Ajker Patrika

‘অবৈধ’ সম্পর্কের অভিযোগে নর-নারীকে হত্যা করল নিজ সম্প্রদায়, পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৫৩
ছবিটি ভাইরাল ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবিটি ভাইরাল ভিডিও থেকে নেওয়া

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে এক প্রেমিক যুগলকে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষ। পুলিশ জানিয়েছে, একজন গোত্রপ্রধানের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই গোত্রপ্রধান এই সম্পর্ককে তাঁদের গোত্রের মর্যাদার জন্য হুমকি বলে মনে করেছিলেন। ঘটনাটি ‘অনার কিলিং’ বা তথাকথিত সম্মান রক্ষার নামে হত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রায় সময়ই ঘটে।

আজ সোমবার সিএনএন জানিয়েছে, ঘটনাটি গত মাসে ঘটলেও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভয়াবহ ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ভিডিওতে দেখা যায়, মরুভূমির মতো একটি স্থানে প্রায় এক ডজন পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আর মাথায় চাদর জড়ানো একজন নারী ধীরে ধীরে হাঁটছেন। পেছনে এক ব্যক্তি তাঁর দিকে পিস্তল তাক করে ছিলেন। স্থানীয় ব্রাহভি ভাষায় ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি শুধু আমাকেই গুলি করতে পারো, অন্য কিছু নয়।’ এরপর ওই নারীকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। প্রথম দুই গুলিতে তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেও তৃতীয় গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে আরও গুলির শব্দ শোনা যায়।

একই ঘটনার আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তাক্ত এক নারী ও এক পুরুষের মরদেহ পাশাপাশি পড়ে রয়েছে।

ভিডিওর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে না পারলেও পুলিশ বলেছে, ফুটেজটি তাদের তদন্তাধীন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় এক গোত্রপ্রধান এই যুগলের ‘অবৈধ সম্পর্ক’ আবিষ্কারের পর তাঁদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। পরে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়।

এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সারফরাজ বুগতি। তিনি এই ঘটনাকে ‘সহ্য করার মতো নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং সামাজিক মূল্যবোধ ও মানব মর্যাদার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে প্রতিবছর শত শত অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, অনেক ঘটনা গোপনেই থেকে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীদের নিজেদের পছন্দে বিয়ে করা, বিবাহবিচ্ছেদের চেষ্টা কিংবা সামাজিক নিয়ম ভাঙার মতো কারণেই এমন হত্যার শিকার হতে হয়। এ ধরনের হত্যার পেছনে রয়েছে গভীরভাবে প্রোথিত পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও দুর্বল আইনি প্রয়োগ। এর ফলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের পরও অপরাধীরা প্রায় সময়ই পার পেয়ে যায়।

২০১৬ সালে সোশ্যাল মিডিয়া তারকা কান্দিল বালুচকেও তাঁর ভাই পারিবারিক সম্মান রক্ষার কথা বলে হত্যা করলে পাকিস্তানজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এবং আইন পরিবর্তনের দাবিও ওঠে। বর্তমানে পাকিস্তানে অনার কিলিংয়ের সর্বোচ্চ সাজা আজীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। তবে আইনি পরিবর্তন ঘটলেও এই ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড থেমে নেই।

২০২৪ সালেই পাকিস্তানে ৩৩৫ নারী ও ১১৯ পুরুষ অনার কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয়বার বিধ্বস্ত হলো বিমানবাহিনীর এফ-৭, এই চীনা যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কী

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: পাইলটসহ নিহত ২০, আহত দেড় শতাধিক, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক

৯ লাখ টন চাল কিনবে বাংলাদেশ, আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত

পাইলটের মা-বাবাকে বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে নেওয়া হলো ঢাকায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত