Ajker Patrika

ফুলবাড়ীতে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত কোরবানির জন্য, পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারিরা

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) 
আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ১৫: ২১
ফুলবাড়ীতে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত কোরবানির জন্য, পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারিরা

ঈদুল আজহা উপলক্ষে চাহিদার চেয়েও সাড়ে ৬ হাজার বেশি পশু প্রস্তুত করছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খামারিরা। এর মধ্যে অধিকাংশই দেশি জাতের। কদিন পরেই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনাবেচা। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। তবে বর্তমানে পশুর খাবারের দামের ঊর্ধ্বগতিতে খরচ বেড়েছে বলে জানান খামারিরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার রয়েছে ২৬১টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামার ৪টি, অনিবন্ধিত ২৫৭টি। ছাগলের খামার রয়েছে ১১১টি, এর মধ্যে নিবন্ধিত খামার ১টি। ভেড়ার খামার রয়েছে ১৯টি, এর মধ্যে নিবন্ধিত ১টি। এসব খামার থেকে এ বছর সাড়ে ১৯ হাজারের বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু ১২ হাজার ১২০টি, ছাগল ৬ হাজার ৬২১টি, মহিষ ৮টি এবং ভেড়া ৭৬২টি। চলতি বছর এই উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৩ হাজার ১০০টি। বাড়তি পশু রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৪০০। যা এ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে।

স্থানীয় খামারিরা বলছেন, এবার পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু পালন করছেন। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুট্টা এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। 
 
খামারিরা আরও বলেন, এবার যে পরিমাণ দেশি গরু প্রস্তুত রয়েছে, তাতে দেশি গরু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। খামারিরাও লাভবান হবেন। তাই ঈদের আগে দেশের বাজারে ভারতীয় গরু প্রবেশে কঠোর নজরদারির দাবি করেছেন তাঁরা। 

পৌর এলাকার স্বজন পুকুর এলাকার আমিন ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারের লোকজন। স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের খামারে ক্রস ব্রাহামা, ফ্রিজিয়ান, নেপালি, হরিয়ানা ও দেশিসহ উন্নত জাতের প্রায় ৫০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির জন্য ২৫টি গরু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন ভুট্টা, খইল, কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি ও খড় দিচ্ছি এদের। পশুগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে। প্রতিদিন গোসল করানো হয়। জায়গা পরিষ্কার রাখা হয়। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে পরিবেশ ঠিক রাখা হয়।

ফুলবাড়ীর রাঙ্গামাটী গ্রামে গরুর একটি খামার। ছবি: আজকের পত্রিকাঅপরদিকে উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর এলাকার রাঙ্গামাটী গ্রামে ব্যবসায়ী ইব্রাহীম খলিলের গরুর খামারে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ দিয়ে বানানো কাঠামোর ওপরে মোটা ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে ছোট, বড়, মাঝারি আকারে প্রায় ৮৫০টিদেশি গরু রাখা হয়েছে। গরুগুলোর পরিচর্যা করছেন কর্মচারীরা।

খামারের ম্যানেজার নজমুল হক বলেন, ‘আমরা এ বছর সবে শুরু করেছি। ১৫০টি গরু কোরবানির জন্য বিক্রির পরিকল্পনা আছে, সবগুলোই দেশি।’ কী খাবার খাওয়াচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, প্রতিদিন চারবার পশুগুলোকে গমের ভুসি, ভুট্টা দানা, চিটা গুড়, খড় খাওয়ানো হয়। নিয়মিত পশু ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এতে দিনে ১ লাখ টাকা খরচ হয়।

এদিকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হৃষ্টপুষ্টকরণ, প্রাকৃতিক উপায়ে পশু পালন এবং বাজারজাতকরণে খামারিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, গরুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ভিটামিনও খাওয়াতে বলছি খামারিদের। তবে গরুকে নিষিদ্ধ কোনো রাসায়নিক ও হরমোনের ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। প্রাকৃতিক উপায়ে গরুকে ভালো খাদ্য কীভাবে খাওয়াবে এবং কীভাবে মানসম্মত মাংস উৎপাদন করবে, সে বিষয়ে খামারিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। চলতি বছর এই উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৩ হাজার ১০০ পশু। এ বছর ১৯ হাজার ৫০০ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি প্রায় ৬ হাজার ৪০০ পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত