Ajker Patrika

বিশ্বে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে নদীতে ফেলা ওষুধ শিল্পের বর্জ্য: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ওষুধ শিল্পের বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ইংল্যান্ডের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়।

আজ মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে ওই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, প্যারাসিটামল, নিকোটিন, ক্যাফেইনসহ ডায়াবেটিস ও মৃগীরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ প্রস্তুতকারক শিল্পগুলোর নিষ্কাশিত বর্জ্যের প্রভাব নির্ণয় করা হয় গবেষণায়। তবে এসবের বাইরেও অনেক পরিচিত ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ ওষুধ তৈরি করার সময় সৃষ্ট বর্জ্যের প্রভাব এখনো অজানা।

গবেষণায় বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের ২৫৮টি নদীর ১ হাজারেরও বেশি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দেখা গেছে, পাকিস্তান, বলিভিয়া ও ইথিওপিয়ার নদীগুলো ওষুধ শিল্পের বর্জ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত। বিপরীতে আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও আমাজন বনাঞ্চলের নদীগুলো সেই তুলনায় বেশ ভালো অবস্থানে আছে। 

নদীর পানিতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ব্যথানাশক ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের উপাদান কার্বামাজেপাইনগবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ২৫৮টি নদীর মধ্যে প্রায় ৬৫টির নমুনায় দেখা গেছে, নদীগুলোতে উপস্থিত ওষুধ শিল্পের বর্জ্য এত বেশি যে, জলজ প্রাণীর জন্য কোনোভাবেই নিরাপদ বলা যায় না। 

গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, পানিতে মিশে যাওয়া গর্ভনিরোধক ওষুধগুলো মাছের আকার ও বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে পারে। এ ছাড়া বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, নদীর পানিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সমস্যাকে প্রবল করে তুলতে পারে।

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে, নদীর পানিতে যেসব উপাদান সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে তার মধ্যে কয়েকটি হলো— ব্যথানাশক ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের উপাদান কার্বামাজেপাইন। এ ছাড়া মানুষের নৈমিত্তিক সঙ্গী কফির উপাদান ক্যাফেইনের পরিমাণও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণে। পাওয়া গেছে নিকোটিন এবং প্যারাসিটামলের উপাদানও। 

গবেষকেরা বলছেন, নদীতে অ্যান্টিবায়োটিকের বিপুল উপস্থিতি অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে পারে। যা মানবদেহে ওষুধের কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং শেষ পর্যন্ত তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বৈশ্বিক হুমকি তৈরি করবে।

‘গর্ভনিরোধক’ ওষুধগুলো মাছের আকার ও বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে দিতে পারেগবেষক দলের প্রধান ড. জন উইলকিনসন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা জানি যে, বর্তমান সময়ের আধুনিক জলীয় বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্টগুলোও পরিপূর্ণভাবে বর্জ্য পরিশোধন করতে পারে না। ফলে বর্জ্য পদার্থগুলো পরিপূর্ণভাবে পরিশোধিত না হয়েই নদী বা হ্রদের পানিতে গিয়ে পড়ছে।’ 

ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজ বাস্তুবিদ ড. ভেরোনিকা এডমন্ডস ব্রাউন বলেন, ‘নদীতে এ ধরনের ওষুধের উপস্থিতির প্রভাব নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক খুব কম গবেষণা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার জন্য সব সময়ই ক্রমাগত ওষুধ সেবন আমাদের জন্য নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।’ 

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সবচেয়ে দূষিত নদীগুলো মূলত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে বর্জ্য ও জলীয় বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত