Ajker Patrika

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর

সরকারি গভীর নলকূপে বসছে নকল পাইপ

  • ৬৮টি গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ লাখ টাকা।
  • ন্যাশনাল পলিমারের লোগো নকল করা পাইপ ব্যবহার করা হচ্ছে।
জীবননগর ও চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
সরকারি গভীর নলকূপে বসছে নকল পাইপ

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সরকারি গভীর নলকূপ বসানোর কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের নকল পাইপ। তবে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে পরীক্ষিত সঠিক পাইপ ব্যবহার করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ‘সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের আওতায় জীবননগরে ৬৮টি গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। ৭৪ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দে কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আড়াইহাজার ইন্টারন্যাশনাল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আরশাফুল ইসলাম প্রথমে হান্নান নামের একজনকে দিয়ে নলকূপ বসানো শুরু করেন। ৫ আগস্ট হান্নান গা ঢাকা দিলে বেশ কয়েক মাস কাজ বন্ধ ছিল। এখন তিনি বাতেন নামের এক মিস্ত্রিকে দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। আর এই কাজে ন্যাশনাল পলিমার কোম্পানির লোগো নকল করে ঢাকা থেকে মানহীন পাইপ এনে ব্যবহার করছেন।

সরেজমিনে মিনাজপুর গ্রামে ন্যাশনাল পলিমারের লোগো থাকা পাইপের স্তূপ দেখা গেছে। সেগুলোতে ‘ক্লাস ডি’ মান লেখা থাকলেও বাস্তবে এগুলো আরও নিম্নমানের বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। ন্যাশনাল পলিমারের দুজন প্রতিনিধি সরেজমিনে দেখে জানিয়েছেন, সেগুলো তাঁদের কোম্পানির নয়, নকল পাইপ।

প্রতিনিধি মো. শাহিন হোসাইন বলেন, ‘আমরা পাইপগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। এগুলো আমাদের কোম্পানির নয়। আমাদের লোগো নকল করে মানহীন পাইপ বানানো হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন স্যারদের জানিয়েছি। তাঁরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’

এ নিয়ে কথা হলে নলকূপ বসানোর কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা মিস্ত্রি। আমাদের দায়িত্ব কাজ করা। পাইপ কেমন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। সব জায়গায়ই এমন পাইপ ব্যবহার করা হয়।’

জানতে চাইলে ঠিকাদার আরশাফুল বলেন, ‘আমি তো ঠিকই পাঠিয়েছি। কোম্পানির কাছ থেকে এনে পাঠিয়েছি।’ পরে তাঁকে আসল ‘ক্লাস ডি’ পাইপ এবং তাঁর কাজে ব্যবহৃত পাইপের ছবি দেখালে তিনি দাবি করেন, এমন পাইপ তাঁর এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে না। ন্যাশনাল পলিমারের প্রতিনিধিরা পাইপগুলো নকল বলে চিহ্নিত করেছেন, এই তথ্য জানালে আরশাফুল আর কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জীবননগর উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. খালেদুজ্জামান জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। সেখানে যে কাজ হচ্ছে, তা ঠিকাদার তাঁদের জানাননি।

তবে জেলা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলামের দাবি, পাইপের মান ঠিক আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো টেস্ট ছাড়া কোনো কাজ করতে পারি না। টেস্ট কুয়েট করে। আপনি কুয়েটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট আছে। টেস্টে সব ঠিক আছে। কাজে নরমাল পাইপ ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। সবকিছু দেখে নেওয়া হয়েছে।’

তবে ন্যাশনাল পলিমারের প্রতিনিধিরা পাইপগুলো নকল বলে চিহ্নিত করেছেন, এই তথ্য জানানোর পর নির্বাহী প্রকৌশলী ফোনে এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলেনি। এমনকি কার্যালয়ে গেলে তিনি জানান, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া তিনি কথা বলতে পারবেন না। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসতে হবে।

যোগাযোগ করা হলে জনস্বাস্থ্যের খুলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক মো. বাহার উদ্দীন মৃধা জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত