর ভিসা কনসালট্যান্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে ভিসার জন্য জাল কাগজপত্র সরবরাহ করছে, যা ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর যাচাই না করে অনুমোদন করছে।

এই ভিসা প্রতারণার চক্রে ভিসাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ৩২ হাজার পাউন্ড থেকে শুরু করে ৫০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে। এই অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে ভুয়া চাকরির সনদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সিভি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার নকল দলিল। এসব নথিপত্রে ভাষাগত ভুল ও অসংগতি থাকলেও ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর যাচাই না করেই অনুমোদন করছে।

একটি নির্দিষ্ট ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, এক অভিবাসীকে ‘রিয়াজ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল’ থেকে জারি করা ভুয়া চাকরির রেফারেন্সপত্র দেওয়া হয়। এতে লেখা ছিল, ‘আমরা তাঁকে যেকোনো পদের জন্য সুপারিশ করছি। ভবিষ্যতে তাঁর মঙ্গল কামনা করছি।’ অথচ এই হাসপাতাল ২০১৪ সালের পর বন্ধ হয়ে গেছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই চিঠিকে ‘ভুয়া’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

টেলিগ্রাফের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই প্রতারণার মূল হোতা সাইয়েদ কামরান হায়দার। তিনি ‘মিরপুর ভিসা কনসালট্যান্ট’-এর প্রধান নির্বাহী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি নিয়মিতভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের কৌশল নিয়ে ভিডিও দেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, তাঁর মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ সম্ভাবনায় তিন মাসের মধ্যে কেউ ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারেন। তিনি নিজেই বলেন, ‘আমি সব করব, ব্যাংক স্টেটমেন্ট তৈরি করব, কেউ জিজ্ঞাসাও করবে না কেন এটি মিরপুর (কাশ্মীরের একটি অঞ্চল) থেকে এসেছে।’

‘মিরপুর ভিসা কনসালট্যান্ট’-এর এক ভিসা আবেদনকারীর পক্ষে বানানো ভুয়া সিভিতে লেখা ছিল—তিনি রিয়াজ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করেছেন এবং রোগীর ‘গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ’ রেকর্ড করার দায়িত্বে ছিলেন।

এই ধরনের ভুয়া নথিপত্র দিয়ে অনেকে যুক্তরাজ্যে স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা পাচ্ছেন এবং পরে সেখানে থেকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চাচ্ছেন। ব্রিটেনের বর্তমান আইন অনুযায়ী, যেসব অভিবাসী প্রথমে কাজের ভিসায় আসেন, তাঁরা আশ্রয়ের আবেদন করলেও কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। এটিরই সুযোগ নিচ্ছে বহু পাকিস্তানি।

২০২৩ সালে পাকিস্তান থেকে ১০ হাজার ৫৪২টি রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে। আগের বছরের তুলনায় যা ৮০ শতাংশ বেশি।

হায়দার দাবি করে থাকেন, আইইএলটিএস ছাড়া নার্সিং ডিপ্লোমা করেও ইউকে স্টুডেন্ট ভিসা নেওয়া সম্ভব। পরে এই স্টুডেন্ট ভিসাকে কাজের ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ রয়েছে। তবে বাস্তবে এটি জটিল ও অনিশ্চিত।

এই প্রতারণা শুধু ভিসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেকে আশ্রয়ের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোতেও দ্বিতীয় আবেদন করে রাখেন, যাতে তাঁরা ব্রিটেনে আরও বেশি সময় থাকতে পারেন। এ ধরনের আবেদনের জন্য ‘বৈধ সম্পর্ক’ থাকা আবশ্যক হলেও অনেকে ভুয়া তথ্য দিয়ে এই সুযোগ নিচ্ছেন।

চক্রটি মূলত পাকিস্তানের হতাশাগ্রস্ত নাগরিকদের টার্গেট করে, যাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি যেখানে মাত্র ৩ হাজার ৯৭০ পাউন্ড, সেখানে যুক্তরাজ্যে তা ৪০ হাজার পাউন্ডের বেশি।

ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও হায়দারকে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছে টেলিগ্রাফ। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও এই পরিস্থিতির জন্য চাপের মুখে রয়েছেন। কারণ, তাঁর নেতৃত্বেই ‘একজন এলে একজন যাবে’ নীতিমালা চালু হয়েছে। যদিও এই নীতির মাধ্যমে বাস্তবে খুব অল্পসংখ্যক অভিবাসীকেই ফেরত পাঠানো গেছে। অভিবাসনপ্রবণতা ও দুর্বল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এখন ব্রিটিশ সরকারের জন্য একটি বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয়বার বিধ্বস্ত হলো বিমানবাহিনীর এফ-৭, এই চীনা যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কী

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: পাইলটসহ নিহত ২১, আহত দেড় শতাধিক, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক

৯ লাখ টন চাল কিনবে বাংলাদেশ, আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত

পাইলটের মা-বাবাকে বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে নেওয়া হলো ঢাকায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত