Ajker Patrika

রংপুর কারাগারে পিটুনিতে কয়েদির মৃত্যু, ২ কারারক্ষী বরখাস্ত

রংপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আমড়া পাড়াকে কেন্দ্র করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাহারাম বাদশা (৫৬) ও রফিকুল ইসলামের মারামারি শুরু হয়। এ সময় কারারক্ষিরা তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করেন। এর একপর্যায়ে মারা যায় বাহারাম। এ ঘটনায় দুই কারারক্ষীকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 
 
এদিকে সকালে কয়েদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দুপুর থেকে কারাগারে শুরু হয় হট্টগোল। কয়েদিরা কারাগারের গেট ভেঙে বেরোনোর চেষ্টা করলে ফাঁকা গুলি ছোড়ে কারারক্ষিরা। এ ঘটনা ঘিরে আজ শুক্রবার দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে কারাগার এলাকা। 
 
কারাগারে নিহত বাহারাম রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের বগেরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। ২০০৮ সালে হত্যা মামলার দায়ে তিনিসহ চারভাই ও ভাগিনার যাবজ্জীবন কারাদ্বন্ড হয়। ১৬ বছর ধরে বাহারামেরা চার ভাই ও এক ভাগিনা কারাগারে রয়েছেন। নিহত বাহারাম বাদশার চার ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। 
 
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই কারারক্ষী হলেন—মোতালেব ও শাহাজান। দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে তাঁদের বরখাস্ত করা হয়। 
 
কারাকর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে পালি অনুযায়ী কারাগার ঝাড়ু দিচ্ছিলেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি রফিকুল ইসলাম। এ সময় পাশের গাছ থেকে লাঠি দিয়ে আমড়া পারছিলেন বাহারাম। এতে ঝাড়ু দেওয়া অংশে গাছের পাতা ও আমড়া পরে নষ্ট হওয়ায় রফিকুল তাঁকে বকাঝকা করেন। এ নিয়ে বাগ্বিতন্ডা সৃষ্টি হয়। 
 
একপর্যায়ে বাহারাম রফিকুলের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এরপর রফিকুলসহ কয়েকজন কয়েদি বাহারামকে মারধর করেন। এ সময় কারারক্ষী শাহাজাহান ও মোতালেব তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করেন। এরই একপর্যায়ে তাঁরা বাহারামকে প্রহার করেন। এতে বাহারাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ৮টা ২০ মিনিটের জেল গেটে নিয়ে এসে হেড নার্স চেক করলে তাঁর বিপি পালস কিছুই পান না। এরপর সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্মরত চিকিৎসক তাঁকে ব্রথ ডেড বলে জানান। 
 
বাহারামের মৃত্যুর খবর কয়েদিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারাগারে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভ করতে থাকেন কয়েদিরা এবং কারাগারে প্রবেশদ্বার গেট ধাক্কাধাক্কি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। 
 
এমন পরিস্থিতিতে ফাঁকাগুলি ছুড়তে থাকেন কারারক্ষীরা। এরপর একে একে কারাগারে ছুটে আসেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, জেলাপ্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার। তাঁরা দফায় দফায় কয়েদিদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। 
 
সরেজমিন দেখা গেছে, কারাগারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কারাগারের ভেতরে ফাঁকাগুলির শব্দ দেখা গেছে। কারাগারের ভেতর বাহিরসহ পুরো এলাকা ঘিরে রাখেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে সেখানে ছুটে আসেন বাহারামের পরিবারে সদস্যেরা। 
 
প্রত্যক্ষদর্শী মোরশেদ পারভেজ বলেন, ‘ওষুধ নেওয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে কারাগারের পাশের ফার্মেসীতে আসি। তখনই কারাগারের ভেতরে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। তখন গেটে থাকা সেনাবাহিনী দুই দিকে গাড়ি থামিয়ে দেয়। মানুষ দিকবেদিক ছুটাছুটি করছিল। দেড়টা পর্যন্ত এমন চলছে।’ 
 
সন্ধ্যা ৬টায় কারাগারের ভেতর থেকে বের হয়ে জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসন বলেন, আমড়া পাড়াকে কেন্দ্র করে দুইজন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। এরই একপর্যায়ে দুই কারারক্ষী প্রহার করেন। একপর্যায়ে বাহারাম নামের কয়েদি মারা যান। তবে বাহারামকে যখন প্রহার করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন হৃদরোগী ছিলেন। প্রাথমিক সুরতাহাল রির্পোটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। 
 
এ ঘটনায় দুই কারারক্ষীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে সিনিয়র সহকারী কমিশনার কাইয়ুম খানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। 
 
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনার স্যারসহ আমরা কারাগারে থাকা কয়েদিদের সঙ্গে কথা বলেছি। কয়েদিরা বিচার দাবি করে কারাগারে সংঘটিত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরেন। বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয়েছে। এতে কারাগারে অন্যান্য যে ব্যতয়গুলো রয়েছে তা উঠে এসেছে। বিষয়টি সুরক্ষা সেবা সচিব স্যারকে অবহিত করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত