Ajker Patrika

‘২০০ ভরি স্বর্ণ রাস্তায় পড়ে গেছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৫
‘২০০ ভরি স্বর্ণ রাস্তায় পড়ে গেছে’

রাজধানীর কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি শপিং কমপ্লেক্সে থেকে চুরি হওয়া ৭০০ ভরি স্বর্ণের মধ্যে অন্তত ২০০ ভরি রাস্তায় পড়ে গেছে। এর মধ্যে ১০০ ভরির মতো স্বর্ণ বিক্রি করেছে। গোয়েন্দা পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তিন চোরকে গ্রেপ্তার করেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কথার সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তবে ঘটনার পরদিন পথচারীরা রাস্তা থেকে ২২ ভরি স্বর্ণ রমনা থানায় জমা দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে দুই দোকান থেকে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি হয়। এই ঘটনায় ঢাকা মহানগর রমনা বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা, বরিশাল ও ফরিদপুরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুরের শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন (৪৮), বরিশালের শৈশব রায় ওরফে সুমন (৩৫) ও তাঁতীবাজারের স্বর্ণালংকারের ছোট ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সুর (৪৫)। এই চুরির নেতৃত্ব দেন শাহিন। তবে শাহিন ও শৈশব ঢাকায় আসেন চুরির ঘটনার ১৫ দিন আগে। তাঁদের তাঁতীবাজারের কল্পনা বোর্ডিংয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেন উত্তম। এ ছাড়া চুরির জন্য যা টাকাপয়সা খরচ হয়েছে, তা-ও বহন করেন উত্তম। তাঁরা ওই বোর্ডিংয়ে থাকার সময় উত্তমকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে র‍েকি করেন। পরে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থা মনে হলে তাঁরা কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটকে বেছে নেন। 

চুরির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশএ বিষয়ে প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলা হওয়ার পর ছায়াতদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ। মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা ছায়াতদন্তের শুরুতে চোরদের গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম হই।’

তদন্তে জানা যায়, শৈশব ও শাহিন দুজনই নিজ এলাকায় চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের একদিন মনে হলো, ঢাকায় এসে কিছু করবেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পূর্বপরিচিত উত্তম রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁরা তিনজন মিলে চুরির পরিকল্পনা করেন।

গোয়েন্দাপ্রধান হাফিজ বলেন, ‘পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার ১৫ দিন আগে উত্তম তাঁতীবাজারের কল্পনা বোর্ডিংয়ে শাহিন ও শৈশবকে রাখে। পরে তিনজন মিলে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে চুরি করার জন্য রেকি শুরু করে। রেকিতে অন্য যেকোনো মার্কেটের তুলনায় কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা তুলনামূলক কম দেখতে পায়। তখন সেখানে চুরির পরিকল্পনা করে। ঘটনার চার দিন আগেও তারা মার্কেটটিতে চুরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে ঘটনার দিন মার্কেটের পার্শ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবন বেয়ে মার্কেটের একটি বাথরুমে প্রবেশ করে। বাথরুম থেকে তারা মার্কেটের ভেতর প্রবেশ করে দুই দোকানে চুরি করে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়।’

গোয়েন্দাপ্রধান আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, তারা সোনার পাশাপাশি একটি দোকান থেকে কিছু হিরাও চুরি করেছে। কিন্তু চুরি করে যাওয়ার সময় হিরা ও সোনা থাকা একটি ব্যাগ রাস্তায় পড়ে যায়। এর মধ্যে রাস্তা থেকে ২২ ভরি সোনা পাওয়া গেছে; যা রমনা থানায় জমা রয়েছে। তবে আমরা বলতে চাই, রাস্তায় পড়ে যাওয়া সোনা ও হিরা কেউ পেয়ে থাকলে অনুরোধ করব তাঁরা যেন এসব জিনিস দ্রুত স্থানীয় থানায় জমা দেন। যদি কেউ তা না করেন আর আমাদের তদন্তে যদি তাঁদের নাম বা খোঁজ পাই, তাহলে চোরাই মাল রাখার দায়ে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

চুরির বিষয়ে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনগোয়েন্দাপ্রধান আরও বলেন, ‘আমরা তদন্তকালে আরও দেখেছি, কল্পনা বোর্ডিংয়ে চোররা যে উঠেছিল তারা কোনো ধরনের নাম এন্ট্রি করেনি। কিন্তু ডিএমপি থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে হোটেলে নাম এন্ট্রি করার। কল্পনা বোর্ডিংয়ে তাদের নাম এন্ট্রি করা থাকলে আমরা সহজে ধরতে পারতাম। তবে এ বিষয়ে আমরা কল্পনা বোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ক্ষেত্রে আমরা আরও একটি বিষয় বলে রাখতে চাই, কেউ যদি মনে করে গ্রাম থেকে এসে ঢাকায় এসে চুরি করে সহজে চলে যেতে পারবে বা পার পেয়ে যাবে সেটি হবে না। আমরা সব সময় এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখি।’

চুরির স্বর্ণগুলো চোরেরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ফেলেছিল নাকি দোকানে বিক্রি করে দিয়েছিল সে প্রসঙ্গে এই গোয়েন্দা বলেন, ‘তারা কিছু স্বর্ণ দোকানে রেখেছিল আবার কিছু স্বর্ণ তাদের কাছ কাছে ছিল। তবে তারা বলেছেন, কিছু স্বর্ণ রাস্তায় পড়ে গিয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমরা ২০১ ভরি সোনা জব্দ করেছি। তাদের রিমান্ডে পেলে বাকি সোনা কোথায় আছে, তা জিজ্ঞাসাবাদ করে উদ্ধারের চেষ্টা করব।

‘যেসব দোকানির চোরাই স্বর্ণ কেনেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কিন্তু আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব, যদি আমাদের তদন্তে তাঁদের নাম আসে। এ ছাড়া বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সবাইকে বলব যে, কেউ যেন চোরাই মাল না কেনেন। আর যদি কেউ কেনেন, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে অনেক দোকানি চোরাই সোনা কিনে গলিয়ে অন্য সোনা বানিয়ে ফেলেন। তদন্তে তাঁদের নাম পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৭০০ ভরি স্বর্ণের মধ্যে ২০১ ভরি জব্দ করা হয়েছে। তাহলে বাকি সোনা কোথায়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এ কে এম হাফিজ বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা শুনেছি যে কিছু স্বর্ণ পড়ে গেছে। তবে এই বিষয়গুলো আমরা জানার চেষ্টা করছি। কোনো দোকানে যদি তারা স্বর্ণ বিক্রি করে থাকে তা আমরা বের করার চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত