Ajker Patrika

নীলফামারীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যা

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
নীলফামারীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যা

পারিবারিক কলহ, অভিমানের পাশাপাশি ছোটখাটো ঘটনার জেরে নীলফামারীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়াও কিশোর-কিশোরী রয়েছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত জেলায় ১২৬টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত বছরে এ সংখ্যা ছিল ১৮২টি। তবে এসব অপমৃত্যুর মধ্যে  আত্মহত্যার সঠিক পরিসংখ্যান পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

ভালোবেসে গোপনে বিয়ে করেছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া কলেজের ছাত্রী দুলালী আক্তার। বর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র। তাঁদের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায়। পরে স্বামীর পরিবারের দাবি করা যৌতুকের ১৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় ১৬ সেপ্টেম্বর কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন দুলালী। ১৭ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুর শহরের ধনাঢ্য পরিবারের গৃহবধূ জ্যোতি আগরওয়াল ববি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর আগে লেখা চিঠিতে পারিবারিক কলহের কারণে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর ডোমারে জয়া রানী রায় নামের এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে নিজের ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ছাড়া ৪ সেপ্টেম্বর বাবার সঙ্গে অভিমান করে কিশোরগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শৌচাগারে গিয়ে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ৩১ আগস্ট ডোমার ‍উপজেলার নিমোজখানা হরতকীতলা গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী-সন্তানকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

এ নিয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় রায় বলেন, আত্মহত্যা করার পেছনে অনেক কারণ থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার ও ডিপ্রেশন। শিশুদের ক্ষেত্রে গোল্ডেন এ প্লাস পেতেই হবে, এমন প্রত্যাশার চাপ অনেকেই বাড়িয়ে দেন। এসব চাপ অনেক সময় মেনে নিতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা বাড়াতে হবে। মানসিক সাহস দিলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে।

সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতাহার আলী বলেন, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে মানুষ হতাশা বা বিষণ্নতায় ভোগে। দীর্ঘদিন রোগ-শোকে আক্রান্ত থাকলে, কোনো কাজে বারবার পরাজিত হলে, সম্পর্কে ভাঙন, কষ্টার্জিত সম্পদ হারানো, পরীক্ষা বা চাকরির ফলাফলে ব্যর্থতা মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি করে। সে হতাশাই মানুষকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়।

যোগাযোগ করা হলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) সারোয়ার আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপমৃত্যুর মধ্যে গলায় ফাঁস ও বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনাই বেশি ঘটে। পারিবারিক বিরোধ, হতাশা ও মানসিক চাপ আত্মহত্যার মূল কারণ। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কার কী সমস্যা সেগুলো জানার চেষ্টা এবং বন্ধুর মতো পাশে থেকে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা দরকার। কারও দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে সেটি সামাজিকভাবে মেটানোর চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য পারিবারিক সৌহার্দ্যবোধ, ভালোবাসা ও সচেতনতা দরকার। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরাও কাজ করছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত