Ajker Patrika

সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি বললেন, ‘এমপি নূর মোহাম্মদ মীমাংসা করে দেবেন’

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪, ১৭: ৫৮
Thumbnail image

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যা মামলাটি মীমাংসা করে দেবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) নূর মোহাম্মদ। কাজেই ওই মামলায় তাঁর আর কোনো সমস্যা হবে না। তবে সংসদ সদস্যের দাবি, সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা মীমাংসার বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তাঁর নাম ভাঙিয়ে মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। 

গতকাল বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী বাজারে এক পথসভায় সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন ওই আসামি। এর আগে ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে এক বছর ২৩ দিন কারাভোগের পর জামালপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে বের হন চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলার হুকুমের আসামি বাবু চেয়ারম্যান। কারাগার থেকে বের হয়েই বিশাল শোডাউন করে নিজ গ্রামে ফেরেন তিনি। 

এক ভিডিও চিত্রে কামালের বার্ত্তী বাজারে পথসভায় সদ্য কারামুক্ত বাবু চেয়ারম্যানকে বলতে শোনা গেছে, ‘১৭ জুন আমি অ্যারেস্ট হয়েছিলাম আমার নানার বাড়ি থেকে। আপনারা জানেন, এই মামলায় অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে। আল্লাহ তায়ালাই জানেন, কে মেরেছে। কে মেরে ফেলেছে। আমি আসলেই জনবান্ধব চেয়ারম্যান। আমার সঙ্গে সাংবাদিকদের অনেক ভালো সম্পর্ক। এটা অনেক জায়গায় জানে। হঠাৎ কী কারণে, কী আমার পাপ ছিল; আমি জানি না। এই মামলায় আমাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এক নম্বর আসামি করেছে। আপনারা জানেন, আমার ছেলে ঢাকায় লেখাপড়া করে। ঢাকার বারিধারা এলাকায় থাকা অবস্থায় আমার ছেলেকেও দুই নম্বর আসামি করেছে।’ 

বহিস্কৃত ইউপি চেয়ারম্যান বাবু আরও বলেন, ‘আমি এক বছর ধরে আপনাদের কাছ থেকে দূরে ছিলাম। আমি এই এক বছরে আমার সাধুরপাড়ার অনেক ঘটনাই শুনেছি। অনেক ক্ষতিও হয়েছে। দিনে-দুপুরে ডাকাতি হয়েছে। চুরি হয়েছে। আমার গরিব লোককে নির্যাতন করেছে। টাকা-পয়সা খেয়েছে। অনেকের গরু বেচে টাকা নিয়েছে। ছাগল বেচে টাকা নিয়েছে। আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি। আইনকে সারা জীবন শ্রদ্ধা করে যাব। আপনারা অনেকেই জানেন, আমার মামলায় হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টসহ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে আমাকে জামিন দিয়েছে। আমাদের সরকার এবং সুপ্রিম কোর্ট ‘স্টে নো অর্ডার’ করে দিয়েছে। এই মামলায় আমার আর কোনো সমস্যা হবে না।’ 

একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এবারের মাননীয় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ সাহেব। অত্যন্ত ভালো লোক। আমার সঙ্গে জেলে অনেকবার কথা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘বাবু তুমি বের হয়ে আসো। এই মামলা তোমাকে মীমাংসা করে দেব।’’’

বাবু চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার বন্ধুবর দুই-দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তার এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। উনি আমার অভিভাবক এবং শ্রদ্ধাভাজন লোক। উনিও আমাকে বলেছেন, আমার ইউনিয়নে যা যা প্রয়োজন, সবই করে দেবে। আপনারা দোয়া করবেন, আমি এক দেড় বছর আগে যে চেয়ারম্যান ছিলাম; সেই চেয়ারম্যান হিসেবে যেন চুরি-ডাকাতি, খুন-রাজাহানি বন্ধ করতে পারি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ 

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনে জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘জেলখানায় বাবু চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের কথা হয়নি। সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলাটি মীমাংসা করার বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। আমার নাম ভাঙিয়ে মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’ 

উল্লেখ্য, বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি এবং একাত্তর টেলিভিশন ও মানবজমিন পত্রিকার বকশীগঞ্জ সংবাদদাতা সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম খবর প্রকাশের জেরে ২০২৩ সালের ১৪ জুন হামলার শিকার হন। পরদিন ১৫ জুন ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

এ ঘটনায় ১৮ জুন সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম ২২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের আগের দিন ১৭ জুন ভোরে বাবু চেয়ারম্যানকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের তাঁর নানার বাড়ি থেকে আটক করে র‍্যাব। 

এর আগের দিন ১৬ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার বাবুল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ইউপি চেয়ারম্যান বাবুকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯ জুন সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে মাহমুদুল আলম বাবুকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গ্রেপ্তারের পর থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বাবু কারাগারে ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত