Ajker Patrika

‘উত্তরে হামরা পানিত ডুবি মরলেও খবর নেয় না’

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪৫
‘উত্তরে হামরা পানিত ডুবি মরলেও খবর নেয় না’

‘হামার সারা জীবন এমনে যাইবে। আর যে কয়টা দিন বাঁচমো, সে কয়টা দিনও এমন করি কাটা লাগবে। বাহে, নদীত ভাঙতে ভাঙতে আইজ হামরা নিঃস্ব। সারা জীবন খালি শুনি, আসনো নদী বান্দিবে, কিন্তু নদী আর বান্দা হইল না। হামার নদীও বান্দা হইবে না, আর হামার কপালও খুলবে না।’

গতকাল রোববার ক্ষোভের সঙ্গে এসব কথা বলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর বাগেরহাট আবাসন এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান (৫৪)। 

জানা গেছে, কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। এতে বন্যায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। 

মজিবর রহমান আরও বলেন, ‘দক্ষিণে বন্যা হইতে খালি ত্রাণ নিয়া দৌড়াদৌড়ি সবার। আর উত্তরের মানুষ হামরা পানিত ডুবি মরলেও কায়ও হামার খবর নেয় না। বাহে, তোরা ছবি তুলি হামার কী করেন?’ 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.১৭ মিটার, যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু একটু করে কমতে শুরু করে পানি। বেলা ৩টার তথ্য অনুযায়ী, পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.৭ মিটার, যা বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচে। 

এদিকে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বেলা ৩টার তথ্য অনুযায়ী, বিপৎসীমার ৩১ সেমি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীতীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার সদর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা, মর্ণেয়া, নোহালী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। 

এ বিষয়ে পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, পানি বাড়লেও এই পানি নেমে যাবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই। 

গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজীবুল করিম বলেন, ‘উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মোট পানিবন্দীর সংখ্যা ২ হাজারের মতো। শনিবার আমরা ১০০ পরিবারকে শুকনা খাবার দিয়েছি, সোমবার ১ হাজার ২০০ পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত