রিমন রহমান, রাজশাহী
নদের নাম শিব। পাল আমলে এর ধারেই গড়ে উঠেছিল সভ্যতা। নদের প্রস্থ কম হলেও গভীরতা এখনো ভালো। গত শুক্রবার সকালে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকার সেতুর ওপর দুপাশে দেখা গেল, শিব নদে পানি নেই। প্রাণহীন সেই নদের বুকে ধান চাষ করা হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে ধানখেত চৌচির।
পানির অভাবে শীতকালেই বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল, বিল, পুকুর ও নদী-নালা গ্রীষ্মের মতো চৌচির হয়ে গেছে। অথচ গ্রীষ্ম আসতে বাকি আরও প্রায় আড়াই মাস। পুকুরের পানি শুকিয়ে যেতে শুরু করায় মাছচাষিরা পড়েছেন বেকায়দায়। ভূগর্ভস্থ পানি তুলে তাঁরা আবার পুকুর ভরছেন। খাল-বিল আর ছোট ছোট নদ-নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে পড়ে আছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এলাকায় পুরোনো দীর্ঘ একটি খাল নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। নিচের মাটি দুই পাশে তুলে রাখা হয়েছে; কিন্তু খালে পানি নেই।
আলোকছত্র গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষার কয়েকটা মাস আমরা খালে-বিলে পানি দেখি। তারপর আর পানি থাকে না। এখন পুকুরে মাছও চাষ করতে হচ্ছে বরেন্দ্রের ডিপ থেকে পানি নিয়ে। বাড়ির নলকূপগুলো অনেক আগে অকেজো হয়ে পড়েছে। বাড়িতে বাড়িতে সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে খাওয়ার পানি তুলতে হচ্ছে।’
ভূগর্ভস্থ পানি নামছেই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নামছে। এ জন্য ভূগর্ভস্থ পানি তুলে চাষাবাদকে দায়ী করা হয়; বিশেষ করে খরা মৌসুমে বোরো চাষের সময় প্রচুর পানি তুলতে হয় সেচের জন্য। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ১৯৮৫ সাল থেকে গভীর নলকূপ বসিয়ে এই এলাকায় সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অসংখ্য গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। দিনরাত পানি তোলে গভীর নলকূপগুলো।
গবেষকেরা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের জন্য যে পরিমাণ পানি তোলা হয়, তা বৃষ্টির মাধ্যমে পুনঃপূরণ হচ্ছে না। ফলে পানির স্তর ক্রমাগত নামছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে মাটির নিচে আর কোনো পানি পাওয়া যাবে না।’
ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যমতে, বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকা মাঝারি, উচ্চ ও অতি উচ্চপর্যায়ের পানি সংকটাপন্ন। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে রাজশাহীর তানোরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমেছে ১১৩ ফুট পর্যন্ত। পুনঃপূরণ না হওয়ায় এক বছরেই গড়ে ৪ ফুট নিচে নেমেছে পানির স্তর।
১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ছিল মাটির ২৬ ফুট নিচে। ২০১০ সালে ৫০ ফুট ও ২০২১ সালে এই স্তর আরও নিচে নেমে দাঁড়ায় ৬০ ফুটে। একই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের একটি স্থানে ভূপৃষ্ঠের পানি নেমে যায় ১৫৩ ফুট গভীরে। ২০২৩ সালে পানির স্তর ১৬০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমেছিল।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ২১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮৭টি ইউনিয়নকে অতি উচ্চ ও উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)। পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নেমেছে নওগাঁর পোরশার ছয়টি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের চারটি ইউনিয়নে। অতি উচ্চ পানি সংকটে রয়েছে গোদাগাড়ী, তানোর, গোমস্তাপুর, নিয়ামতপুর, সাপাহারসহ ৯ উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়ন। গবেষণায় ৪০টি ইউনিয়নকে ‘উচ্চ পানি সংকটাপন্ন’ ও ৬৫টি ইউনিয়নকে ‘মাঝারি পানি সংকটাপন্ন’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেন ওয়ারপোর গবেষকেরা।
হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠে না
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আশি ও নব্বই দশকে রাজশাহী অঞ্চলের জনপদে হাজার হাজার হস্তচালিত নলকূপ স্থাপন করা হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলের কয়েক লাখ হস্তচালিত নলকূপে এখন আর পানি ওঠে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পেতে বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দাদের এখন সাবমারসিবল পাম্প বসাতে হয়। সামর্থ্য না থাকলে গ্রামের মানুষকে দূর থেকে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকেও পানি এনে পান করতে হয়। বাড়ির নারীরাই দূর থেকে পানি আনেন।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীর তানোরের বাঁধাইড় ও পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ঝিলিম ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানি নেই বললেই চলে। ঝিলিমের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের এলাকায় নলকূপে পানি ওঠে না। তখন থেকেই আমাদের পানির কষ্টের শুরু। আগে পুকুরের পানিতে গৃহস্থালির কাজ হতো, এখন পুকুরেও পানি থাকে না। সব কাজই করতে হয় পাম্পে তোলা পানিতে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের অবস্থা খুবই খারাপ। এখন কোনো সাধারণ হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠে না। এ অবস্থায় আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে সাবমারসিবল পাম্প দিচ্ছি। কিন্তু দ্রুতই সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সমস্যার সমাধান হবে না।’
হুঁশ ফিরেছে বিএমডিএর
দিনরাত গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার জন্য অনেক দিন ধরে সমালোচিত হচ্ছিল বিএমডিএ। সংস্থাটি তা গায়ে না মেখে বলেছিল, রাজশাহী ও রংপুরে বিএমডিএ প্রায় ১৬ হাজার গভীর নলকূপে পানি তুললেও ব্যক্তিমালিকানায় গভীর-অগভীর নলকূপের সংখ্যা প্রায় ৫৬ হাজার।
অবশেষে বিএমডিএ নতুন একটি সেচ নীতিমালা করেছে, যার মাধ্যমে পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে বিবেচিত রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো মৌসুমে পানি তোলার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে এই সেচ নীতিমালা করা হয়। গত ডিসেম্বরে এর প্রচারপত্র বিলি করা হলে কৃষকেরা তা জানতে পারেন। এ নিয়ে কৃষকদের অবশ্য মন খারাপ।
নতুন সেচ নীতিমালা অনুযায়ী, আসন্ন বোরো মৌসুমের পুরো সময় একটা গভীর নলকূপ ৯৮০ ঘণ্টার বেশি চলবে না। নতুন সেচ নীতিমালা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এ সময়ের বাইরে বোরোর জমিতেও আর সেচ দেওয়া হবে না।
বিএমডিএর সেচ শাখার প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আটটি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে বিএমডিএ বোরো মৌসুমে অর্ধেক জমিকে বোরো চাষের আওতাবহির্ভূত রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ জন্যই ওই মৌসুমে গভীর নলকূপ চালানোর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ এলাকায় পুনর্ভরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।’
নদের নাম শিব। পাল আমলে এর ধারেই গড়ে উঠেছিল সভ্যতা। নদের প্রস্থ কম হলেও গভীরতা এখনো ভালো। গত শুক্রবার সকালে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকার সেতুর ওপর দুপাশে দেখা গেল, শিব নদে পানি নেই। প্রাণহীন সেই নদের বুকে ধান চাষ করা হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে ধানখেত চৌচির।
পানির অভাবে শীতকালেই বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল, বিল, পুকুর ও নদী-নালা গ্রীষ্মের মতো চৌচির হয়ে গেছে। অথচ গ্রীষ্ম আসতে বাকি আরও প্রায় আড়াই মাস। পুকুরের পানি শুকিয়ে যেতে শুরু করায় মাছচাষিরা পড়েছেন বেকায়দায়। ভূগর্ভস্থ পানি তুলে তাঁরা আবার পুকুর ভরছেন। খাল-বিল আর ছোট ছোট নদ-নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে পড়ে আছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এলাকায় পুরোনো দীর্ঘ একটি খাল নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। নিচের মাটি দুই পাশে তুলে রাখা হয়েছে; কিন্তু খালে পানি নেই।
আলোকছত্র গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষার কয়েকটা মাস আমরা খালে-বিলে পানি দেখি। তারপর আর পানি থাকে না। এখন পুকুরে মাছও চাষ করতে হচ্ছে বরেন্দ্রের ডিপ থেকে পানি নিয়ে। বাড়ির নলকূপগুলো অনেক আগে অকেজো হয়ে পড়েছে। বাড়িতে বাড়িতে সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে খাওয়ার পানি তুলতে হচ্ছে।’
ভূগর্ভস্থ পানি নামছেই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নামছে। এ জন্য ভূগর্ভস্থ পানি তুলে চাষাবাদকে দায়ী করা হয়; বিশেষ করে খরা মৌসুমে বোরো চাষের সময় প্রচুর পানি তুলতে হয় সেচের জন্য। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ১৯৮৫ সাল থেকে গভীর নলকূপ বসিয়ে এই এলাকায় সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অসংখ্য গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। দিনরাত পানি তোলে গভীর নলকূপগুলো।
গবেষকেরা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের জন্য যে পরিমাণ পানি তোলা হয়, তা বৃষ্টির মাধ্যমে পুনঃপূরণ হচ্ছে না। ফলে পানির স্তর ক্রমাগত নামছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে মাটির নিচে আর কোনো পানি পাওয়া যাবে না।’
ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যমতে, বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকা মাঝারি, উচ্চ ও অতি উচ্চপর্যায়ের পানি সংকটাপন্ন। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে রাজশাহীর তানোরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমেছে ১১৩ ফুট পর্যন্ত। পুনঃপূরণ না হওয়ায় এক বছরেই গড়ে ৪ ফুট নিচে নেমেছে পানির স্তর।
১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ছিল মাটির ২৬ ফুট নিচে। ২০১০ সালে ৫০ ফুট ও ২০২১ সালে এই স্তর আরও নিচে নেমে দাঁড়ায় ৬০ ফুটে। একই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের একটি স্থানে ভূপৃষ্ঠের পানি নেমে যায় ১৫৩ ফুট গভীরে। ২০২৩ সালে পানির স্তর ১৬০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমেছিল।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ২১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮৭টি ইউনিয়নকে অতি উচ্চ ও উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)। পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নেমেছে নওগাঁর পোরশার ছয়টি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের চারটি ইউনিয়নে। অতি উচ্চ পানি সংকটে রয়েছে গোদাগাড়ী, তানোর, গোমস্তাপুর, নিয়ামতপুর, সাপাহারসহ ৯ উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়ন। গবেষণায় ৪০টি ইউনিয়নকে ‘উচ্চ পানি সংকটাপন্ন’ ও ৬৫টি ইউনিয়নকে ‘মাঝারি পানি সংকটাপন্ন’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেন ওয়ারপোর গবেষকেরা।
হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠে না
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আশি ও নব্বই দশকে রাজশাহী অঞ্চলের জনপদে হাজার হাজার হস্তচালিত নলকূপ স্থাপন করা হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলের কয়েক লাখ হস্তচালিত নলকূপে এখন আর পানি ওঠে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পেতে বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দাদের এখন সাবমারসিবল পাম্প বসাতে হয়। সামর্থ্য না থাকলে গ্রামের মানুষকে দূর থেকে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকেও পানি এনে পান করতে হয়। বাড়ির নারীরাই দূর থেকে পানি আনেন।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীর তানোরের বাঁধাইড় ও পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ঝিলিম ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানি নেই বললেই চলে। ঝিলিমের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের এলাকায় নলকূপে পানি ওঠে না। তখন থেকেই আমাদের পানির কষ্টের শুরু। আগে পুকুরের পানিতে গৃহস্থালির কাজ হতো, এখন পুকুরেও পানি থাকে না। সব কাজই করতে হয় পাম্পে তোলা পানিতে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের অবস্থা খুবই খারাপ। এখন কোনো সাধারণ হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠে না। এ অবস্থায় আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে সাবমারসিবল পাম্প দিচ্ছি। কিন্তু দ্রুতই সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সমস্যার সমাধান হবে না।’
হুঁশ ফিরেছে বিএমডিএর
দিনরাত গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার জন্য অনেক দিন ধরে সমালোচিত হচ্ছিল বিএমডিএ। সংস্থাটি তা গায়ে না মেখে বলেছিল, রাজশাহী ও রংপুরে বিএমডিএ প্রায় ১৬ হাজার গভীর নলকূপে পানি তুললেও ব্যক্তিমালিকানায় গভীর-অগভীর নলকূপের সংখ্যা প্রায় ৫৬ হাজার।
অবশেষে বিএমডিএ নতুন একটি সেচ নীতিমালা করেছে, যার মাধ্যমে পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে বিবেচিত রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো মৌসুমে পানি তোলার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে এই সেচ নীতিমালা করা হয়। গত ডিসেম্বরে এর প্রচারপত্র বিলি করা হলে কৃষকেরা তা জানতে পারেন। এ নিয়ে কৃষকদের অবশ্য মন খারাপ।
নতুন সেচ নীতিমালা অনুযায়ী, আসন্ন বোরো মৌসুমের পুরো সময় একটা গভীর নলকূপ ৯৮০ ঘণ্টার বেশি চলবে না। নতুন সেচ নীতিমালা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এ সময়ের বাইরে বোরোর জমিতেও আর সেচ দেওয়া হবে না।
বিএমডিএর সেচ শাখার প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আটটি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে বিএমডিএ বোরো মৌসুমে অর্ধেক জমিকে বোরো চাষের আওতাবহির্ভূত রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ জন্যই ওই মৌসুমে গভীর নলকূপ চালানোর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ এলাকায় পুনর্ভরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।’
নীলফামারীর সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথের দৈর্ঘ্য ৫৯ কিলোমিটার। এই পথের বিভিন্ন স্থানে ফাঁকে ফাঁকে স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখার ইলাসটিক রেল ক্লিপ (ইআরসি) নেই। একই অবস্থা স্টেশনসংলগ্ন সম্প্রতি বসানো লুপ লাইনগুলোরও, যার দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার।
২ ঘণ্টা আগেময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন শতাধিক। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ মাত্র চারটি। এগুলোর মধ্যে একটি আকারে অনেক ছোট। দুই শিফটে ক্লাস পরিচালনা করেও জায়গার সংকুলান হয় না। বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম। শুধু এই একটি বিদ্যালয় নয়...
৩ ঘণ্টা আগেসাতক্ষীরায় চলছে বোরো ধান চাষের মৌসুম। কৃষকেরা খেতের পোকামাকড় আর আগাছা দমনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে মাস্ক বা গ্লাভস পরার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ফলে শ্বাসকষ্ট, ফুসকুড়ি, চুলকানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকেরা।
৩ ঘণ্টা আগেবগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় গুঁড়িয়ে দেওয়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) জেলা কার্যালয়ের জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে দাবি করা হয়েছে। এদিকে কার্যালয়টির স্থানে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
৩ ঘণ্টা আগে